সারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন

বাড়তি দামে কিনছে কৃষক

যশোরে সারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। সব ধরনের সারে প্রতিকেজিতে দুই টাকা থেকে সর্বোচ্চ আট টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা চাষিদের কাছ থেকে এই বেশি টাকা আদায় করছে। এ অবস্থা চলছে কয়েক মাস ধরে। যাদের বাজার তদারকি করার কথা তাদের দৃশ্যমান কোন ভূমিকা চোখে পড়ছে না। বরং অভিযোগ রয়েছে সার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষ সম্পর্কের কারণে তারা তদারকিতে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখছেন না।

জানা গেছে, গত জুলাই মাস থেকে সব ধরনের সার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ইউরিয়া সার প্রতিকেজি ১৬ টাকার পরিবর্তে চাষিকে কিনতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। টিএসপি তিউনেশিয়া প্রতিকেজি ২২ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা, টিএসপি মরোক্কো ২২ টাকার পরিবর্তে ২৬ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকার স্থলে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতারা। শুধুমাত্র এমওপি সারের দাম ঠিক আছে। যদিও এই সারের চাহিদা কৃষকের কাছে সবচেয়ে কম।

গত বুধবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বোরো মৌসুমের মূল সময়। এই তিন মাসে বোরো ধানে সবচেয়ে বেশি সার প্রয়োজন হয়। একইসঙ্গে এ সময় অন্যান্য সবজি চাষ করে থাকেন কৃষক। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে জেলায় ৩১ হাজার নয়শ’ ৮১ মেট্রিকটন ইউরিয়া, টিএসপি তিন হাজার দুইশ’ ৩৭ মেট্রিকটন, ডিএপি ১২ হাজার নয়শ’ ৫৪ মেট্রিকটন ও সাত হাজার চারশ’ ১৯ মেট্রিকটন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। তারপরও বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারও কাছে নেই।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এমন বক্তব্য সদর উপজেলার আবদুলপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতা লিটন হোসেনের। তার দাবি, বিসিআইসি ডিলাররা মূলত সারের দাম কমানো-বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত। তিনি চুড়ামনকাটির ফ্রেন্ডস এন্টারপ্রাইজ ও আমবটতলার শাহীন ট্রেডার্স থেকে সার কিনে বিক্রি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন।

আবদুলপুর গ্রামের অন্যতম চাষি টিটো বেশি দামে সার কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা যেমন দামে কেনেন তেমন দামে বিক্রি করে থাকেন। একই অবস্থা সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নেও। এই ইউনিয়নের কোদালিয়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মামুন অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন। তার কাছ থেকে নগদ টাকায় সার কিনেছেন এমন একজন চাষি জানিয়েছেন তিনি টিএসপি প্রতিকেজি ২৭ টাকা এবং ইউরিয়া ১৭ টাকায় কেনেন। ডিএপি সার বাজারে নেই বলে চাষিদের জানাচ্ছেন বিক্রেতা মামুন।

জেলার অন্যান্য উপজেলার চিত্রও একই ধরনের। সারের বাজার মনিটরিং করার দায়িত্ব সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির। জেলায় জেলা কমিটি এবং উপজেলায় উপজেলা কমিটি এই মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে। জেলায় এই কমিটির সদস্য সচিব জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক। আর উপজেলায় সদস্য সচিব উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।

সারের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত বুধবারও তিনি মনিটরিংয়ে গিয়েছিলেন। তার দাবি ডিলার নয়, খুচরা বিক্রেতারাই দাম বেশি নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ইতোমধ্যে সারের দাম ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি না নেন সে বিষয়ে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চাষিরা পুরো এক মৌসুমের জন্য বাকিতে সার কিনেন। ফসল ওঠার পর সেগুলো বিক্রি করে দোকানিকে টাকা পরিশোধ করেন। এ কারণে কোন কোন দোকানি বলে কয়ে বেশি নেন বলে জানান উপপরিচালক। সারের দাম বেশি নিচ্ছে এমন তথ্যপ্রমাণ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর
আলু পিয়াজসহ সবজিতে দাম কমায় ক্রেতাসাধারণে স্বস্তি
দলের নাম নিয়ে অপকর্মে জড়িত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা : কাদের
জেল খাটা মা ও শিশুর ঋণ পরিশোধ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ঢাকা-দিল্লি সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারে একমত
অভিবাসীদের সুরক্ষায় সরকার সচেষ্ট রয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
বগুড়ায় ১২০ বিঘা জমিতে প্রস্ফুটিত হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি
বিল বকেয়া নেই তবু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন : জমিতে পানি সেচ বন্ধ, কৃষক দিশেহারা
কথিত স্বামী রাকিকুল মুখ খুলছে না
কাদের মির্জাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা ভাগ্নের
কানাডায় পড়তে গিয়ে নিখোঁজ ১৭ দিন পর পাওয়া গেল লাশ
সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি
ভিক্টর বাসের হেলপার গ্রেপ্তার

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১ , ১৬ মাঘ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

যশোরে

সারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন

বাড়তি দামে কিনছে কৃষক

যশোর অফিস

যশোরে সারের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। সব ধরনের সারে প্রতিকেজিতে দুই টাকা থেকে সর্বোচ্চ আট টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা চাষিদের কাছ থেকে এই বেশি টাকা আদায় করছে। এ অবস্থা চলছে কয়েক মাস ধরে। যাদের বাজার তদারকি করার কথা তাদের দৃশ্যমান কোন ভূমিকা চোখে পড়ছে না। বরং অভিযোগ রয়েছে সার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিশেষ সম্পর্কের কারণে তারা তদারকিতে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখছেন না।

জানা গেছে, গত জুলাই মাস থেকে সব ধরনের সার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ইউরিয়া সার প্রতিকেজি ১৬ টাকার পরিবর্তে চাষিকে কিনতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। টিএসপি তিউনেশিয়া প্রতিকেজি ২২ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা, টিএসপি মরোক্কো ২২ টাকার পরিবর্তে ২৬ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকার স্থলে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতারা। শুধুমাত্র এমওপি সারের দাম ঠিক আছে। যদিও এই সারের চাহিদা কৃষকের কাছে সবচেয়ে কম।

গত বুধবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বোরো মৌসুমের মূল সময়। এই তিন মাসে বোরো ধানে সবচেয়ে বেশি সার প্রয়োজন হয়। একইসঙ্গে এ সময় অন্যান্য সবজি চাষ করে থাকেন কৃষক। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে জেলায় ৩১ হাজার নয়শ’ ৮১ মেট্রিকটন ইউরিয়া, টিএসপি তিন হাজার দুইশ’ ৩৭ মেট্রিকটন, ডিএপি ১২ হাজার নয়শ’ ৫৪ মেট্রিকটন ও সাত হাজার চারশ’ ১৯ মেট্রিকটন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। তারপরও বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারও কাছে নেই।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এমন বক্তব্য সদর উপজেলার আবদুলপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতা লিটন হোসেনের। তার দাবি, বিসিআইসি ডিলাররা মূলত সারের দাম কমানো-বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত। তিনি চুড়ামনকাটির ফ্রেন্ডস এন্টারপ্রাইজ ও আমবটতলার শাহীন ট্রেডার্স থেকে সার কিনে বিক্রি করে থাকেন বলে জানিয়েছেন।

আবদুলপুর গ্রামের অন্যতম চাষি টিটো বেশি দামে সার কেনার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা যেমন দামে কেনেন তেমন দামে বিক্রি করে থাকেন। একই অবস্থা সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নেও। এই ইউনিয়নের কোদালিয়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মামুন অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন। তার কাছ থেকে নগদ টাকায় সার কিনেছেন এমন একজন চাষি জানিয়েছেন তিনি টিএসপি প্রতিকেজি ২৭ টাকা এবং ইউরিয়া ১৭ টাকায় কেনেন। ডিএপি সার বাজারে নেই বলে চাষিদের জানাচ্ছেন বিক্রেতা মামুন।

জেলার অন্যান্য উপজেলার চিত্রও একই ধরনের। সারের বাজার মনিটরিং করার দায়িত্ব সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির। জেলায় জেলা কমিটি এবং উপজেলায় উপজেলা কমিটি এই মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে। জেলায় এই কমিটির সদস্য সচিব জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক। আর উপজেলায় সদস্য সচিব উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।

সারের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত বুধবারও তিনি মনিটরিংয়ে গিয়েছিলেন। তার দাবি ডিলার নয়, খুচরা বিক্রেতারাই দাম বেশি নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ইতোমধ্যে সারের দাম ব্যবসায়ীরা যাতে বেশি না নেন সে বিষয়ে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চাষিরা পুরো এক মৌসুমের জন্য বাকিতে সার কিনেন। ফসল ওঠার পর সেগুলো বিক্রি করে দোকানিকে টাকা পরিশোধ করেন। এ কারণে কোন কোন দোকানি বলে কয়ে বেশি নেন বলে জানান উপপরিচালক। সারের দাম বেশি নিচ্ছে এমন তথ্যপ্রমাণ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।