আবারও সাংবাদিকের ওপর হামলা : সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। সশস্ত্র ব্যক্তিরা শহরে টহল দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংবাদিক, পুলিশ আহত এবং র‌্যাবের গাড়ি ভাঙচুর করা হলেও প্রশাসন নির্বিকার। বর্তমানে পাথরঘাটায় নির্বাচনী পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ ভোটাররা।

গত মঙ্গলবার রাতে বরগুনার পাথরঘাটায় এলাকার এমপির নেতৃত্বে পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর হামলার সময় দায়িত্বপালনরত পুলিশ আহত হয়, ভাঙচুর করা হয় র‌্যাবের গাড়ি। এ সময় সাংবাদিকরাও হামলাকারীদের রোষানলে পড়ে। এ বিষয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর মল্লিক কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও কার্যত কোন ব্যবস্থা গতকাল পর্যন্ত চোখে পড়েনি। উপরন্তু নির্যাতনের শিকার হন দৈনিক ভোরের কাগজের পাথরঘাটা প্রতিনিধি ও পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক অমল তালুকদার।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাসা থেকে বের হলে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাকে এলোপাতারি কিলঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়। পরে স্থানীয় সহকর্মীদের সহায়তায় তাকে পাথরঘাটা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার অবস্থা গুরুতর। একই সময় পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সংবাদ-এর পাথরঘাটা প্রতিনিধি জাফর ইকবালকেও হামলাকারীরা খোঁজ করে। তাকে না পেয়ে সাংবাদিক খোকন কর্মকারের বাসায় হানা দেয়।

সূত্র জানায়, ২৮জানুয়ারি খোকন কর্মকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একদল অপরিচিত সন্ত্রাসী জাফর ইকবালকে খুঁজতে যায়। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জাফর ইকবাল ও তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার সতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের বাড়ি ও শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে হামলার খবর শুনে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এতে যমুনা টিভির বরগুনা প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন ও ক্যামেরাম্যান এসএম সিফাত, সমকালের পাথরঘাটা প্রতিনিধি ইমাম হোসেন নাহিদ, আমাদের সময়ের পাথরঘাটা প্রতিনিধি কাজী রাকিব গুরুতর আহত হন। সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পাথরঘাটা কেজি স্কুল রোড পুকুরে ফেলে দেয়। তারা মোহনা টিভির সাংবাদিক সুমন ইসলামকে না পেয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুট-পাট চালায়।

পাথরঘাটা পৌরসভার ভোটার মোশারেফ হোসেন, আবদুছ ছোবাহান, আবুল কালাম, রওশন আলীসহ অনেকেই বলেন, পাথরঘাটার ইতিহাসে আমরা এ রকম নির্বাচন দেখিনি।

তারা অভিযোগ করে বলেন নির্বাচনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী কবির ও বাসার উজ্জাল বিশ্বাষ, বাদশা, হাসান খলিফা, শিশু মাদবারসহ অর্ধশতাধিক মানুষের ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে পাথরঘাটা পৌরসভায় নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই।

বিষয়টি বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক, পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীসহ পুলিশ হেডকোয়ার্টার মিডিয়া শাখাকে অবহিত করা হয়েছে। বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহররম হোসেনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে মিডিয়া শাখা থেকে জানালেও মোহররম হোসেন গতকাল পর্যন্ত পাথরঘাটা যাননি বলে জানা গেছে।

একের পর এক সাংবাদিকদের ওপর হামলায় চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাথরঘাটা প্রেসক্লাব এবং বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি জহিরল হাসান বাদসা ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ। তারা পাথরঘাটায় দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হমলার তিব্র নিন্দা জানান।

এ ঘটনায় গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে এক জরুরি সভা ডাকা হয়। সভায় সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দাসহ আইনের আশ্রয় গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১ , ১৫ মাঘ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পাথরঘাটায়

আবারও সাংবাদিকের ওপর হামলা : সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। সশস্ত্র ব্যক্তিরা শহরে টহল দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংবাদিক, পুলিশ আহত এবং র‌্যাবের গাড়ি ভাঙচুর করা হলেও প্রশাসন নির্বিকার। বর্তমানে পাথরঘাটায় নির্বাচনী পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ ভোটাররা।

গত মঙ্গলবার রাতে বরগুনার পাথরঘাটায় এলাকার এমপির নেতৃত্বে পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর হামলার সময় দায়িত্বপালনরত পুলিশ আহত হয়, ভাঙচুর করা হয় র‌্যাবের গাড়ি। এ সময় সাংবাদিকরাও হামলাকারীদের রোষানলে পড়ে। এ বিষয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর মল্লিক কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও কার্যত কোন ব্যবস্থা গতকাল পর্যন্ত চোখে পড়েনি। উপরন্তু নির্যাতনের শিকার হন দৈনিক ভোরের কাগজের পাথরঘাটা প্রতিনিধি ও পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক অমল তালুকদার।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাসা থেকে বের হলে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাকে এলোপাতারি কিলঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়। পরে স্থানীয় সহকর্মীদের সহায়তায় তাকে পাথরঘাটা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার অবস্থা গুরুতর। একই সময় পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সংবাদ-এর পাথরঘাটা প্রতিনিধি জাফর ইকবালকেও হামলাকারীরা খোঁজ করে। তাকে না পেয়ে সাংবাদিক খোকন কর্মকারের বাসায় হানা দেয়।

সূত্র জানায়, ২৮জানুয়ারি খোকন কর্মকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একদল অপরিচিত সন্ত্রাসী জাফর ইকবালকে খুঁজতে যায়। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জাফর ইকবাল ও তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার সতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের বাড়ি ও শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসে হামলার খবর শুনে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এতে যমুনা টিভির বরগুনা প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন ও ক্যামেরাম্যান এসএম সিফাত, সমকালের পাথরঘাটা প্রতিনিধি ইমাম হোসেন নাহিদ, আমাদের সময়ের পাথরঘাটা প্রতিনিধি কাজী রাকিব গুরুতর আহত হন। সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পাথরঘাটা কেজি স্কুল রোড পুকুরে ফেলে দেয়। তারা মোহনা টিভির সাংবাদিক সুমন ইসলামকে না পেয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুট-পাট চালায়।

পাথরঘাটা পৌরসভার ভোটার মোশারেফ হোসেন, আবদুছ ছোবাহান, আবুল কালাম, রওশন আলীসহ অনেকেই বলেন, পাথরঘাটার ইতিহাসে আমরা এ রকম নির্বাচন দেখিনি।

তারা অভিযোগ করে বলেন নির্বাচনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী কবির ও বাসার উজ্জাল বিশ্বাষ, বাদশা, হাসান খলিফা, শিশু মাদবারসহ অর্ধশতাধিক মানুষের ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে পাথরঘাটা পৌরসভায় নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই।

বিষয়টি বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক, পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীসহ পুলিশ হেডকোয়ার্টার মিডিয়া শাখাকে অবহিত করা হয়েছে। বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহররম হোসেনকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে মিডিয়া শাখা থেকে জানালেও মোহররম হোসেন গতকাল পর্যন্ত পাথরঘাটা যাননি বলে জানা গেছে।

একের পর এক সাংবাদিকদের ওপর হামলায় চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাথরঘাটা প্রেসক্লাব এবং বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি জহিরল হাসান বাদসা ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ। তারা পাথরঘাটায় দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হমলার তিব্র নিন্দা জানান।

এ ঘটনায় গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে এক জরুরি সভা ডাকা হয়। সভায় সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দাসহ আইনের আশ্রয় গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়।