৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিবন্ধনের নির্দেশ

২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৬০ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা

সরকারের সব অধিদপ্তর-দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তাদের অধীনন্থ সব সংস্থা প্রধানের কাছে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশব্যাপী ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রথম পর্যায়ে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ সফটওয়্যার অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বেতনভাতা উত্তোলনকারী ১৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই টিকার নিবন্ধনের আওতায় নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে কোন সরকারি কর্মী টিকার নিবন্ধন না করে থাকলে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে শনাক্ত করতে পারবে। করোনার টিকা পেতে নিবন্ধন ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ গতকালও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। যদিও গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার মানুষ করোনার টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান সংবাদকে জানিয়েছেন।

বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে সবাই এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারছেন না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, টিকার নিবন্ধন করার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে এই অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপটি এখনও চালু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত অগ্রাধিকার তালিকার জনগোষ্ঠীর অনেকেই নিবন্ধন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই) প্রফেসর ডা. সামছুল হক গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘অ্যাপ তো চালু হয়েছে।’ এটি গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা জানি না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশিদ আলম ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে।

মহাপরিচালক বলেন, ‘আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই অ্যাপটি মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে বলে আইসিটি মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে। এরইমধ্যে সেটা গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে।’ ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে কীনা জানতে চাইলে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘সীমিত নয়, এখন ভালোভাবেই কাজ করছে। সবাই এখন নিবন্ধন করতে পারছে।’

নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধন নিয়ে অনিশ্চয়তা

গত ২৭ জানুয়ারি ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই চারদিনে ২০ হাজারের কিছু কম সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করেছেন।

বর্তমানে সুরক্ষা ‘অ্যাপ’ বা সুরক্ষা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে, তাতে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের ১২-১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব কীনা- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘টার্গেট দেয়া হয়েছে মূলত সবাইকে টিকা নিতে উদ্ভুদ্ধ করার জন্য, কাউকে তো জোর করে টিকা দেয়া হচ্ছে না। এটি একটি ভালো (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) টিকা। আমরাও এটি নিচ্ছি। সবারই এটি নেয়া উচিত। সবাই সহযোগিতা না করলে এই মহামারী পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না।’

নিবন্ধনের সময় আরও বাড়ছে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পরিচালক বলেন, ‘এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা তো সবাইকে একসঙ্গে টিকা দিতেও পারছি না।’

গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আগ্রহী ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের অবশ্যই ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।’

টিকা পেতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য গত ২৬ জানুয়ারি থেকে চালু হয় ‘সুরক্ষা’ ??অ্যাপ। অবশ্য যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৬০ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিন ঠিক করেছে। প্রথম পর্যায়ে শুক্রবার ছাড়া দুই সপ্তাহে ১২ দিন টিকা দেয়ার কথা। এ হিসাবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে। এই সময় মোট ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে।

বর্তমানে সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। এরমধ্যে ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত সরকার। আর দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস’র ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় কেনা সাড়ে তিন কোটি ডোজের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ।

৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনের নির্দেশ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে ৩১ জানুয়ারি ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকা গ্রহণ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক একটি নির্দেশনা তাদের অধীনন্থ সব সংস্থা প্রধানের কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিভাগ এবং এর আওতাধীন সব অধিদপ্তর-দপ্তর-সংস্থায় কর্মরত যেসব কর্মকর্তা-কমচারী ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ থেকে বেতনভাতা গ্রহণ করেন তাদের আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোভিড-১৯ টিকার রেজিস্ট্রেশন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

‘আইবাস প্লাস প্লাস’ উল্লেখ করে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করার নির্দেশনা কেন দেয়া হলো- জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আমরা আজকেই এই নির্দেশনা পেয়েছি। এই পদ্ধতিতে সবাইকেই সহজে ট্রেকিং (শনাক্ত) করা সম্ভব, কেউ নিবন্ধন করেছে কীনা, নাকি নিবন্ধনের বাইরে রয়েছেন।’

তিনি জানান, মাউশি’র অধীনে সারাদেশে তিন লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী আইবাস প্লাস প্লাস পদ্ধতিতে বেতনভাতা পাচ্ছেন। সবাইকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করোনার টিকার নিবন্ধনের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’

আইবাস প্লাস প্লাস কী

২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে বেতন ও পেনশন দিতে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ অর্থাৎ ‘ইন্টগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড একাউন্টিং সিস্টেম’ (সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি) নামে একটি সফটওয়্যার চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৬ জন চাকরিজীবী এবং সাত লাখ ৪১ হাজার ৭০৩ জন পেনশনার পেনশন পাচ্ছেন।

যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ-২০১৮’ অনুযায়ী, দেশে মোট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৫ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওইদিন ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরদিন পাঁচটি হাসপাতালে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। দু’দিনে মোট ৫৬৭ জনকে টিকা দেয়া হয়। তাদের শারিরীক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে মোট ছয় হাজার ৯৯৫টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হবে। আর ঢাকায় ৩৫৪টি কেন্দ্রের তালিকা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিবন্ধনের নির্দেশ

২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৬০ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা

রাকিব উদ্দিন

image

সরকারের সব অধিদপ্তর-দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে তাদের অধীনন্থ সব সংস্থা প্রধানের কাছে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশব্যাপী ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রথম পর্যায়ে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ সফটওয়্যার অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বেতনভাতা উত্তোলনকারী ১৪ লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই টিকার নিবন্ধনের আওতায় নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে কোন সরকারি কর্মী টিকার নিবন্ধন না করে থাকলে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে শনাক্ত করতে পারবে। করোনার টিকা পেতে নিবন্ধন ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ গতকালও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। যদিও গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার মানুষ করোনার টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান সংবাদকে জানিয়েছেন।

বর্তমানে করোনার ভ্যাকসিনের নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে সবাই এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারছেন না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, টিকার নিবন্ধন করার জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে এই অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। অ্যাপটি এখনও চালু হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত অগ্রাধিকার তালিকার জনগোষ্ঠীর অনেকেই নিবন্ধন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই) প্রফেসর ডা. সামছুল হক গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘অ্যাপ তো চালু হয়েছে।’ এটি গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হয়েছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা জানি না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ (এবিএম) খুরশিদ আলম ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, টিকার জন্য নিবন্ধন করতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে।

মহাপরিচালক বলেন, ‘আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই অ্যাপটি মোবাইল ফোনে পাওয়া যাবে বলে আইসিটি মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে। এরইমধ্যে সেটা গুগল প্লে স্টোরে দিয়ে দেয়া হবে।’ ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে কীনা জানতে চাইলে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘সীমিত নয়, এখন ভালোভাবেই কাজ করছে। সবাই এখন নিবন্ধন করতে পারছে।’

নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধন নিয়ে অনিশ্চয়তা

গত ২৭ জানুয়ারি ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই চারদিনে ২০ হাজারের কিছু কম সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করেছেন।

বর্তমানে সুরক্ষা ‘অ্যাপ’ বা সুরক্ষা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে, তাতে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের ১২-১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব কীনা- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘টার্গেট দেয়া হয়েছে মূলত সবাইকে টিকা নিতে উদ্ভুদ্ধ করার জন্য, কাউকে তো জোর করে টিকা দেয়া হচ্ছে না। এটি একটি ভালো (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) টিকা। আমরাও এটি নিচ্ছি। সবারই এটি নেয়া উচিত। সবাই সহযোগিতা না করলে এই মহামারী পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না।’

নিবন্ধনের সময় আরও বাড়ছে কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পরিচালক বলেন, ‘এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা তো সবাইকে একসঙ্গে টিকা দিতেও পারছি না।’

গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আগ্রহী ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের অবশ্যই ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।’

টিকা পেতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য গত ২৬ জানুয়ারি থেকে চালু হয় ‘সুরক্ষা’ ??অ্যাপ। অবশ্য যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না, তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৬০ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিন ঠিক করেছে। প্রথম পর্যায়ে শুক্রবার ছাড়া দুই সপ্তাহে ১২ দিন টিকা দেয়ার কথা। এ হিসাবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে। এই সময় মোট ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হবে।

বর্তমানে সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। এরমধ্যে ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত সরকার। আর দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস’র ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় কেনা সাড়ে তিন কোটি ডোজের প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ পেয়েছে বাংলাদেশ।

৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধনের নির্দেশ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে ৩১ জানুয়ারি ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকা গ্রহণ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক একটি নির্দেশনা তাদের অধীনন্থ সব সংস্থা প্রধানের কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিভাগ এবং এর আওতাধীন সব অধিদপ্তর-দপ্তর-সংস্থায় কর্মরত যেসব কর্মকর্তা-কমচারী ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ থেকে বেতনভাতা গ্রহণ করেন তাদের আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোভিড-১৯ টিকার রেজিস্ট্রেশন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

‘আইবাস প্লাস প্লাস’ উল্লেখ করে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করার নির্দেশনা কেন দেয়া হলো- জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল কবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আমরা আজকেই এই নির্দেশনা পেয়েছি। এই পদ্ধতিতে সবাইকেই সহজে ট্রেকিং (শনাক্ত) করা সম্ভব, কেউ নিবন্ধন করেছে কীনা, নাকি নিবন্ধনের বাইরে রয়েছেন।’

তিনি জানান, মাউশি’র অধীনে সারাদেশে তিন লাখের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী আইবাস প্লাস প্লাস পদ্ধতিতে বেতনভাতা পাচ্ছেন। সবাইকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করোনার টিকার নিবন্ধনের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’

আইবাস প্লাস প্লাস কী

২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে বেতন ও পেনশন দিতে ‘আইবাস প্লাস প্লাস’ অর্থাৎ ‘ইন্টগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড একাউন্টিং সিস্টেম’ (সমন্বিত বাজেট ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি) নামে একটি সফটওয়্যার চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৬ জন চাকরিজীবী এবং সাত লাখ ৪১ হাজার ৭০৩ জন পেনশনার পেনশন পাচ্ছেন।

যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ-২০১৮’ অনুযায়ী, দেশে মোট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৫৫ জন। বর্তমানে এই সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ওইদিন ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরদিন পাঁচটি হাসপাতালে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। দু’দিনে মোট ৫৬৭ জনকে টিকা দেয়া হয়। তাদের শারিরীক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে মোট ছয় হাজার ৯৯৫টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হবে। আর ঢাকায় ৩৫৪টি কেন্দ্রের তালিকা করা হয়েছে।