গৌরবময় ভাষার মাস

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে বাঙালি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। বাঙালি ছাড়া আর কোনো জাতি তার নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি, অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়নি। এ কারণে বাঙালির এই মহান আত্মত্যাগকে গোটা বিশ্ব স্মরণ করবে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে। তারা জানবে আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা।

সমস্যা হচ্ছে দেশে নতুন প্রজন্ম না বাংলা না ইংরেজি কোন ভাষাই ভালোভাবে শিখছে না। তারা বাংলার সঙ্গে ইংরেজি-হিন্দি মিশিয়ে এক জগাখিচুড়ি ভাষার জন্ম দিচ্ছে। এতে ভাষা বিকৃতি ঘটছে চরমভাবে। ফেসবুক-ইন্টারনেটের মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে এক অদ্ভুত ভাষা। রোমান কিংবা ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা হচ্ছে। সেই বাংলার ধরনও বিচিত্র। কেউ কেউ বলেন, মাতৃভাষার প্রতি আমাদের আচরণ এখন বিমাতাসুলভ। শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে আজ বাংলার গুরুত্ব নেই, কারণ বাংলা ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে না। সেটা করে ইংরেজি ভাষা।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজির প্রাধান্য শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু তার ফলে ফরাসি, জার্মান, রুশ, চীনা, জাপানি ইত্যাদি ভাষাভাষী মানুষের কাছে নিজ নিজ মাতৃভাষার গুরুত্ব, মর্যাদা, সমাদর কিছুই কমছে না। তাহলে বাঙালির কাছে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও সমাদর কেন কমছে?

এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার দায়িত্ব জাতীয় নীতিনির্ধারকদের। ভাষার গুরুত্ব তার ব্যবহারে; জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে পর্যাপ্ত উদ্যোগ কখনোই কেন নেয়া হয়নিÑএ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হবে। স্বাধীনতার পরপর যেসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগের সূচনা করা হয়েছিল, সেগুলো কেন এগিয়ে নেয়া যায়নি, তা-ও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

সিনথিয়া সুমি

বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২০ মাঘ ১৪২৭, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

গৌরবময় ভাষার মাস

image

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে বাঙালি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। বাঙালি ছাড়া আর কোনো জাতি তার নিজের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি, অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়নি। এ কারণে বাঙালির এই মহান আত্মত্যাগকে গোটা বিশ্ব স্মরণ করবে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে। তারা জানবে আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা।

সমস্যা হচ্ছে দেশে নতুন প্রজন্ম না বাংলা না ইংরেজি কোন ভাষাই ভালোভাবে শিখছে না। তারা বাংলার সঙ্গে ইংরেজি-হিন্দি মিশিয়ে এক জগাখিচুড়ি ভাষার জন্ম দিচ্ছে। এতে ভাষা বিকৃতি ঘটছে চরমভাবে। ফেসবুক-ইন্টারনেটের মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে এক অদ্ভুত ভাষা। রোমান কিংবা ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা হচ্ছে। সেই বাংলার ধরনও বিচিত্র। কেউ কেউ বলেন, মাতৃভাষার প্রতি আমাদের আচরণ এখন বিমাতাসুলভ। শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে আজ বাংলার গুরুত্ব নেই, কারণ বাংলা ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে না। সেটা করে ইংরেজি ভাষা।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজির প্রাধান্য শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু তার ফলে ফরাসি, জার্মান, রুশ, চীনা, জাপানি ইত্যাদি ভাষাভাষী মানুষের কাছে নিজ নিজ মাতৃভাষার গুরুত্ব, মর্যাদা, সমাদর কিছুই কমছে না। তাহলে বাঙালির কাছে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও সমাদর কেন কমছে?

এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করার দায়িত্ব জাতীয় নীতিনির্ধারকদের। ভাষার গুরুত্ব তার ব্যবহারে; জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে পর্যাপ্ত উদ্যোগ কখনোই কেন নেয়া হয়নিÑএ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে হবে। স্বাধীনতার পরপর যেসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগের সূচনা করা হয়েছিল, সেগুলো কেন এগিয়ে নেয়া যায়নি, তা-ও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

সিনথিয়া সুমি