মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের স্বর্ণখনিতে কর্মরত চীনের একটি শ্রমিক দলকে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের আক্রমণ থেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া আফ্রিকা অঞ্চলের আরেকটি দেশ মালিতে বিদ্রোহীরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দলের ওপর হামলা চালায়। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওই টিম বিদ্রোহী সন্ত্রাসীদের সফলভাবে প্রতিহত করে। ওই ঘটনায় ৩ সেনা সদস্য আহত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, গত ১৬ ডিসেম্বর মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের গাগা এলাকায় স্বর্ণখনিতে চীনের একটি শ্রমিক দলের ওপর সশস্ত্র বিদ্রোহীরা অতর্কিত আক্রমণ করে এবং খনির ৬টি যানবাহন লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় খনিতে নিয়োজিত ৩২ জন চীনা শ্রমিক খনি এলাকা হতে পালিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি টহল দলের শরণাপন্ন হয়ে নিরাপত্তা ও আশ্রয় চায়। বাংলাদেশি টহল দল তাদের উদ্ধার করে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান করে। এছাড়া, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা ভীতসন্ত্রস্ত চীনা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয় এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এই মহানুভবতা এবং সাহসী পদক্ষেপ মিশন সদর দপ্তরসহ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘে নিয়োজিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি তাদের নাগরিকদের উদ্ধার করে বন্ধুত্বসুলভ আচরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান করায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপনকরতঃ প্রশংসাপত্র প্রেরণ করে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এছাড়া পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলের গোলোযোগপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে দেশটি বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা। ইলেক্ট্রোকাল ইমপ্রোভাইল ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সেনাবাহিনীর সাজোয়া বহর লক্ষ্য করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর বহল লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিও চালিয়েছে। ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ সদস্য আহত হলেও কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। পরে সেনাবাহিনীর দল পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে।
আইএসপিআর জানায়, গত ২৭ জানুয়ারি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় সশস্ত্র বিদ্রোহীরা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর ইলেক্ট্রোকাল ইমপ্রোভাইল ডিভাইস বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ মিশ্র আক্রমণ পরিচালনা করে। আইইডি বিস্ফোরণে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি এলএভি (সাজোয়া বহর) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঘটনাস্থলে ৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত হন। আহত শান্তিরক্ষীরা হলেনÑ নং ৪০৪২৪৩৫ ল্যান্স করপোরাল আলীমুজ্জমান ( ৪ই বেংগল), নং ৪৫১৪৩৫৫ সৈনিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ( ৩৪ বীর) এবং নং ৪৫১০৪০৪ সৈনিক সাইদুল আলম ( ৩৪ বীর)। পরে বাংলাদেশি দুঃসাহসী শান্তিরক্ষীরা পাল্টা আক্রমণ করে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের প্রতিরোধে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। আহত শান্তিরক্ষীদের অনতিবিলম্বে হেলিকপ্টারযোগে মপতি এলাকার ইউএন-এর লেভেল-২ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে আহত ৩ জন শান্তিরক্ষীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেনেগালের ডাকার শহরে অবস্থিত ইউএন-এর লেভেল-৩ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তারা নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এই বীরত্বপূর্ণ ও দুঃসাহসিক অভিযান মিশন সদর দপ্তরসহ সর্বমহলে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। মালিতে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যান্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন।
সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৮ মাঘ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের স্বর্ণখনিতে কর্মরত চীনের একটি শ্রমিক দলকে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের আক্রমণ থেকে উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া আফ্রিকা অঞ্চলের আরেকটি দেশ মালিতে বিদ্রোহীরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দলের ওপর হামলা চালায়। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওই টিম বিদ্রোহী সন্ত্রাসীদের সফলভাবে প্রতিহত করে। ওই ঘটনায় ৩ সেনা সদস্য আহত হয়ে এখন চিকিৎসাধীন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, গত ১৬ ডিসেম্বর মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের গাগা এলাকায় স্বর্ণখনিতে চীনের একটি শ্রমিক দলের ওপর সশস্ত্র বিদ্রোহীরা অতর্কিত আক্রমণ করে এবং খনির ৬টি যানবাহন লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় খনিতে নিয়োজিত ৩২ জন চীনা শ্রমিক খনি এলাকা হতে পালিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি টহল দলের শরণাপন্ন হয়ে নিরাপত্তা ও আশ্রয় চায়। বাংলাদেশি টহল দল তাদের উদ্ধার করে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান করে। এছাড়া, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা ভীতসন্ত্রস্ত চীনা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয় এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এই মহানুভবতা এবং সাহসী পদক্ষেপ মিশন সদর দপ্তরসহ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘে নিয়োজিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি তাদের নাগরিকদের উদ্ধার করে বন্ধুত্বসুলভ আচরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান করায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপনকরতঃ প্রশংসাপত্র প্রেরণ করে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এছাড়া পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলের গোলোযোগপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে দেশটি বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা। ইলেক্ট্রোকাল ইমপ্রোভাইল ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে সেনাবাহিনীর সাজোয়া বহর লক্ষ্য করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর বহল লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিও চালিয়েছে। ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ সদস্য আহত হলেও কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। পরে সেনাবাহিনীর দল পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে।
আইএসপিআর জানায়, গত ২৭ জানুয়ারি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় সশস্ত্র বিদ্রোহীরা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ওপর ইলেক্ট্রোকাল ইমপ্রোভাইল ডিভাইস বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ মিশ্র আক্রমণ পরিচালনা করে। আইইডি বিস্ফোরণে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি এলএভি (সাজোয়া বহর) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ঘটনাস্থলে ৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত হন। আহত শান্তিরক্ষীরা হলেনÑ নং ৪০৪২৪৩৫ ল্যান্স করপোরাল আলীমুজ্জমান ( ৪ই বেংগল), নং ৪৫১৪৩৫৫ সৈনিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ( ৩৪ বীর) এবং নং ৪৫১০৪০৪ সৈনিক সাইদুল আলম ( ৩৪ বীর)। পরে বাংলাদেশি দুঃসাহসী শান্তিরক্ষীরা পাল্টা আক্রমণ করে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের প্রতিরোধে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। আহত শান্তিরক্ষীদের অনতিবিলম্বে হেলিকপ্টারযোগে মপতি এলাকার ইউএন-এর লেভেল-২ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে আহত ৩ জন শান্তিরক্ষীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেনেগালের ডাকার শহরে অবস্থিত ইউএন-এর লেভেল-৩ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তারা নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এই বীরত্বপূর্ণ ও দুঃসাহসিক অভিযান মিশন সদর দপ্তরসহ সর্বমহলে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। মালিতে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যান্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন।