উচ্চশিক্ষায় আসন সংকট নেই

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে অংশ নিতে হবে

এবার এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরবর্তী স্তরে ভর্তিতে আসন সংকটের কথা বলে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা, ভর্তিতে কোন আসন সংকট হবে না। বিশেষ মূল্যায়নে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। আর সারাদেশে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি এবং বিশেষায়িত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবমিলিয়ে স্নাতক, ডিগ্রি পাস কোর্স ও অন্যান্য স্তরে আসন রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ। তবে ভালোমানের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ। পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ হলেও বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তিতে সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে আসনের ক্ষেত্রে কোন সংকট হবে না। উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্নাতক সম্মান, স্নাতক পাস ও সমমান কোর্সে ১৩ লাখ ২০ হাজারের মতো আসন রয়েছে।

এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘চলতি বছর উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে আসনের ক্ষেত্রে কোন সংকট হবে না। প্রায় সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। তবে পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।’

তিনি আরও জানান, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২০টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৬টি কৃষিপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই সপ্তাহে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষায় আসন বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনেরও প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে অবকাঠামো বাড়াতে হবে, পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, মেয়েদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা থাকলে ভালো ফল করেও অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেষ্টা করবে।

২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর এবার এইচএসসি ও সমমানে সবচেয়ে বেশি এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৯ সালে এই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।

এক বছরের ব্যবধানে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা বাড়েনি। এ কারণে সরকারি বিশ^বিদ্যালয়, বিশেষায়িত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ‘অপেক্ষাকৃত ভালোমানের’ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে বলে শিক্ষাবিদরা ধারণা করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর শেখ ইকরামুল কবির সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবার যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করে তাতেই ভর্তিতে প্রতিযোগিতা হয় অনেক বেশি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক আসন ফাঁকাও থাকে, অনেক কলেজ শিক্ষার্থী পায় না। তবে এবার গতবারের চেয়ে অনেক বেশি পাস করায় এবং জিপিএ-৫ বেশি পাওয়ায় ভালোমানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।’

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চশিক্ষায় অনেক আসন রয়েছে-উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘সেখানে স্থানীয়রা ছাড়া কেউ সাধারণত ভর্তি হতে চায় না। আবার অনেকে ভালো ফল করেও আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও হোস্টেল সংকটের কারণে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। এরপরও যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা বেশি থাকে, সেগুলোতে আসন সংখ্যা সীমিত।’ ইউজিসি কর্মকর্তারা জানান, নির্দিষ্ট আসনের কথা বলা হলেও প্রতি বছর দেখা যায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীই খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পরে। এমনকি বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজেও আসন শূন্য থাকে। আবার প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকের পর অসংখ্য শিক্ষার্থী বাইরের দেশে চলে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকাংশতেই আসন থাকে ফাঁকা।

আসন সংকট হবে না -ইউজিসি

ইউজিসি’র পরিচালক (জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার) ড. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসনের কোন সংকট হবে না। দেশের ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ তিন হাজার ৬৭৫টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আট লাখ ৭২ হাজার ৮১৫টি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ হাজার ৭৫৬টি, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০টি, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৫০০টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০টি, ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০টি, ৬টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০টি, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ৫ হাজার ৬০০টি, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিকাল কলেজে ৬৫৪টি, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার ৫০০টি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে।

এদিকে ইউজিসি’র সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৪৩টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে আসন রয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৪৮টি। আর ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজে চার হাজার ৬৮টি এবং ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ছয় হাজার ২৮১টি আসন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০৭টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০১টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয় (বাকিগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করেনি), যেগুলোতে দুই লাখ ১০ হাজার আসন রয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশের দুই হাজার ২৬০টি কলেজে ¯œাতক (সম্মান) এবং ডিগ্রি পাস কোর্সে আসন রয়েছে প্রায় নয় লাখ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭ হাজার ৫৪৬ এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫৭ হাজার ৫৪৬টি আসন রয়েছে।

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ মো. বদরুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘অনার্স ভর্তিতে আসন সংকট নেই। গত বছরও আমাদের বেশিরভাগ আসন ফাঁকা ছিল। এবার সব শিক্ষার্থী পাস করলেও ভর্তিতে সমস্যা হবে না, আসন বৃদ্ধিরও প্রয়োজন হবে না।’

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে অনার্স (স্নাতক) প্রথম বর্ষে ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজ, বদরুনেছা মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং তিতুমীর সরকারি কলেজ।

সরকারি সোহরাওয়ার্দি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহসিন কবির সংবাদকে বলেন, ‘এই সাত কলেজের মধ্যে বিভাগ সবচেয়ে কম আমার কলেজে; এখানে ১৭টি বিভাগ রয়েছে। প্রতি বিভাগে ২০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। এ হিসেবে প্রায় তিন হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে।’

শনিবার এইচএসসি ও সমমানে মূল্যায়নের ফল ঘোষণার অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গত বছর যে সুযোগ ছিল, এবারও স্বাভাবিকভাবে ততটুকুই থাকছে। সবাইকেই এই পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, বিভিন্নভাবে এ পরীক্ষা হবে। কাজেই সেখানে মেধার পরিচয় দিয়েই ভর্তির সুযোগ পাবে তারা। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিজের স্থান তৈরি করতে হবে-মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পাবে, তা নিশ্চিত নয়। এবার ভর্তি পরীক্ষায় হয়রানি কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।’

সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৮ মাঘ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

উচ্চশিক্ষায় আসন সংকট নেই

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে অংশ নিতে হবে

রাকিব উদ্দিন

এবার এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরবর্তী স্তরে ভর্তিতে আসন সংকটের কথা বলে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা, ভর্তিতে কোন আসন সংকট হবে না। বিশেষ মূল্যায়নে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। আর সারাদেশে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি এবং বিশেষায়িত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবমিলিয়ে স্নাতক, ডিগ্রি পাস কোর্স ও অন্যান্য স্তরে আসন রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ। তবে ভালোমানের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ। পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ হলেও বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তিতে সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে আসনের ক্ষেত্রে কোন সংকট হবে না। উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্নাতক সম্মান, স্নাতক পাস ও সমমান কোর্সে ১৩ লাখ ২০ হাজারের মতো আসন রয়েছে।

এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘চলতি বছর উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে আসনের ক্ষেত্রে কোন সংকট হবে না। প্রায় সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। তবে পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।’

তিনি আরও জানান, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২০টি সাধারণ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৬টি কৃষিপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই সপ্তাহে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, উচ্চ শিক্ষায় আসন বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনেরও প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে অবকাঠামো বাড়াতে হবে, পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, মেয়েদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জেলা ও বিভাগ পর্যায়ের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা থাকলে ভালো ফল করেও অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির চেষ্টা করবে।

২০০৩ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর এবার এইচএসসি ও সমমানে সবচেয়ে বেশি এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৯ সালে এই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন।

এক বছরের ব্যবধানে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি অন্যান্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা বাড়েনি। এ কারণে সরকারি বিশ^বিদ্যালয়, বিশেষায়িত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ‘অপেক্ষাকৃত ভালোমানের’ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে বলে শিক্ষাবিদরা ধারণা করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর শেখ ইকরামুল কবির সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবার যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করে তাতেই ভর্তিতে প্রতিযোগিতা হয় অনেক বেশি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক আসন ফাঁকাও থাকে, অনেক কলেজ শিক্ষার্থী পায় না। তবে এবার গতবারের চেয়ে অনেক বেশি পাস করায় এবং জিপিএ-৫ বেশি পাওয়ায় ভালোমানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।’

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চশিক্ষায় অনেক আসন রয়েছে-উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘সেখানে স্থানীয়রা ছাড়া কেউ সাধারণত ভর্তি হতে চায় না। আবার অনেকে ভালো ফল করেও আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও হোস্টেল সংকটের কারণে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। এরপরও যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা বেশি থাকে, সেগুলোতে আসন সংখ্যা সীমিত।’ ইউজিসি কর্মকর্তারা জানান, নির্দিষ্ট আসনের কথা বলা হলেও প্রতি বছর দেখা যায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীই খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পরে। এমনকি বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজেও আসন শূন্য থাকে। আবার প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকের পর অসংখ্য শিক্ষার্থী বাইরের দেশে চলে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকাংশতেই আসন থাকে ফাঁকা।

আসন সংকট হবে না -ইউজিসি

ইউজিসি’র পরিচালক (জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার) ড. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসনের কোন সংকট হবে না। দেশের ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই লাখ তিন হাজার ৬৭৫টি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আট লাখ ৭২ হাজার ৮১৫টি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭ হাজার ৭৫৬টি, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০টি, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৫০০টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০টি, ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০টি, ৬টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০টি, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ৫ হাজার ৬০০টি, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিকাল কলেজে ৬৫৪টি, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিন হাজার ৫০০টি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে।

এদিকে ইউজিসি’র সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৪৩টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে আসন রয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৪৮টি। আর ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজে চার হাজার ৬৮টি এবং ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ছয় হাজার ২৮১টি আসন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০৭টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০১টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয় (বাকিগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করেনি), যেগুলোতে দুই লাখ ১০ হাজার আসন রয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশের দুই হাজার ২৬০টি কলেজে ¯œাতক (সম্মান) এবং ডিগ্রি পাস কোর্সে আসন রয়েছে প্রায় নয় লাখ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭ হাজার ৫৪৬ এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫৭ হাজার ৫৪৬টি আসন রয়েছে।

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ মো. বদরুজ্জামান সংবাদকে বলেন, ‘অনার্স ভর্তিতে আসন সংকট নেই। গত বছরও আমাদের বেশিরভাগ আসন ফাঁকা ছিল। এবার সব শিক্ষার্থী পাস করলেও ভর্তিতে সমস্যা হবে না, আসন বৃদ্ধিরও প্রয়োজন হবে না।’

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধীভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে অনার্স (স্নাতক) প্রথম বর্ষে ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজ, বদরুনেছা মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ এবং তিতুমীর সরকারি কলেজ।

সরকারি সোহরাওয়ার্দি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মহসিন কবির সংবাদকে বলেন, ‘এই সাত কলেজের মধ্যে বিভাগ সবচেয়ে কম আমার কলেজে; এখানে ১৭টি বিভাগ রয়েছে। প্রতি বিভাগে ২০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। এ হিসেবে প্রায় তিন হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে।’

শনিবার এইচএসসি ও সমমানে মূল্যায়নের ফল ঘোষণার অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গত বছর যে সুযোগ ছিল, এবারও স্বাভাবিকভাবে ততটুকুই থাকছে। সবাইকেই এই পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, বিভিন্নভাবে এ পরীক্ষা হবে। কাজেই সেখানে মেধার পরিচয় দিয়েই ভর্তির সুযোগ পাবে তারা। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিজের স্থান তৈরি করতে হবে-মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পাবে, তা নিশ্চিত নয়। এবার ভর্তি পরীক্ষায় হয়রানি কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।’