গুলির উৎস খুঁজতে গিয়ে সন্ধান মিললো অস্ত্রের কারখানার

বাড়ির ছাদে কবুতরের বাসা থেকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় পুলিশি অভিযানে মিলেছে ‘অস্ত্র তৈরির’ কারখানা। গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলির শব্দের সূত্র ধরে গতকাল ভোরে চট্টগ্রাম নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানটুলি বংশালপাড়া এলাকায় গফুর খান সওদাগার নামে এক ব্যক্তির বাড়ির ছাদে কবুতরের ঘরে ওই অস্ত্রের সন্ধান পায় পুলিশ। অস্ত্র তৈরির কারখানা দাবি করে পুলিশ সেখান থেকে একনালা বন্দুক, দেশীয় তৈরি অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। ঘটনায় এক নারীকেও আটক করেছে পুলিশ। ভোটের আগে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান না পেলেও ভোট শেষ হওয়ার পর অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর এলাকায় নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরের (সিএমপি) পশ্চিম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক উল হক টেলিফোনে সংবাদকে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি গুলির শব্দ পায় পুলিশ। গুলির শব্দের উৎস ধরে ওই অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। অস্ত্রের কারখানাটির যে মালিক তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, অস্ত্র তৈরির কারখানাটি অনেকদিন আগেই গড়ে তোলা হয়েছে। নানা ধরনের অস্ত্র তৈরি হতো এখানে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করে এসব অস্ত্র বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি অথবা ভাড়া দেয়া হতো। গত নির্বাচনেও এখানকার কোন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিসি ফারুক বলেন, অস্ত্রের কারখানার মালিক নিজাম খানের অতীত রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো সমন্বয় করে অভিযান চালাচ্ছে। তাকে ধরতে পারলে অস্ত্র এবং কারখানার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য মিলবে। এছাড়া এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশের ভাষ্য, সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে স্থানীয় দুই ব্যক্তির মধ্যে বিরোধ ছিল। ভোট শেষ হয়ে গেলেও বিরোধ থেকে গেছে। সেই বিরোধের জেরে একজন আরেকজনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। গুলির শব্দ পুলিশ ছাড়াও স্থানীয়রা শুনতে পায়। পরে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোনে খবরটি জানায়। ৯৯৯ থেকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশকে ঘটনাস্থলের তথ্য দেয়া হয়। এরপর পুলিশ পুরো এলাকাটি ঘেরাও করে। পরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গফুর খান সওদাগরের বাড়ির ছাদে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে মিলে দেশীয় প্রযুক্তিতে (লেদে তৈরি) আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। উদ্ধার করা সরঞ্জাম অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। পরে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওইসব অস্ত্র নিজাম খান নামের এক ব্যক্তি তৈরি করত। সেই অস্ত্র তৈরির কারখানাটির মালিক। ঘটনায় তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মুক্তাকে আটক করা হয়ছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি এয়ার গান, অস্ত্র তৈরির ডায়াগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের লোহা কাটার সরঞ্জাম

চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার ওসি মহসীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘নিজাম খান ও শাহ আলম ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা। সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। শাহ আলম জানিয়েছেন, ভোটের আগের দিন নিজাম তাকে ?হুমকি দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বংশালপাড়া এলাকায় নিজাম হত্যার উদ্দেশ্যে শাহ আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শাহ আলম প্রাণে বেঁচে যান। গুলির শব্দ শুনি আমরাও। জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে বংশালপাড়ায় গোলাগুলি হচ্ছে বলে জানানো হয়। এরপর আমরা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলি। নিজামের বাড়িটিকে চিহ্নিত করে সেখানে তল্লাশি শুরু করি। এক পর্যায়ে বাসার ছাদে কবুতরের খাঁচায় অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ভোটে প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করতে নিজাম তার বাসার ছাদে অস্থায়ী কারখানাটি গড়ে তুলেছিলেন। নিজাম খান ও শাহ আলম দু’জন আলাদা দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন। ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরবর্তীতে নিজাম শাহ আলমকে হত্যার চেষ্টা করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘গুলির শব্দে এলাকার মানুষ যখন বেরিয়ে আসে তখন নিজাম পালিয়ে যায়। পুলিশ তখন নিজামের স্ত্রীকে আটক করে। নিজামকে গ্রেপ্তার করতে পারলে সে কেন অস্ত্রের কারখানা করেছে, কার কাছে বিক্রি করেছে, ক্রেতা কারা ছিল, এসব বিষয় জানতে পারবে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দিন সহিংসতায় একজনের প্রাণ যায়। দিনব্যাপী বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্য দিয়ে ভোট শেষ হয়। ভোটের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ভোটের আগেও চট্টগ্রামে অস্ত্রবাজদের দৌরাত্ম্য ছিল দৃশ্যমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপড়তা থাকলেও অস্ত্র উদ্ধারের কোন অভিযান ছিল না। তবে অভিযানটি হয়েছে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর।

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১ , ১৬ মাঘ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

গুলির উৎস খুঁজতে গিয়ে সন্ধান মিললো অস্ত্রের কারখানার

বাড়ির ছাদে কবুতরের বাসা থেকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও সরঞ্জাম -সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় পুলিশি অভিযানে মিলেছে ‘অস্ত্র তৈরির’ কারখানা। গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলির শব্দের সূত্র ধরে গতকাল ভোরে চট্টগ্রাম নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানটুলি বংশালপাড়া এলাকায় গফুর খান সওদাগার নামে এক ব্যক্তির বাড়ির ছাদে কবুতরের ঘরে ওই অস্ত্রের সন্ধান পায় পুলিশ। অস্ত্র তৈরির কারখানা দাবি করে পুলিশ সেখান থেকে একনালা বন্দুক, দেশীয় তৈরি অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। ঘটনায় এক নারীকেও আটক করেছে পুলিশ। ভোটের আগে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান না পেলেও ভোট শেষ হওয়ার পর অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর এলাকায় নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরের (সিএমপি) পশ্চিম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক উল হক টেলিফোনে সংবাদকে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি গুলির শব্দ পায় পুলিশ। গুলির শব্দের উৎস ধরে ওই অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। অস্ত্রের কারখানাটির যে মালিক তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, অস্ত্র তৈরির কারখানাটি অনেকদিন আগেই গড়ে তোলা হয়েছে। নানা ধরনের অস্ত্র তৈরি হতো এখানে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করে এসব অস্ত্র বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি অথবা ভাড়া দেয়া হতো। গত নির্বাচনেও এখানকার কোন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিসি ফারুক বলেন, অস্ত্রের কারখানার মালিক নিজাম খানের অতীত রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো সমন্বয় করে অভিযান চালাচ্ছে। তাকে ধরতে পারলে অস্ত্র এবং কারখানার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য মিলবে। এছাড়া এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশের ভাষ্য, সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে স্থানীয় দুই ব্যক্তির মধ্যে বিরোধ ছিল। ভোট শেষ হয়ে গেলেও বিরোধ থেকে গেছে। সেই বিরোধের জেরে একজন আরেকজনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। গুলির শব্দ পুলিশ ছাড়াও স্থানীয়রা শুনতে পায়। পরে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোনে খবরটি জানায়। ৯৯৯ থেকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশকে ঘটনাস্থলের তথ্য দেয়া হয়। এরপর পুলিশ পুরো এলাকাটি ঘেরাও করে। পরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গফুর খান সওদাগরের বাড়ির ছাদে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে মিলে দেশীয় প্রযুক্তিতে (লেদে তৈরি) আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। উদ্ধার করা সরঞ্জাম অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। পরে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওইসব অস্ত্র নিজাম খান নামের এক ব্যক্তি তৈরি করত। সেই অস্ত্র তৈরির কারখানাটির মালিক। ঘটনায় তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মুক্তাকে আটক করা হয়ছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি এয়ার গান, অস্ত্র তৈরির ডায়াগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের লোহা কাটার সরঞ্জাম

চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার ওসি মহসীন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘নিজাম খান ও শাহ আলম ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা। সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। শাহ আলম জানিয়েছেন, ভোটের আগের দিন নিজাম তাকে ?হুমকি দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বংশালপাড়া এলাকায় নিজাম হত্যার উদ্দেশ্যে শাহ আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শাহ আলম প্রাণে বেঁচে যান। গুলির শব্দ শুনি আমরাও। জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে বংশালপাড়ায় গোলাগুলি হচ্ছে বলে জানানো হয়। এরপর আমরা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলি। নিজামের বাড়িটিকে চিহ্নিত করে সেখানে তল্লাশি শুরু করি। এক পর্যায়ে বাসার ছাদে কবুতরের খাঁচায় অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ভোটে প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করতে নিজাম তার বাসার ছাদে অস্থায়ী কারখানাটি গড়ে তুলেছিলেন। নিজাম খান ও শাহ আলম দু’জন আলাদা দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন। ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরবর্তীতে নিজাম শাহ আলমকে হত্যার চেষ্টা করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘গুলির শব্দে এলাকার মানুষ যখন বেরিয়ে আসে তখন নিজাম পালিয়ে যায়। পুলিশ তখন নিজামের স্ত্রীকে আটক করে। নিজামকে গ্রেপ্তার করতে পারলে সে কেন অস্ত্রের কারখানা করেছে, কার কাছে বিক্রি করেছে, ক্রেতা কারা ছিল, এসব বিষয় জানতে পারবে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দিন সহিংসতায় একজনের প্রাণ যায়। দিনব্যাপী বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্য দিয়ে ভোট শেষ হয়। ভোটের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ভোটের আগেও চট্টগ্রামে অস্ত্রবাজদের দৌরাত্ম্য ছিল দৃশ্যমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপড়তা থাকলেও অস্ত্র উদ্ধারের কোন অভিযান ছিল না। তবে অভিযানটি হয়েছে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর।