৩০ সালে দ্বিগুণ উৎপাদনে ভাসমান চাষাবাদে জোর

কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি ও মসলা চাষ বিষয়ে কৃষকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কৃষি বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাংলাদেশে বছরে ১২ লাখ শিশু জন্ম নিচ্ছে। অথচ আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন নানা কারণে কমছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ফলন বৃদ্ধি ছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মুখের গ্রাস যোগান দেয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যোৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে হবে। এটা অর্জন করার জন্য কেবল জমির ওপর নির্ভর না করে পাশাপাশি ভাসমান কৃষির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। গত বুধবার জেলা শহরের কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। উপকেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সঞ্চলনায় কর্মশালায় আলোচনা করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আক্কাস আলী, উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারুক হোসেন, উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দেবনাথ সরকার, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তফা কামাল, শহর কৃষকলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, কৃষক শহীদুল্লাহ মলাই, সাইফুল ইসলাম, খলিল মিয়া প্রমুখ।

কর্মশালায় বিভিন্ন উপজেলার ৬০ জন কৃষক অংশ নেন।

কৃষি বিজ্ঞানীগণ বলেন, দেশে শাকসবজি ও ফলসহ নানা জাতের ফসলের আবাদ এবং ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০৮টি জাত নিয়ে গবেষণা করছে। জমির পাশাপাপাশি কচুরিপানা পচিয়ে বেড তৈরি করে ভাসমান সবজি বাগান নিয়ে কাজ করছে। ভাসমান বাগানে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সকল মৌসুমেই নিরাপদে শাকসবজি আবাদ করা যায়। অতিবৃষ্টিতে জমির সবজি জলাবদ্ধতায় নষ্ট হলেও ভাসমান সবজি বাগানের কোন ক্ষতি হয় না।

বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে গেলেও পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাসমান সবজি বেডগুলোও ওপরে উঠতে থাকে। কাজেই ফসলহানিসহ এ ধরনের যে কোন বিপদের মধ্যেও মানুষকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে ভাসমান সবজি বাগান। আর এসব বাগানে কেবল শাকসবজি নয়, মসলা জাতীয় ফসল এবং ফলেরও আবাদ করা যাচ্ছে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় সাফল্যের সঙ্গে ভাসমান সবজি বাগান করা হচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করা হলেও ভাসমান বাগানে এগুলোর প্রয়োজন হয় না। ভাসমান বাগানের শাকসবজি দেখতেও বেশ সতেজ ও চকচকে হয়। সহজে সিদ্ধ হয়। যে কারণে ভাসমান বাগানের শাকসবজি সুস্বাদু এবং নিরাপদ, দামও খানিকটা বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ভাসমান বেডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পর পচা কচুরিপানাগুলো জৈব সার হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করে রাসায়নিক সারের চেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়।

কৃষি বিজ্ঞানীগণ বলেন, বহু কৃষকের জমি নেই। তারা এলাকার ডোবা বা খালবিলে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করে চাষাবাদ করতে পারেন। হাওরাঞ্চলে অন্তত ৬ মাস অথৈ পানি থাকে। তখন কোন ফসলেরই আবাদ করা যায় না। শাকসবজি অন্য উপজেলা থেকে নিয়ে খেতে হয়। সেসময় ভাসমান বেড তৈরি করে নিজেরাই শাকসবজি আবাদ করতে পারেন। এছাড়া হাওরের বিভিন্ন জলাশয়ে সারাবছরই ভাসমান বাগান করা যায়।

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১ , ১৬ মাঘ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

৩০ সালে দ্বিগুণ উৎপাদনে ভাসমান চাষাবাদে জোর

জেলা বার্তা পরিবেশক, কিশোরগঞ্জ

image

কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি ও মসলা চাষ বিষয়ে কৃষকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কৃষি বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাংলাদেশে বছরে ১২ লাখ শিশু জন্ম নিচ্ছে। অথচ আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন নানা কারণে কমছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ফলন বৃদ্ধি ছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মুখের গ্রাস যোগান দেয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যোৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে হবে। এটা অর্জন করার জন্য কেবল জমির ওপর নির্ভর না করে পাশাপাশি ভাসমান কৃষির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। গত বুধবার জেলা শহরের কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। উপকেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সঞ্চলনায় কর্মশালায় আলোচনা করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আক্কাস আলী, উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারুক হোসেন, উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দেবনাথ সরকার, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তফা কামাল, শহর কৃষকলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, কৃষক শহীদুল্লাহ মলাই, সাইফুল ইসলাম, খলিল মিয়া প্রমুখ।

কর্মশালায় বিভিন্ন উপজেলার ৬০ জন কৃষক অংশ নেন।

কৃষি বিজ্ঞানীগণ বলেন, দেশে শাকসবজি ও ফলসহ নানা জাতের ফসলের আবাদ এবং ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০৮টি জাত নিয়ে গবেষণা করছে। জমির পাশাপাপাশি কচুরিপানা পচিয়ে বেড তৈরি করে ভাসমান সবজি বাগান নিয়ে কাজ করছে। ভাসমান বাগানে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সকল মৌসুমেই নিরাপদে শাকসবজি আবাদ করা যায়। অতিবৃষ্টিতে জমির সবজি জলাবদ্ধতায় নষ্ট হলেও ভাসমান সবজি বাগানের কোন ক্ষতি হয় না।

বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে গেলেও পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাসমান সবজি বেডগুলোও ওপরে উঠতে থাকে। কাজেই ফসলহানিসহ এ ধরনের যে কোন বিপদের মধ্যেও মানুষকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে ভাসমান সবজি বাগান। আর এসব বাগানে কেবল শাকসবজি নয়, মসলা জাতীয় ফসল এবং ফলেরও আবাদ করা যাচ্ছে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় সাফল্যের সঙ্গে ভাসমান সবজি বাগান করা হচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করা হলেও ভাসমান বাগানে এগুলোর প্রয়োজন হয় না। ভাসমান বাগানের শাকসবজি দেখতেও বেশ সতেজ ও চকচকে হয়। সহজে সিদ্ধ হয়। যে কারণে ভাসমান বাগানের শাকসবজি সুস্বাদু এবং নিরাপদ, দামও খানিকটা বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ভাসমান বেডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পর পচা কচুরিপানাগুলো জৈব সার হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করে রাসায়নিক সারের চেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়।

কৃষি বিজ্ঞানীগণ বলেন, বহু কৃষকের জমি নেই। তারা এলাকার ডোবা বা খালবিলে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করে চাষাবাদ করতে পারেন। হাওরাঞ্চলে অন্তত ৬ মাস অথৈ পানি থাকে। তখন কোন ফসলেরই আবাদ করা যায় না। শাকসবজি অন্য উপজেলা থেকে নিয়ে খেতে হয়। সেসময় ভাসমান বেড তৈরি করে নিজেরাই শাকসবজি আবাদ করতে পারেন। এছাড়া হাওরের বিভিন্ন জলাশয়ে সারাবছরই ভাসমান বাগান করা যায়।