রংপুর চিনিকলে মাড়াই বন্ধ

ক্ষেতে শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে আখ বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় চাষি

গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় আখচাষিরা এখন চরম বিপাকে পড়েছে। অনেকে গুড় তৈরি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও ইদানিং গুড়ের চাহিদা কম থাকায় ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না। এ কারণে এই এলাকার জনপ্রিয় ফসল আখ এবার কৃষকের মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বছরজুড়ে আবাদ করার পর একসাথে বিশাল অঙ্কের টাকার যোগান দেয়া ফসল আখ এবার জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারিশিল্প কারখানা গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনায় চাষ করা প্রায় ৫ হাজার ২শ’ একর জমিতে আখ দ-ায়মান রেখে হঠাৎ করে চলতি বছরে এ চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ অন্য চিনিকলে এসব আখ পাঠানোর ব্যবস্থা নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগন্য।

আখ কাটার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন কৃষকরা না পারছে জমির আখ অন্যত্র বিক্রি করতে, আবার না পারছে জমিতে রাখতে। এ কারণে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ আখ জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। জমি থেকে আখ কেটে জমি মুক্ত করতে না পেরে ধান বা অন্য ফসল চাষাবাদের প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া ঋণের টাকা আদায় করে নেয়ার জন্য সীমিত সংখ্যক ‘পুর্জি’ (চিনিকলে আখ সরবরাহের অনুমতিপত্র) দিলেও সে আখও সঠিকভাবে নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা। এর ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে অবৈধ মাড়াইকলে গুড় তৈরি করে আখের অর্ধেক মূল্যও ঘরে তুলতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রংপুর চিনিকলের আওতাধীন ৮টি সাব-জোন এলাকার ৪০টি ক্রয় কেন্দ্রের আওতায় পাঁচ হাজার দুইশ’ একর জমিতে উৎপাদিত ৫২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। গতবছরের ২৫ ডিসেম্বর মাড়াই শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই রংপুর চিনিকলসহ দেশের ৬টি চিনিকলে আখ মাড়াই স্থগিতের চিঠি আসে বিএসএফআইসি’র (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থা) সদর দপ্তর থেকে। চিনিকলের লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য এ পদক্ষেপ নিলেও চিনিকল থেকে দেয়া ঋণের টাকায় উৎপাদিত আখ সময়মতো ও সঠিকভাবে সংগ্রহের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে আখচাষি ও শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছেন। এরপরও কেবলমাত্র পরিবহন খাতেই কয়েকগুণ টাকা বেশি ব্যয় করে জয়পুরহাট চিনিকলে আখ প্রেরণের সিদ্ধান্তে অটল থাকে কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ দিন পরে আখ সংগ্রহ শুরু করে বর্তমানে প্রতিদিন সাতশ’ মেট্রিক টন আখ প্রেরণের কথা থাকলেও মাত্র দুই থেকে তিনশ’ মেট্রিক টন আখ প্রেরণ করা হচ্ছে জয়পুরহাট চিনিকলে। এভাবে চললে চাষিদের জমির সিংহভাগ আখই জমিতেই শুকিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি না থাকায় রংপুর চিনিকল জোন এলাকায় এবার শতাধিক অবৈধ আখ মাড়াইকল কম দামে আখ কিনে গুড় মাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল মিলস গেট এলাকাতেই ১০ থেকে ১৫টি মাড়াইকল গুড় মাড়াই করছে।

এ ব্যাপারে রংপুর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, শ্রমিক ও পরিবহন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয়ে গেছে। একটি জমির আখও পড়ে থাকবে না। বর্তমানে পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির সাথে জয়পুরহাট চিনিকলের ১০টি গাড়ি এনে এখন থেকে প্রতিদিন সাতশ’ মেট্রিক টন আখ জয়পুরহাট চিনিকলে পাঠানো হবে। এতে দ্রুতই আখ সংগ্রহ ও পরিবহন শেষ হয়ে যাবে।

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১ , ১৬ মাঘ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

রংপুর চিনিকলে মাড়াই বন্ধ

ক্ষেতে শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে আখ বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় চাষি

খোকন আহমেদ, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা)

image

গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় আখচাষিরা এখন চরম বিপাকে পড়েছে। অনেকে গুড় তৈরি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও ইদানিং গুড়ের চাহিদা কম থাকায় ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন না। এ কারণে এই এলাকার জনপ্রিয় ফসল আখ এবার কৃষকের মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে চিনিকলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বছরজুড়ে আবাদ করার পর একসাথে বিশাল অঙ্কের টাকার যোগান দেয়া ফসল আখ এবার জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারিশিল্প কারখানা গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনায় চাষ করা প্রায় ৫ হাজার ২শ’ একর জমিতে আখ দ-ায়মান রেখে হঠাৎ করে চলতি বছরে এ চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ অন্য চিনিকলে এসব আখ পাঠানোর ব্যবস্থা নিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগন্য।

আখ কাটার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন কৃষকরা না পারছে জমির আখ অন্যত্র বিক্রি করতে, আবার না পারছে জমিতে রাখতে। এ কারণে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ আখ জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। জমি থেকে আখ কেটে জমি মুক্ত করতে না পেরে ধান বা অন্য ফসল চাষাবাদের প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া ঋণের টাকা আদায় করে নেয়ার জন্য সীমিত সংখ্যক ‘পুর্জি’ (চিনিকলে আখ সরবরাহের অনুমতিপত্র) দিলেও সে আখও সঠিকভাবে নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা। এর ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে অবৈধ মাড়াইকলে গুড় তৈরি করে আখের অর্ধেক মূল্যও ঘরে তুলতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রংপুর চিনিকলের আওতাধীন ৮টি সাব-জোন এলাকার ৪০টি ক্রয় কেন্দ্রের আওতায় পাঁচ হাজার দুইশ’ একর জমিতে উৎপাদিত ৫২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। গতবছরের ২৫ ডিসেম্বর মাড়াই শুরুর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই রংপুর চিনিকলসহ দেশের ৬টি চিনিকলে আখ মাড়াই স্থগিতের চিঠি আসে বিএসএফআইসি’র (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থা) সদর দপ্তর থেকে। চিনিকলের লোকসানের বোঝা কমানোর জন্য এ পদক্ষেপ নিলেও চিনিকল থেকে দেয়া ঋণের টাকায় উৎপাদিত আখ সময়মতো ও সঠিকভাবে সংগ্রহের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে আখচাষি ও শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছেন। এরপরও কেবলমাত্র পরিবহন খাতেই কয়েকগুণ টাকা বেশি ব্যয় করে জয়পুরহাট চিনিকলে আখ প্রেরণের সিদ্ধান্তে অটল থাকে কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ দিন পরে আখ সংগ্রহ শুরু করে বর্তমানে প্রতিদিন সাতশ’ মেট্রিক টন আখ প্রেরণের কথা থাকলেও মাত্র দুই থেকে তিনশ’ মেট্রিক টন আখ প্রেরণ করা হচ্ছে জয়পুরহাট চিনিকলে। এভাবে চললে চাষিদের জমির সিংহভাগ আখই জমিতেই শুকিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি না থাকায় রংপুর চিনিকল জোন এলাকায় এবার শতাধিক অবৈধ আখ মাড়াইকল কম দামে আখ কিনে গুড় মাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল মিলস গেট এলাকাতেই ১০ থেকে ১৫টি মাড়াইকল গুড় মাড়াই করছে।

এ ব্যাপারে রংপুর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, শ্রমিক ও পরিবহন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হয়ে গেছে। একটি জমির আখও পড়ে থাকবে না। বর্তমানে পরিবহনে নিয়োজিত গাড়ির সাথে জয়পুরহাট চিনিকলের ১০টি গাড়ি এনে এখন থেকে প্রতিদিন সাতশ’ মেট্রিক টন আখ জয়পুরহাট চিনিকলে পাঠানো হবে। এতে দ্রুতই আখ সংগ্রহ ও পরিবহন শেষ হয়ে যাবে।