নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে ভোটের হার বেড়েছে। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী এ সময় নির্বাচনী সংঘাত এবং ভোটে অনিয়ম আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ ধাপে স্বতন্ত্র প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের হারও বেড়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো শনিবার তৃতীয় ধাপের ভোটেও নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ধাপে ৬৩ পৌরসভার মধ্যে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়সহ) ৪৬টিতে নৌকা, ৩টিতে ধানের শীষ এবং ১৪টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। স্থানীয় সূত্র অনুয়ায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুয়ায়ী, তৃতীয় ধাপে গড়ে ভোট পড়েছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৬৫ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে।
তৃতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণার পর প্রচারণার শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের বাধা, হুমকি, মারধরসহ নানা অভিযোগ ছিল ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। প্রচারণাকালে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন ভয়ভীতি প্রদর্শন, এজেন্ট বের করে দেয়া, ভোট প্রদানে বাধা, নৌকা প্রতীকে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণাও এসেছে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভোটের দিন বেশকিছু কেন্দ্রে অনিয়মের খবর সংগ্রহে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা।
প্রথম দুই ধাপে গোলযোগ ও সংঘর্ষ হওয়ায় তৃতীয় ধাপে বিশেষ সতর্কতা নেয়ার কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সংঘাত আটকানো যায়নি। ভোটের দিন একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ৯০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। কিশোরগঞ্জে কটিয়াদী, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ভোটে অনিয়মকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ কাউন্সিলরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ত্রিশজনের বেশি। এছাড়া বেশকিছু পৌরসভার কেন্দ্রে ভোটে অনিয়ম, এজেন্ট ও প্রার্থীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। দর্শনা, সিংড়া, কটিয়াদী, কলারোয়া, সরিষাবাড়ীসহ অন্তত ১৫টি পৌরসভায় বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
তবে ভোট শেষে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে।’ দ্বিতীয় ধাপের ভোট শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘দুয়েকটি জায়গায় দুষ্কৃতকারীরা অপচেষ্টা করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এটা খুবই নগণ্য ঘটনা। সব মিলিয়ে এবার পৌরসভায় সুষ্ঠু ও একটা সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।’ প্রথম ধাপের ভোট শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘সাকসেসফুল নির্বাচন হয়েছে।’ এদিকে দ্বিতীয় ধাপে সাভারে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, ‘পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।’
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তি জড়িত থাকে। তাই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘পক্ষপাতিত্ব’ দেখা যায়। তবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চাইলে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে পারে। বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে, বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটের দিন দৃশ্যমান অনিয়ম প্রতিরোধে অভিযোগের অপেক্ষায় থাকে কমিশন। অভিযোগ না পেলে অনিয়ম প্রতিরোধে ইসির স্বপ্রণোদিত উদ্যোগ গ্রহণের নজির খুবই কম।
তৃতীয় ধাপে ভোটের আগেই তিনজন মেয়রসহ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এসব পদে দলীয় প্রার্থী দিতে না পারার কারণ হিসেব স্থানীয় আওয়ামী লীগের হুমকি, অত্যাচারকে দায়ী করেছে বিএনপি। এসব বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ধাপে মেয়র পদে দশটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীদের মধ্যেই হয়েছে। কয়েকটি পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। আবার কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে নৌকার তুমুল লড়াই হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, নৌকার ভরাডুবির অন্যতম কারণ একক প্রার্থীর পাশপাশি জনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে না পারা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মো. মুকিতুর রহমান রাফি। নারিকেল গাছ প্রতীকে তিনি পান ১১ হাজার ১৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ফারুক আহমেদ (ধানের শীষ) পান ৫ হাজার ৪৯৪ ভোট। আওয়ামী লীগের খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) প্রতীকে পান ৫ হাজার ৩৯ ভোট।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মতিউর রহমান মতি খান চামচ প্রতীক নিয়ে সাত হাজার ৬২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বিশ্বাস পান সাত হাজার ৬২ ভোট।
বগুড়ার ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের মারধরের শিকার হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর এজেন্ট। এরপরও এখনে বিদ্রোহী প্রার্থী এজিএম বাদশাহ জগ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন।
ইসির যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান গতকাল জানান, শনিবার তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬১৫ ভোটারের মধ্যে মেয়র পদে ভোট দিয়েছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৬ জন। সে হিসাবে, এবারের ভোটের হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। তিনি জানান, সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে নওগাঁর ধামইরহাটে ৯২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ ভোট পড়েছে মৌলভীবাজারে ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
তিন ধাপে মেয়র : আ’লীগ ১০৯, বিএনপি ৯ ও স্বতন্ত্র ২৫
তিন ধাপে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোট বিজয়ী হয়েছে ১১০টি পৌরসভায়। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি জিতেছে ৯টিতে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন ২৫টি পৌরসভায়। স্বতন্ত্র প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থীদের বেশিরভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী কোন সংগঠনের বর্তমান বা সাবেক নেতা। তৃতীয় ধাপে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৩৩৪৪ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ২২৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৫৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৬০ জন।
দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির ৪ জন, জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন ও ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন। প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির দুইজন এবং স্বতন্ত্র ৩ জন প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।
সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৮ মাঘ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যানুযায়ী তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে ভোটের হার বেড়েছে। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী এ সময় নির্বাচনী সংঘাত এবং ভোটে অনিয়ম আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ ধাপে স্বতন্ত্র প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের হারও বেড়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো শনিবার তৃতীয় ধাপের ভোটেও নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ধাপে ৬৩ পৌরসভার মধ্যে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়সহ) ৪৬টিতে নৌকা, ৩টিতে ধানের শীষ এবং ১৪টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। স্থানীয় সূত্র অনুয়ায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুয়ায়ী, তৃতীয় ধাপে গড়ে ভোট পড়েছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৬৫ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে।
তৃতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণার পর প্রচারণার শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের বাধা, হুমকি, মারধরসহ নানা অভিযোগ ছিল ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। প্রচারণাকালে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন ভয়ভীতি প্রদর্শন, এজেন্ট বের করে দেয়া, ভোট প্রদানে বাধা, নৌকা প্রতীকে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণাও এসেছে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভোটের দিন বেশকিছু কেন্দ্রে অনিয়মের খবর সংগ্রহে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা।
প্রথম দুই ধাপে গোলযোগ ও সংঘর্ষ হওয়ায় তৃতীয় ধাপে বিশেষ সতর্কতা নেয়ার কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সংঘাত আটকানো যায়নি। ভোটের দিন একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ৯০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। কিশোরগঞ্জে কটিয়াদী, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ভোটে অনিয়মকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ কাউন্সিলরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ত্রিশজনের বেশি। এছাড়া বেশকিছু পৌরসভার কেন্দ্রে ভোটে অনিয়ম, এজেন্ট ও প্রার্থীদের মারধরের ঘটনা ঘটে। দর্শনা, সিংড়া, কটিয়াদী, কলারোয়া, সরিষাবাড়ীসহ অন্তত ১৫টি পৌরসভায় বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
তবে ভোট শেষে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে।’ দ্বিতীয় ধাপের ভোট শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘দুয়েকটি জায়গায় দুষ্কৃতকারীরা অপচেষ্টা করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এটা খুবই নগণ্য ঘটনা। সব মিলিয়ে এবার পৌরসভায় সুষ্ঠু ও একটা সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।’ প্রথম ধাপের ভোট শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘সাকসেসফুল নির্বাচন হয়েছে।’ এদিকে দ্বিতীয় ধাপে সাভারে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, ‘পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।’
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তি জড়িত থাকে। তাই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘পক্ষপাতিত্ব’ দেখা যায়। তবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চাইলে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে পারে। বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে, বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটের দিন দৃশ্যমান অনিয়ম প্রতিরোধে অভিযোগের অপেক্ষায় থাকে কমিশন। অভিযোগ না পেলে অনিয়ম প্রতিরোধে ইসির স্বপ্রণোদিত উদ্যোগ গ্রহণের নজির খুবই কম।
তৃতীয় ধাপে ভোটের আগেই তিনজন মেয়রসহ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এসব পদে দলীয় প্রার্থী দিতে না পারার কারণ হিসেব স্থানীয় আওয়ামী লীগের হুমকি, অত্যাচারকে দায়ী করেছে বিএনপি। এসব বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ধাপে মেয়র পদে দশটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ-বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীদের মধ্যেই হয়েছে। কয়েকটি পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। আবার কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে নৌকার তুমুল লড়াই হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, নৌকার ভরাডুবির অন্যতম কারণ একক প্রার্থীর পাশপাশি জনপ্রিয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে না পারা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মো. মুকিতুর রহমান রাফি। নারিকেল গাছ প্রতীকে তিনি পান ১১ হাজার ১৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ফারুক আহমেদ (ধানের শীষ) পান ৫ হাজার ৪৯৪ ভোট। আওয়ামী লীগের খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) প্রতীকে পান ৫ হাজার ৩৯ ভোট।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মতিউর রহমান মতি খান চামচ প্রতীক নিয়ে সাত হাজার ৬২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বিশ্বাস পান সাত হাজার ৬২ ভোট।
বগুড়ার ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের মারধরের শিকার হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর এজেন্ট। এরপরও এখনে বিদ্রোহী প্রার্থী এজিএম বাদশাহ জগ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন।
ইসির যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান গতকাল জানান, শনিবার তৃতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে ১৯ লাখ ৮ হাজার ৬১৫ ভোটারের মধ্যে মেয়র পদে ভোট দিয়েছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৬ জন। সে হিসাবে, এবারের ভোটের হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। তিনি জানান, সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে নওগাঁর ধামইরহাটে ৯২ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ ভোট পড়েছে মৌলভীবাজারে ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
তিন ধাপে মেয়র : আ’লীগ ১০৯, বিএনপি ৯ ও স্বতন্ত্র ২৫
তিন ধাপে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোট বিজয়ী হয়েছে ১১০টি পৌরসভায়। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি জিতেছে ৯টিতে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন ২৫টি পৌরসভায়। স্বতন্ত্র প্রতীকে বিজয়ী প্রার্থীদের বেশিরভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী কোন সংগঠনের বর্তমান বা সাবেক নেতা। তৃতীয় ধাপে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৩৩৪৪ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ২২৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৫৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৬০ জন।
দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির ৪ জন, জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন ও ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন। প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির দুইজন এবং স্বতন্ত্র ৩ জন প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।