মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের শঙ্কা : জাতিসংঘের উদ্বেগ

জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো মায়ানমারে নির্বাচনের পর সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব দেশটির পরিস্থিতিকে বড় উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও ১২টি দেশ পৃথক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রীতিনীতি মেনে চলার জন্য মায়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মায়ানমারের নির্বাচনে বড় জয় পেয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। ২০১১ সালে সামরিক শাসন অবসানের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যালোচনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর এটি দেশটির দ্বিতীয় নির্বাচন। তবে এবারের নির্বাচনে বড় ধরনের জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ এনেছে সেনাবাহিনী। নির্বাচন কমিশন এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সামরিক শাসনের অবসানের পর এ প্রথমবার বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

ক্ষমতাসীন দলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সামরিকপন্থি বিক্ষোভকারীরা দুটি শহরে জড়ো হয়েছেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে অভিযোগের মীমাংসা না হলে তারা পদক্ষেপ নেবে। মঙ্গলবার সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র অভ্যুত্থানের বিষয়টি নাকচ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সংবিধান অনুসারে, সেনাবাহিনীর জন্য দেশটির পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। এমন পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর আগেই নির্বাচন নিয়ে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাবনার দাবি জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং সামরিক কর্মকর্তাদের বলেছেন, যদি মেনে চলা না হয় তাহলে সংবিধান বাতিল হওয়া উচিত। এসময় তিনি অতীতে মায়ানমারের সংবিধান বাতিলের ঘটনা মনে করিয়ে দেন।

ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত এক পশ্চিমা কূটনীতিক জানান, পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন কারণ এক পক্ষের (সামরিক বাহিনী) সঙ্গে খুব বেশি মানুষ কথা বলেনি। কিন্তু একটি অভ্যুত্থান হবে বেদনাদায়ক পরিণতি। তিনি বলেন, আগের ইতিহাস দ্বারা দেশটি পরিচিত। ফলে এটি হবে ক্ষমার অযোগ্য। মায়ানমারের মানুষ এটাকে অমার্জনীয় ভাবতে পারেন।

এই বিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করেননি সু চি। এনএলডির এক মুখপাত্র জানান, বৃহস্পতিবার দলের সদস্যরা সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে তা সফল হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের উদ্বেগ রয়েছে তবে তা বড় ধরনের কিছু না।

মুখপাত্র মিয়ো নিয়ুন্ট জানান, সংবিধান সংশোধনে এনএলডির পরিকল্পনায় উত্তেজনার আশঙ্কা তারা আগেই করেছিলেন। এই সংশোধনে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রাজধানী নেপিদোতে পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক শুনানি হবে।

মুখপাত্র জানিয়েছেন, অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটলেও এনএলডি প্রতিক্রিয়ায় শক্তি প্রয়োগ করবে না।

বেশ কয়েকটি ট্রাকে ভর্তি বিক্ষোভকারীরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হন। তাদের হাতে সেনাবাহিনীর প্রশংসায় লেখা সেøাগানও ছিল। আদালত থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এনএলডির আইনপ্রণেতা জিন মার অং জানান, পুলিশ পার্লামেন্টের আশপাশে টহল দিচ্ছে এবং এই সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, কিছু ঘটছে এমনটি আমরা ভাবতে পারি না।

সামরিক শাসনামলে কয়েক বছর কারাগারে থাকা ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র সদস্য উইন হতেইন জানান, তাকে যদি গ্রেফতার করা হয়ে সেই প্রস্তুতি তার নেয়া আছে। তার কথায়, আমি গুছিয়ে নিয়েছি এবং প্রস্তুত। যদি তারা আজ আমাকে তুলে নিতে আসে। এনএনডির এক যুবনেতা জানিয়েছে, অনেক মানুষ সত্যিকার অর্থেই সামরিক শাসন ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন।

রয়টার্সের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে মায়ানমার সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

রবিবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ মাঘ ১৪২৭, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের শঙ্কা : জাতিসংঘের উদ্বেগ

image

জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো মায়ানমারে নির্বাচনের পর সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব দেশটির পরিস্থিতিকে বড় উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও ১২টি দেশ পৃথক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রীতিনীতি মেনে চলার জন্য মায়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মায়ানমারের নির্বাচনে বড় জয় পেয়ে ক্ষমতা ধরে রেখেছে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। ২০১১ সালে সামরিক শাসন অবসানের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যালোচনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর এটি দেশটির দ্বিতীয় নির্বাচন। তবে এবারের নির্বাচনে বড় ধরনের জালিয়াতি ও কারচুপির অভিযোগ এনেছে সেনাবাহিনী। নির্বাচন কমিশন এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সামরিক শাসনের অবসানের পর এ প্রথমবার বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

ক্ষমতাসীন দলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সামরিকপন্থি বিক্ষোভকারীরা দুটি শহরে জড়ো হয়েছেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নির্বাচন নিয়ে অভিযোগের মীমাংসা না হলে তারা পদক্ষেপ নেবে। মঙ্গলবার সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র অভ্যুত্থানের বিষয়টি নাকচ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সংবিধান অনুসারে, সেনাবাহিনীর জন্য দেশটির পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। এমন পরিস্থিতিতে পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর আগেই নির্বাচন নিয়ে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাবনার দাবি জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং সামরিক কর্মকর্তাদের বলেছেন, যদি মেনে চলা না হয় তাহলে সংবিধান বাতিল হওয়া উচিত। এসময় তিনি অতীতে মায়ানমারের সংবিধান বাতিলের ঘটনা মনে করিয়ে দেন।

ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত এক পশ্চিমা কূটনীতিক জানান, পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন কারণ এক পক্ষের (সামরিক বাহিনী) সঙ্গে খুব বেশি মানুষ কথা বলেনি। কিন্তু একটি অভ্যুত্থান হবে বেদনাদায়ক পরিণতি। তিনি বলেন, আগের ইতিহাস দ্বারা দেশটি পরিচিত। ফলে এটি হবে ক্ষমার অযোগ্য। মায়ানমারের মানুষ এটাকে অমার্জনীয় ভাবতে পারেন।

এই বিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করেননি সু চি। এনএলডির এক মুখপাত্র জানান, বৃহস্পতিবার দলের সদস্যরা সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে তা সফল হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের উদ্বেগ রয়েছে তবে তা বড় ধরনের কিছু না।

মুখপাত্র মিয়ো নিয়ুন্ট জানান, সংবিধান সংশোধনে এনএলডির পরিকল্পনায় উত্তেজনার আশঙ্কা তারা আগেই করেছিলেন। এই সংশোধনে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রাজধানী নেপিদোতে পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক শুনানি হবে।

মুখপাত্র জানিয়েছেন, অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটলেও এনএলডি প্রতিক্রিয়ায় শক্তি প্রয়োগ করবে না।

বেশ কয়েকটি ট্রাকে ভর্তি বিক্ষোভকারীরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হন। তাদের হাতে সেনাবাহিনীর প্রশংসায় লেখা সেøাগানও ছিল। আদালত থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এনএলডির আইনপ্রণেতা জিন মার অং জানান, পুলিশ পার্লামেন্টের আশপাশে টহল দিচ্ছে এবং এই সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, কিছু ঘটছে এমনটি আমরা ভাবতে পারি না।

সামরিক শাসনামলে কয়েক বছর কারাগারে থাকা ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র সদস্য উইন হতেইন জানান, তাকে যদি গ্রেফতার করা হয়ে সেই প্রস্তুতি তার নেয়া আছে। তার কথায়, আমি গুছিয়ে নিয়েছি এবং প্রস্তুত। যদি তারা আজ আমাকে তুলে নিতে আসে। এনএনডির এক যুবনেতা জানিয়েছে, অনেক মানুষ সত্যিকার অর্থেই সামরিক শাসন ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন।

রয়টার্সের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে মায়ানমার সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।