সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সতর্ক থাকছি তো? কাব্য সাহা

আজ তথ্য সুরক্ষা দিবস। সাইবার অপরাধের কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা অনেকভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে- আধুনিক প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল, এসএমএস, এমএমএস, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে অপরাধমূলক অভিপ্রায় থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হুমকি দেয়া, শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করা, যা নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে।

সাইবার অপরাধ বিভিন্নভাবে সংঘটিত হয়। আমরা নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দিচ্ছি, বিভিন্ন মানুষের সাথে নানা ইস্যুতে কথাবার্তা বলছি। কিন্তু আমাদের বিশ্বস্ততার এই জায়গাটা কতটুকু সুরক্ষিত, আমরা ঠিক জানি না। বুঝে বা না বুঝে অনেকেই আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য অপরিচিত মানুষকে দিয়ে ফেলি। ভার্চুয়ালি কেউ কিছু সময় কথা বললেই তার প্রতি বিশ্বাস থেকে আমরা এই ভুলটা করি। আর এই ভুল থেকে সংঘটিত হয় নানা ধরনের সাইবার অপরাধ।

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে রাখি। যেমন- নাম, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি। হ্যাকারের দল এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করে তৈরি করতে পারে অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড। এখান থেকে ই-মেইলটা জেনে নিয়ে হ্যাকারের দল ই-মেইল সংযুক্ত ডিভাইসটিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে। এভাবেই সংঘটিত হয় সাইবার অপরাধ।

ফেসবুকে হঠাৎ কোন অফার দেখতে পেয়েই অনেকে প্রবেশ করি, প্রবেশ করার পরপরই ব্যক্তিগত তথ্যের একটি ফর্ম আসে যেখানে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নাম্বার দিতে হয়। না বুঝেই তাও দিতে দ্বিধাবোধ করি না। কিন্তু ভেবে দেখেছি কি, আমরা আসলে কী করছি? কোথায় কোন ডাটা দিতে হয় সেই ধারণাটুকুও আমরা হারিয়ে ফেলি নানা প্রলোভন বা পুরস্কার জেতার লোভে।

অনলাইন শপিং, অনলাইন পণ্য কেনা বেচা, অনলাইন ফুডে অর্ডার কিংবা রাইড শেয়ারিংসহ অনলাইন নানা অ্যাপস আমরা ব্যবহার করে থাকি। এখানেও নিজেদের সব ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত ফর্ম পূরণ করতে হয়ে থাকে। কিন্তু সব তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন কোন অ্যাপসেই নেই; যার সঠিক সংরক্ষণের অভাব থেকেও ঘটতে পারে নানা অপরাধ। এভাবেও সংঘটিত হয় সাইবার অপরাধ।

বলা চলে একপ্রকার আমরাই হ্যাকারদের কাজগুলো সহজ করে দিচ্ছি। কারণ বুঝে বা না বুঝে আমরাই তাদের ফাঁদে পা দেই। তাদের অভিনব পন্থা আমাদের বিশ্বাস অর্জন করে। কিন্তু এসব থেকে সংঘটিত অপরাধের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নারী বা তরুণীরা। মেয়েদের নানাভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে এমন বিপত্তি ঘটছে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। ছেলেমেয়েরা উভয়ই সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে লজ্জায় বা ভয় থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। কিন্তু এখানেই সবাইকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই। যেকোনো সমস্যায় বাবা-মা কিংবা পরিবারের অভিভাবক, নয়তো বন্ধুদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সাহায্য নিতে হবে।

সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে হবে। খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হলে কথোপকথন বন্ধ করে তাকে ব্লক করতে হবে। হত্যা বা হুমকিস্বরূপ কিছু বললে স্ক্রিনশট বা উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে পুলিশের সহয়তা নিতে হবে। ধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক কিছু বললেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না।

কেউ কিছু লিংক দিলেই সেগুলো চালু করা যাবে না অথবা শেয়ার দিতে বললেই না জেনে সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে কোনো প্রকার তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল বা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না। নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। কোথাও ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে জানার অধিকার সবারই রয়েছে সুতরাং ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার প্রারম্ভে যাচাই করে নিতে হবে। অনলাইনে যত কম তথ্য দিয়ে ব্যবহার করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া অপরিচিত কিংবা পরিচিতদের তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

শিশুদের দিকে নজর রাখতে হবে। তারা যেন কোনো অপরাধের শিকার না হয়। তরুণ-তরুণীদের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জানতে হবে, পাশাপাশি অন্যদের সচেতন করে তুলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে এ অপশক্তির মোকাবিলা করাটা খুব কঠিন। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সবাই সচেতন হলে অপশক্তির পরাজয় ঘটবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী,

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ]

kabbo.saha345@gmail.com

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

তথ্য সুরক্ষা দিবস

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সতর্ক থাকছি তো? কাব্য সাহা

আজ তথ্য সুরক্ষা দিবস। সাইবার অপরাধের কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা অনেকভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে- আধুনিক প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল, এসএমএস, এমএমএস, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে অপরাধমূলক অভিপ্রায় থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্মানহানি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হুমকি দেয়া, শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি সাধন করা, যা নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে।

সাইবার অপরাধ বিভিন্নভাবে সংঘটিত হয়। আমরা নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দিচ্ছি, বিভিন্ন মানুষের সাথে নানা ইস্যুতে কথাবার্তা বলছি। কিন্তু আমাদের বিশ্বস্ততার এই জায়গাটা কতটুকু সুরক্ষিত, আমরা ঠিক জানি না। বুঝে বা না বুঝে অনেকেই আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য অপরিচিত মানুষকে দিয়ে ফেলি। ভার্চুয়ালি কেউ কিছু সময় কথা বললেই তার প্রতি বিশ্বাস থেকে আমরা এই ভুলটা করি। আর এই ভুল থেকে সংঘটিত হয় নানা ধরনের সাইবার অপরাধ।

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে রাখি। যেমন- নাম, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি। হ্যাকারের দল এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করে তৈরি করতে পারে অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড। এখান থেকে ই-মেইলটা জেনে নিয়ে হ্যাকারের দল ই-মেইল সংযুক্ত ডিভাইসটিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে পারে। এভাবেই সংঘটিত হয় সাইবার অপরাধ।

ফেসবুকে হঠাৎ কোন অফার দেখতে পেয়েই অনেকে প্রবেশ করি, প্রবেশ করার পরপরই ব্যক্তিগত তথ্যের একটি ফর্ম আসে যেখানে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নাম্বার দিতে হয়। না বুঝেই তাও দিতে দ্বিধাবোধ করি না। কিন্তু ভেবে দেখেছি কি, আমরা আসলে কী করছি? কোথায় কোন ডাটা দিতে হয় সেই ধারণাটুকুও আমরা হারিয়ে ফেলি নানা প্রলোভন বা পুরস্কার জেতার লোভে।

অনলাইন শপিং, অনলাইন পণ্য কেনা বেচা, অনলাইন ফুডে অর্ডার কিংবা রাইড শেয়ারিংসহ অনলাইন নানা অ্যাপস আমরা ব্যবহার করে থাকি। এখানেও নিজেদের সব ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত ফর্ম পূরণ করতে হয়ে থাকে। কিন্তু সব তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন কোন অ্যাপসেই নেই; যার সঠিক সংরক্ষণের অভাব থেকেও ঘটতে পারে নানা অপরাধ। এভাবেও সংঘটিত হয় সাইবার অপরাধ।

বলা চলে একপ্রকার আমরাই হ্যাকারদের কাজগুলো সহজ করে দিচ্ছি। কারণ বুঝে বা না বুঝে আমরাই তাদের ফাঁদে পা দেই। তাদের অভিনব পন্থা আমাদের বিশ্বাস অর্জন করে। কিন্তু এসব থেকে সংঘটিত অপরাধের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নারী বা তরুণীরা। মেয়েদের নানাভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে। শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে এমন বিপত্তি ঘটছে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। ছেলেমেয়েরা উভয়ই সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে লজ্জায় বা ভয় থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। কিন্তু এখানেই সবাইকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই। যেকোনো সমস্যায় বাবা-মা কিংবা পরিবারের অভিভাবক, নয়তো বন্ধুদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সাহায্য নিতে হবে।

সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে হবে। খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হলে কথোপকথন বন্ধ করে তাকে ব্লক করতে হবে। হত্যা বা হুমকিস্বরূপ কিছু বললে স্ক্রিনশট বা উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে পুলিশের সহয়তা নিতে হবে। ধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক কিছু বললেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না।

কেউ কিছু লিংক দিলেই সেগুলো চালু করা যাবে না অথবা শেয়ার দিতে বললেই না জেনে সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে কোনো প্রকার তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল বা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না। নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য আদান-প্রদানে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। কোথাও ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে জানার অধিকার সবারই রয়েছে সুতরাং ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার প্রারম্ভে যাচাই করে নিতে হবে। অনলাইনে যত কম তথ্য দিয়ে ব্যবহার করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া অপরিচিত কিংবা পরিচিতদের তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

শিশুদের দিকে নজর রাখতে হবে। তারা যেন কোনো অপরাধের শিকার না হয়। তরুণ-তরুণীদের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জানতে হবে, পাশাপাশি অন্যদের সচেতন করে তুলতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে এ অপশক্তির মোকাবিলা করাটা খুব কঠিন। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সবাই সচেতন হলে অপশক্তির পরাজয় ঘটবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী,

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ]

kabbo.saha345@gmail.com