ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ

১৩টি সেতু পুনর্নির্মাণ করা হবে

সংস্থার সমন্বয়হীনতা ও ভুল পরিকল্পনার মাশুল : বিশেষজ্ঞ

ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌপথে কম উচ্চতার ১৩টি সেতু রয়েছে। ২০১০ সালে সরেজমিন পরিদর্শন করে সেতুগুলো পুনঃনির্মাণের সুপারিশক করেছিল নৌ-মন্ত্রণালয়ের একটি উপকমিটি। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম হলেও সেই সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয় নি। তাই ঢাকার চারপাশে নৌ চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এসব ব্রিজের উচ্চতা বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘বাবুবাজার এবং টঙ্গী রেল ব্রিজসহ ঢাকার চারপাশে নদ-নদীর উপর নির্মিত কম উচ্চতাসম্পন্ন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ অথবা ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। ঢাকার চারপাশে নদ-নদী, খালের উপর ১৩টি ব্রিজ চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলো স্বল্প উচ্চতাসম্পন্ন এবং নৌ চলাচলের অনুপোযোগী। তাই নৌ চলাচল ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখতে এইসব ব্রিজ পুনঃনির্মাণ অথবা ভেঙে ফেলে নতুন ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

গতকাল সচিবালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এবং ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির এক সভা শেষে তিনি সংবাদিকদের এ কথা বলেন। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী এই পাঁচটি নদী রয়েছে। এই নদীগুলো ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌপথ চালুর লক্ষ্যে ২০০০-২০১২ সাল পর্যন্ত দুই দফা খনন করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। চালু করা হয়েছিল ওয়াটার বাস সার্ভিস। কিন্তু কম উচ্চতার ১৩ সেতুর কারণে কার্যকর হয়নি ওয়াটার বাস সার্ভিস। ১০ বছর পরে এসে একই কথা বললেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। এই ১০ বছরের নৌপথে আরও অনেক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। পরিকল্পনা কমিশন নামমাত্র পরিকল্পনা করে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন সমন্বয় করে না। তাই স্থাপনা ভাঙার চেয়ে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে বুয়েট অধ্যাপক ড. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, ‘২০১০ সালে কম উচ্চতার সেতু সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেতুগুলো নির্র্মাণের আগে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমতি নেয়া হয়েছিল। তখন কেন এ বিষয়ে বাধা দেয়া হয় নি। ১০ বছর পর এসে একই সিদ্ধান্ত আবার নেয়া হলো। কিন্তু বাস্তবায়ন হবে কিনা তা সন্দেহের বিষয়। কারণ এগুলো বাস্তবায়নের জন্য আবার পরিকল্পনা কমিশনের অনুমতি নেয়া হবে। মূল কথা পরিকল্পনা কমিশনে কোন পরিকল্পনাবিদ নেই। যদি থাকত তাহলে এমন ভুল প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা না।’

জানা গেছে, ঢাকার চারপাশের নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বৃত্তকার নৌপথ খননের প্রকল্প নেয়া হয় ২০০০ সালে। দুই দফা খনন কাজ শেষে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় এই প্রকল্পের কাজ। ৯০ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে আবার ভরাট হয়ে গেছে এই নৌপথটি। এছাড়া নদীর উপর নির্মিত সড়ক ও রেলপথে ১৩টি সেতুর উচ্চতা কম থাকায় এর নিচ দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না।

বৃত্তকার এই নৌপথের মধ্যে ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ-সদরঘাট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এছাড়া সদরঘাট-মিরপুর-টঙ্গী-ডেমরা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার হলো তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এই তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথের উপর বিদ্যমান সড়ক ও রেলপথে মোট ১৫টি সেতু রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি সেতুর উচ্চতা নদীর পানির স্তর থেকে খুবই কম। এই সেতুগুলোর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ৬টি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৫টি ও রেলওয়ের ২টি সেতু রয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত নদীর উপর সেতু নির্মাণের স্ট্যান্ডার মান অনুযায়ী ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (স্বাভাবিক পানি প্রবাহ) থেকে ২৫ ফুট বা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১০০ ফুট বা ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের নদী তুরাগ, টঙ্গীখাল ও বালু নদীর উপর নির্মিত সেতুগুলো স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল (এসএইচডাব্লিউএল) ২৩-২৪ ফুটের বেশি না। কোন কোন সেতু উচ্চতা এর চেয়ে অনেক কম। এরমধ্যে সওজ’র সেতুগুলো হলো- আবদুল্লাপুর থেকে ইপিজিড সড়কে নির্মিত আশুলিয়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল মাত্র ৩ ফুট এবং হরাইজন্টাল হলো ৩৮ ফুট। যা স্ট্যান্ডার মান থেকে ২২ ফুট কম।

একইভাবে তুরাগ নদীতে নির্মিত কামাপপাড়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল ৮ ফুট, টঙ্গী সড়কের পশ্চিম পাশের ব্রিজের ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি, টঙ্গী সড়কের পূর্বপাশের সেতুর ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি। রেলওয়ের দুই সেতু হলো- টঙ্গী রেলসেতু-১ ভার্টিক্যাল ৬ ফুট, টঙ্গী রেলসেতু-২ ভার্টিক্যাল ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এলজিইডি সেতু হলো- টঙ্গী খালের উপর নির্মিত প্রত্যাশা ব্রিজের উচ্চতা ৮ ফুট, বালু নদের উপর নির্মিত ত্রিমুখী সেতু ভার্টিক্যাল ১৩ ফুট, ইছাপুরা সেতু ভার্টিক্যাল ১১ ফুট ও ডেমরা সেতুর ভার্টিক্যাল ১২ ফুট। এই সেতুগুলো নদীর পানির স্তর থেকে স্ট্যান্ডার্ড মান (হাই ওয়াটার লেভেল) অনেক কম। তাই ২০১০ সালে সেতুগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে পুনঃনির্মাণের সুপারিশ করেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের একটি উপকমিটি। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম হলেও এই সুপারিশের কোন বাস্তবায়ন নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, ‘নদীর উপর সেতু নির্মাণের স্ট্যান্ডার মান অনুযায়ী এসব সেতুগুলোর উচ্চতা কম রয়েছে। তাই বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেতুগুলো পুনঃনির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীর বাবুবাজারে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুটি দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তভুক্ত। তাই সেতুটি প্রথম শ্রেণীর উন্নিত জন্য ১০ বছর পর আবার ভাঙতে হবে। তাই বাবুবাজার সেতুটি উচ্চতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।’

সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৮ মাঘ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথ

১৩টি সেতু পুনর্নির্মাণ করা হবে

সংস্থার সমন্বয়হীনতা ও ভুল পরিকল্পনার মাশুল : বিশেষজ্ঞ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

টঙ্গী তুরাগ নদের উপর সেতু -সংবাদ

ঢাকার চারপাশে ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌপথে কম উচ্চতার ১৩টি সেতু রয়েছে। ২০১০ সালে সরেজমিন পরিদর্শন করে সেতুগুলো পুনঃনির্মাণের সুপারিশক করেছিল নৌ-মন্ত্রণালয়ের একটি উপকমিটি। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম হলেও সেই সুপারিশ এখনও বাস্তবায়ন হয় নি। তাই ঢাকার চারপাশে নৌ চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এসব ব্রিজের উচ্চতা বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘বাবুবাজার এবং টঙ্গী রেল ব্রিজসহ ঢাকার চারপাশে নদ-নদীর উপর নির্মিত কম উচ্চতাসম্পন্ন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ অথবা ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। ঢাকার চারপাশে নদ-নদী, খালের উপর ১৩টি ব্রিজ চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলো স্বল্প উচ্চতাসম্পন্ন এবং নৌ চলাচলের অনুপোযোগী। তাই নৌ চলাচল ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখতে এইসব ব্রিজ পুনঃনির্মাণ অথবা ভেঙে ফেলে নতুন ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

গতকাল সচিবালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এবং ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির এক সভা শেষে তিনি সংবাদিকদের এ কথা বলেন। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ঢাকার চারপাশে বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী এই পাঁচটি নদী রয়েছে। এই নদীগুলো ১১০ কিলোমিটার বৃত্তাকার নৌপথ চালুর লক্ষ্যে ২০০০-২০১২ সাল পর্যন্ত দুই দফা খনন করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। চালু করা হয়েছিল ওয়াটার বাস সার্ভিস। কিন্তু কম উচ্চতার ১৩ সেতুর কারণে কার্যকর হয়নি ওয়াটার বাস সার্ভিস। ১০ বছর পরে এসে একই কথা বললেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। এই ১০ বছরের নৌপথে আরও অনেক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। পরিকল্পনা কমিশন নামমাত্র পরিকল্পনা করে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন সমন্বয় করে না। তাই স্থাপনা ভাঙার চেয়ে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে বুয়েট অধ্যাপক ড. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, ‘২০১০ সালে কম উচ্চতার সেতু সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেতুগুলো নির্র্মাণের আগে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমতি নেয়া হয়েছিল। তখন কেন এ বিষয়ে বাধা দেয়া হয় নি। ১০ বছর পর এসে একই সিদ্ধান্ত আবার নেয়া হলো। কিন্তু বাস্তবায়ন হবে কিনা তা সন্দেহের বিষয়। কারণ এগুলো বাস্তবায়নের জন্য আবার পরিকল্পনা কমিশনের অনুমতি নেয়া হবে। মূল কথা পরিকল্পনা কমিশনে কোন পরিকল্পনাবিদ নেই। যদি থাকত তাহলে এমন ভুল প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা না।’

জানা গেছে, ঢাকার চারপাশের নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বৃত্তকার নৌপথ খননের প্রকল্প নেয়া হয় ২০০০ সালে। দুই দফা খনন কাজ শেষে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় এই প্রকল্পের কাজ। ৯০ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে আবার ভরাট হয়ে গেছে এই নৌপথটি। এছাড়া নদীর উপর নির্মিত সড়ক ও রেলপথে ১৩টি সেতুর উচ্চতা কম থাকায় এর নিচ দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবাহী কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না।

বৃত্তকার এই নৌপথের মধ্যে ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ-সদরঘাট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এছাড়া সদরঘাট-মিরপুর-টঙ্গী-ডেমরা পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার হলো তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথ। এই তৃতীয় শ্রেণীর নৌপথের উপর বিদ্যমান সড়ক ও রেলপথে মোট ১৫টি সেতু রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি সেতুর উচ্চতা নদীর পানির স্তর থেকে খুবই কম। এই সেতুগুলোর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ৬টি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৫টি ও রেলওয়ের ২টি সেতু রয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত নদীর উপর সেতু নির্মাণের স্ট্যান্ডার মান অনুযায়ী ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স (স্বাভাবিক পানি প্রবাহ) থেকে ২৫ ফুট বা ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স ১০০ ফুট বা ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু রাজধানীর চারপাশের নদী তুরাগ, টঙ্গীখাল ও বালু নদীর উপর নির্মিত সেতুগুলো স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল (এসএইচডাব্লিউএল) ২৩-২৪ ফুটের বেশি না। কোন কোন সেতু উচ্চতা এর চেয়ে অনেক কম। এরমধ্যে সওজ’র সেতুগুলো হলো- আবদুল্লাপুর থেকে ইপিজিড সড়কে নির্মিত আশুলিয়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল মাত্র ৩ ফুট এবং হরাইজন্টাল হলো ৩৮ ফুট। যা স্ট্যান্ডার মান থেকে ২২ ফুট কম।

একইভাবে তুরাগ নদীতে নির্মিত কামাপপাড়া ব্রিজের ভার্টিক্যাল ৮ ফুট, টঙ্গী সড়কের পশ্চিম পাশের ব্রিজের ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি, টঙ্গী সড়কের পূর্বপাশের সেতুর ভার্টিক্যাল ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি। রেলওয়ের দুই সেতু হলো- টঙ্গী রেলসেতু-১ ভার্টিক্যাল ৬ ফুট, টঙ্গী রেলসেতু-২ ভার্টিক্যাল ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। এলজিইডি সেতু হলো- টঙ্গী খালের উপর নির্মিত প্রত্যাশা ব্রিজের উচ্চতা ৮ ফুট, বালু নদের উপর নির্মিত ত্রিমুখী সেতু ভার্টিক্যাল ১৩ ফুট, ইছাপুরা সেতু ভার্টিক্যাল ১১ ফুট ও ডেমরা সেতুর ভার্টিক্যাল ১২ ফুট। এই সেতুগুলো নদীর পানির স্তর থেকে স্ট্যান্ডার্ড মান (হাই ওয়াটার লেভেল) অনেক কম। তাই ২০১০ সালে সেতুগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে পুনঃনির্মাণের সুপারিশ করেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের একটি উপকমিটি। কিন্তু ১০ বছর অতিক্রম হলেও এই সুপারিশের কোন বাস্তবায়ন নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সংবাদকে বলেন, ‘নদীর উপর সেতু নির্মাণের স্ট্যান্ডার মান অনুযায়ী এসব সেতুগুলোর উচ্চতা কম রয়েছে। তাই বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেতুগুলো পুনঃনির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীর বাবুবাজারে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুটি দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তভুক্ত। তাই সেতুটি প্রথম শ্রেণীর উন্নিত জন্য ১০ বছর পর আবার ভাঙতে হবে। তাই বাবুবাজার সেতুটি উচ্চতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।’