জেলায় জেলায় যাচ্ছে টিকা

দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে মহামারী করোনা প্রতিষেধক টিকা। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ পৌঁছেছে। এছাড়া কুষ্টিয়া গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বরিশাল, নওগাঁ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজশাহীতে প্রাথমিক বরাদ্দ টিকা পৌঁছে গেছে। আগামীকাল রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ৬০ হাজার টিকা যাচ্ছে। জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় প্রথম পর্যায়ে ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। তার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ২৭ কার্টন অর্থাৎ ৩ লাখ ২৪ হাজার ডোজ বুঝে নিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম। পরে ভ্যাকসিনগুলো তাপনিয়ন্ত্রক সংরক্ষণাগারে রাখা হয়।

তাপ নিয়ন্ত্রক গাড়িতে করে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ও সতর্কতার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ময়মনসিংহ ইপিআই কেন্দ্রে গত বৃহস্পতিবার রাতে এসে পৌঁছেছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।

এ সময় ডেপুটি সিভিল সার্জন পরীক্ষিত কুমার পাড়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঈদুল ইসলাম, ইপিআই সুপার মো. এমদাদুল হক ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আঞ্চলিক বিক্রয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কবে থেকে এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে তা এখনও কর্তৃপক্ষ জানায়নি। জানা গেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষে গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হবে।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌঁছে গেছে করোনভাইরাসের টিকা। গতকাল ভোরে টিকা বহনকারী গাড়ি পৌঁছে গেছে কুষ্টিয়ায়। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির পর কুষ্টিয়ায় টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। সিভিল সার্জন এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খুলনা বিভাগে প্রথম জেলা হিসেবে টিকা গ্রহণ করা হলো। প্রথম চালানে যে টিকা পাওয়া গেছে তাতে ৩০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া যাবে। একই দিন মেহেরপুরসহ আরও পাঁচটি জেলায় এই টিকা পৌঁছে দেয়া হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব টিকা সংরক্ষণের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ৫টি ফ্রিজ প্রস্তুত রাখা হয়। উপজেলা পর্যায়েও এ রকম ফ্রিজ প্রস্তুত রাখা আছে।

প্রথম চালানে গতকাল ভোরে ৫টি কার্টন পাওয়া গেছে। প্রতিটি কার্টনে ১ হাজার ২০০ ভায়েল (শিশি) টিকা রয়েছে। প্রতি ভায়েলে রয়েছে ১০টি ডোজ। প্রতিটি কার্টনে ১২ হাজার ডোজ টিকা আছে।

গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় ভ্যাকসিনবাহী ফ্রিজার গাড়ি থেকে ৫টি কার্টন নামানো হয়। এ সময় সেখানে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ভ্যাকসিনগুলো বুঝে নেন। পরে তা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ভ্যাকসিন সংরক্ষণাগারের ফ্রিজে রাখা হয়। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা ৫টি ফ্রিজের মধ্যে দুটি ফ্রিজে ভ্যাকসিনগুলো রাখা হয়। বাকি তিনটি এখনও ফাঁকা রয়েছে।

এই টিকা ৩০ হাজার মানুষকে দেয়া হবে। টিকা দিতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেয়ার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলায় করোনার টিকা সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, টিকা পাবেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে এসব কার্যক্রম চূড়ান্ত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ৩ হাজার ৬শ’ অ্যাম্পল করোনা ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে বেক্সিমকো ফার্মার ফ্রিজার ভ্যান-৩ এ করে এসব ভ্যাকসিন আনা হয়। পরে ফ্রিজার ভ্যান থেকে একে একে ৩টি ভ্যাকসিনের ৩ কার্টন নামানো হয়। এ কার্টন গোপালগঞ্জ জেলা ইপিআই ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে নেয়া হয়। সেখানে কার্টন থেকে ভ্যাকসিন বের করে আপমাত্রা ও গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। এসব কার্যক্রম শেষে ওই রুমের আইচ লাইন রেফ্রিজারেটরে দুপুর ২টার আগেই ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ করা হয়। ভ্যাকসিন বুঝে পেয়ে ভ্যাকসিন রিসিভ জেলা কমিটির সদস্যরা রিসিভ ফর্মে স্বাক্ষর করেন। বিকেল ৩টার দিকে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

এ সময় ভ্যাকসিন গ্রহণকারী কমিটির সদস্য, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা ইপিআই কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভ্যাকসিন গ্রহণকারী কমিটির সদস্য ও গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম সাকিবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, গোপালগঞ্জে ৩ হাজার ৬শ’ অ্যাম্পল করোনা টিকা আমরা গ্রহণ করেছি। প্রতি অ্যাম্পল টিকা ১০ জনকে প্রয়োগ করা যাবে। সে হিসেবে জেলার ৩৬ হাজার মানুষকে প্রথম পর্যায়ে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। আমরা এখন টিকা গ্রহীতার তালিকা তৈরির কাজ করছি। গোপালগঞ্জ আড়াইশ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করে টিকা প্রয়োগ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেয়া হবে। পরে পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা এ টিকা পাবেন।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গোপালগঞ্জের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা ।

রংপুর : রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলার জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ৬০ হাজার করোনার টিকা আগামী ৩১ জানুয়ারি রোববার রংপুরে এসে পৌঁছবে বলে নিশ্চিত করেছেন রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায়।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ঢাকায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে রংপুর বিভাগের জন্য আপাতত ৬০ হাজার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পর পর্যায়ক্রমে টিকার সংখ্যা চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হবে বলেও জানা গেছে। ইতিমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া ৬০ হাজার টিকা বিভাগের ৮ জেলার জন্য জেলা ওয়ারী বন্টন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলার জন্য ২০ হাজার ৪শ’ দিনাজপুর জেলার জন্য ৯ হাজার ৬শ’, কুড়িগ্রামের জন্য ৬ হাজার, লালমনিরহাট জেলার জন্য ৩ হাজার ৬শ’ গাইবান্ধা জেলার জন্য ৭ হাজার ২শ’ নীলফামারী জেলার জন্য ৬ হাজার, পঞ্চগড় জেলার জন্য ২ হাজার ৪শ’ এবং ঠাকুরগাঁও জেলার জন্য ৪ হাজার ৮শ’ টিকা।

এদিকে করোনার জন্য আসা টিকা দেবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্য থেকে একটি টিম ঢাকায় প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য অবস্থান করছে তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২/১ দিনের মধ্যে চলে আসবেন। তারা এসে আবার রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, বিভাগীয় কার্যালয়ের স্টোর রুমে করোনা টিকা সংরক্ষণের সব উপকরণ রয়েছে। তিনি জানান, ইপিআই কর্মসূচির যাবতীয় টিকা সংরক্ষণ এখানেই করা হয়ে থাকে ফলে, কোন সমস্যা হবে না।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভির সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার জানিয়েছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি রংপুরে করোনার টিকা এসে পৌঁছবে বলে আশা করছেন তারা। একইভাবে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জন্য এক সঙ্গেই টিকা আসবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আহাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার করোনার টিকা দেয়া শুরু হবে। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনের মাধ্যমে টিকা সরবরাহ করা হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ১০ মাসে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৪৯ জনের এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে ১৫ হাজার ৮২৭ জনের। সুস্থ হয়েছে ১৪ হাজার ৯৫৮ জন। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৩০৪ জন এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে দিনাজপুরে ১০৯ জন এর পরেই রয়েছে রংপুর জেলা এখানে মারা গেছে ৭৩ জন। সবচেয়ে কম মারা গেছে লালমনিরহাটে ১১ জন।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে প্রথম ধাপে ৬০ হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন পৌঁঁছেছে। গতকাল দুপুরে বেক্সিমকো কোম্পানির ফ্রিজার ভ্যানযোগে ভ্যাকসিন পৌঁছায়। সিভিল সার্জনের কার্যালয় চত্বরে এ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম। এ সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন বলেন, প্রথম ধাপে ৫টি কার্টনে ৬০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বুঝে নেয়া হয়েছে।

এটি ইপিআই ভবনের স্টোর রুমে রাখা হয়েছে। আগামী ১ এবং ২ ফেব্রুয়ারি সিভিল সার্জন অফিসে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ দেবে। পরবর্তীতে প্রশিক্ষকরা উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। আশা করছি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তিদের এই ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে।

বরিশাল : বৈশি^ক মহামারী করোনার প্রতিরোধক টিকা বরিশালে প্রথমবারের ৩ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে। দেশীয় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার বিশেষ ব্যবস্থার পরিবহনে গত শুক্রবার দুপুর বারোটায় এই টিকা বরিশালে আসে। বরিশাল নগরীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আইস লাইনড রেফ্রিজারেটরে (আইএলআর) সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জনান, প্রথম ভাগে বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে পিরোজপুর জেলা বাদে তিন লাখ টিকা এসেছে।

আগামী ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার টিকা এসে পৌঁছবে। এই টিকার মধ্যে ৪৮ হাজার ডোজ জমা রাখা হবে টিকা ব্যবহারকালীন সময়ে কোথায়ও সংকট থাকলে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর জন্য। ডা. বাসুদেব আরও জানান, টিকা দেয়ার জন্য তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধরিত স্থানে গিয়ে টিকা দেয়া যাবে। অন্যদিকে টিকা পাবার আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সদস্যদের তালিকা জেলা প্রশাসক দপ্তরে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

নওগাঁ : নওগাঁয় করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, শুক্রবার সকালে ৮ হাজার ৪শ ভাওয়েল টিকা এসে পৌঁছেছে। সেগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হবে। করোনা মোকাবিলায় প্রথম সারির যোদ্ধাদের মধ্যে এই টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহামারী করোনাভাইরাসের এক লাখ আট হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে। গতকাল সকাল ৭টার দিকে টিকাগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে পৌঁছায়। টিকাগুলো গ্রহণ করেন জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকা প্রদান শুরু হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে ঢাকা থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি বিশেষ ভ্যানে করে করোনাভাইরাসের টিকাগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। ৯টি প্যাকেটে ১০ হাজার ৮০০ ভায়ালে মোট এক লাখ আট হাজার টিকা এসেছে। টিকাগুলো জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার ইপিআই ভবনের কোল্ডস্টোর রুমে রাখা হয়েছে।

টিকা প্রদানের জন্য চিকিৎসক ও টিকাদানকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে। আর টিকাদানের জন্য জেলা সদরে আটটি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দুইটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে দুইজন করে টিকাদানকর্মী ও চারজন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।

প্রথম থাপে করোনার সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের এই টিকা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ইপিআই ভবনে আন্তর্জাতিক মানের কোল্ডস্টোর রুম রয়েছে। সেখানেই টিকাগুলো রাখা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।

রাজশাহী : করোনাভাইরাসের টিকা রাজশাহী এসে পৌঁছেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেক্সিমকো ফার্মার একটি কাভার্ড ফ্রিজার ভ্যানে ঢাকা থেকে টিকা রাজশাহী আনা হয়। এ দিন এক লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা রাজশাহী এসেছে। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার টিকাগুলো গ্রহণ করেন।

এরপর টিকার ১৫টি কার্টন জেলা ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি কার্টনে এক হাজার ২০০ ভায়াল টিকা রয়েছে। প্রতিটি ভায়ালে টিকা রয়েছে ১০ ডোজ। সে হিসাবে এক লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা রাজশাহী এসেছে। ৯০ হাজার মানুষকে দুই ডোজ করে এসব টিকা দেয়া সম্ভব হবে। টিকা গ্রহণের সময় সিভিল সার্জন বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। রাজশাহীতে সুশৃঙ্খলভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা জন্য আমরা জেলা স্বাস্থ্য কমিটি বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো এবং প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা অনুসারে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু করা হবে।

তিনি জানান, আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কেন্দ্র, সিভিল সার্জনের নির্ধারিত কেন্দ্র এবং রাজশাহী সেনাবাহিনীর নির্ধারিত কেন্দ্রে একাধিক বুথে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে ।

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১ , ১৬ মাঘ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

জেলায় জেলায় যাচ্ছে টিকা

সংবাদ ডেস্ক

image

দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে মহামারী করোনা প্রতিষেধক টিকা। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ পৌঁছেছে। এছাড়া কুষ্টিয়া গোপালগঞ্জ, ঝিনাইদহ, বরিশাল, নওগাঁ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজশাহীতে প্রাথমিক বরাদ্দ টিকা পৌঁছে গেছে। আগামীকাল রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ৬০ হাজার টিকা যাচ্ছে। জেলা বার্তা পরিবেশক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় প্রথম পর্যায়ে ৫ লাখ ৪ হাজার ডোজ কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। তার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ২৭ কার্টন অর্থাৎ ৩ লাখ ২৪ হাজার ডোজ বুঝে নিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম। পরে ভ্যাকসিনগুলো তাপনিয়ন্ত্রক সংরক্ষণাগারে রাখা হয়।

তাপ নিয়ন্ত্রক গাড়িতে করে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ও সতর্কতার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ময়মনসিংহ ইপিআই কেন্দ্রে গত বৃহস্পতিবার রাতে এসে পৌঁছেছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।

এ সময় ডেপুটি সিভিল সার্জন পরীক্ষিত কুমার পাড়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঈদুল ইসলাম, ইপিআই সুপার মো. এমদাদুল হক ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আঞ্চলিক বিক্রয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কবে থেকে এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে তা এখনও কর্তৃপক্ষ জানায়নি। জানা গেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ শেষে গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হবে।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পৌঁছে গেছে করোনভাইরাসের টিকা। গতকাল ভোরে টিকা বহনকারী গাড়ি পৌঁছে গেছে কুষ্টিয়ায়। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির পর কুষ্টিয়ায় টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। সিভিল সার্জন এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খুলনা বিভাগে প্রথম জেলা হিসেবে টিকা গ্রহণ করা হলো। প্রথম চালানে যে টিকা পাওয়া গেছে তাতে ৩০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া যাবে। একই দিন মেহেরপুরসহ আরও পাঁচটি জেলায় এই টিকা পৌঁছে দেয়া হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব টিকা সংরক্ষণের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ৫টি ফ্রিজ প্রস্তুত রাখা হয়। উপজেলা পর্যায়েও এ রকম ফ্রিজ প্রস্তুত রাখা আছে।

প্রথম চালানে গতকাল ভোরে ৫টি কার্টন পাওয়া গেছে। প্রতিটি কার্টনে ১ হাজার ২০০ ভায়েল (শিশি) টিকা রয়েছে। প্রতি ভায়েলে রয়েছে ১০টি ডোজ। প্রতিটি কার্টনে ১২ হাজার ডোজ টিকা আছে।

গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় ভ্যাকসিনবাহী ফ্রিজার গাড়ি থেকে ৫টি কার্টন নামানো হয়। এ সময় সেখানে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ভ্যাকসিনগুলো বুঝে নেন। পরে তা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ভ্যাকসিন সংরক্ষণাগারের ফ্রিজে রাখা হয়। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা ৫টি ফ্রিজের মধ্যে দুটি ফ্রিজে ভ্যাকসিনগুলো রাখা হয়। বাকি তিনটি এখনও ফাঁকা রয়েছে।

এই টিকা ৩০ হাজার মানুষকে দেয়া হবে। টিকা দিতে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেয়ার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলায় করোনার টিকা সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, টিকা পাবেন এমন ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে এসব কার্যক্রম চূড়ান্ত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ৩ হাজার ৬শ’ অ্যাম্পল করোনা ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে বেক্সিমকো ফার্মার ফ্রিজার ভ্যান-৩ এ করে এসব ভ্যাকসিন আনা হয়। পরে ফ্রিজার ভ্যান থেকে একে একে ৩টি ভ্যাকসিনের ৩ কার্টন নামানো হয়। এ কার্টন গোপালগঞ্জ জেলা ইপিআই ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে নেয়া হয়। সেখানে কার্টন থেকে ভ্যাকসিন বের করে আপমাত্রা ও গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। এসব কার্যক্রম শেষে ওই রুমের আইচ লাইন রেফ্রিজারেটরে দুপুর ২টার আগেই ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ করা হয়। ভ্যাকসিন বুঝে পেয়ে ভ্যাকসিন রিসিভ জেলা কমিটির সদস্যরা রিসিভ ফর্মে স্বাক্ষর করেন। বিকেল ৩টার দিকে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

এ সময় ভ্যাকসিন গ্রহণকারী কমিটির সদস্য, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলা ইপিআই কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভ্যাকসিন গ্রহণকারী কমিটির সদস্য ও গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম সাকিবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, গোপালগঞ্জে ৩ হাজার ৬শ’ অ্যাম্পল করোনা টিকা আমরা গ্রহণ করেছি। প্রতি অ্যাম্পল টিকা ১০ জনকে প্রয়োগ করা যাবে। সে হিসেবে জেলার ৩৬ হাজার মানুষকে প্রথম পর্যায়ে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। আমরা এখন টিকা গ্রহীতার তালিকা তৈরির কাজ করছি। গোপালগঞ্জ আড়াইশ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করে টিকা প্রয়োগ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেয়া হবে। পরে পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা এ টিকা পাবেন।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গোপালগঞ্জের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা ।

রংপুর : রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলার জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ৬০ হাজার করোনার টিকা আগামী ৩১ জানুয়ারি রোববার রংপুরে এসে পৌঁছবে বলে নিশ্চিত করেছেন রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায়।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ঢাকায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে রংপুর বিভাগের জন্য আপাতত ৬০ হাজার টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পর পর্যায়ক্রমে টিকার সংখ্যা চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হবে বলেও জানা গেছে। ইতিমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া ৬০ হাজার টিকা বিভাগের ৮ জেলার জন্য জেলা ওয়ারী বন্টন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর জেলার জন্য ২০ হাজার ৪শ’ দিনাজপুর জেলার জন্য ৯ হাজার ৬শ’, কুড়িগ্রামের জন্য ৬ হাজার, লালমনিরহাট জেলার জন্য ৩ হাজার ৬শ’ গাইবান্ধা জেলার জন্য ৭ হাজার ২শ’ নীলফামারী জেলার জন্য ৬ হাজার, পঞ্চগড় জেলার জন্য ২ হাজার ৪শ’ এবং ঠাকুরগাঁও জেলার জন্য ৪ হাজার ৮শ’ টিকা।

এদিকে করোনার জন্য আসা টিকা দেবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্য থেকে একটি টিম ঢাকায় প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য অবস্থান করছে তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২/১ দিনের মধ্যে চলে আসবেন। তারা এসে আবার রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, বিভাগীয় কার্যালয়ের স্টোর রুমে করোনা টিকা সংরক্ষণের সব উপকরণ রয়েছে। তিনি জানান, ইপিআই কর্মসূচির যাবতীয় টিকা সংরক্ষণ এখানেই করা হয়ে থাকে ফলে, কোন সমস্যা হবে না।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভির সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার জানিয়েছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি রংপুরে করোনার টিকা এসে পৌঁছবে বলে আশা করছেন তারা। একইভাবে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জন্য এক সঙ্গেই টিকা আসবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আহাদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার করোনার টিকা দেয়া শুরু হবে। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনের মাধ্যমে টিকা সরবরাহ করা হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ১০ মাসে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৪৯ জনের এর মধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছে ১৫ হাজার ৮২৭ জনের। সুস্থ হয়েছে ১৪ হাজার ৯৫৮ জন। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৩০৪ জন এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে দিনাজপুরে ১০৯ জন এর পরেই রয়েছে রংপুর জেলা এখানে মারা গেছে ৭৩ জন। সবচেয়ে কম মারা গেছে লালমনিরহাটে ১১ জন।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে প্রথম ধাপে ৬০ হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন পৌঁঁছেছে। গতকাল দুপুরে বেক্সিমকো কোম্পানির ফ্রিজার ভ্যানযোগে ভ্যাকসিন পৌঁছায়। সিভিল সার্জনের কার্যালয় চত্বরে এ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম। এ সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন বলেন, প্রথম ধাপে ৫টি কার্টনে ৬০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বুঝে নেয়া হয়েছে।

এটি ইপিআই ভবনের স্টোর রুমে রাখা হয়েছে। আগামী ১ এবং ২ ফেব্রুয়ারি সিভিল সার্জন অফিসে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ দেবে। পরবর্তীতে প্রশিক্ষকরা উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। আশা করছি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তিদের এই ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে।

বরিশাল : বৈশি^ক মহামারী করোনার প্রতিরোধক টিকা বরিশালে প্রথমবারের ৩ লাখ ডোজ টিকা এসে পৌঁছেছে। দেশীয় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার বিশেষ ব্যবস্থার পরিবহনে গত শুক্রবার দুপুর বারোটায় এই টিকা বরিশালে আসে। বরিশাল নগরীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আইস লাইনড রেফ্রিজারেটরে (আইএলআর) সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জনান, প্রথম ভাগে বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে পিরোজপুর জেলা বাদে তিন লাখ টিকা এসেছে।

আগামী ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুর জেলার টিকা এসে পৌঁছবে। এই টিকার মধ্যে ৪৮ হাজার ডোজ জমা রাখা হবে টিকা ব্যবহারকালীন সময়ে কোথায়ও সংকট থাকলে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর জন্য। ডা. বাসুদেব আরও জানান, টিকা দেয়ার জন্য তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধরিত স্থানে গিয়ে টিকা দেয়া যাবে। অন্যদিকে টিকা পাবার আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সদস্যদের তালিকা জেলা প্রশাসক দপ্তরে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

নওগাঁ : নওগাঁয় করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, শুক্রবার সকালে ৮ হাজার ৪শ ভাওয়েল টিকা এসে পৌঁছেছে। সেগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হবে। করোনা মোকাবিলায় প্রথম সারির যোদ্ধাদের মধ্যে এই টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রদান করা হবে বলে ডেপুটি সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহামারী করোনাভাইরাসের এক লাখ আট হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে। গতকাল সকাল ৭টার দিকে টিকাগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে পৌঁছায়। টিকাগুলো গ্রহণ করেন জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার টিকা প্রদান শুরু হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে ঢাকা থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি বিশেষ ভ্যানে করে করোনাভাইরাসের টিকাগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। ৯টি প্যাকেটে ১০ হাজার ৮০০ ভায়ালে মোট এক লাখ আট হাজার টিকা এসেছে। টিকাগুলো জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার ইপিআই ভবনের কোল্ডস্টোর রুমে রাখা হয়েছে।

টিকা প্রদানের জন্য চিকিৎসক ও টিকাদানকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে। আর টিকাদানের জন্য জেলা সদরে আটটি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দুইটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে দুইজন করে টিকাদানকর্মী ও চারজন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।

প্রথম থাপে করোনার সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের এই টিকা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ইপিআই ভবনে আন্তর্জাতিক মানের কোল্ডস্টোর রুম রয়েছে। সেখানেই টিকাগুলো রাখা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।

রাজশাহী : করোনাভাইরাসের টিকা রাজশাহী এসে পৌঁছেছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেক্সিমকো ফার্মার একটি কাভার্ড ফ্রিজার ভ্যানে ঢাকা থেকে টিকা রাজশাহী আনা হয়। এ দিন এক লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা রাজশাহী এসেছে। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার টিকাগুলো গ্রহণ করেন।

এরপর টিকার ১৫টি কার্টন জেলা ইপিআই স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি কার্টনে এক হাজার ২০০ ভায়াল টিকা রয়েছে। প্রতিটি ভায়ালে টিকা রয়েছে ১০ ডোজ। সে হিসাবে এক লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা রাজশাহী এসেছে। ৯০ হাজার মানুষকে দুই ডোজ করে এসব টিকা দেয়া সম্ভব হবে। টিকা গ্রহণের সময় সিভিল সার্জন বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। রাজশাহীতে সুশৃঙ্খলভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা জন্য আমরা জেলা স্বাস্থ্য কমিটি বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো এবং প্রাপ্ত দিকনির্দেশনা অনুসারে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু করা হবে।

তিনি জানান, আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কেন্দ্র, সিভিল সার্জনের নির্ধারিত কেন্দ্র এবং রাজশাহী সেনাবাহিনীর নির্ধারিত কেন্দ্রে একাধিক বুথে টিকা প্রয়োগ শুরু হবে ।