নির্বাচন হোক পাবনার মতো

আলাউদ্দিন আহমেদ

কী লাভ হলো পাবনায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোয় আঘাত করে ওলট-পালট করে? বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮ জন নেতাকে বহিষ্কার, ছাত্রলীগের চলমান কমিটির কার্যক্রম স্থগিতসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতার নানাবিধ আহ্বান কোন কিছুই তেমন কোন কাজে লাগল না। মাঝখানে দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে জটিলতা তৈরি হলো। এর রেশ কতদিন চলবে কে জানে?

গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হলো শত বছরের পুরনো পাবনা পৌরসভার নির্বাচন। পরাজিত হলেন নৌকার টিকিট পাওয়া যুবলীগ নেতা সনি বিশ্বাস। জিতলেন সাবেক যুবলীগ নেতা শরিফ উদ্দিন প্রধান। অবশ্য ভোটের ব্যবধান মাত্র ১২২টি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলতে যা বোঝায় এখানে তাই হয়েছে।

পাবনার নির্বাচনে অভূতপূর্ব ও স্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রশাসন। কোন বিতর্ক ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছেন তারা। এজন্য সর্বমহলে তারা প্রশংসিত হয়েছেন। অনেকে বলেছেন বিগত এক যুগেও এমন নির্বাচন পাবনায় হয়নি। এমন নির্বাচন যদি সর্বত্র হতো তাহলে ভোটারদের গুরুত্ব বাড়তো, রাজনৈতিক পরিবেশ অনেকটাই উন্নত হতে পারতো।

পাবনার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ছিল একজন রাজনৈতিক-শিল্পপতির ভূমিকা নিয়ে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে একটি বড় অংশের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল- তার কৌশলে ও ভূমিকায় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অধিকাংশ নেতাকর্মীর চিন্তাধারাকে মূল্যায়ন করেনি হাইকমান্ড। সার্বিক এ পরিস্থিতিতে পরাজয় ঘটেছে নৌকার প্রার্থীর। অবশ্য জয়-পরাজয়ের বিচারে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের কোন ক্ষতি হয়নি। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত শরিফ উদ্দিন প্রধানও আওয়ামী লীগ নেতা। সুতরাং দল আপাতদৃষ্টিতে ঠিকই আছে।

রাজনীতিতে সব সময় সব সিদ্ধান্ত সঠিক হবে- এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন চেয়ারের জন্য যখন নির্বাচন হয় তখন প্রার্থী মনোনয়নে নানান কৌশলী হয়ে ওঠেন কিছু নেতা। তারা ভ্রান্ত ধারণা দেন দলীয় প্রধানকে। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য সবসময় ইতিবাচক এতে কোন সন্দেহ পোষণ করেন না দলের অধিকাংশ সদস্য। কিন্তু প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে কোন কোন নেতা অথবা সংস্থার রিপোর্টের ওপর আস্থা রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে অনেক সময় শেকড়ের মতামত উপেক্ষিত হয়ে পড়ে। পাবনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

অনেকদিন পর নির্বাচন কমিশন ধন্যবাদ পাওয়ার মতো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়েছেন পাবনায়। এতে প্রমাণ হয় ইচ্ছা করলেই সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। চরম প্রতিযোগিতামূলক এ নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিতের ভোটের ব্যবধান মাত্র ১২২টি। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ উদ্দিন প্রধান পেয়েছেন ২৭ হাজার ৯৬৯ ভোট এবং নৌকার প্রার্থী আলী মূর্তজা বিশ^াস পেয়েছেন ২৭ হাজার ৮৪৭ ভোট।

পাবনার নির্বাচনে বিএনপির জনপ্রিয়তারও একটি পরীক্ষা হলো বলে মনে করেন অনেকে। বিএনপি প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মাছুম পেয়েছেন ৭ হাজার ৫০৪ ভোট। বিএনপির ফলাফলে এত বিপর্যয় কেন তার মূল্যায়ন হয়তো তারাই ভালোভাবে করতে পারবেন। অন্যান্য নির্বাচনে তারা যেভাবে বলেনÑ সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সরকার তাদের জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু পাবনার নির্বাচন সম্পর্কে তাদের কোন বক্তব্য এখনো আসেনি। পাবনা পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দুটি পক্ষের মাঝ থেকে বৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কেন ভালো রেজাল্ট করতে পারল না তা তারা ভাববেন বলে রাজনীতি সচেতনরা মনে করেন।

শুধু কথা বলে রাজনীতি হয় না। ক্ষমতায় থাকাকালীন কার্যক্রমকে বিবেচনায় রেখে আত্মমূল্যায়ন না করলে বিএনপির আরও নিচে নামতে হবে বলেই মনে হয়। যেসব এলাকায় আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা রয়েছেন তাদের প্রতি ক্ষোভ থেকে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিতে পারেন; কিন্তু এটা তাদের প্রতি ভালোবাসার সমর্থন নয়। পাবনায় এত কম ভোট প্রাপ্তি থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত তাদের।

জনগণ সুযোগ পেলে ভালোর দিকে ঝুঁকবে পাবনার নির্বাচন তা প্রমাণ করে। দলে দলে ভোট দিতে এসেছেন, পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন তারা। সুতরাং যা কিছু ভালো তা গ্রহণ করেই মানুষের কল্যাণে কাজ করার বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা সব নির্বাচন পাবনার মতো হোক। জনগণ ভালো নেতা নির্বাচিত করুক, রাজনীতির পরিবেশ উন্নত হোক। একই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকশিত হোক।

[লেখক: সংবাদকর্মী]

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

নির্বাচন হোক পাবনার মতো

আলাউদ্দিন আহমেদ

কী লাভ হলো পাবনায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোয় আঘাত করে ওলট-পালট করে? বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮ জন নেতাকে বহিষ্কার, ছাত্রলীগের চলমান কমিটির কার্যক্রম স্থগিতসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতার নানাবিধ আহ্বান কোন কিছুই তেমন কোন কাজে লাগল না। মাঝখানে দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে জটিলতা তৈরি হলো। এর রেশ কতদিন চলবে কে জানে?

গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হলো শত বছরের পুরনো পাবনা পৌরসভার নির্বাচন। পরাজিত হলেন নৌকার টিকিট পাওয়া যুবলীগ নেতা সনি বিশ্বাস। জিতলেন সাবেক যুবলীগ নেতা শরিফ উদ্দিন প্রধান। অবশ্য ভোটের ব্যবধান মাত্র ১২২টি। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলতে যা বোঝায় এখানে তাই হয়েছে।

পাবনার নির্বাচনে অভূতপূর্ব ও স্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রশাসন। কোন বিতর্ক ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছেন তারা। এজন্য সর্বমহলে তারা প্রশংসিত হয়েছেন। অনেকে বলেছেন বিগত এক যুগেও এমন নির্বাচন পাবনায় হয়নি। এমন নির্বাচন যদি সর্বত্র হতো তাহলে ভোটারদের গুরুত্ব বাড়তো, রাজনৈতিক পরিবেশ অনেকটাই উন্নত হতে পারতো।

পাবনার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ছিল একজন রাজনৈতিক-শিল্পপতির ভূমিকা নিয়ে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে একটি বড় অংশের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল- তার কৌশলে ও ভূমিকায় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অধিকাংশ নেতাকর্মীর চিন্তাধারাকে মূল্যায়ন করেনি হাইকমান্ড। সার্বিক এ পরিস্থিতিতে পরাজয় ঘটেছে নৌকার প্রার্থীর। অবশ্য জয়-পরাজয়ের বিচারে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের কোন ক্ষতি হয়নি। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত শরিফ উদ্দিন প্রধানও আওয়ামী লীগ নেতা। সুতরাং দল আপাতদৃষ্টিতে ঠিকই আছে।

রাজনীতিতে সব সময় সব সিদ্ধান্ত সঠিক হবে- এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন চেয়ারের জন্য যখন নির্বাচন হয় তখন প্রার্থী মনোনয়নে নানান কৌশলী হয়ে ওঠেন কিছু নেতা। তারা ভ্রান্ত ধারণা দেন দলীয় প্রধানকে। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য সবসময় ইতিবাচক এতে কোন সন্দেহ পোষণ করেন না দলের অধিকাংশ সদস্য। কিন্তু প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে কোন কোন নেতা অথবা সংস্থার রিপোর্টের ওপর আস্থা রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে অনেক সময় শেকড়ের মতামত উপেক্ষিত হয়ে পড়ে। পাবনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

অনেকদিন পর নির্বাচন কমিশন ধন্যবাদ পাওয়ার মতো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়েছেন পাবনায়। এতে প্রমাণ হয় ইচ্ছা করলেই সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। চরম প্রতিযোগিতামূলক এ নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিতের ভোটের ব্যবধান মাত্র ১২২টি। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা শরিফ উদ্দিন প্রধান পেয়েছেন ২৭ হাজার ৯৬৯ ভোট এবং নৌকার প্রার্থী আলী মূর্তজা বিশ^াস পেয়েছেন ২৭ হাজার ৮৪৭ ভোট।

পাবনার নির্বাচনে বিএনপির জনপ্রিয়তারও একটি পরীক্ষা হলো বলে মনে করেন অনেকে। বিএনপি প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মাছুম পেয়েছেন ৭ হাজার ৫০৪ ভোট। বিএনপির ফলাফলে এত বিপর্যয় কেন তার মূল্যায়ন হয়তো তারাই ভালোভাবে করতে পারবেন। অন্যান্য নির্বাচনে তারা যেভাবে বলেনÑ সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সরকার তাদের জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করতে পারেন। কিন্তু পাবনার নির্বাচন সম্পর্কে তাদের কোন বক্তব্য এখনো আসেনি। পাবনা পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দুটি পক্ষের মাঝ থেকে বৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কেন ভালো রেজাল্ট করতে পারল না তা তারা ভাববেন বলে রাজনীতি সচেতনরা মনে করেন।

শুধু কথা বলে রাজনীতি হয় না। ক্ষমতায় থাকাকালীন কার্যক্রমকে বিবেচনায় রেখে আত্মমূল্যায়ন না করলে বিএনপির আরও নিচে নামতে হবে বলেই মনে হয়। যেসব এলাকায় আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা রয়েছেন তাদের প্রতি ক্ষোভ থেকে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিতে পারেন; কিন্তু এটা তাদের প্রতি ভালোবাসার সমর্থন নয়। পাবনায় এত কম ভোট প্রাপ্তি থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত তাদের।

জনগণ সুযোগ পেলে ভালোর দিকে ঝুঁকবে পাবনার নির্বাচন তা প্রমাণ করে। দলে দলে ভোট দিতে এসেছেন, পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন তারা। সুতরাং যা কিছু ভালো তা গ্রহণ করেই মানুষের কল্যাণে কাজ করার বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা সব নির্বাচন পাবনার মতো হোক। জনগণ ভালো নেতা নির্বাচিত করুক, রাজনীতির পরিবেশ উন্নত হোক। একই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকশিত হোক।

[লেখক: সংবাদকর্মী]