চরম দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ, একজনের মৃত্যু

কনকনে ঠাণ্ডায় থমকে দাঁড়িয়েছে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার মানুষ। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম, ভোগান্তিতে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এই ঠাণ্ডায় খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে না পেরে কষ্টে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। বুধবার সকালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ওসমান (৭১) নামের এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। সেই সঙ্গে বেড়েছে কনকনে ঠাণ্ডা। এতে কাবু হয়ে পড়েছে তিস্তাপারের শিশু, বৃদ্ধ সবাই। কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রর ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা লালমনিরহাটে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রের্কড। রাত থেকে ঘনকুয়াশা ঢাকা থাকছে এ অঞ্চল। গত কয়েক দিন থেকে দেখা মিলছে না সূর্যের।

লালমনিরহাট সদরসহ ৫ উপজেলার মহেন্দ্রনগর, মোঘল হাট, দুরাকুটি, খুনিয়া গাছ, চলবালা, মইচ খোঁচা, ভোটমারী, হলদিবাড়ী, সিন্দুর্না, ধুবনী, গড্ডিমারী, সানিয়াজান, ঠাংঝাড়া, ধবলগুড়ি, দহগ্রাম এলাকায় দিনভর কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডা কারণে কাজে বের হতে পারেনি খেটে খাওয়া মানুষজন।

শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মাঠের গরম কাপড়ের মার্কেটে ভীড় বেড়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠির মানুষজন ধানের খর সংগ্রহ করে রাতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতে কাবু হয়ে পড়ছে। সরকারিভাবে শীতবন্ত্র বিতরণ শুরু করলেও তা খুবই সীমিত। এদিকে গরিব শীতার্থদের মাঝে বেসরকারি কোন এনজিও সংস্থা এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র নিয়ে পাশে দাঁড়ায়নি। এদিকে শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। গতকাল সকালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ওসমান (৭১) নামের এক বৃদ্ধ’র মৃত্যু হয়েছে। সে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম এলাকার ঝন্টু মিয়ার পুত্র। গত ৭ দিন থেকে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল আলম দোলন।

হাতীবান্ধা উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈম ইসলাম জানান, হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা শ্বাষকষ্ট, সর্দি, কার্শিসহ শীতজনীত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, হাসপাতালে ঠাণ্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। চিকিৎসা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য হাসপাতালে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ওসমান (৭১) নামের এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সদরসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৭৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে ১১৭ জন।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, লালমনিরহাটের শীতার্তদের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৫০ হাজার কম্বল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে ৫ উপজেলার জন্য শুকনা খাবার বিতরন করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান আছে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

লালমনিরহাটে কনকনে ঠাণ্ডা

চরম দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ, একজনের মৃত্যু

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

কনকনে ঠাণ্ডায় থমকে দাঁড়িয়েছে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার মানুষ। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম, ভোগান্তিতে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এই ঠাণ্ডায় খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে না পেরে কষ্টে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। বুধবার সকালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ওসমান (৭১) নামের এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। সেই সঙ্গে বেড়েছে কনকনে ঠাণ্ডা। এতে কাবু হয়ে পড়েছে তিস্তাপারের শিশু, বৃদ্ধ সবাই। কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রর ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা লালমনিরহাটে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রের্কড। রাত থেকে ঘনকুয়াশা ঢাকা থাকছে এ অঞ্চল। গত কয়েক দিন থেকে দেখা মিলছে না সূর্যের।

লালমনিরহাট সদরসহ ৫ উপজেলার মহেন্দ্রনগর, মোঘল হাট, দুরাকুটি, খুনিয়া গাছ, চলবালা, মইচ খোঁচা, ভোটমারী, হলদিবাড়ী, সিন্দুর্না, ধুবনী, গড্ডিমারী, সানিয়াজান, ঠাংঝাড়া, ধবলগুড়ি, দহগ্রাম এলাকায় দিনভর কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডা কারণে কাজে বের হতে পারেনি খেটে খাওয়া মানুষজন।

শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মাঠের গরম কাপড়ের মার্কেটে ভীড় বেড়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠির মানুষজন ধানের খর সংগ্রহ করে রাতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতে কাবু হয়ে পড়ছে। সরকারিভাবে শীতবন্ত্র বিতরণ শুরু করলেও তা খুবই সীমিত। এদিকে গরিব শীতার্থদের মাঝে বেসরকারি কোন এনজিও সংস্থা এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র নিয়ে পাশে দাঁড়ায়নি। এদিকে শীতের তীব্রতার কারণে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। গতকাল সকালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ওসমান (৭১) নামের এক বৃদ্ধ’র মৃত্যু হয়েছে। সে সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম এলাকার ঝন্টু মিয়ার পুত্র। গত ৭ দিন থেকে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল আলম দোলন।

হাতীবান্ধা উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈম ইসলাম জানান, হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা শ্বাষকষ্ট, সর্দি, কার্শিসহ শীতজনীত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, হাসপাতালে ঠাণ্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। চিকিৎসা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য হাসপাতালে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ওসমান (৭১) নামের এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সদরসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৭৯ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে ১১৭ জন।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, লালমনিরহাটের শীতার্তদের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৫০ হাজার কম্বল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে ৫ উপজেলার জন্য শুকনা খাবার বিতরন করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান আছে।