ভাসানচরের উদ্দেশে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দল

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় তৃতীয় দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করেছে রোহিঙ্গাদের আরেকটি দল। গতকাল দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে ১৬টি বাস এবং বিকেল ৩টায় ১৭টি বাসে করে রোহিঙ্গারা উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পথে রওনা দিয়েছে। পথের নিরাপত্তায় বিকল্প হিসেবে আরও দুটি খালি বাস এই বহরে সংযুক্ত আছে। মালপত্র বহন করছে আরও কয়েকটি ট্রাক। তবে বাসগুলোতে ১ হাজার ৭৮০ জন রোহিঙ্গা উঠেছেন বলে জানা গেছে।

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে ভাসানচরের পথে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। তিনি জানান, দুপুরের দিকে রোহিঙ্গাদের একটি দল বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া ত্যাগ করেছে। সেখানে কতজন রোহিঙ্গা আছে সেটা এখন বলা মুশকিল।

দিন শেষে কতজন যাচ্ছেন সেটা বলা যাবে। ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামে বিন শাহীন কলেজে ট্রানজিট ক্যাম্পে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার তাদের জাহাজে তোলা হবে। ২৯ জানুয়ারি তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন। এই ধাপে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে কথা হয় ভাসানচরে যাওয়ার জন্য আসা নুরুল ইসলাম নামে এক রোহিঙ্গার সঙ্গে। তিনি জানান, উখিয়া কুতুপালংয়ে প্রায় সময় সংর্ঘষ লেগে থাকে। তাই জীবনের নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনের আশায় ভাসানচরে যাচ্ছি। এর আগে পরিবারের ২৫ জন স্বজন প্রথম ধাপে গেছেন। তারা সবাই সেখানে খুব ভালো আছেন। খুব আনন্দ লাগছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হবে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসে করে রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরে উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে।

ডিসেম্বরের ৪ এবং ২৯ তারিখে দুই ধাপে প্রায় ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ভাসানচরে পৌঁছানো রোহিঙ্গা বসতিদের মধ্যে ৮০১ জন পুরুষ, ৯৮৭ জন নারী এবং ১৬৫৮ জন শিশু। তার আগে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচর রাখা হয়েছে।

মায়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১ , ১৫ মাঘ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ভাসানচরের উদ্দেশে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দল

নূরুল হক, টেকনাফ (কক্সবাজার)

image

ভাসানচরের প্রবেশপথের ফাইল ছবি

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় তৃতীয় দফায় ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করেছে রোহিঙ্গাদের আরেকটি দল। গতকাল দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে ১৬টি বাস এবং বিকেল ৩টায় ১৭টি বাসে করে রোহিঙ্গারা উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পথে রওনা দিয়েছে। পথের নিরাপত্তায় বিকল্প হিসেবে আরও দুটি খালি বাস এই বহরে সংযুক্ত আছে। মালপত্র বহন করছে আরও কয়েকটি ট্রাক। তবে বাসগুলোতে ১ হাজার ৭৮০ জন রোহিঙ্গা উঠেছেন বলে জানা গেছে।

রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে ভাসানচরের পথে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। তিনি জানান, দুপুরের দিকে রোহিঙ্গাদের একটি দল বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া ত্যাগ করেছে। সেখানে কতজন রোহিঙ্গা আছে সেটা এখন বলা মুশকিল।

দিন শেষে কতজন যাচ্ছেন সেটা বলা যাবে। ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের যারা যেতে ইচ্ছুক তাদের পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামে বিন শাহীন কলেজে ট্রানজিট ক্যাম্পে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার তাদের জাহাজে তোলা হবে। ২৯ জানুয়ারি তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন। এই ধাপে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে কথা হয় ভাসানচরে যাওয়ার জন্য আসা নুরুল ইসলাম নামে এক রোহিঙ্গার সঙ্গে। তিনি জানান, উখিয়া কুতুপালংয়ে প্রায় সময় সংর্ঘষ লেগে থাকে। তাই জীবনের নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনের আশায় ভাসানচরে যাচ্ছি। এর আগে পরিবারের ২৫ জন স্বজন প্রথম ধাপে গেছেন। তারা সবাই সেখানে খুব ভালো আছেন। খুব আনন্দ লাগছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হবে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাসে করে রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরে উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে।

ডিসেম্বরের ৪ এবং ২৯ তারিখে দুই ধাপে প্রায় ৩ হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ভাসানচরে পৌঁছানো রোহিঙ্গা বসতিদের মধ্যে ৮০১ জন পুরুষ, ৯৮৭ জন নারী এবং ১৬৫৮ জন শিশু। তার আগে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচর রাখা হয়েছে।

মায়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।