প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি

পুরো নাম আশরাফুল ইসলাম দিপু। ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতি সাধারণ পরিবারের এ যুবক প্রতরণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। প্রতরণার টাকায় বিলাসি জীবন, দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো, তারকা হোটেলে অবস্থান করে নিজেকে কখনও ইসলাম গ্রুপের চেয়াম্যান, কখনও গুলশান সোসাইটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, কখনও এনএসআইয়ের কর্মকর্তা, কখনও দুদক কর্মকর্তা, কখনও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। আবার সিআইপি ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। গড়ে তোলেন মানবিক বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের ব্যনারে দামি গাড়িতে চলাফেরা করতে গিয়ে নিতেন পুলিশ প্রটোকলও। প্রায় ৩ বছর আগ থেকে প্রতারণা শুরু করে ভালো চললেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে। মামলা হলে তদন্তে নামে পুলিশ। দুই দফায় রিমান্ড হেফাজতে এনে দিপুর প্রতারণার কাহিনী শুনে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারাও তাজ্জব বনে গেছেন। ইতোমধ্যে ২০ জন ভুক্তভোগী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দিপুর বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে ঘোষণা দেয়ার পরই দিপুর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর তদন্তে নেমে দিপুর প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হয় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে ওয়েস্টিন হোটেল থেকে ২১ হাজার ভোটে গুলশান ওয়েলফেরার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ারও কথা জানান দিপু। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আশরাফউল্লাহর নেতৃত্বে দিপুকে আটক করা হয় রাজধানীর ওই হোটেল থেকে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। দুই দফায় রিমান্ডে দিপু এখন ডিবি কার্যালয়ে পুলিশের মুখোমুখি।

ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আশরাফউল্লাহ তার কার্যালয়ে জানান, প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিপুকে প্রথম দফায় ৩ দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় আরও দুই দিনের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য মিলেছে তা সত্যিই অবাক করার মতো। তার প্রতারণার বিস্তার এতো বড় পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শুধু দেশেই নয় বিদেশে বিভিন্ন সংস্থা, প্রবাসী ব্যক্তিরা তার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ ২০ জন ভিকটিমের নাম-পরিচয় পেয়েছে যাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে দিপু।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, এসএসআই, পুলিশ প্রাইমারি স্কুল, বিমানবাহিনীতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং স্কুলে ভর্তি, বদলিসহ নানা তদবিরের কথা বলে শত শত মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে গত কয়েক মাসে। গত ৩ বছরে সে কমপক্ষে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার প্রতারণার ফাঁদ থেকে নিজ এলাকার লোকজনও বাদ পড়েনি। ইতোমধ্যে প্রতরণার শিকার ২০ ব্যক্তি ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা মামলা করার কথা জানিয়েছে। এরমধ্যে এসএসআইয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঠাকুরগাঁওয়ের আবু নাসেরের ১৫ লাখ টাকা, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার মো. মমিনুর রহমানের কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকা, একই থানার সানাতুল্লাহর ১৪ লাখ টাকা, বিজিবিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাহবুব আলমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা, ভোলা সদরের রমজান আলীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া গাজীপুরের ভাওয়াল এলাকার শিল্পী নামে এক নারীর কাছ থেকে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। ওই নারীর কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ ভড়ি স্বর্ণালঙ্কারও নিয়েছেন। উত্তরার মাহফুজ নামে একজনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, পুলিশে চাকরি দেয়ার কথা বলে নিজ এলকার ফারুক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, বিমানবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে লালমোহনের রুবেল নামে একজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, একই এলাকার ইকবাল নামে একজনকে স্কুলে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে দিপু ডিবি কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, সে দাখিল পাস করেছে। এ পর্যন্ত প্রতরণা করে সে ১ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার হাতেখড়ি এলাকা থেকে। মানবিক টিম বাংলাদেশ গঠন করে এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মূলত মানবিক বাংলাদেশ নামের সংগঠনের ব্যানারে ফেসবুককেন্দ্রিক প্রচরণা চালায়। এ সংগঠনের ব্যানারে দুযোগে দুর্গত এলাকার সাধারণ মানুষকে ত্রান দেয়ার কথা বলে ফেসবুকে প্রচরণা চালান। এর সূত্র ধরে দেশ-বিদেশ থেকে বাংলাদেশি বহু মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন দেশের দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পেয়ে যান দিপু। করোনার সময় হঠাৎ ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে তার চোখ খুলে যায়। প্রতারণার ফাঁদ পাততে শুরু করেন। প্রতারণার টাকায় দিপু হোটেল ওয়েস্টিন, লা মেরিডিয়ানসহ বিভিন্ন তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন করতে থাকেন। হোটেল লবিতে ঘুরে ঘুরে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। পরিচয় দিতেন কখনও এনএসআইয়ের কর্মকর্তা, দুদক কর্মকর্তা, পুলিশের পদস্ত কর্মকর্তা। যখন যেখানে যে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন মনে হতো সেখানে সে পরিচয় দিতেন।

ঘুরে বেড়াতেন দামি গাড়িতে। উবারের বা চুক্তিতে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন এ জেলা থেকে ও জেলায়। তার পোশাক-আশাক ও চাল-চলনে সবাই তাকে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মনে করতেন। অনেকেই আবার তাকে পদস্ত কর্মকর্তাও ভাবতেন। তার প্রতারণার মূল অস্ত্র ছিল ফেসবুক। ফেসবুকে একাধিক নামে আইডি খুলে বিভিন্ন রকম পোস্ট দিতেন। ত্রাণ বিতরণ, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পাঠানোসহ নানারকম ছবি দিতেন। ফেসবুক লাইভে নিজেকে গুলশান ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ারও লাইভ করেন। হোটেল ওয়েস্টিনে থেকে ওই লাইভে তাকে অনেকে অভিনন্দনও জানান। মূলত এটি তার অস্ত্র ছিল। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তিনি পুলিশের প্রটোকল নিয়েও চলাফেরা করতেন। এসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন। এভাবে তার প্রতারণার বিষয়টি চলতে থাকে।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সে কত মানুষের সঙ্গে প্রতরণা করেছে কি পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে দিপুর যেসব তথ্য-উপাত্ত গোয়েন্দারা পেয়েছে তাতে সিনেমার গল্পকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে নতুন তথ্য।

শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২২ মাঘ ১৪২৭, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি

সাইফ বাবলু

image

প্রতারক আশরাফুল ইসলাম দিপু (মাঝে)

পুরো নাম আশরাফুল ইসলাম দিপু। ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতি সাধারণ পরিবারের এ যুবক প্রতরণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। প্রতরণার টাকায় বিলাসি জীবন, দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো, তারকা হোটেলে অবস্থান করে নিজেকে কখনও ইসলাম গ্রুপের চেয়াম্যান, কখনও গুলশান সোসাইটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, কখনও এনএসআইয়ের কর্মকর্তা, কখনও দুদক কর্মকর্তা, কখনও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। আবার সিআইপি ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। গড়ে তোলেন মানবিক বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের ব্যনারে দামি গাড়িতে চলাফেরা করতে গিয়ে নিতেন পুলিশ প্রটোকলও। প্রায় ৩ বছর আগ থেকে প্রতারণা শুরু করে ভালো চললেও শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে। মামলা হলে তদন্তে নামে পুলিশ। দুই দফায় রিমান্ড হেফাজতে এনে দিপুর প্রতারণার কাহিনী শুনে গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারাও তাজ্জব বনে গেছেন। ইতোমধ্যে ২০ জন ভুক্তভোগী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দিপুর বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে ঘোষণা দেয়ার পরই দিপুর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর তদন্তে নেমে দিপুর প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হয় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে ওয়েস্টিন হোটেল থেকে ২১ হাজার ভোটে গুলশান ওয়েলফেরার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ারও কথা জানান দিপু। ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আশরাফউল্লাহর নেতৃত্বে দিপুকে আটক করা হয় রাজধানীর ওই হোটেল থেকে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। দুই দফায় রিমান্ডে দিপু এখন ডিবি কার্যালয়ে পুলিশের মুখোমুখি।

ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আশরাফউল্লাহ তার কার্যালয়ে জানান, প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিপুকে প্রথম দফায় ৩ দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় আরও দুই দিনের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য মিলেছে তা সত্যিই অবাক করার মতো। তার প্রতারণার বিস্তার এতো বড় পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শুধু দেশেই নয় বিদেশে বিভিন্ন সংস্থা, প্রবাসী ব্যক্তিরা তার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। ইতোমধ্যে পুলিশ ২০ জন ভিকটিমের নাম-পরিচয় পেয়েছে যাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে দিপু।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, এসএসআই, পুলিশ প্রাইমারি স্কুল, বিমানবাহিনীতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং স্কুলে ভর্তি, বদলিসহ নানা তদবিরের কথা বলে শত শত মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে গত কয়েক মাসে। গত ৩ বছরে সে কমপক্ষে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার প্রতারণার ফাঁদ থেকে নিজ এলাকার লোকজনও বাদ পড়েনি। ইতোমধ্যে প্রতরণার শিকার ২০ ব্যক্তি ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা মামলা করার কথা জানিয়েছে। এরমধ্যে এসএসআইয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঠাকুরগাঁওয়ের আবু নাসেরের ১৫ লাখ টাকা, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার মো. মমিনুর রহমানের কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকা, একই থানার সানাতুল্লাহর ১৪ লাখ টাকা, বিজিবিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাহবুব আলমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা, ভোলা সদরের রমজান আলীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া গাজীপুরের ভাওয়াল এলাকার শিল্পী নামে এক নারীর কাছ থেকে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। ওই নারীর কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ ভড়ি স্বর্ণালঙ্কারও নিয়েছেন। উত্তরার মাহফুজ নামে একজনের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, পুলিশে চাকরি দেয়ার কথা বলে নিজ এলকার ফারুক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, বিমানবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে লালমোহনের রুবেল নামে একজনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, একই এলাকার ইকবাল নামে একজনকে স্কুলে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে দিপু ডিবি কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, সে দাখিল পাস করেছে। এ পর্যন্ত প্রতরণা করে সে ১ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার হাতেখড়ি এলাকা থেকে। মানবিক টিম বাংলাদেশ গঠন করে এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মূলত মানবিক বাংলাদেশ নামের সংগঠনের ব্যানারে ফেসবুককেন্দ্রিক প্রচরণা চালায়। এ সংগঠনের ব্যানারে দুযোগে দুর্গত এলাকার সাধারণ মানুষকে ত্রান দেয়ার কথা বলে ফেসবুকে প্রচরণা চালান। এর সূত্র ধরে দেশ-বিদেশ থেকে বাংলাদেশি বহু মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান গ্রহণ করেন। এরপর বিভিন্ন দেশের দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পেয়ে যান দিপু। করোনার সময় হঠাৎ ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে তার চোখ খুলে যায়। প্রতারণার ফাঁদ পাততে শুরু করেন। প্রতারণার টাকায় দিপু হোটেল ওয়েস্টিন, লা মেরিডিয়ানসহ বিভিন্ন তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন করতে থাকেন। হোটেল লবিতে ঘুরে ঘুরে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। পরিচয় দিতেন কখনও এনএসআইয়ের কর্মকর্তা, দুদক কর্মকর্তা, পুলিশের পদস্ত কর্মকর্তা। যখন যেখানে যে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন মনে হতো সেখানে সে পরিচয় দিতেন।

ঘুরে বেড়াতেন দামি গাড়িতে। উবারের বা চুক্তিতে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন এ জেলা থেকে ও জেলায়। তার পোশাক-আশাক ও চাল-চলনে সবাই তাকে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মনে করতেন। অনেকেই আবার তাকে পদস্ত কর্মকর্তাও ভাবতেন। তার প্রতারণার মূল অস্ত্র ছিল ফেসবুক। ফেসবুকে একাধিক নামে আইডি খুলে বিভিন্ন রকম পোস্ট দিতেন। ত্রাণ বিতরণ, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পাঠানোসহ নানারকম ছবি দিতেন। ফেসবুক লাইভে নিজেকে গুলশান ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ারও লাইভ করেন। হোটেল ওয়েস্টিনে থেকে ওই লাইভে তাকে অনেকে অভিনন্দনও জানান। মূলত এটি তার অস্ত্র ছিল। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তিনি পুলিশের প্রটোকল নিয়েও চলাফেরা করতেন। এসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন। এভাবে তার প্রতারণার বিষয়টি চলতে থাকে।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সে কত মানুষের সঙ্গে প্রতরণা করেছে কি পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে দিপুর যেসব তথ্য-উপাত্ত গোয়েন্দারা পেয়েছে তাতে সিনেমার গল্পকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে নতুন তথ্য।