সব জেলায় টিকা পৌঁছে যাচ্ছে

৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুরক্ষা অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হবে

আজকালের মধ্যে দেশের সব জেলায় করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) পৌঁছে যাচ্ছে। ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে করোনার টিকাদান কার্যসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জেলায় টিকা পৌঁছে গেছে। সব টিকাই রাখা হচ্ছে জেলা পর্যায়ে ইপিআই (সরকারের টিকাদান কর্মসূচি) সংরক্ষণাগারে। টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশিদ আলম।

তিনি গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে নিপসম মিলনায়তনে ‘পোস্ট মনসুন এডিস মসকিউটো সার্ভে-২০২০ রিপোর্ট ডেসিমিনেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। একই সঙ্গে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের সব জেলায় করোনাভাইরাসের টিকা পৌঁছে যাবে বলেও জানিয়েছেন।

বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই অ্যাপটি মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে বলে আইসিটি মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে। এরইমধ্যে সেটা গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে।’

টিকা বিতরণের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘আজকালের মধ্যে দেশের সব জায়গায় টিকা পৌঁছে যাবে। আর দেরি হবে না- এটুকু বলতে পারি। ভ্যাকসিন দেয়ার কেন্দ্রগুলোতে বুথ তৈরি করা হয়েছে। যারা ভ্যাকসিন দেবেন তাদের এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।’

সুবিধামতো নিবন্ধন

আজ (সোমবার) সব জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের ফোকাল পারসনদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিটিং রয়েছে জানিয়ে এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে একটা ফিডব্যাক নেব যে,তারা কী কী সমস্যা ফিল করছেন, সেগুলো আমরা ঠিক করে দেব। তবে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদের স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় আইসিটি কার্যালয়ের কর্মীদের সহায়তায় স্বাস্থ্য বিভাগ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।’

প্রত্যেকটি উপজেলায় ইন্টারনেট কানেকশনসহ ল্যাপটপ দেয়া আছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা একটা চিন্তা করেছি, যারা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন না, স্থানীয় আইসিটির লোক আছে, তাদের সহায়তায় নিবন্ধন করে দেয়া হবে। টিকা দেয়ার আগে এলাকায় ঘোষণা দিয়ে দেয়া হবে, যার যখন সুবিধামতো রেজিস্ট্রেশন করে যান। যদি ১০০ জনের রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটা তারিখ দিয়ে দেব। ওই ১০০ জন ওই তারিখে এসে টিকা নেবেন। রেজিস্ট্রেশন হবে অনলাইনেই, আমাদের লোকজন হেল্প করবে।’

২৭ জানুয়ারি দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়। পরদিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আরও ১০০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ১৯৮ জন, ঢামেকে ১২০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৫ জন এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৫৮ জনকে টিকা দেয়া হয়। সবমিলিয়ে মোট ৫৬৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কুড়িগ্রামে ৬০ হাজার টিকা

কুড়িগ্রাম থেকে সংবাদের নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, গতকাল বেক্সিমকো ফার্মার তত্ত্বাবধানে কুড়িগ্রামে ৬০ হাজার করোনার টিকা এসে পৌঁছেছে। দুপুর ২টার দিকে কুড়িগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের টিকা সংরক্ষণাগারে পৌঁছায় টিকা। বেক্সিমকো ফার্মার সেলস, ইন্টেলিজেন্স ও মনিটরিং ইউনিটের সদস্য রাশেদুল ইসলাম জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে টিকা বুঝিয়ে দেন। টিকা গ্রহণ করেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. বোরহান উদ্দিন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। সে লক্ষ্যে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।’

নোয়াখালীতে পৌঁছেছে ১ লাখ ৪ হাজার ডোজ টিকা

সংবাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নোয়াখালীতে প্রথম পর্যায়ে ৯টি কার্টনে ১০ হাজার ৪০০ বায়েলে ১ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে। জেলার ইপিআই’র ক্লোড স্টোরে ৫ লাখেরও বেশি ভ্যাকসিন রাখা যাবে। গতকাল দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় কুমিল্লা-ফেনী হয়ে নোয়াখালীতে আসে ভ্যাকসিন বহনকারী ফ্রিজিং ভ্যানটি।

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করেন কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিদ্যুৎ কুমার।

সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, ইপিআই কর্মসূচির মতো করে করোনা প্রতিরোধ টিকা প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জেলার ৯টি উপজেলায় এ টিকাদান কর্মসূচি চালু করা হবে। টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে মোট ২৭টি টিম।

নীলফামারীতে ৬০ হাজার ডোজ টিকা

সংবাদের নীলফামারী জেলা বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিনের ৬০ হাজার ডোজ নীলফামারীতে এসেছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে ভ্যাকসিনের পাঁচটি কার্টন গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমাম জায়িদ মুজাক্কিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাশেবুল হোসেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক কাজী ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের চারটি বুথে এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর দুটি করে বুথে টিকা দেয়া হবে নিবন্ধনকারীদের। প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যম কর্মীরা এই টিকার আওতায় আসবে।

চট্টগ্রামে এলো ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন

সংবাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ৩৮টি কার্টনে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন এসেছে। গতকাল সকাল ৭টায় কোল্ড চেইন বজায় রেখে আনা এসব ভ্যাকসিন সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়।

নগর ও জেলায় অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের মাঝে এই ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

তিনি জানান, ইপিআই কর্মসূচির মতো করেই করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচিও পরিচালিত হবে। এজন্য ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মহানগরীতে টিকাদানে নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। সিভিল সার্জন জানান, টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। উপজেলা পর্যায়ে ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেয়া হবে।

সরকার আগামী ছয় মাসে তিন কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। জনপ্রতি দুটি করে মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ২০ লাখ ডোজ গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। আর চুক্তির আওতায় ২৫ জানুয়ারি একই প্রতিষ্ঠানের টিকার ৫০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে।

সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৮ মাঘ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সব জেলায় টিকা পৌঁছে যাচ্ছে

৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুরক্ষা অ্যাপ গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

আজকালের মধ্যে দেশের সব জেলায় করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) পৌঁছে যাচ্ছে। ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে করোনার টিকাদান কার্যসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জেলায় টিকা পৌঁছে গেছে। সব টিকাই রাখা হচ্ছে জেলা পর্যায়ে ইপিআই (সরকারের টিকাদান কর্মসূচি) সংরক্ষণাগারে। টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশিদ আলম।

তিনি গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে নিপসম মিলনায়তনে ‘পোস্ট মনসুন এডিস মসকিউটো সার্ভে-২০২০ রিপোর্ট ডেসিমিনেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। একই সঙ্গে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের সব জেলায় করোনাভাইরাসের টিকা পৌঁছে যাবে বলেও জানিয়েছেন।

বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই অ্যাপটি মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে বলে আইসিটি মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে। এরইমধ্যে সেটা গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে।’

টিকা বিতরণের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘আজকালের মধ্যে দেশের সব জায়গায় টিকা পৌঁছে যাবে। আর দেরি হবে না- এটুকু বলতে পারি। ভ্যাকসিন দেয়ার কেন্দ্রগুলোতে বুথ তৈরি করা হয়েছে। যারা ভ্যাকসিন দেবেন তাদের এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।’

সুবিধামতো নিবন্ধন

আজ (সোমবার) সব জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের ফোকাল পারসনদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিটিং রয়েছে জানিয়ে এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে একটা ফিডব্যাক নেব যে,তারা কী কী সমস্যা ফিল করছেন, সেগুলো আমরা ঠিক করে দেব। তবে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদের স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় আইসিটি কার্যালয়ের কর্মীদের সহায়তায় স্বাস্থ্য বিভাগ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।’

প্রত্যেকটি উপজেলায় ইন্টারনেট কানেকশনসহ ল্যাপটপ দেয়া আছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা একটা চিন্তা করেছি, যারা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন না, স্থানীয় আইসিটির লোক আছে, তাদের সহায়তায় নিবন্ধন করে দেয়া হবে। টিকা দেয়ার আগে এলাকায় ঘোষণা দিয়ে দেয়া হবে, যার যখন সুবিধামতো রেজিস্ট্রেশন করে যান। যদি ১০০ জনের রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটা তারিখ দিয়ে দেব। ওই ১০০ জন ওই তারিখে এসে টিকা নেবেন। রেজিস্ট্রেশন হবে অনলাইনেই, আমাদের লোকজন হেল্প করবে।’

২৭ জানুয়ারি দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে করোনার টিকা দেয়া হয়। পরদিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আরও ১০০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ১৯৮ জন, ঢামেকে ১২০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৫ জন এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৫৮ জনকে টিকা দেয়া হয়। সবমিলিয়ে মোট ৫৬৭ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কুড়িগ্রামে ৬০ হাজার টিকা

কুড়িগ্রাম থেকে সংবাদের নিজস্ব বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, গতকাল বেক্সিমকো ফার্মার তত্ত্বাবধানে কুড়িগ্রামে ৬০ হাজার করোনার টিকা এসে পৌঁছেছে। দুপুর ২টার দিকে কুড়িগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের টিকা সংরক্ষণাগারে পৌঁছায় টিকা। বেক্সিমকো ফার্মার সেলস, ইন্টেলিজেন্স ও মনিটরিং ইউনিটের সদস্য রাশেদুল ইসলাম জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে টিকা বুঝিয়ে দেন। টিকা গ্রহণ করেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. বোরহান উদ্দিন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। সে লক্ষ্যে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।’

নোয়াখালীতে পৌঁছেছে ১ লাখ ৪ হাজার ডোজ টিকা

সংবাদের নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নোয়াখালীতে প্রথম পর্যায়ে ৯টি কার্টনে ১০ হাজার ৪০০ বায়েলে ১ লাখ ৪ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পৌঁছেছে। ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে। জেলার ইপিআই’র ক্লোড স্টোরে ৫ লাখেরও বেশি ভ্যাকসিন রাখা যাবে। গতকাল দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় কুমিল্লা-ফেনী হয়ে নোয়াখালীতে আসে ভ্যাকসিন বহনকারী ফ্রিজিং ভ্যানটি।

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করেন কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিদ্যুৎ কুমার।

সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, ইপিআই কর্মসূচির মতো করে করোনা প্রতিরোধ টিকা প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জেলার ৯টি উপজেলায় এ টিকাদান কর্মসূচি চালু করা হবে। টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে মোট ২৭টি টিম।

নীলফামারীতে ৬০ হাজার ডোজ টিকা

সংবাদের নীলফামারী জেলা বার্তা পরিবেশক জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিনের ৬০ হাজার ডোজ নীলফামারীতে এসেছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে ভ্যাকসিনের পাঁচটি কার্টন গ্রহণ করেন সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমাম জায়িদ মুজাক্কিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাশেবুল হোসেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক কাজী ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের চারটি বুথে এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর দুটি করে বুথে টিকা দেয়া হবে নিবন্ধনকারীদের। প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসক, নার্স, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যম কর্মীরা এই টিকার আওতায় আসবে।

চট্টগ্রামে এলো ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন

সংবাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ৩৮টি কার্টনে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ করোনার ভ্যাকসিন এসেছে। গতকাল সকাল ৭টায় কোল্ড চেইন বজায় রেখে আনা এসব ভ্যাকসিন সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়।

নগর ও জেলায় অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের মাঝে এই ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

তিনি জানান, ইপিআই কর্মসূচির মতো করেই করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচিও পরিচালিত হবে। এজন্য ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মহানগরীতে টিকাদানে নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। সিভিল সার্জন জানান, টিকাদানে নিয়োজিত থাকবে ৪২টি টিম। উপজেলা পর্যায়ে ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেয়া হবে।

সরকার আগামী ছয় মাসে তিন কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। জনপ্রতি দুটি করে মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রয়োজন হবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ২০ লাখ ডোজ গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। আর চুক্তির আওতায় ২৫ জানুয়ারি একই প্রতিষ্ঠানের টিকার ৫০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে।