সিরাজগঞ্জে পরিবেশবান্ধব কেঁচোসারের ব্যবহার বাড়ছে

সিরাজগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট সার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠার পাশাপাশি এর চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর উৎপাদন ও ব্যবহারে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষক। জেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারীরা গো খামার থেকে গোবর ক্রয় করে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। এতে করে একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে না অপরদিকে জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রায় ৫০ জন কৃষক ১২০ টি রিংযের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেনে। এছাড়াও এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও তাদের নিজ উদ্যোগে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জ সদর কৃষি বিভাগ তাদের নিজস¦ উদ্যোগে কেচো কম্পোস্ট উৎপাদনে সহস্র্রাধিক কৃষককে প্রশিক্ষণ ও চাক্ষুস উৎপাদন কলা কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন এবং ইতোমধ্যেই ৩০ জন চাষির মধ্যে বিনামূল্যে কেচো সরবরাহ করেছেন, ফলে প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ব্যক্তিগতভাবে কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট এ রিং স্থাপন করছেন। পাশাপাশি কৃষক নিজেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যক্তিগতভাবে কেচো সংগ্রহ করে সার তৈরি করছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলায় দুই শতাধিক কৃষক কেচো সার তৈরি করছেন। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও ভার্মি কম্পোস্ট স্থাপন করছেন। বাগবাটি ইউনিয়নের ফুলকোচা আইএফএমসি কৃষক ক্লাবে কৃষি অফিস থেকে কেচো নিয়ে সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে তাদের ২০ রিং এর মাধ্যমে কেচো সার উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট সার নিজেরা জমিতে ব্যবহার করার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন। ফুলকোচা আইএফএমসি কৃষক হাবিবুর রহমান জানান যে কৃষি অফিস থেকে এবং নিজ উদ্যোগে কিছু কেচো সংগ্রহ করে এই সার উৎপাদন শুরু করেন গত দুই বছর আগে। বর্তমানে কেচো ও সার বিক্রি করে প্রাথমিকভাবে মাসে প্রায় ৫-৭ হাজার টাকা আয় করেছেন। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ফুলকোচা গ্রামের কৃষক আব্দুল হক জানান, আমি আগে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছি । কিন্তু এই সার আসার পর থেকে এ সারই এখন ব্যবহার করি। আগের তুলনায় এখন আমার খরচ কম হয় এবং ফসলের ফলন বেশি হয়। সে আরো জানান, তার দেখাদেখি এলাকার আরো অনেক কৃষক এই সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মো. রোস্তম আলী জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় রাজস্ব খাতের অর্থায়নে এবং এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী স্থাপন করে কৃষকদের হাতে কলমে উৎপাদন কলা কৌশল শিখিয়ে দেয়ায় কৃষকদের মাঝে এ সার তৈরির আগ্রহ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন মাটিবাহিত যে সমস্ত ছত্রাক রাসায়নিক ছত্রাক দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না ভার্মি কম্পোস্ট সারের মধ্যে থাকা ট্রাইকোডার্মা নামক অনুজীব সেগুলোকে ধ্বংস করে। মাটিবাহিত ছত্রাকের অবস্থান গাছের শিকরে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় গাছের পাতায় যে কারণে মাটিবাহিত ছত্রাক ধ্বংস হয় না। ট্রাইকোডার্মা অনুজীব গাছের শিকরে অবস্থান করে যার ফলে অপকারী ছত্রাকগুলোর সেলওয়াল ভেঙ্গে দেয় এবং নেমাটোড ধ্বংস করে। এই সারে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় বাজারে সারের চাহিদা আছে। তিনি আরও বলেন কৃষকদের এই সার তৈরিতে আগ্রহী করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সিরাজগঞ্জ সদর কৃষি অফিসের উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করায় কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছে এবং সারের গুণগতমান ভাল হওয়ায় সারের ব্যবহারও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে অপরদিকে তাদের ফসলের ফলন ভালো হওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছে ।

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১ , ১৬ মাঘ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সিরাজগঞ্জে পরিবেশবান্ধব কেঁচোসারের ব্যবহার বাড়ছে

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

image

সিরাজগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট সার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠার পাশাপাশি এর চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর উৎপাদন ও ব্যবহারে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষক। জেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারীরা গো খামার থেকে গোবর ক্রয় করে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। এতে করে একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে না অপরদিকে জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রায় ৫০ জন কৃষক ১২০ টি রিংযের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেনে। এছাড়াও এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও তাদের নিজ উদ্যোগে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জ সদর কৃষি বিভাগ তাদের নিজস¦ উদ্যোগে কেচো কম্পোস্ট উৎপাদনে সহস্র্রাধিক কৃষককে প্রশিক্ষণ ও চাক্ষুস উৎপাদন কলা কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন এবং ইতোমধ্যেই ৩০ জন চাষির মধ্যে বিনামূল্যে কেচো সরবরাহ করেছেন, ফলে প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ব্যক্তিগতভাবে কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট এ রিং স্থাপন করছেন। পাশাপাশি কৃষক নিজেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যক্তিগতভাবে কেচো সংগ্রহ করে সার তৈরি করছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জেলায় দুই শতাধিক কৃষক কেচো সার তৈরি করছেন। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও ভার্মি কম্পোস্ট স্থাপন করছেন। বাগবাটি ইউনিয়নের ফুলকোচা আইএফএমসি কৃষক ক্লাবে কৃষি অফিস থেকে কেচো নিয়ে সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে তাদের ২০ রিং এর মাধ্যমে কেচো সার উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট সার নিজেরা জমিতে ব্যবহার করার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন। ফুলকোচা আইএফএমসি কৃষক হাবিবুর রহমান জানান যে কৃষি অফিস থেকে এবং নিজ উদ্যোগে কিছু কেচো সংগ্রহ করে এই সার উৎপাদন শুরু করেন গত দুই বছর আগে। বর্তমানে কেচো ও সার বিক্রি করে প্রাথমিকভাবে মাসে প্রায় ৫-৭ হাজার টাকা আয় করেছেন। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ফুলকোচা গ্রামের কৃষক আব্দুল হক জানান, আমি আগে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছি । কিন্তু এই সার আসার পর থেকে এ সারই এখন ব্যবহার করি। আগের তুলনায় এখন আমার খরচ কম হয় এবং ফসলের ফলন বেশি হয়। সে আরো জানান, তার দেখাদেখি এলাকার আরো অনেক কৃষক এই সার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব মো. রোস্তম আলী জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় রাজস্ব খাতের অর্থায়নে এবং এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী স্থাপন করে কৃষকদের হাতে কলমে উৎপাদন কলা কৌশল শিখিয়ে দেয়ায় কৃষকদের মাঝে এ সার তৈরির আগ্রহ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন মাটিবাহিত যে সমস্ত ছত্রাক রাসায়নিক ছত্রাক দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না ভার্মি কম্পোস্ট সারের মধ্যে থাকা ট্রাইকোডার্মা নামক অনুজীব সেগুলোকে ধ্বংস করে। মাটিবাহিত ছত্রাকের অবস্থান গাছের শিকরে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় গাছের পাতায় যে কারণে মাটিবাহিত ছত্রাক ধ্বংস হয় না। ট্রাইকোডার্মা অনুজীব গাছের শিকরে অবস্থান করে যার ফলে অপকারী ছত্রাকগুলোর সেলওয়াল ভেঙ্গে দেয় এবং নেমাটোড ধ্বংস করে। এই সারে পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় বাজারে সারের চাহিদা আছে। তিনি আরও বলেন কৃষকদের এই সার তৈরিতে আগ্রহী করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সিরাজগঞ্জ সদর কৃষি অফিসের উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করায় কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছে এবং সারের গুণগতমান ভাল হওয়ায় সারের ব্যবহারও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় হচ্ছে অপরদিকে তাদের ফসলের ফলন ভালো হওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছে ।