নদী রক্ষার্থে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে

‘নদী জীবন্ত সত্তা এবং পানির ধারক। সূতরাং নদী রক্ষার্থে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’ অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এসব কথা বলেন। গত বুধবার বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ, এনজিও কর্মীসহ অনেকেই এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দেন। প্রথম দিনের প্রধান থিমেটিক সেশন ছিল ওয়াটার কমনস : লেসনস ফ্রম কোভিড-১৯।

নদীর অধিকারের কথা বলতে গিয়ে হাওলাদার বলেন, ২০১৯ সালে হাইকোর্ট নদীকে একটি জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণা করে। উন্নত নদী ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশসহ সব দেশেই আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি-বিধান রয়েছে। এরপরও অনেক দেশ নদী ও পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনায় সেসব বিধান বাস্তবায়নে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করছে না। পানি ন্যায্যতা নিশ্চিতকল্পে আঞ্চলিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার জন্য জোরালো আহ্বান জানান মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

‘ওয়াটার ক্লাইমেট অ্যান্ড জাস্টিস ইন দ্য ওয়েক অব কোভিড-১৯’ শীর্ষক সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, যেখানে পানি, জলবায়ু, ন্যায্যতা এবং কোভিড-১৯ বিষয় প্রাধান্য পায়। তিনি বলেন, মহামারীর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বরাদ্দের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যকার অসমতাসহ পানিসম্পদ বরাদ্দে গ্লোবাল নর্থ ও গ্লোবাল সাউথের মধ্যকার অসমতাও আলোচনায় উঠে এসেছে। মহামারীর সময়ে পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও দুষ্প্রাপ্যতার সমস্যা মোকাবিলার ওপর ড. আহমেদ আলোকপাত করেন।

গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব ওয়াটার মিউজিয়ামসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. এরিবার্তো ইউলিসি বলেন, পানিসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নে পানিকে অন্তর্ভুক্ত করতে মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থাকে যুক্ত করার কাজই হচ্ছে দ্য গ্লোবাল নেটওয়ার্কের। অতীত ও বর্তমান ওয়াটার নলেজের একটি সংযোগ হতে পারে এই পানি জাদুঘর যার মাধ্যমে সর্বসাধারণকে নতুনত্ব এবং নতুন মূল্যবোধকে উদ্দীপিত করতে পারে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নদী-অধিকারের ইস্যুটি আলোচনায় এগিয়ে নিতে কাজ করে চলছি। আমরা বিশ্বের নদীবিষয়ক বিভিন্ন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে পটুয়াখালীতে পানি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছি। হালদা নদী রক্ষা আন্দোলনকেও অ্যাকশনএইড সমর্থন করছে। নদীকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা দিতেও সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করে যাচ্ছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে পল্লীগীতি ও লালন সংগীতের স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন নদীবিষয়ক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের লেখা বই ‘রাইটস, রিভারস অ্যান্ড দ্য কোয়েস্ট ফর ওয়াটার কমনস : দ্য কেইস অব বাংলাদেশের ভার্চুয়াল উন্মোচনও হয় সম্মেলনের এই সেশনে। অ্যাকশনএইড প্রতিষ্ঠিত পানি জাদুঘরের স্থাপত্যবিদ রাজন দাশ তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন চারটি থিমেটিক সেশন- ওয়াটার কমনস : লেসনস ফ্রম কোভিড-১৯, ওয়াটার জেন্ডার অ্যান্ড কোভিড-১৯ নেক্সাস, রাইটস অব রিভারস এবং ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট গ্রাসরুটস ইনোভেশন অ্যান্ড সলিউশনের উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলন চলবে ২৯ জানুয়ারি প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ পর্যন্ত।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১ , ১৫ মাঘ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

নদী রক্ষার্থে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

‘নদী জীবন্ত সত্তা এবং পানির ধারক। সূতরাং নদী রক্ষার্থে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’ অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এসব কথা বলেন। গত বুধবার বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, পরিবেশবিদ, এনজিও কর্মীসহ অনেকেই এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দেন। প্রথম দিনের প্রধান থিমেটিক সেশন ছিল ওয়াটার কমনস : লেসনস ফ্রম কোভিড-১৯।

নদীর অধিকারের কথা বলতে গিয়ে হাওলাদার বলেন, ২০১৯ সালে হাইকোর্ট নদীকে একটি জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণা করে। উন্নত নদী ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশসহ সব দেশেই আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি-বিধান রয়েছে। এরপরও অনেক দেশ নদী ও পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনায় সেসব বিধান বাস্তবায়নে যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করছে না। পানি ন্যায্যতা নিশ্চিতকল্পে আঞ্চলিক সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার জন্য জোরালো আহ্বান জানান মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

‘ওয়াটার ক্লাইমেট অ্যান্ড জাস্টিস ইন দ্য ওয়েক অব কোভিড-১৯’ শীর্ষক সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, যেখানে পানি, জলবায়ু, ন্যায্যতা এবং কোভিড-১৯ বিষয় প্রাধান্য পায়। তিনি বলেন, মহামারীর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বরাদ্দের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যকার অসমতাসহ পানিসম্পদ বরাদ্দে গ্লোবাল নর্থ ও গ্লোবাল সাউথের মধ্যকার অসমতাও আলোচনায় উঠে এসেছে। মহামারীর সময়ে পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও দুষ্প্রাপ্যতার সমস্যা মোকাবিলার ওপর ড. আহমেদ আলোকপাত করেন।

গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব ওয়াটার মিউজিয়ামসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. এরিবার্তো ইউলিসি বলেন, পানিসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নে পানিকে অন্তর্ভুক্ত করতে মানুষ ও বিভিন্ন সংস্থাকে যুক্ত করার কাজই হচ্ছে দ্য গ্লোবাল নেটওয়ার্কের। অতীত ও বর্তমান ওয়াটার নলেজের একটি সংযোগ হতে পারে এই পানি জাদুঘর যার মাধ্যমে সর্বসাধারণকে নতুনত্ব এবং নতুন মূল্যবোধকে উদ্দীপিত করতে পারে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নদী-অধিকারের ইস্যুটি আলোচনায় এগিয়ে নিতে কাজ করে চলছি। আমরা বিশ্বের নদীবিষয়ক বিভিন্ন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে পটুয়াখালীতে পানি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছি। হালদা নদী রক্ষা আন্দোলনকেও অ্যাকশনএইড সমর্থন করছে। নদীকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা দিতেও সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করে যাচ্ছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে পল্লীগীতি ও লালন সংগীতের স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন নদীবিষয়ক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের লেখা বই ‘রাইটস, রিভারস অ্যান্ড দ্য কোয়েস্ট ফর ওয়াটার কমনস : দ্য কেইস অব বাংলাদেশের ভার্চুয়াল উন্মোচনও হয় সম্মেলনের এই সেশনে। অ্যাকশনএইড প্রতিষ্ঠিত পানি জাদুঘরের স্থাপত্যবিদ রাজন দাশ তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন চারটি থিমেটিক সেশন- ওয়াটার কমনস : লেসনস ফ্রম কোভিড-১৯, ওয়াটার জেন্ডার অ্যান্ড কোভিড-১৯ নেক্সাস, রাইটস অব রিভারস এবং ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট গ্রাসরুটস ইনোভেশন অ্যান্ড সলিউশনের উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলন চলবে ২৯ জানুয়ারি প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ পর্যন্ত।