গত বছর নির্যাতনের শিকার ৪৪ জন গৃহশ্রমিক

২০২০ সালে মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্যসহ মোট ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২ জন। শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চরমভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১২ জন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। বিলস, গণসাক্ষরতা অভিযান, হ্যালোটাস্ক, নারী মৈত্রী, রেডঅরেঞ্জ ও ইউসেপ বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে এবং অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে পরিচালিত গৃহশ্রমিকের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষায় ‘সুনীতি’ প্রকল্পের উদ্যোগে ‘২০২০ সালে গৃহশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি এবং তাদের আইনি সুরক্ষা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল পর্যালোচনা সভায় গতকাল এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

পর্যালোচনা সভায় বক্তারা গৃহকর্মে শিশুশ্রমকে নিরুৎসাহিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয়ে গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধন চালু করা জরুরি যাতে প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার পর্যায় থেকে দুর্যোগকালে তাদের সহায়তার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। এছাড়া গৃহশ্রমিকদের কাজের ধরণ অনুযায়ী পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন হিসেবে আইন ও নীতিমালায় পৃথকভাবে বিবেচনা করলে তাদের আইনগত সুরক্ষার বিষয়টিও পরিষ্কার হবে বলে তারা মত দেন। বক্তারা গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, শ্রম আইনে তাদের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং গৃহশ্রমিকদের জন্য শোভন কাজ শীর্ষক আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুসমর্থন-এর দাবি জানান।

বিলস যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবুল হোসাইনের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ও বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন। সভায় সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ, বিশ্বব্যাংকের কনসালটেন্ট ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবিএম খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাজী আবদুল হান্নান, নারী মৈত্রী’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি, বিলস উপপরিচালক ও প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. ইউসুফ আল মামুন প্রমুখ। সভায় দুজন গৃহশ্রমিক বৃষ্টি এবং নুরেছা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

মূল প্রবন্ধে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ও বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন বলেন, ২০২০ সাল ছিল করোনা পরিস্থিতির কারণে সংকটময় একটি বছর। এই বছর গৃহশ্রমিকের জন্য শোভন কাজ নিশ্চিত করা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাকালে মৃত্যুভয় থাকা সত্ত্বেও গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন তাদের জন্য আরেকটি আতঙ্কের মাত্রা যোগ করেছে। তিনি দৈনিক সংবাদপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস পরিচালিত জরিপে গৃহশ্রমিক নির্যাতনের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি উল্লেখ করেন, শ্রম আইনে গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি, গৃহকর্মী কল্যাণ নীতিমালায় গৃহশ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বিশ্রামের সুযোগ এবং সংগঠন করার অধিকারের কথা বিবেচনায় রেখে নীতিমালাটি পুনরায় রিভিউ করা প্রয়োজন। এছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা বাস্তবায়ন ও নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে যে মনিটরিং সেল আছে, সেটিকে সক্রিয় করার মাধ্যমে এই কমিটির কার্যক্রমকে বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মতো গৃহশ্রমিকদেরও নিয়োগপত্র, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং নির্দিষ্ট মজুরি থাকা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালাকে আইনে পরিণত করতে না পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। শ্রম আইন সংশোধনী কমিটিতে যারা আছেন তাদের এ বিষয়ে আলোচনা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন হলে সব নির্যাতনের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবিএম খোরশেদ আলম বলেন, গৃহশ্রমিকদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার সবচেয়ে বেশি হন স্থায়ী শ্রমিকরা। যারা খণ্ডকালীন কাজ করেন এবং যারা পূর্ণকালীন কাজ করেন তাদের জন্য পৃথক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। শিশু গৃহশ্রমিকদের কাজে নিরুৎসাহীত করতে হবে এবং এ বিষয়ে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। করোনাকালে গৃহশ্রমিকরা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকদের একটি পরিচয়পত্রসহ ডাটাবেস থাকলে এ সুবিধা নিশ্চিত করা সহজ হতো।

বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাজী আবদুল হান্নান বলেন, সংবাদপত্রে গৃহশ্রমিক নির্যাতনের যে চিত্র আসে তা সামগ্রিক চিত্র নয়। প্রকৃত চিত্র এর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। যেসব নির্যাতনের ক্ষেত্রে মামলা হয় বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় শুধুমাত্র সেসব ঘটনাই সংবাদপত্রে আসে বলে তিনি উল্লেখ করেন। করোনাকালে দীর্ঘদিন গৃহশ্রমিকদের বিভিন্ন আবাসিক ভবনে প্রবেশ সীমাবদ্ধ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করেছে। তিনি বলেন, আাইএলও কনভেশন- ১৮৯ অনুসমর্থন করলে প্রবাসী গৃহশ্রমিকরা যেসব দেশে কর্মরত রয়েছে সেখানে তাদের সুরক্ষার বিষয়ে দেন দরবার করা অনেক সহজ হবে।

নারী মৈত্রী’র নির্বাহী পরিচাল শাহীন আকতার ডলি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী মৈত্রী গৃহশ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এ বিষয়ে আরও প্রচারণা দরকার। তিনি বলেন, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গৃহশ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা দরকার। গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবুল হোসাইন শ্রম আইনের ধারা ১ (৪)-এর উপধারা ৩ এর (ণ) এ এই আইন গৃহশ্রমিকদের ওপর প্রযোজ্য হবে না বলে যে বিষয়টি উল্লেখ আছে তা বিলোপ করার আহ্বান জানান। সভপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, গৃহশ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। তিনি গৃহশ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৮ মাঘ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

গত বছর নির্যাতনের শিকার ৪৪ জন গৃহশ্রমিক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

২০২০ সালে মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্যসহ মোট ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২ জন। শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চরমভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১২ জন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। বিলস, গণসাক্ষরতা অভিযান, হ্যালোটাস্ক, নারী মৈত্রী, রেডঅরেঞ্জ ও ইউসেপ বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে এবং অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে পরিচালিত গৃহশ্রমিকের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষায় ‘সুনীতি’ প্রকল্পের উদ্যোগে ‘২০২০ সালে গৃহশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি এবং তাদের আইনি সুরক্ষা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল পর্যালোচনা সভায় গতকাল এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

পর্যালোচনা সভায় বক্তারা গৃহকর্মে শিশুশ্রমকে নিরুৎসাহিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয়ে গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধন চালু করা জরুরি যাতে প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার পর্যায় থেকে দুর্যোগকালে তাদের সহায়তার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। এছাড়া গৃহশ্রমিকদের কাজের ধরণ অনুযায়ী পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন হিসেবে আইন ও নীতিমালায় পৃথকভাবে বিবেচনা করলে তাদের আইনগত সুরক্ষার বিষয়টিও পরিষ্কার হবে বলে তারা মত দেন। বক্তারা গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫-এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, শ্রম আইনে তাদের অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং গৃহশ্রমিকদের জন্য শোভন কাজ শীর্ষক আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুসমর্থন-এর দাবি জানান।

বিলস যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবুল হোসাইনের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ও বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন। সভায় সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ, বিশ্বব্যাংকের কনসালটেন্ট ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবিএম খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাজী আবদুল হান্নান, নারী মৈত্রী’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি, বিলস উপপরিচালক ও প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. ইউসুফ আল মামুন প্রমুখ। সভায় দুজন গৃহশ্রমিক বৃষ্টি এবং নুরেছা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

মূল প্রবন্ধে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ও বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন বলেন, ২০২০ সাল ছিল করোনা পরিস্থিতির কারণে সংকটময় একটি বছর। এই বছর গৃহশ্রমিকের জন্য শোভন কাজ নিশ্চিত করা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাকালে মৃত্যুভয় থাকা সত্ত্বেও গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন তাদের জন্য আরেকটি আতঙ্কের মাত্রা যোগ করেছে। তিনি দৈনিক সংবাদপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস পরিচালিত জরিপে গৃহশ্রমিক নির্যাতনের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি উল্লেখ করেন, শ্রম আইনে গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি, গৃহকর্মী কল্যাণ নীতিমালায় গৃহশ্রমিকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বিশ্রামের সুযোগ এবং সংগঠন করার অধিকারের কথা বিবেচনায় রেখে নীতিমালাটি পুনরায় রিভিউ করা প্রয়োজন। এছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা বাস্তবায়ন ও নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে যে মনিটরিং সেল আছে, সেটিকে সক্রিয় করার মাধ্যমে এই কমিটির কার্যক্রমকে বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের মতো গৃহশ্রমিকদেরও নিয়োগপত্র, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং নির্দিষ্ট মজুরি থাকা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালাকে আইনে পরিণত করতে না পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। শ্রম আইন সংশোধনী কমিটিতে যারা আছেন তাদের এ বিষয়ে আলোচনা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন হলে সব নির্যাতনের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবিএম খোরশেদ আলম বলেন, গৃহশ্রমিকদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার সবচেয়ে বেশি হন স্থায়ী শ্রমিকরা। যারা খণ্ডকালীন কাজ করেন এবং যারা পূর্ণকালীন কাজ করেন তাদের জন্য পৃথক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। শিশু গৃহশ্রমিকদের কাজে নিরুৎসাহীত করতে হবে এবং এ বিষয়ে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। করোনাকালে গৃহশ্রমিকরা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় উল্লেখযোগ্য সুবিধা পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকদের একটি পরিচয়পত্রসহ ডাটাবেস থাকলে এ সুবিধা নিশ্চিত করা সহজ হতো।

বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাজী আবদুল হান্নান বলেন, সংবাদপত্রে গৃহশ্রমিক নির্যাতনের যে চিত্র আসে তা সামগ্রিক চিত্র নয়। প্রকৃত চিত্র এর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। যেসব নির্যাতনের ক্ষেত্রে মামলা হয় বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় শুধুমাত্র সেসব ঘটনাই সংবাদপত্রে আসে বলে তিনি উল্লেখ করেন। করোনাকালে দীর্ঘদিন গৃহশ্রমিকদের বিভিন্ন আবাসিক ভবনে প্রবেশ সীমাবদ্ধ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করেছে। তিনি বলেন, আাইএলও কনভেশন- ১৮৯ অনুসমর্থন করলে প্রবাসী গৃহশ্রমিকরা যেসব দেশে কর্মরত রয়েছে সেখানে তাদের সুরক্ষার বিষয়ে দেন দরবার করা অনেক সহজ হবে।

নারী মৈত্রী’র নির্বাহী পরিচাল শাহীন আকতার ডলি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী মৈত্রী গৃহশ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এ বিষয়ে আরও প্রচারণা দরকার। তিনি বলেন, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গৃহশ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা দরকার। গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবুল হোসাইন শ্রম আইনের ধারা ১ (৪)-এর উপধারা ৩ এর (ণ) এ এই আইন গৃহশ্রমিকদের ওপর প্রযোজ্য হবে না বলে যে বিষয়টি উল্লেখ আছে তা বিলোপ করার আহ্বান জানান। সভপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, গৃহশ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। তিনি গৃহশ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।