ঘটনাস্থল তদন্তে যাচ্ছে সিআইডি টিম

আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশের প্রস্তুতি

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা ও মানব পাচারের ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়েরকৃত মামলা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছে সিআইডির তদন্তকারী টিম।

এ ঘটনায় নিহত ও আহতের স্বজনরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা করেছেন। এসব মামলায় ২৯৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিদেশে পলাতক ৬ জনকে ধরতে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। আরও ৫ জনকে ধরতে রেড নোটিশ জারির প্রস্তুতি চলছে।

মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে সিআইডির টিম হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ, ময়নাতদন্তের সুরতহাল রিপোর্ট, ময়না তদন্তকারী ডাক্তারের মতামত, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতামতসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য শীঘ্রই তদন্ত টিম লিবিয়ায় যাবে। এ লক্ষ্যে টিমের প্রস্তুতি চলছে।

সিআইডির তদন্তকারী টিমের একাধিক সূত্র জানায়, লিবিয়ার রাজধানী থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিজদা শহরে গত বছর ২৮ মে মানব পাচারকারী চক্রের গুলিতে পাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, হবিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলার হতাহতদের স্বজনরা মামলা ও অভিযোগ করেছেন। প্রতেকটি মামলা মানব পাচার, হত্যা ও সন্ত্রাস দমন আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে সিআইডি ১৭১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিদেশে পলাতক অভিযুক্ত ৬ জনকে ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। তারমধ্যে একজন ইতালিতে ও একজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে আটক করা হয়। অন্যদের আটক করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া নতুন করে বিদেশে পলাতক আরও ৪ থেকে ৫ মানব পাচারকারীকে ধরতে শীঘ্রই ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।

সিআইডি জানায়, লিবিয়ায় মানব পাচার ও নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহত ৯ জন দেশে ফিরে এসেছে। তাদের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এখনও মানব পাচারকারী চক্রের নির্যাতনের আলামত রয়েছে। তাদের জবানবন্দিতে নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে। এসব কারণে আরও ক্লু উদ্ঘাটন ও দেশি-বিদেশি চক্রের সন্ধানে সিআইডি তদন্ত করছেন। এ নিয়ে সিআইডির একটি টিম অনুসন্ধানী তদন্তে নেমেছেন। তারা দেশে ফেরত আহতদের জবানবন্দি অনুযায়ী পলাতক দেশি-বিদেশিদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে কাজ করছেন।

লিবিয়া ফেরত ও গুলিতে আহতদের শরীরে এখনও নির্যাতনের আলামত রয়েছে। এরমধ্যে একজন ফুসফুসে গুলি নিয়ে এখরও বেঁচে আছেন। আবার কারও হাত, কারও পায়ে মানব পাচারকারীদের বর্বরতার আলামত রয়েছে। দেশে ফেরত আসা আহতরা তাদের জবানবন্দিতে নির্যাতন ও মানব পাচারের নানা কাহিনী তুলে ধরেছেন। এখনও কয়েকজন আহত বাঙলাদেশি লিবিয়ায় আছে। তাদের দেশে আনার চেষ্টা চলছে।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্তে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারীরা বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ভারত, পরে দুবাই ও মিশর হয়ে লিবিয়া মানব পাচার করে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে নেপাল, দুবাই হয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার করে। তৃতীয় রুট হলো সৌদি আরব হয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মানব পাচারকারী চক্র জনপ্রতি সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার করে। অনেক ভিকটিম (বিদেশে চাকরির জন্য যেতে ইচ্ছুক) জমি বিক্রি, গরু বিক্রি, এমনকি বাড়িঘর বিক্রি করে বিদেশে যাওয়ার জন্য দালাল চক্রের কাছে টাকা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা

ঘটনাস্থল তদন্তে যাচ্ছে সিআইডি টিম

আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশের প্রস্তুতি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা ও মানব পাচারের ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়েরকৃত মামলা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছে সিআইডির তদন্তকারী টিম।

এ ঘটনায় নিহত ও আহতের স্বজনরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা করেছেন। এসব মামলায় ২৯৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিদেশে পলাতক ৬ জনকে ধরতে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। আরও ৫ জনকে ধরতে রেড নোটিশ জারির প্রস্তুতি চলছে।

মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে সিআইডির টিম হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ, ময়নাতদন্তের সুরতহাল রিপোর্ট, ময়না তদন্তকারী ডাক্তারের মতামত, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতামতসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য শীঘ্রই তদন্ত টিম লিবিয়ায় যাবে। এ লক্ষ্যে টিমের প্রস্তুতি চলছে।

সিআইডির তদন্তকারী টিমের একাধিক সূত্র জানায়, লিবিয়ার রাজধানী থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে মিজদা শহরে গত বছর ২৮ মে মানব পাচারকারী চক্রের গুলিতে পাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, হবিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলার হতাহতদের স্বজনরা মামলা ও অভিযোগ করেছেন। প্রতেকটি মামলা মানব পাচার, হত্যা ও সন্ত্রাস দমন আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে সিআইডি ১৭১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিদেশে পলাতক অভিযুক্ত ৬ জনকে ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। তারমধ্যে একজন ইতালিতে ও একজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে আটক করা হয়। অন্যদের আটক করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া নতুন করে বিদেশে পলাতক আরও ৪ থেকে ৫ মানব পাচারকারীকে ধরতে শীঘ্রই ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।

সিআইডি জানায়, লিবিয়ায় মানব পাচার ও নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহত ৯ জন দেশে ফিরে এসেছে। তাদের হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এখনও মানব পাচারকারী চক্রের নির্যাতনের আলামত রয়েছে। তাদের জবানবন্দিতে নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে। এসব কারণে আরও ক্লু উদ্ঘাটন ও দেশি-বিদেশি চক্রের সন্ধানে সিআইডি তদন্ত করছেন। এ নিয়ে সিআইডির একটি টিম অনুসন্ধানী তদন্তে নেমেছেন। তারা দেশে ফেরত আহতদের জবানবন্দি অনুযায়ী পলাতক দেশি-বিদেশিদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে কাজ করছেন।

লিবিয়া ফেরত ও গুলিতে আহতদের শরীরে এখনও নির্যাতনের আলামত রয়েছে। এরমধ্যে একজন ফুসফুসে গুলি নিয়ে এখরও বেঁচে আছেন। আবার কারও হাত, কারও পায়ে মানব পাচারকারীদের বর্বরতার আলামত রয়েছে। দেশে ফেরত আসা আহতরা তাদের জবানবন্দিতে নির্যাতন ও মানব পাচারের নানা কাহিনী তুলে ধরেছেন। এখনও কয়েকজন আহত বাঙলাদেশি লিবিয়ায় আছে। তাদের দেশে আনার চেষ্টা চলছে।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত তদন্তে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারীরা বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ভারত, পরে দুবাই ও মিশর হয়ে লিবিয়া মানব পাচার করে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে নেপাল, দুবাই হয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার করে। তৃতীয় রুট হলো সৌদি আরব হয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মানব পাচারকারী চক্র জনপ্রতি সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়ে লিবিয়ায় মানব পাচার করে। অনেক ভিকটিম (বিদেশে চাকরির জন্য যেতে ইচ্ছুক) জমি বিক্রি, গরু বিক্রি, এমনকি বাড়িঘর বিক্রি করে বিদেশে যাওয়ার জন্য দালাল চক্রের কাছে টাকা দিয়েছে।