ফিরতে হবে গণতন্ত্রে

মায়ানমারে গতকাল সোমবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিসহ দলটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সু চি’র দল গত নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছে বলে অভিযোগ করে আসছিল সেনাবাহিনী।

মায়ানমারে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ নিন্দা জানিয়েছে। তবে চীনের কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি।

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগজনক। দেশটির গণতন্ত্র অতীতেও হোঁচট খেয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পেলেও সেখানে বেশিরভাগ সময়ই সেনাশাসন চলেছে। সেনাশাসন চলাকালে ১৫ বছর বন্দী ছিলেন সু চি। ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার উত্তরণ ঘটে। মায়ানমারে স্বাধীনতার অগ্রনায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে অং সান সু চি’র দল এনএলডি ২০১৫ সালের নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ৪১২টি আসনের মধ্যে ৩৪৬টি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়ে তার দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। সেই নির্বাচনে সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউএসডিপি পেয়েছে ৩৩টি আসন। সেনাবাহিনী এই শোচনীয় পরাজয় মানতে পারেনি।

সু চি’র দল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলেছে। অনেকে এটাকে মায়ানমারের দুর্বল গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর প্রয়াস হিসেবে দেখেছেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে গিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। রোহিঙ্গা ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় নীরব থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। মানবাধিকারকে উপেক্ষা করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার এই প্রয়াস শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পেরেছে কিনা- সেই প্রশ্ন উঠেছে।

গণতান্ত্রিক সংস্কারের যে প্রক্রিয়া মায়ানমারে শুরু হয়েছিল সেটা সেনাঅভ্যুত্থানে বিঘি্নত হলো। নির্বাচন নিয়ে কারও কোন অভিযোগ থাকতে পারে। তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ অজুহাতে সেনাঅভ্যুত্থানের সুযোগ নেই। গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে- জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা, কোন সমস্যা দেখা দিলে আইনের আশ্রয় নেয়া। দেশটির সবপক্ষই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে, আইনি প্রক্রিয়ায় বিরোধ মীমাংসা করবেÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সেনাঅভ্যুত্থানের পর মায়ানমারে যেন সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা যেন লঙ্ঘিত না হয়- সেটা আমাদের কামনা।

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

মায়ানমারে সেনাঅভ্যুত্থান

ফিরতে হবে গণতন্ত্রে

মায়ানমারে গতকাল সোমবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। দেশটির সেনাবাহিনী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিসহ দলটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সু চি’র দল গত নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতি করে ক্ষমতায় এসেছে বলে অভিযোগ করে আসছিল সেনাবাহিনী।

মায়ানমারে গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ নিন্দা জানিয়েছে। তবে চীনের কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি।

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগজনক। দেশটির গণতন্ত্র অতীতেও হোঁচট খেয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পেলেও সেখানে বেশিরভাগ সময়ই সেনাশাসন চলেছে। সেনাশাসন চলাকালে ১৫ বছর বন্দী ছিলেন সু চি। ২০১১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার উত্তরণ ঘটে। মায়ানমারে স্বাধীনতার অগ্রনায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে অং সান সু চি’র দল এনএলডি ২০১৫ সালের নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ৪১২টি আসনের মধ্যে ৩৪৬টি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়ে তার দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। সেই নির্বাচনে সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউএসডিপি পেয়েছে ৩৩টি আসন। সেনাবাহিনী এই শোচনীয় পরাজয় মানতে পারেনি।

সু চি’র দল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলেছে। অনেকে এটাকে মায়ানমারের দুর্বল গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর প্রয়াস হিসেবে দেখেছেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে গিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। রোহিঙ্গা ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় নীরব থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। মানবাধিকারকে উপেক্ষা করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার এই প্রয়াস শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পেরেছে কিনা- সেই প্রশ্ন উঠেছে।

গণতান্ত্রিক সংস্কারের যে প্রক্রিয়া মায়ানমারে শুরু হয়েছিল সেটা সেনাঅভ্যুত্থানে বিঘি্নত হলো। নির্বাচন নিয়ে কারও কোন অভিযোগ থাকতে পারে। তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ অজুহাতে সেনাঅভ্যুত্থানের সুযোগ নেই। গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে- জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা, কোন সমস্যা দেখা দিলে আইনের আশ্রয় নেয়া। দেশটির সবপক্ষই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে, আইনি প্রক্রিয়ায় বিরোধ মীমাংসা করবেÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সেনাঅভ্যুত্থানের পর মায়ানমারে যেন সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা যেন লঙ্ঘিত না হয়- সেটা আমাদের কামনা।