করোনার টিকা দেয়া শুরু চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মানুষ। বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এত দ্রুত আবিষ্কার হবে সেটা কিছুদিন আগেও ভাবা যেত না। আবিষ্কার হলেও বাংলাদেশ কবে টিকা পাবে সেটা নিয়েও সংশয় ছিল। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। আবিষ্কারের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশে টিকা এসেছে। এটা একটা ভালো খবর।

গত বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে পাঁচজনকে। দেশব্যাপী ২০টি সেক্টরের প্রায় ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে দেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। সরকার এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ ছিল, টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে সেই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। দেশের ঠিক কত ভাগ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী সেটা নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য সরকারের কাছে নেই। একাধিক বেসরকারি সংস্থা জরিপ করলেও তাদের তথ্য-উপাত্তের ফারাক আছে। টিকা নিয়ে অনেক ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক মানুষরাই বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছে। এমনকি শিক্ষিত-সচেতন মানুষের মধ্যেও সংশয় তৈরি হয়েছে। এক দল মানুষ টিকাই নিতে চাচ্ছে না বলে জানা যাচ্ছে। আর এক দল মানুষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে টিকা নেয়া বা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে টার্গেটেড জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা যাবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।

করোনার টিকা প্রশ্নে মানুষের প্রকৃত মনোভাবটা আগে বুঝতে হবে। তাদের মধ্যে কোন বিভ্রান্তি বা দ্বিধা থাকলে সেটা দূর করতে হবে। এক শ্রেণীর মানুষ কোভিড-১৯ রোগকে গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করেছে। তাদের এ বিপজ্জনক ভাবনার অবসান ঘটানো জরুরি। মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করতে সুপরিকল্পিত প্রয়াস চালাতে হবে। এক্ষেত্রে ইপিআই কর্মসূচির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।

টিকা দেয়া এবং টিকাপরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় কোন অব্যবস্থাপনা যেন না হয়, সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে যে, তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবে অতীতে তাদের বিরুদ্ধে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আছে। করোনার পরীক্ষা করাতে ও চিকিৎসা নিতে মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। টিকা নেয়ার বেলায় যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। করোনার টিকা দেয়া বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ কর্মযজ্ঞ সুচারুরূপে সম্পন্ন করা কঠিন।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২১ , ১৫ মাঘ ১৪২৭, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনার টিকা দেয়া শুরু চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মানুষ। বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এত দ্রুত আবিষ্কার হবে সেটা কিছুদিন আগেও ভাবা যেত না। আবিষ্কার হলেও বাংলাদেশ কবে টিকা পাবে সেটা নিয়েও সংশয় ছিল। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। আবিষ্কারের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশে টিকা এসেছে। এটা একটা ভালো খবর।

গত বুধবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে পাঁচজনকে। দেশব্যাপী ২০টি সেক্টরের প্রায় ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে দেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। সরকার এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ ছিল, টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে সেই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। দেশের ঠিক কত ভাগ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী সেটা নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য সরকারের কাছে নেই। একাধিক বেসরকারি সংস্থা জরিপ করলেও তাদের তথ্য-উপাত্তের ফারাক আছে। টিকা নিয়ে অনেক ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক মানুষরাই বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছে। এমনকি শিক্ষিত-সচেতন মানুষের মধ্যেও সংশয় তৈরি হয়েছে। এক দল মানুষ টিকাই নিতে চাচ্ছে না বলে জানা যাচ্ছে। আর এক দল মানুষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে টিকা নেয়া বা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে টার্গেটেড জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা যাবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।

করোনার টিকা প্রশ্নে মানুষের প্রকৃত মনোভাবটা আগে বুঝতে হবে। তাদের মধ্যে কোন বিভ্রান্তি বা দ্বিধা থাকলে সেটা দূর করতে হবে। এক শ্রেণীর মানুষ কোভিড-১৯ রোগকে গুরুত্বহীন ভাবতে শুরু করেছে। তাদের এ বিপজ্জনক ভাবনার অবসান ঘটানো জরুরি। মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করতে সুপরিকল্পিত প্রয়াস চালাতে হবে। এক্ষেত্রে ইপিআই কর্মসূচির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই।

টিকা দেয়া এবং টিকাপরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় কোন অব্যবস্থাপনা যেন না হয়, সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে যে, তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবে অতীতে তাদের বিরুদ্ধে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আছে। করোনার পরীক্ষা করাতে ও চিকিৎসা নিতে মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। টিকা নেয়ার বেলায় যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। করোনার টিকা দেয়া বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। সঠিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ কর্মযজ্ঞ সুচারুরূপে সম্পন্ন করা কঠিন।