সুনামগঞ্জে বালুখেকো চক্র

সংবাদ প্রতিনিধিকে গাছে বেঁধে বর্বর নির্যাতন

অবস্থা আশঙ্কাজনক

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে বালুখেকো চক্র দৈনিক সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি কামাল হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। নদীসংলগ্ন স্থানে বালুখেকোদের নেতৃত্বে শ্রমিকরা তাকে ব্যাপক মারধর করে। মারধর করে তাকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এতে তার মুখ, মাথা, কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ও জখম হয়। গতকাল তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদের ঘাগটিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তবে ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে পাড় কেটে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ঘাগটিয়া গ্রামের মোশাহিদ তালুকদার, বহিষ্কৃত ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন ও আবু সাইদ মাওলানা ওরফে পাথর মাওলানা। এরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছে। গতকাল সকালে সেই অবৈধ পাথর উত্তোলনের ছবি তুলতে যান কামাল হোসেন। এ সময় উল্লিখিত পাথর খেকোদের ছত্রছায়ায় মাহমুদ, রইছ উদ্দিন ও দিন ইসলামের নেতৃত্বে একদল শ্রমিক তার ওপর অতর্কিত হামলা করে। পরে কামালকে নদীর পাড় থেকে টেনে-হেঁচড়ে ঘাগটিয়া বাজারে এনে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করতে থাকে। এ সময় তার মাথা ও শরীরে মারাত্মক জখম হয়।

সাংবাদিক কামালকে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। এতে দেখা যায়, পাথর খেকোরা তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করছে। বাঁধা অবস্থায় তিনি আহাজারি করছেন। বেশ কিছু মানুষ তাকে ঘিরে আছে। তার কপাল থেকে রক্ত ঝরছিল। এ সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘দেশের মানুষ অসহায়। কাম কইরা ভাত খাইত ফায়না। চুরি কইরা খাইব। তুরা আইয়া ফটো তুইলা...।’ এ সময় বাঁধনটা খুলে দেয়ার আকুতি জানিয়ে কামাল বলছেন, ‘হাতটা এমনেই ভাঙা, এরমধ্যে বাইনদে তোমরা আরও ভাঙতাছ।’ পাশে থাকা ব্যক্তিরা তাকে নিয়ে তখন উপহাস করছিলেন। এ সময় কামাল তাকে একটু বসতে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছেন।

এ বিষয়ে আহত সাংবাদিক কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক সিলেট মিররের তাহিরপুর প্রতিনিধি আবির হাসান মানিক বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার জ্ঞান ফেরেনি এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তিনি জানান, ঘটনার সময় কামালের মোবাইল, ক্যামেরা ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় বালুখেকোরা।

জানতে চাইলে তাহিরপুর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা সাব-ইন্সপেক্টর দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত। এ সম্পর্কে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কামালের পাশে পুলিশ

তাহিরপুর উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের বালুখেকোদের হামলায় সাংবাদিক কামাল হোসেন গুরুতর আহত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম-এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুন নবী সায়েম গিয়ে চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম হেলাল, সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী, দৈনিক সুনামগঞ্জর সময় পত্রিকার সম্পাদক সেলিম আহমদ তালুকদার, সময় টিভি প্রতিনিধি হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, যমুনা টিভির প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান তারেক রুজেল আহমদসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়ে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুন নবী সায়েম জানান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে।

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সুনামগঞ্জে বালুখেকো চক্র

সংবাদ প্রতিনিধিকে গাছে বেঁধে বর্বর নির্যাতন

অবস্থা আশঙ্কাজনক

বিশেষ প্রতিনিধি

image

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে বালুখেকো চক্র দৈনিক সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি কামাল হোসেনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। নদীসংলগ্ন স্থানে বালুখেকোদের নেতৃত্বে শ্রমিকরা তাকে ব্যাপক মারধর করে। মারধর করে তাকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এতে তার মুখ, মাথা, কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ও জখম হয়। গতকাল তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের যাদুকাটা নদের ঘাগটিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তবে ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে পাড় কেটে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ঘাগটিয়া গ্রামের মোশাহিদ তালুকদার, বহিষ্কৃত ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন ও আবু সাইদ মাওলানা ওরফে পাথর মাওলানা। এরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছে। গতকাল সকালে সেই অবৈধ পাথর উত্তোলনের ছবি তুলতে যান কামাল হোসেন। এ সময় উল্লিখিত পাথর খেকোদের ছত্রছায়ায় মাহমুদ, রইছ উদ্দিন ও দিন ইসলামের নেতৃত্বে একদল শ্রমিক তার ওপর অতর্কিত হামলা করে। পরে কামালকে নদীর পাড় থেকে টেনে-হেঁচড়ে ঘাগটিয়া বাজারে এনে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করতে থাকে। এ সময় তার মাথা ও শরীরে মারাত্মক জখম হয়।

সাংবাদিক কামালকে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। এতে দেখা যায়, পাথর খেকোরা তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করছে। বাঁধা অবস্থায় তিনি আহাজারি করছেন। বেশ কিছু মানুষ তাকে ঘিরে আছে। তার কপাল থেকে রক্ত ঝরছিল। এ সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘দেশের মানুষ অসহায়। কাম কইরা ভাত খাইত ফায়না। চুরি কইরা খাইব। তুরা আইয়া ফটো তুইলা...।’ এ সময় বাঁধনটা খুলে দেয়ার আকুতি জানিয়ে কামাল বলছেন, ‘হাতটা এমনেই ভাঙা, এরমধ্যে বাইনদে তোমরা আরও ভাঙতাছ।’ পাশে থাকা ব্যক্তিরা তাকে নিয়ে তখন উপহাস করছিলেন। এ সময় কামাল তাকে একটু বসতে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছেন।

এ বিষয়ে আহত সাংবাদিক কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক সিলেট মিররের তাহিরপুর প্রতিনিধি আবির হাসান মানিক বলেন, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার জ্ঞান ফেরেনি এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তিনি জানান, ঘটনার সময় কামালের মোবাইল, ক্যামেরা ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় বালুখেকোরা।

জানতে চাইলে তাহিরপুর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা সাব-ইন্সপেক্টর দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত। এ সম্পর্কে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কামালের পাশে পুলিশ

তাহিরপুর উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের বালুখেকোদের হামলায় সাংবাদিক কামাল হোসেন গুরুতর আহত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে আসলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম-এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুন নবী সায়েম গিয়ে চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম হেলাল, সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী, দৈনিক সুনামগঞ্জর সময় পত্রিকার সম্পাদক সেলিম আহমদ তালুকদার, সময় টিভি প্রতিনিধি হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, যমুনা টিভির প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান তারেক রুজেল আহমদসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়ে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুন নবী সায়েম জানান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে।