যেভাবে উত্থান মায়ানমার সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মায়ানমারের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতা অং সান সু চিসহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এক বছরের জন্য ক্ষমতা নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে সেনারা।

আর এতে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন মায়ানমারের ক্ষমতা গ্রহণ করা সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাং। কম কথা বলা এই জেনারেলের দিকে এখন সারাবিশ্বের নজর।

মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও এর শীর্ষ কর্মকর্তারা সাধারণত সরাসরি মিডিয়ার সামনে আসে না, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরকার কর্মকা- নিয়েও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা খুব বেশি না। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে মায়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ভূমিকা ও সেনাপ্রধান হ্লাংয়ের উত্থান তুলে ধরা হয়েছে।

রাজনীতিতে মায়ানমার সেনাবাহিনী

ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে অধিকাংশ সময় মায়ানমার ছিল সেনা শাসনের অধীনে। ১৯৬২ সালে সামরিক অভুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রায় ৫০ বছর শাসন করে দেশটির সেনাবাহিনী। ২০০৮ সালে দেশটির সংবিধান রচনা করে সেনারা। এতে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীকে স্থায়ীভাবে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়।

মায়ানমারের পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন অনির্বাচিত সেনাদের জন্য সংরক্ষণের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়- প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। সাংবিধানিক এ বন্দোবস্তের ফলে এনএলডির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হয়।

সাবেক জান্তা সরকারের বিরোধিতা করায় সু চিসহ এনএলডির অনেক সদস্যকে বছরের পর বছর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।

হ্লাংয়ের ধীর ও উত্থান

১৯৭২-৭৪ সালে ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার সময় রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে দূরে থাকেতে শুরু করেন সেনাপ্রধান হ্লাং। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক দিকে ময়ানমারে চলমান বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন আর অন্যদিকে তৃতীয় বারের চেষ্টায় ১৯৭৪ সালে মিলিটারি বিশ্ববিদ্যালয় ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমিতে (ডিএসএ) ভর্তি হন হ্লাং। ডিএসএর এক সহপাঠী রয়টার্সকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে হ্লাংয়ের পদোন্নতি নিয়মিত ছিল। বাহিনীর মাঝারি পদ থেকে উচ্চপদে তার উন্নতি বিস্ময়কর ছিল।’

সেনা থেকে রাজনীতিক

২০১১ সালে সেনাশাসন থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরুর সময় মায়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান হ্লাং। ২০১৬ সালে সু চি প্রথমবার স্টেট কাউন্সেলর হিসেবে নির্বাচিত হলে স্বল্পভাষী সেনা থেকে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন তিনি।

২০১১ সালে দেশের রাজনীতি গণতন্ত্রের দিকে মোড় নিলে লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যেন নিজ দেশে ছড়াতে না পারে সেদিকেও নজর দেন হ্লাং।

পার্লামেন্টে সেনাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ বন্ধের বিষয়ে হ্লাংকে কখনও মুখ খুলতে দেখা যায়নি। এছাড়া সংবিধানের যেসব ধারা সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা, সেসব পরিবর্তনেরও কোন উদ্যোগ নেননি জেনারেল মিন অং হ্লাং।

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

যেভাবে উত্থান মায়ানমার সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং

image

ক্ষমতা দখলকারী সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাং

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মায়ানমারের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতা অং সান সু চিসহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এক বছরের জন্য ক্ষমতা নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে সেনারা।

আর এতে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন মায়ানমারের ক্ষমতা গ্রহণ করা সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাং। কম কথা বলা এই জেনারেলের দিকে এখন সারাবিশ্বের নজর।

মায়ানমারের সেনাবাহিনী ও এর শীর্ষ কর্মকর্তারা সাধারণত সরাসরি মিডিয়ার সামনে আসে না, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরকার কর্মকা- নিয়েও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা খুব বেশি না। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে মায়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর শক্তিশালী ভূমিকা ও সেনাপ্রধান হ্লাংয়ের উত্থান তুলে ধরা হয়েছে।

রাজনীতিতে মায়ানমার সেনাবাহিনী

ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে অধিকাংশ সময় মায়ানমার ছিল সেনা শাসনের অধীনে। ১৯৬২ সালে সামরিক অভুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রায় ৫০ বছর শাসন করে দেশটির সেনাবাহিনী। ২০০৮ সালে দেশটির সংবিধান রচনা করে সেনারা। এতে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীকে স্থায়ীভাবে বসানোর ব্যবস্থা করা হয়।

মায়ানমারের পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন অনির্বাচিত সেনাদের জন্য সংরক্ষণের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়- প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। সাংবিধানিক এ বন্দোবস্তের ফলে এনএলডির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হয়।

সাবেক জান্তা সরকারের বিরোধিতা করায় সু চিসহ এনএলডির অনেক সদস্যকে বছরের পর বছর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।

হ্লাংয়ের ধীর ও উত্থান

১৯৭২-৭৪ সালে ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার সময় রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে দূরে থাকেতে শুরু করেন সেনাপ্রধান হ্লাং। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক দিকে ময়ানমারে চলমান বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন আর অন্যদিকে তৃতীয় বারের চেষ্টায় ১৯৭৪ সালে মিলিটারি বিশ্ববিদ্যালয় ডিফেন্স সার্ভিসেস একাডেমিতে (ডিএসএ) ভর্তি হন হ্লাং। ডিএসএর এক সহপাঠী রয়টার্সকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে হ্লাংয়ের পদোন্নতি নিয়মিত ছিল। বাহিনীর মাঝারি পদ থেকে উচ্চপদে তার উন্নতি বিস্ময়কর ছিল।’

সেনা থেকে রাজনীতিক

২০১১ সালে সেনাশাসন থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরুর সময় মায়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান হ্লাং। ২০১৬ সালে সু চি প্রথমবার স্টেট কাউন্সেলর হিসেবে নির্বাচিত হলে স্বল্পভাষী সেনা থেকে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন তিনি।

২০১১ সালে দেশের রাজনীতি গণতন্ত্রের দিকে মোড় নিলে লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যেন নিজ দেশে ছড়াতে না পারে সেদিকেও নজর দেন হ্লাং।

পার্লামেন্টে সেনাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ বন্ধের বিষয়ে হ্লাংকে কখনও মুখ খুলতে দেখা যায়নি। এছাড়া সংবিধানের যেসব ধারা সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা, সেসব পরিবর্তনেরও কোন উদ্যোগ নেননি জেনারেল মিন অং হ্লাং।