রংপুরে উচ্ছেদ অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলা

রংপুর নগরীর রবার্টসন্সগজ্ঞ এলাকায় অবৈধ পাথর ও বালুর স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ ও কয়েক কর্মকর্তার উপর হামলা মারপিট ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান শাহীনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় বুধবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত রাজিবুজ্জামান বসুনিয়া।

পুলিশ ও হামলার শিকার রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় পুলিশ, সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ারসহ নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের রবার্টসন্সগঞ্জ এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা কালে সেখানে রাস্তার ওপর একটি বড় ট্রাকে করে নির্মাণ সামগ্রী পাথরবালু ফেরানো দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় সিটি করপোরেশনের আইন ২০০৯ অনুযায়ী জরিমানা করার সময় অতর্কিতভাবে রংপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান শাহীন ও তার সহযোগী শেখ শাহজাহান আলম সঞ্জু ও মো. ফিরোজ ৪০/৫০ জন লোক এসে আমার মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জ করে। এ সময় তারা আমাকেসহ আমার টিমে থাকা সব সদস্যকে অকথ্যভাষায় গালাগাল করে এবং সার্ভেয়ারকে লাথি মারে ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

এক পর্যায়ে যুবলীগ নেতা শাহীন ও সঞ্জু তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের মোবাইল কোর্টের গাড়ি ভাঙচুরের নির্দেশ দেয়।

এছাড়াও তারা আমার এবং আমার সঙ্গে থাকা পুলিশ ফোর্সের ওপর চড়াও হয়ে একটি মাইক্রোবাস দিয়ে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় তারা সিটি মেয়র, প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান এবং সম্পত্তি কর্মকর্তা মাসুদ কবির বকশির নাম উল্লেখ করে গালাগাল করতে থাকে। যুবলীগ নেতা শাহীন হুমকি দেয় সরকারি দল যুবলীগের নেতা একথা বলে অশালীন ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এ সময় শাহজাহান আলম সঞ্জু আমাকে তার ডিজিএফআইয়ে কর্মরত আত্মীয়কে দিয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করারও হুমকি দেয়। তারা আমাদের পুরো টিমকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

বিষয়টি তাৎক্ষণিক সিটি মেয়র, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ পুরো মোবাইল টিমকে উদ্ধার করে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজুল ইসলাম জানান, যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান শাহীন ও তার সহযোগীদের উপর হামলা এবং এক কর্মচারীকে মারধর ও তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের জরিপ সহকারী বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা শাহিন ও তার দুই সহযোগী শেখ শাহজাহান আলম সঞ্জু ও মো. ফিরোজের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত নামা আরও ৩০/৪০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কোতয়ালী থানাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত রাজিবুজ্জামান বসুনিয়া জানান, বুধবার রাতে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রধান আসামি শাহীনকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে।

অন্যদিকে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, দলীয় পরিচয়ধারী সন্ত্রাসীরা সিটি করপোরেশনের আইনানুগ কাজে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় আমরা বিস্মিত এ হতবাক হয়েছি। বিষয়টি আমরা বিভাগীয় এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছি। দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই আমরা।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১ , ১৫ মাঘ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

রংপুরে উচ্ছেদ অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুর নগরীর রবার্টসন্সগজ্ঞ এলাকায় অবৈধ পাথর ও বালুর স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ ও কয়েক কর্মকর্তার উপর হামলা মারপিট ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান শাহীনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিটান কোতয়ালী থানায় বুধবার রাতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত রাজিবুজ্জামান বসুনিয়া।

পুলিশ ও হামলার শিকার রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় পুলিশ, সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ারসহ নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের রবার্টসন্সগঞ্জ এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা কালে সেখানে রাস্তার ওপর একটি বড় ট্রাকে করে নির্মাণ সামগ্রী পাথরবালু ফেরানো দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় সিটি করপোরেশনের আইন ২০০৯ অনুযায়ী জরিমানা করার সময় অতর্কিতভাবে রংপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান শাহীন ও তার সহযোগী শেখ শাহজাহান আলম সঞ্জু ও মো. ফিরোজ ৪০/৫০ জন লোক এসে আমার মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জ করে। এ সময় তারা আমাকেসহ আমার টিমে থাকা সব সদস্যকে অকথ্যভাষায় গালাগাল করে এবং সার্ভেয়ারকে লাথি মারে ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

এক পর্যায়ে যুবলীগ নেতা শাহীন ও সঞ্জু তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের মোবাইল কোর্টের গাড়ি ভাঙচুরের নির্দেশ দেয়।

এছাড়াও তারা আমার এবং আমার সঙ্গে থাকা পুলিশ ফোর্সের ওপর চড়াও হয়ে একটি মাইক্রোবাস দিয়ে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় তারা সিটি মেয়র, প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান এবং সম্পত্তি কর্মকর্তা মাসুদ কবির বকশির নাম উল্লেখ করে গালাগাল করতে থাকে। যুবলীগ নেতা শাহীন হুমকি দেয় সরকারি দল যুবলীগের নেতা একথা বলে অশালীন ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এ সময় শাহজাহান আলম সঞ্জু আমাকে তার ডিজিএফআইয়ে কর্মরত আত্মীয়কে দিয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করারও হুমকি দেয়। তারা আমাদের পুরো টিমকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

বিষয়টি তাৎক্ষণিক সিটি মেয়র, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ পুরো মোবাইল টিমকে উদ্ধার করে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজুল ইসলাম জানান, যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান শাহীন ও তার সহযোগীদের উপর হামলা এবং এক কর্মচারীকে মারধর ও তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের জরিপ সহকারী বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা শাহিন ও তার দুই সহযোগী শেখ শাহজাহান আলম সঞ্জু ও মো. ফিরোজের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত নামা আরও ৩০/৪০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কোতয়ালী থানাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কোতয়ালী থানার ওসি তদন্ত রাজিবুজ্জামান বসুনিয়া জানান, বুধবার রাতে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রধান আসামি শাহীনকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে।

অন্যদিকে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, দলীয় পরিচয়ধারী সন্ত্রাসীরা সিটি করপোরেশনের আইনানুগ কাজে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় আমরা বিস্মিত এ হতবাক হয়েছি। বিষয়টি আমরা বিভাগীয় এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছি। দ্রুত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই আমরা।