টিকা নিতে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমদিন ৫৫ থেকে ৬০ জনকে করোনা টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। টিকা গ্রহণের সময় ছিল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা। কিন্তু বেলা ১২টার মধ্যেই টিকা পেতে নিবন্ধন করেন ৬৫ জন, সোয়া ১২টায় অনানুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় টিকাদান। টিকা পেতে কারোর কোনরকম ভোগান্তি হয়নি। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ভ্যাকসিন (টিকা) সেন্টারে ছিল উৎসবের আমেজ। বুথে দাঁড়িয়ে ‘এনআইডি’ কার্ড দেখিয়ে মাত্র ২/৩ মিনিটেই নিবন্ধন করতে পেরেছেন টিকা গ্রহীতারা।

ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে গতকাল নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষ স্বেচ্ছায় টিকা নেন। পাঁচ হাসপাতালে মোট ৫০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, কিন্তু আগ্রহীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গতকাল ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। দু’একজন ছাড়া পাঁচ হাসপাতালে টিকা গ্রহীতাদের সবাই স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির যোদ্ধা। টিকা গ্রহীতাদের কারোর শরীরেই কোন রকম পাশর্^প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মুগদা হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী টিকা পেতে ভিড় করছেন। চারটি নিবন্ধন বুথে টিকা প্রত্যাশীরা আগ্রহ-উৎসাহ-উদ্দীপনায় নিবন্ধন করাচ্ছেন।

মুগদা হাসপাতালের টিকা কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত (ইপিআই ইনচার্জ) রফিকুল ইসলাম বেলা ১২টার দিকে সংবাদকে বলেন, ‘এখানে ৫০ থেকে ৬০ জনকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু অনেকেই স্বেচ্ছায় টিকা নিতে চাওয়ায় পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক (অসীম কুমার নাথ) স্যার বলেছেন, যারা যারা টিকা নিতে চায় তাদের টিকা দিয়ে দাও। এ কারণে বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়।’

ঝামেলা ও হয়রানিমুক্ত

পরিবেশে টিকাদান

এতদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, অনলাইনে নিবন্ধন করে করোনার টিকা নিতে হবে, বিকল্প ব্যবস্থাও থাকবে। ‘অ্যাপ’ বা অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে সাত মিনিট।

কিন্তু ম্যানুয়ালি টিকার নিবন্ধনে সময় লাগছে মাত্র ২/৩ মিনিট। খুব সহজেই এই প্রক্রিয়ায় টিকার নিবন্ধন করা হয়। রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালেই গতকাল ‘ম্যানুয়ালি’ একটি ফরম পূরণ করে নিবন্ধন করা হয়।

টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়। গতকাল কুর্মিটোলাসহ ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে করোনার টিকা দেয়া হয়। এই চারটি হাসপাতাল হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল। এর মধ্যে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী ছাড়া বাকি চারটি হাসপাতালে গতকাল চারটি করে বুথ বসিয়ে টিকার নিবন্ধন করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বুধবার সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার পাঁচটি হাসপাতালে ৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল, ১০০ জনকেই দেয়া হয়েছে।

অন্য হাসপাতালগুলোর মধ্যে বিএসএমএমইউতে সর্বোচ্চ ২০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল, বেলা ২টা নাগাদ টিকা কার্যক্রম শেষ, দেয়া হয় ১৯৮ জনকে, ঢামেকে ১০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত কার্যক্রম শেষ হয়, টিকা নেন ১২০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জনকে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত দেয়া হয় ৬৫ জনকে এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৫০ জনকে দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও টিকা নিয়েছেন ৫৮ জন।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা গ্রহণ

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সকাল ১১টায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন। সকাল ৯টার দিকে বিএসএমএমইউর বুথে প্রথম টিকা নেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

পরে সকাল পৌনে ১১টার দিকে টিকা নেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এই হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ গতকাল ঢামেক হাসপাতালে করোনার টিকা নেন। টিকা নেয়ার পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভালো লাগছে। বিশেষ কিছু অনুভব করছি না। এটি অন্য সাধারণ টিকার মতই।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আজ টিকা নিতে এসেছি। সাধারণ মানুষ বুঝুক, এটি একটি নিরাপদ টিকা।’

টিকা গ্রহীতারা ভালো ও সুস্থ আছেন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা আনন্দঘন পরিবেশে টিকা দেয়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেকেই টিকা নিয়েছেন, অনেকেই এসেছেন। যে পরিবেশ, মনে হলো যে ঈদের ভাব। সেরকম আনন্দমুখর পরিবেশে টিকা নেয়া হচ্ছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন এবং কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায়নি।’

জাহিদ মালেক সবাইকে নির্ভয়ে টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীতে যত টিকা আবিষ্কার হয়েছে, এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা সবচাইতে নিরাপদ। এই টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নির্ভয়ে এই টিকা নিতে পারেন। টিকা নেয়া পরবর্তী যা যা করণীয় তা করা হচ্ছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

টিকা নেয়ার পর বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া দেশবাসীর প্রতি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকা নেয়াটা আমার সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব। মানুষ আমাকে দেখে আস্থা ও সাহস পাবে। মানুষের সংশয় ইতোমধ্যে কাটতে শুরু করেছে। আমরা চাই, আমাদের দেখে মানুষ আস্থা পাক এবং টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ হোক।’ উপাচার্য আরও জানান, টিকা নেয়ার পর তিনি আগের মতোই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা অনুভব করছেন। কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করছেন না।

মুগদা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক, নার্সসহ ৬৫ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে জানিয়েছে অধ্যক্ষ আহমাদুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসপাতালের স্টাফদের অনেকেই টিকা নিতে চাচ্ছে। ভ্যাকসিনের সেরকম কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অথচ বিভিন্ন ধরনের গুজব আছে। ধীরে ধীরে মানুষের সংশয় দূর হয়ে যাবে। মানুষও টিকা দিতে আগ্রহী হবে।’

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ৫০ জনকে দেয়ার। আগ্রহীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সংখ্যাও বেড়েছে। আমাদের হাসপাতালের স্টাফরাই টিকা নিয়েছে। আমি নিজেও নিয়েছি। কারও কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’

ঢামেকে টিকা কর্মসূচি

উৎসবমুখর পরিবেশে ঢামেকে চারটি বুথে ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী, নার্স ও আনসার সদস্যরা করোনার টিকা নেন।

বিকেল চারটার পর ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘১২০ জনের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন আরও বেশি পেলে দেয়া যেত। অনেকের আগ্রহ ছিল।’

তিনি জানান, সকালে ভ্যাকসিন দেয়ার শুরুতে নাক, কান, গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি প্রথম ভ্যাকসিন নেন। এরপর ঢামেকের ৫৪ জন ডাক্তার, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য পদবীর কর্মচারী মিলে ৪৩ জন, নার্স ৭ জন, আনসার সদস্য ১৫ জন টিকা নিয়েছেন।

ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘খোঁজ নিয়েছি যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা এখনও ভালো আছেন। অভিযোগ নেই। তাদের শরীরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। তবে ভ্যাকসিন নেয়ার হয়তো কারো সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

টিকা নেয়ার পর ঢামেকের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নূরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, ‘আমি শরীরে কোন ধরনের জ্বর, শ্বাস কষ্ট অনুভব করিনি।’

আনসার সদস্য রেশমা আক্তার পারুল জানান, ‘ভ্যাকসিন নেয়ার পর শরীরে কোন দুর্বলতা দেখা যায়নি।’

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১ , ১৫ মাঘ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টিকা নিতে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বিএসএমএমইউসহ পাঁচ হাসপাতালে গতকাল দ্বিতীয় দিন টিকা প্রদান -সংবাদ

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমদিন ৫৫ থেকে ৬০ জনকে করোনা টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। টিকা গ্রহণের সময় ছিল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা। কিন্তু বেলা ১২টার মধ্যেই টিকা পেতে নিবন্ধন করেন ৬৫ জন, সোয়া ১২টায় অনানুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় টিকাদান। টিকা পেতে কারোর কোনরকম ভোগান্তি হয়নি। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ভ্যাকসিন (টিকা) সেন্টারে ছিল উৎসবের আমেজ। বুথে দাঁড়িয়ে ‘এনআইডি’ কার্ড দেখিয়ে মাত্র ২/৩ মিনিটেই নিবন্ধন করতে পেরেছেন টিকা গ্রহীতারা।

ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে গতকাল নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষ স্বেচ্ছায় টিকা নেন। পাঁচ হাসপাতালে মোট ৫০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, কিন্তু আগ্রহীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গতকাল ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। দু’একজন ছাড়া পাঁচ হাসপাতালে টিকা গ্রহীতাদের সবাই স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির যোদ্ধা। টিকা গ্রহীতাদের কারোর শরীরেই কোন রকম পাশর্^প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মুগদা হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী টিকা পেতে ভিড় করছেন। চারটি নিবন্ধন বুথে টিকা প্রত্যাশীরা আগ্রহ-উৎসাহ-উদ্দীপনায় নিবন্ধন করাচ্ছেন।

মুগদা হাসপাতালের টিকা কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত (ইপিআই ইনচার্জ) রফিকুল ইসলাম বেলা ১২টার দিকে সংবাদকে বলেন, ‘এখানে ৫০ থেকে ৬০ জনকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু অনেকেই স্বেচ্ছায় টিকা নিতে চাওয়ায় পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক (অসীম কুমার নাথ) স্যার বলেছেন, যারা যারা টিকা নিতে চায় তাদের টিকা দিয়ে দাও। এ কারণে বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়।’

ঝামেলা ও হয়রানিমুক্ত

পরিবেশে টিকাদান

এতদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলে আসছিলেন, অনলাইনে নিবন্ধন করে করোনার টিকা নিতে হবে, বিকল্প ব্যবস্থাও থাকবে। ‘অ্যাপ’ বা অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে সাত মিনিট।

কিন্তু ম্যানুয়ালি টিকার নিবন্ধনে সময় লাগছে মাত্র ২/৩ মিনিট। খুব সহজেই এই প্রক্রিয়ায় টিকার নিবন্ধন করা হয়। রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালেই গতকাল ‘ম্যানুয়ালি’ একটি ফরম পূরণ করে নিবন্ধন করা হয়।

টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়। গতকাল কুর্মিটোলাসহ ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে করোনার টিকা দেয়া হয়। এই চারটি হাসপাতাল হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল। এর মধ্যে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী ছাড়া বাকি চারটি হাসপাতালে গতকাল চারটি করে বুথ বসিয়ে টিকার নিবন্ধন করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বুধবার সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার পাঁচটি হাসপাতালে ৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল, ১০০ জনকেই দেয়া হয়েছে।

অন্য হাসপাতালগুলোর মধ্যে বিএসএমএমইউতে সর্বোচ্চ ২০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল, বেলা ২টা নাগাদ টিকা কার্যক্রম শেষ, দেয়া হয় ১৯৮ জনকে, ঢামেকে ১০০ জনকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত কার্যক্রম শেষ হয়, টিকা নেন ১২০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জনকে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত দেয়া হয় ৬৫ জনকে এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৫০ জনকে দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও টিকা নিয়েছেন ৫৮ জন।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা গ্রহণ

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সকাল ১১টায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন। সকাল ৯টার দিকে বিএসএমএমইউর বুথে প্রথম টিকা নেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

পরে সকাল পৌনে ১১টার দিকে টিকা নেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এই হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ গতকাল ঢামেক হাসপাতালে করোনার টিকা নেন। টিকা নেয়ার পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভালো লাগছে। বিশেষ কিছু অনুভব করছি না। এটি অন্য সাধারণ টিকার মতই।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আজ টিকা নিতে এসেছি। সাধারণ মানুষ বুঝুক, এটি একটি নিরাপদ টিকা।’

টিকা গ্রহীতারা ভালো ও সুস্থ আছেন : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা আনন্দঘন পরিবেশে টিকা দেয়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেকেই টিকা নিয়েছেন, অনেকেই এসেছেন। যে পরিবেশ, মনে হলো যে ঈদের ভাব। সেরকম আনন্দমুখর পরিবেশে টিকা নেয়া হচ্ছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন এবং কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায়নি।’

জাহিদ মালেক সবাইকে নির্ভয়ে টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীতে যত টিকা আবিষ্কার হয়েছে, এর মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা সবচাইতে নিরাপদ। এই টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। নির্ভয়ে এই টিকা নিতে পারেন। টিকা নেয়া পরবর্তী যা যা করণীয় তা করা হচ্ছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

টিকা নেয়ার পর বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া দেশবাসীর প্রতি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকা নেয়াটা আমার সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব। মানুষ আমাকে দেখে আস্থা ও সাহস পাবে। মানুষের সংশয় ইতোমধ্যে কাটতে শুরু করেছে। আমরা চাই, আমাদের দেখে মানুষ আস্থা পাক এবং টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ হোক।’ উপাচার্য আরও জানান, টিকা নেয়ার পর তিনি আগের মতোই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থা অনুভব করছেন। কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করছেন না।

মুগদা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক, নার্সসহ ৬৫ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে জানিয়েছে অধ্যক্ষ আহমাদুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাসপাতালের স্টাফদের অনেকেই টিকা নিতে চাচ্ছে। ভ্যাকসিনের সেরকম কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অথচ বিভিন্ন ধরনের গুজব আছে। ধীরে ধীরে মানুষের সংশয় দূর হয়ে যাবে। মানুষও টিকা দিতে আগ্রহী হবে।’

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ৫০ জনকে দেয়ার। আগ্রহীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সংখ্যাও বেড়েছে। আমাদের হাসপাতালের স্টাফরাই টিকা নিয়েছে। আমি নিজেও নিয়েছি। কারও কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’

ঢামেকে টিকা কর্মসূচি

উৎসবমুখর পরিবেশে ঢামেকে চারটি বুথে ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী, নার্স ও আনসার সদস্যরা করোনার টিকা নেন।

বিকেল চারটার পর ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘১২০ জনের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন আরও বেশি পেলে দেয়া যেত। অনেকের আগ্রহ ছিল।’

তিনি জানান, সকালে ভ্যাকসিন দেয়ার শুরুতে নাক, কান, গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি প্রথম ভ্যাকসিন নেন। এরপর ঢামেকের ৫৪ জন ডাক্তার, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য পদবীর কর্মচারী মিলে ৪৩ জন, নার্স ৭ জন, আনসার সদস্য ১৫ জন টিকা নিয়েছেন।

ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘খোঁজ নিয়েছি যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা এখনও ভালো আছেন। অভিযোগ নেই। তাদের শরীরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। তবে ভ্যাকসিন নেয়ার হয়তো কারো সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

টিকা নেয়ার পর ঢামেকের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নূরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, ‘আমি শরীরে কোন ধরনের জ্বর, শ্বাস কষ্ট অনুভব করিনি।’

আনসার সদস্য রেশমা আক্তার পারুল জানান, ‘ভ্যাকসিন নেয়ার পর শরীরে কোন দুর্বলতা দেখা যায়নি।’