কুয়েতে এমপি পাপুলের ৪ বছরের জেল

মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক হয়ে জেলে থাকা বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে ৪ বছরের সাজা দিয়েছে কুয়েতের আদালত। গতকাল কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লা আল ওসমান এ রায় ঘোষণা করেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। আদেশে পাপুল ও তার এক সহযোগীর ১৯ লাখ দিনার বাংলাদেশি টাকায় ৫৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বাইরে ফোজদারি অপরাধে এই প্রথম কোন সংসদ সদস্য দন্ডিত হলেন। নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে ১৪৮ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা করেছিল। এছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিও এমপি পাপুলের মানবপাচার এবং অর্থপাচারের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।

কুয়েতের গণমাধ্যম আল-কাবাস ও আল-রাইয়ের খবরে বলা হয়, পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসেবে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। পাপুলসহ দন্ডিত প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে ওই রায়ে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। খরবে বলা হয়েছে পাপুলের সঙ্গে সাজা পাওয়া কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা ছিলেন পাপুলের বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী এবং এজেন্ট। কুয়েতের দুই পার্লামেন্ট সদস্য সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবি এবং সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদকে এ মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগে মামলা করা হয়।

খবরে বলা হয়, কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন পরে তদন্ত করে পাপুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনে। অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ঠিক করে দেন বিচারক। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি বরখাস্ত মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহও রয়েছেন দন্ডিতদের মধ্যে। আসামিদের মধ্যে মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় ঘুষের বিনিময়ে পাপুলের বেশ কিছু কাজে সায় দেন বলে অভিযোগ ছিল। আর কুয়েতের পার্লামেন্টের এমপি সাদুন হাম্মাদ ও সালাহ খুরশিদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ‘ঘুষ নিয়ে’ অবৈধ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে আদালতে তা প্রমাণিত হয়নি। কুয়েতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পাপুলের নামে জমা থাকা ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করা হয়। তিনি কুয়েতে মানবপাচার করে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। হুন্ডি ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২০১৬ সালে বিদেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলেও সে দেশের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে কুয়েতের আদালতে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পদ হারাতে হবে পাপুলকে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য পেলে তবেই তার সদস্য পদ খারিজের উদ্যোগ নেবে সংসদ সচিবালয়। আর পাপুলের সদস্য পদ নিয়ে কোন বিতর্ক দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে ৬ মাসের বেশি জেলে থাকার পর সাজা পাওয়া সংসদ সদস্য পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বহাল আছে। এমনকি দুর্নীতির মামলা হলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রীর সংসদ সদস্য পদ বহাল আছে। এলাকাবাসী না চিনলেও অর্থ খরচ করে এবং দান করে ২০১৬ সালে রাজনৈতিক মাঠে আলোচনায় আসেন পাপুল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে সমর্থন দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কুয়েত আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে পাপুল ২০১৭ সালে দেশে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদের ফরম পূরণ করেন। এমপি হওয়ার পর ২০১৯ সালে রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর সদস্য পদ পান। নিজের পাশাপাশি স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়েকে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় সদস্য করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি তাদের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। জোট থেকে আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দেয় সাবেক এমপি মোহাম্মদ নোমানকে। পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে পাপুল বিএনপির প্রার্থীর বিপরীতে এমপি হন।

গত বছরের (২০২০ খ্রিঃ) ৬ জুন কুয়েতের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। পাপুল কান্ডে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের কয়েক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার এবং ব্যবস্থা নেয় দেশটি। অর্থ-মানবপাচার ও ভিসা বিক্রির অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার পাপুল ও তার কুয়েতি প্রতিষ্ঠানের মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ কুয়েতি দিনার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা) জব্দ করেছে দেশটির সরকার। দেশ থেকে অর্থ পাচার, কর্মসংস্থানের কথা বলে বিভিন্ন দেশে মানুষ পাচারসহ নানা অভিযোগ উঠে পাপুলের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে তিনি দেশটির কারাগারে আছেন।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১ , ১৫ মাঘ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কুয়েতে এমপি পাপুলের ৪ বছরের জেল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক হয়ে জেলে থাকা বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে ৪ বছরের সাজা দিয়েছে কুয়েতের আদালত। গতকাল কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লা আল ওসমান এ রায় ঘোষণা করেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। আদেশে পাপুল ও তার এক সহযোগীর ১৯ লাখ দিনার বাংলাদেশি টাকায় ৫৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বাইরে ফোজদারি অপরাধে এই প্রথম কোন সংসদ সদস্য দন্ডিত হলেন। নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে ১৪৮ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা করেছিল। এছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিও এমপি পাপুলের মানবপাচার এবং অর্থপাচারের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।

কুয়েতের গণমাধ্যম আল-কাবাস ও আল-রাইয়ের খবরে বলা হয়, পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসেবে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। পাপুলসহ দন্ডিত প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে ওই রায়ে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। খরবে বলা হয়েছে পাপুলের সঙ্গে সাজা পাওয়া কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা ছিলেন পাপুলের বিভিন্ন কাজের মধ্যস্থতাকারী এবং এজেন্ট। কুয়েতের দুই পার্লামেন্ট সদস্য সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবি এবং সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদকে এ মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগে মামলা করা হয়।

খবরে বলা হয়, কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন পরে তদন্ত করে পাপুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ লেনদেন ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ আনে। অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ঠিক করে দেন বিচারক। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি বরখাস্ত মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহও রয়েছেন দন্ডিতদের মধ্যে। আসামিদের মধ্যে মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় ঘুষের বিনিময়ে পাপুলের বেশ কিছু কাজে সায় দেন বলে অভিযোগ ছিল। আর কুয়েতের পার্লামেন্টের এমপি সাদুন হাম্মাদ ও সালাহ খুরশিদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ‘ঘুষ নিয়ে’ অবৈধ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে আদালতে তা প্রমাণিত হয়নি। কুয়েতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পাপুলের নামে জমা থাকা ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করা হয়। তিনি কুয়েতে মানবপাচার করে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। হুন্ডি ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২০১৬ সালে বিদেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলেও সে দেশের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে কুয়েতের আদালতে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পদ হারাতে হবে পাপুলকে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য পেলে তবেই তার সদস্য পদ খারিজের উদ্যোগ নেবে সংসদ সচিবালয়। আর পাপুলের সদস্য পদ নিয়ে কোন বিতর্ক দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে ৬ মাসের বেশি জেলে থাকার পর সাজা পাওয়া সংসদ সদস্য পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বহাল আছে। এমনকি দুর্নীতির মামলা হলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রীর সংসদ সদস্য পদ বহাল আছে। এলাকাবাসী না চিনলেও অর্থ খরচ করে এবং দান করে ২০১৬ সালে রাজনৈতিক মাঠে আলোচনায় আসেন পাপুল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে সমর্থন দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কুয়েত আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে পাপুল ২০১৭ সালে দেশে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদের ফরম পূরণ করেন। এমপি হওয়ার পর ২০১৯ সালে রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর সদস্য পদ পান। নিজের পাশাপাশি স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়েকে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় সদস্য করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি তাদের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। জোট থেকে আসন পেয়ে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দেয় সাবেক এমপি মোহাম্মদ নোমানকে। পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে পাপুল বিএনপির প্রার্থীর বিপরীতে এমপি হন।

গত বছরের (২০২০ খ্রিঃ) ৬ জুন কুয়েতের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে কুয়েতি প্রসিকিউশন। পাপুল কান্ডে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের কয়েক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার এবং ব্যবস্থা নেয় দেশটি। অর্থ-মানবপাচার ও ভিসা বিক্রির অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার পাপুল ও তার কুয়েতি প্রতিষ্ঠানের মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ কুয়েতি দিনার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা) জব্দ করেছে দেশটির সরকার। দেশ থেকে অর্থ পাচার, কর্মসংস্থানের কথা বলে বিভিন্ন দেশে মানুষ পাচারসহ নানা অভিযোগ উঠে পাপুলের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে তিনি দেশটির কারাগারে আছেন।