কৃষি ঋণ বিতরণে আগ্রহ নেই অধিকাংশ ব্যাংকের

কৃষি ঋণ বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। এরমধ্যে এই ঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়েছে ৩৩টি ব্যাংক। মাত্র ছয় মাসই কিছু ব্যাংক বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করলেও ৩৩টি ব্যাংকের বিতরণের হার ৫০ শতাংশের নিচে। বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশেরও নিচে রয়েছে ১২টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য দেখা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চরমভাবে ব্যর্থ সীমান্ত ও মধুমতি ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণের হার এক শতাংশের ঘরেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে গত ছয় মাসে এক টাকাও বিতরণ করেনি দুটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো, উরি ব্যাংক এবং কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। ছয় মাসে যেসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার ২০ শতাংশের নিচে সেগুলো হলোÑ সরকারি খাতের রূপালী ব্যাংক, বিদেশি খাতের উরি ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এবি, কমিউনিটি, গ্লোবাল ইসলামী, আএফআইসি, মধুমতি, সীমান্ত, স্ট্যান্ডার্ড, দি সিটি, ইউনিয়ন ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ব্যাংক খাতে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ হয়েছে ১২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। বিতরণের পরিমাণ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৫.৯৪ শতাংশ। গত অর্থবছর ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় মাসে বিতরণ হয়েছিল ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ছিল ৪৪.৭৭ শতাংশ। এতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষিতে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এ ঋণ পুরো বছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৪৯.২৬ শতাংশ। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ হয়েছে ছয় হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বা ৪৫.৯৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে কৃষি ঋণ আদায় হয়েছে ছয় হাজার ২৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের বছরের স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আদায় হয়েছিল ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ছিল চার কোটি ৩৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। করোনার মধ্যেও কৃষি খাতের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া সচল থাকায় কৃষক সময়মতো কিস্তি ফেরত দিচ্ছেন। আলোচিত সময়ে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর পুঞ্জীভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণ চার হাজার ৯০৯ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ। করোনার সময়েও কৃষি খাতের উৎপাদন সচল ছিল। তাই এ খাতে ঋণের প্রয়োজনও বেশি ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণসহায়তা দেয়নি। ফলে প্রথমবারের মতো গত অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় ব্যাংকগুলো। গত (২০১৯-২০) অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু অর্থবছরে শেষে এ খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কম হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। কৃষিখাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

রবিবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ মাঘ ১৪২৭, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কৃষি ঋণ বিতরণে আগ্রহ নেই অধিকাংশ ব্যাংকের

image

কৃষি ঋণ বিতরণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। এরমধ্যে এই ঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়েছে ৩৩টি ব্যাংক। মাত্র ছয় মাসই কিছু ব্যাংক বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করলেও ৩৩টি ব্যাংকের বিতরণের হার ৫০ শতাংশের নিচে। বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশেরও নিচে রয়েছে ১২টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে এসব তথ্য দেখা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চরমভাবে ব্যর্থ সীমান্ত ও মধুমতি ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণের হার এক শতাংশের ঘরেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে গত ছয় মাসে এক টাকাও বিতরণ করেনি দুটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো, উরি ব্যাংক এবং কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। ছয় মাসে যেসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার ২০ শতাংশের নিচে সেগুলো হলোÑ সরকারি খাতের রূপালী ব্যাংক, বিদেশি খাতের উরি ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এবি, কমিউনিটি, গ্লোবাল ইসলামী, আএফআইসি, মধুমতি, সীমান্ত, স্ট্যান্ডার্ড, দি সিটি, ইউনিয়ন ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ব্যাংক খাতে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ হয়েছে ১২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। বিতরণের পরিমাণ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৫.৯৪ শতাংশ। গত অর্থবছর ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় মাসে বিতরণ হয়েছিল ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা ছিল ৪৪.৭৭ শতাংশ। এতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষিতে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এ ঋণ পুরো বছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৪৯.২৬ শতাংশ। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ হয়েছে ছয় হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বা ৪৫.৯৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে কৃষি ঋণ আদায় হয়েছে ছয় হাজার ২৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের বছরের স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আদায় হয়েছিল ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ছিল চার কোটি ৩৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। করোনার মধ্যেও কৃষি খাতের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া সচল থাকায় কৃষক সময়মতো কিস্তি ফেরত দিচ্ছেন। আলোচিত সময়ে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর পুঞ্জীভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণ চার হাজার ৯০৯ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ। করোনার সময়েও কৃষি খাতের উৎপাদন সচল ছিল। তাই এ খাতে ঋণের প্রয়োজনও বেশি ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণসহায়তা দেয়নি। ফলে প্রথমবারের মতো গত অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় ব্যাংকগুলো। গত (২০১৯-২০) অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু অর্থবছরে শেষে এ খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কম হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। কৃষিখাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়।