পশ্চিমবঙ্গকে বৃহত্তর বাংলাদেশ বানাতে চান মমতা : দিলীপ

বিজেপি নেতার অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ বানাতে চায়। এ নিয়ে এ অঙ্গরাজ্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আনন্দবাজার

বিজেপি নেতার দাবি, তৃণমূল নেত্রী যে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দেন, সেটি বাংলাদেশের জাতীয় সেøাগান। পোস্টে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম না লিখলেও দিলীপ ঘোষ তার পোস্টে অভিযোগ করেছেন, ‘মাননীয়া লড়ছেন গ্রেটার বাংলাদেশের লক্ষ্যে’। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বিজেপির অন্য নেতারাও। চলতি সপ্তাহে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ সেøাগান ওঠায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বক্তৃতাই করেননি। তবে সেদিন প্রতিবাদ জানিয়ে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে মঞ্চ ছেড়েছিলেন তিনি। নেতাজি জয়ন্তীর ওই অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতেই ‘জয় শ্রীরাম’ সেøাগান ওঠা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা বিজেপি এখন পাল্টা জবাব হিসেবে ‘জয় বাংলা’ বিতর্ক শুরু করেছে কিনা, দিলীপ ঘোষের স্ট্যাটাস ঘিরে সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য রয়েছে দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন দিলীপ ঘোষ। প্রথমত, ভিক্টোরিয়ায় মমতার মুখে ‘বাংলাদেশি সেøাগান’। দ্বিতীয়ত, অতীতে তৃণমূলের প্রচারণায় বাংলাদেশি অভিনেতা; তৃতীয়ত, তৃণমূল আয়োজিত পূজায় বাংলাদেশি ক্রিকেটারের উপস্থিতি।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগারওয়ালের প্রচারণায় বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানান দিলীপ ঘোষ। পরে ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্ত করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর, গত নভেম্বরে কলকাতায় কালীপূজার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এটি নিয়েও ভারতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবারও সেই ইস্যুগুলো টেনে এনেছেন দিলীপ ঘোষ। অবশ্য তিনি একা নন, এ বিষয়ে সরব গোটা বিজেপিই। দলটির উদ্বাস্তু শাখা রাজ্য আহ্বায়ক মোহিত রায় বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় সেøাগান। সেটি এই রাজ্যে ব্যবহার করার লক্ষ্য তোষণ রাজনীতি। এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে আলাদা করার কথা।’

অনেকটা একই কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তার কথা, ‘জয় বাংলা’ শেখ মুজিবুর রহমানের সেøাগান। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণে এ সেøাগান ব্যবহার করেছিলেন। সেটি এখনও বাংলাদেশে সমানভাবে রাজনৈতিক সেøাগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই সেøাগান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন করছেন, তা মানুষ বোঝে।’ তবে বিজেপির এ দাবিকে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ভাবছে তৃণমূল। দলটির প্রবীণ সংসদ সদস্য সৌগত রায়ের মন্তব্য, ‘দিলীপ ঘোষের এসব কথার কোনও জবাব দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’ আরেক নেতা কতুাল ঘোষও ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে উদ্দেশ্যমূলক কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘একসময় দুই বাংলাই এক ছিল। এখনও দুই বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যে দারুণ মিল। সেই হিসেবে সেøাগানেও মিল থাকা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। ‘জয় বাংলা’ সেøাগানের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে গ্রেটার বাংলাদেশ বানানোর লক্ষ্য খোঁজার পেছনে অবশ্যই রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।’

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১ , ১৬ মাঘ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পশ্চিমবঙ্গকে বৃহত্তর বাংলাদেশ বানাতে চান মমতা : দিলীপ

বিজেপি নেতার অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ বানাতে চায়। এ নিয়ে এ অঙ্গরাজ্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আনন্দবাজার

বিজেপি নেতার দাবি, তৃণমূল নেত্রী যে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দেন, সেটি বাংলাদেশের জাতীয় সেøাগান। পোস্টে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম না লিখলেও দিলীপ ঘোষ তার পোস্টে অভিযোগ করেছেন, ‘মাননীয়া লড়ছেন গ্রেটার বাংলাদেশের লক্ষ্যে’। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বিজেপির অন্য নেতারাও। চলতি সপ্তাহে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ সেøাগান ওঠায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বক্তৃতাই করেননি। তবে সেদিন প্রতিবাদ জানিয়ে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে মঞ্চ ছেড়েছিলেন তিনি। নেতাজি জয়ন্তীর ওই অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতেই ‘জয় শ্রীরাম’ সেøাগান ওঠা নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা বিজেপি এখন পাল্টা জবাব হিসেবে ‘জয় বাংলা’ বিতর্ক শুরু করেছে কিনা, দিলীপ ঘোষের স্ট্যাটাস ঘিরে সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য রয়েছে দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন দিলীপ ঘোষ। প্রথমত, ভিক্টোরিয়ায় মমতার মুখে ‘বাংলাদেশি সেøাগান’। দ্বিতীয়ত, অতীতে তৃণমূলের প্রচারণায় বাংলাদেশি অভিনেতা; তৃতীয়ত, তৃণমূল আয়োজিত পূজায় বাংলাদেশি ক্রিকেটারের উপস্থিতি।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগারওয়ালের প্রচারণায় বাংলাদেশি অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানান দিলীপ ঘোষ। পরে ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্ত করে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর, গত নভেম্বরে কলকাতায় কালীপূজার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এটি নিয়েও ভারতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবারও সেই ইস্যুগুলো টেনে এনেছেন দিলীপ ঘোষ। অবশ্য তিনি একা নন, এ বিষয়ে সরব গোটা বিজেপিই। দলটির উদ্বাস্তু শাখা রাজ্য আহ্বায়ক মোহিত রায় বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় সেøাগান। সেটি এই রাজ্যে ব্যবহার করার লক্ষ্য তোষণ রাজনীতি। এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে আলাদা করার কথা।’

অনেকটা একই কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তার কথা, ‘জয় বাংলা’ শেখ মুজিবুর রহমানের সেøাগান। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণে এ সেøাগান ব্যবহার করেছিলেন। সেটি এখনও বাংলাদেশে সমানভাবে রাজনৈতিক সেøাগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই সেøাগান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন করছেন, তা মানুষ বোঝে।’ তবে বিজেপির এ দাবিকে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ভাবছে তৃণমূল। দলটির প্রবীণ সংসদ সদস্য সৌগত রায়ের মন্তব্য, ‘দিলীপ ঘোষের এসব কথার কোনও জবাব দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’ আরেক নেতা কতুাল ঘোষও ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে উদ্দেশ্যমূলক কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘একসময় দুই বাংলাই এক ছিল। এখনও দুই বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যে দারুণ মিল। সেই হিসেবে সেøাগানেও মিল থাকা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। ‘জয় বাংলা’ সেøাগানের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে গ্রেটার বাংলাদেশ বানানোর লক্ষ্য খোঁজার পেছনে অবশ্যই রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।’