এখন কেন, এর পর কী?

দীর্ঘ অর্ধশতকের সামরিক শাসনের পর ২০১১ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছিল মায়ানমার। এরপর কে ভেবেছিল আবার ফিরে আসবে সেই কালো দিনগুলো? এখন আবার সেই আমলের ভয় গ্রাস করেছে গোটা দেশকে।

২০১৫ সালে বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল অং সান সু চির দল। সেটিই ছিল তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে আগের বারের চেয়েও বড় জয় পায় তার দল। গতকাল সকালেই তাদের দায়িত্বগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু সামরিক বাহিনী কৌশলে কুক্ষিগত করে রেখেছিল ক্ষমতা। গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার সময় সংশোধিত সংবিধানে সংসদে ২৫ শতাংশ পদ আর প্রভাবশালী মন্ত্রণালয়গুলো তাদের জন্য রেখে দিতে হয়েছিল। এখন তারা ক্ষমতা নিয়ে নেয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, কেন তারা এটা করল, এরপরে কী হবে? বিবিসির বিশ্লেষণে এরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনেও সু চির দল ৮০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ঘটনার পরও তারা ছিল সর্বব্যাপী জনপ্রিয় দল। কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই সামরিক-মদদপুষ্ট বিরোধী দল জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আসছিল। এই অভিযোগ উল্লেখ করা হয় এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণাতেও। তাতে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বাক্ষরকারী সাবেক জেনারেল মিন্ত সুয়ে বলেছেন, গত নির্বাচনে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা সংশোধনে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তাদের এই অভিযোগের পক্ষে জোরালো প্রমাণ ছিল না। সু চি ভোটেই জিতেছিলেন। তবে সামরিক বাহিনীর এই অভিযোগকে কিছুটা ট্রাম্পের অভিযোগের মতো বলে অভিহিত করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন। ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনী প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী, গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার পরে শর্ত হিসেবে ২৫ শতাংশ আসন তাদের হাতে রেখে দেয়া হয়। তারা তখন স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত রক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় তিনটি নিজেদের হাতে রেখে দেয়।

যেহেতু চারভাগের একভাগ প্রতিনিধিত্ব নিজ হাতে রেখে দিয়েছে সেনাবাহিনী, তাই সব আসন পেলেও সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব নয় সু চির দলের পক্ষে। তাহলে কেন ক্ষমতা দখল করল সামরিক বাহিনী? সাংবাদিক আয়ে মিন থ্যান্তের মতে, আসলে সামরিক বাহিনী মানতে পারে না। ভোটকে তারা ক্ষমতা খর্ব হওয়া মনে করে। ‘যেহেতু অং সান সু চিকে মায়ানমারে মা বলা হয়, সেনাবাহিনী নিজেদের সবার বাবা মনে করে।’

এছাড়া বেসামরিক সরকারের আমলে বাণিজ্যের জন্য কিছুটা উন্মুক্ত হয়েছে মায়ানমার। তাছাড়া কোভিডের কারণে আন্তর্জাতিক সাহায্যও বেড়েছে। তবে বাইরের দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সামরিক বাহিনী বিপজ্জনক মনে করে।

সিঙ্গাপুরের এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো জেরার্ড ম্যাকার্থির মতে, ‘চীন বাদে বাকি সবার কাছ থেকে মায়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করতেই এই সামরিক অভ্যুত্থান।’

‘এক বছরের জন্য ক্ষমতা দখল যা সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, এটা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থকেও আঘাত করবে। আর সু চির লাখ লাখ সমর্থকের পক্ষ থেকে প্রতিবাদও সামলাতে হবে।’ হয়তোবা, তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ভবিষ্যৎ নির্বাচনে তাদের দল ইউএসডিপির অবস্থান ভালো করতে চায়। তবে ‘অনেক বড় ঝুঁকি’ নিয়ে ফেলেছে সেনাবাহিনী, বলেন ম্যাকার্থি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এর ফলে মায়ানমার আবার বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়বে।

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

এখন কেন, এর পর কী?

সংবাদ ডেস্ক |

দীর্ঘ অর্ধশতকের সামরিক শাসনের পর ২০১১ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছিল মায়ানমার। এরপর কে ভেবেছিল আবার ফিরে আসবে সেই কালো দিনগুলো? এখন আবার সেই আমলের ভয় গ্রাস করেছে গোটা দেশকে।

২০১৫ সালে বিপুলভাবে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল অং সান সু চির দল। সেটিই ছিল তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে আগের বারের চেয়েও বড় জয় পায় তার দল। গতকাল সকালেই তাদের দায়িত্বগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু সামরিক বাহিনী কৌশলে কুক্ষিগত করে রেখেছিল ক্ষমতা। গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার সময় সংশোধিত সংবিধানে সংসদে ২৫ শতাংশ পদ আর প্রভাবশালী মন্ত্রণালয়গুলো তাদের জন্য রেখে দিতে হয়েছিল। এখন তারা ক্ষমতা নিয়ে নেয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, কেন তারা এটা করল, এরপরে কী হবে? বিবিসির বিশ্লেষণে এরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনেও সু চির দল ৮০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ঘটনার পরও তারা ছিল সর্বব্যাপী জনপ্রিয় দল। কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই সামরিক-মদদপুষ্ট বিরোধী দল জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আসছিল। এই অভিযোগ উল্লেখ করা হয় এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণাতেও। তাতে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বাক্ষরকারী সাবেক জেনারেল মিন্ত সুয়ে বলেছেন, গত নির্বাচনে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা সংশোধনে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তাদের এই অভিযোগের পক্ষে জোরালো প্রমাণ ছিল না। সু চি ভোটেই জিতেছিলেন। তবে সামরিক বাহিনীর এই অভিযোগকে কিছুটা ট্রাম্পের অভিযোগের মতো বলে অভিহিত করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন। ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনী প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী, গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার পরে শর্ত হিসেবে ২৫ শতাংশ আসন তাদের হাতে রেখে দেয়া হয়। তারা তখন স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত রক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় তিনটি নিজেদের হাতে রেখে দেয়।

যেহেতু চারভাগের একভাগ প্রতিনিধিত্ব নিজ হাতে রেখে দিয়েছে সেনাবাহিনী, তাই সব আসন পেলেও সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব নয় সু চির দলের পক্ষে। তাহলে কেন ক্ষমতা দখল করল সামরিক বাহিনী? সাংবাদিক আয়ে মিন থ্যান্তের মতে, আসলে সামরিক বাহিনী মানতে পারে না। ভোটকে তারা ক্ষমতা খর্ব হওয়া মনে করে। ‘যেহেতু অং সান সু চিকে মায়ানমারে মা বলা হয়, সেনাবাহিনী নিজেদের সবার বাবা মনে করে।’

এছাড়া বেসামরিক সরকারের আমলে বাণিজ্যের জন্য কিছুটা উন্মুক্ত হয়েছে মায়ানমার। তাছাড়া কোভিডের কারণে আন্তর্জাতিক সাহায্যও বেড়েছে। তবে বাইরের দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সামরিক বাহিনী বিপজ্জনক মনে করে।

সিঙ্গাপুরের এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো জেরার্ড ম্যাকার্থির মতে, ‘চীন বাদে বাকি সবার কাছ থেকে মায়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করতেই এই সামরিক অভ্যুত্থান।’

‘এক বছরের জন্য ক্ষমতা দখল যা সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে, এটা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থকেও আঘাত করবে। আর সু চির লাখ লাখ সমর্থকের পক্ষ থেকে প্রতিবাদও সামলাতে হবে।’ হয়তোবা, তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ভবিষ্যৎ নির্বাচনে তাদের দল ইউএসডিপির অবস্থান ভালো করতে চায়। তবে ‘অনেক বড় ঝুঁকি’ নিয়ে ফেলেছে সেনাবাহিনী, বলেন ম্যাকার্থি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এর ফলে মায়ানমার আবার বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়বে।