বিএনপি নেতা হাবিবসহ ৫০ জনের কারাদন্ড

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার দীর্ঘ ১৯ বছর পর মামলার রায়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি হাবিবসহ ৫০ জনের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হুমায়ূন কবীর এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের ১০ বছরের কারাদন্ড, একজনের ৯ বছরের এবং বাকি ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিএনপি অফিসের সামনে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করা হয়। তিনি সাতক্ষীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে সড়কপথে ঢাকায় ফেরার পথে এ হামলার শিকার হন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আবেদনের কথা বলেছেন।

এ মামলায় ৫৪ আসামির মধ্যে আটক আছেন ৩৪ জন। পলাতক রয়েছে ১৬ আসামি। ৪ জন মারা যাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের ধরতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

রায়ে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ছাত্রদল নেতা আরিফুর রহমান রঞ্জু ও রিপনকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৫ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া যুবদল নেতা আবদুল কাদের বাচ্চুকে ৯ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদন্ড, বিএনপি নেতা মো. আবদুল রাজ্জাককে ৬ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ১৩ জনকে সাড়ে ৪ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তারা হলেন শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আবদুল রকিব মোল্লা, মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. মফিজুল ইসলাম, মো. আবদুল মজিদ, অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ, মো. হাসান আলী, মো. ইয়াছিন আলী, ময়না, মো. আবদুস সাত্তার, মো. আবদুর রব, রিংকু, মো. আবদুল সামাদ।

রায়ে ৩১ জনকে ৪ বছরের কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। তারা হলেন- মো. আশরাফ হোসেন, মো. নজরুল ইসলাম, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, মো. তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. আবদুল মালেক, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. রবিউল ইসলাম, মো. গোলাম রসুল, অ্যাডভোকেট মো. আবদুস সাত্তার, মো. আলাউদ্দীন, মো. আলতাফ হোসেন, মো. নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, মো. সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন, জাবিদ রায়হান লাকি, রকিব, ট্রলি শহিদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. ইয়াছিন আলী, শেলী, মো. শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, মো. সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, মো. আ. গফফার গাজী, মো. মাজহারুল রহমান সাবু।

রায় শেষে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব চিৎকার করে বলেন, তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। অন্য আসামিরা অনেকটা রাগান্বিত অবস্থায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে প্রিজন ভ্যানে উঠেন।

এ রায় উপলক্ষ্যে গতকাল সকাল থেকেই সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে ছিল নিিদ্র নিরাপত্তা। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি ছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। সকাল আটটা থেকে আসামিদের আত্মীয়রা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। সাড়ে ৯টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে আসেন। বেলা ১০টায় আসামিদের প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে আসা হয় আদালতে। ১১টার আগ মুহূর্তে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হুমায়ূন কবীর রায় ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, রায়ে তারা সন্তুষ্ট। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ও বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহানারা পারভীন বকুল অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে রায়ের বিপক্ষে আবেদন করব।

রায়ের পর সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করে। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন পর আমরা বিচার পেয়েছি এতেই আমরা আনন্দিত।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী বলেন, ‘রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট’। তিনি বলেন, আমরা রায়ের কপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আবেদন করব।

২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে সড়কপথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ফাতেমা জাহান সাথীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এ ঘটনায় তৎকালীন কলারোয়া থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দীন থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়া হয়নি। একই বছর আদালতে তিনি ২৭ জনের নাম করে মামলা দায়ের করলে আদালত তা খারিজ করে দেয়।

পরে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে বিচার শুরু হয়। ২০১৭ সালের আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে নির্দেশে মামলাটি স্থগিত হয়।

২০২০ সালের ২২ অক্টোবর উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশে সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির বিচারকার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় ওই বছরের ৪ নভেম্বর।

রায় ঘোষণার সময় ৩৪ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। তারা হলেন- সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, মো. আবদুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আবদুর রকিব, মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. আবদুল মজিদ, মো. হাসান আলী, ময়না, মো. আবদুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, মো. আবদুস সাত্তার, আবদুস সামাদ, মো. আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, শহীদুল, মো. মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর, আবদুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, মো. আবদুস সামাদ ও টাইগার খোকন।

পলাতক আছেন ১৬ জন। তারা হলেন- আবদুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আবদুল খালেক, আবদুর রব, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক ও মো. মাহাফুজুর রহমান।

শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২২ মাঘ ১৪২৭, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা

বিএনপি নেতা হাবিবসহ ৫০ জনের কারাদন্ড

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার দীর্ঘ ১৯ বছর পর মামলার রায়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি হাবিবসহ ৫০ জনের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। গতকাল সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হুমায়ূন কবীর এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের ১০ বছরের কারাদন্ড, একজনের ৯ বছরের এবং বাকি ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিএনপি অফিসের সামনে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করা হয়। তিনি সাতক্ষীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে সড়কপথে ঢাকায় ফেরার পথে এ হামলার শিকার হন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আবেদনের কথা বলেছেন।

এ মামলায় ৫৪ আসামির মধ্যে আটক আছেন ৩৪ জন। পলাতক রয়েছে ১৬ আসামি। ৪ জন মারা যাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের ধরতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

রায়ে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ছাত্রদল নেতা আরিফুর রহমান রঞ্জু ও রিপনকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৫ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া যুবদল নেতা আবদুল কাদের বাচ্চুকে ৯ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদন্ড, বিএনপি নেতা মো. আবদুল রাজ্জাককে ৬ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ১৩ জনকে সাড়ে ৪ বছরের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৪ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তারা হলেন শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আবদুল রকিব মোল্লা, মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. মফিজুল ইসলাম, মো. আবদুল মজিদ, অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ, মো. হাসান আলী, মো. ইয়াছিন আলী, ময়না, মো. আবদুস সাত্তার, মো. আবদুর রব, রিংকু, মো. আবদুল সামাদ।

রায়ে ৩১ জনকে ৪ বছরের কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। তারা হলেন- মো. আশরাফ হোসেন, মো. নজরুল ইসলাম, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, মো. তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. আবদুল মালেক, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. রবিউল ইসলাম, মো. গোলাম রসুল, অ্যাডভোকেট মো. আবদুস সাত্তার, মো. আলাউদ্দীন, মো. আলতাফ হোসেন, মো. নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, মো. সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন, জাবিদ রায়হান লাকি, রকিব, ট্রলি শহিদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মো. মনিরুল ইসলাম, মো. ইয়াছিন আলী, শেলী, মো. শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, মো. সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, মো. আ. গফফার গাজী, মো. মাজহারুল রহমান সাবু।

রায় শেষে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব চিৎকার করে বলেন, তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। অন্য আসামিরা অনেকটা রাগান্বিত অবস্থায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে প্রিজন ভ্যানে উঠেন।

এ রায় উপলক্ষ্যে গতকাল সকাল থেকেই সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে ছিল নিিদ্র নিরাপত্তা। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি ছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। সকাল আটটা থেকে আসামিদের আত্মীয়রা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। সাড়ে ৯টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে আসেন। বেলা ১০টায় আসামিদের প্রিজনভ্যানে করে নিয়ে আসা হয় আদালতে। ১১টার আগ মুহূর্তে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. হুমায়ূন কবীর রায় ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, রায়ে তারা সন্তুষ্ট। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ও বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহানারা পারভীন বকুল অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা উচ্চ আদালতে রায়ের বিপক্ষে আবেদন করব।

রায়ের পর সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করে। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন পর আমরা বিচার পেয়েছি এতেই আমরা আনন্দিত।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে তা ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী বলেন, ‘রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট’। তিনি বলেন, আমরা রায়ের কপি পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আবেদন করব।

২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে সড়কপথে ঢাকায় ফেরার সময় কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ফাতেমা জাহান সাথীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।

এ ঘটনায় তৎকালীন কলারোয়া থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দীন থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়া হয়নি। একই বছর আদালতে তিনি ২৭ জনের নাম করে মামলা দায়ের করলে আদালত তা খারিজ করে দেয়।

পরে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিম্ন আদালতে বিচার শুরু হয়। ২০১৭ সালের আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে নির্দেশে মামলাটি স্থগিত হয়।

২০২০ সালের ২২ অক্টোবর উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশে সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির বিচারকার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় ওই বছরের ৪ নভেম্বর।

রায় ঘোষণার সময় ৩৪ জন আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। তারা হলেন- সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, মো. আবদুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আবদুর রকিব, মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. আবদুল মজিদ, মো. হাসান আলী, ময়না, মো. আবদুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, মো. আবদুস সাত্তার, আবদুস সামাদ, মো. আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, শহীদুল, মো. মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর, আবদুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, মো. আবদুস সামাদ ও টাইগার খোকন।

পলাতক আছেন ১৬ জন। তারা হলেন- আবদুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আবদুল খালেক, আবদুর রব, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক ও মো. মাহাফুজুর রহমান।