টিকা পৌঁছে গেছে ৬৪ জেলায়

কাল থেকে কর্মসূচি শুরু

সারাদেশে কাল থেকে শুরু হচ্ছে করোনার টিকা দেয়ার কর্মসূচি। ইতিমধ্যে টিকা দেয়ার প্রশিক্ষণসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় পৌঁছে গেছে করোনার টিকা। টিকা প্রদান কাজে কয়েক হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এবং সেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে ৪৩টি হাসপাতালে ৩৫৪টি সেন্টারে টিকা দেয়া হবে। সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেছেন, সারাদেশে সব মিলয়ে ৬ হাজার ৬৯০টি টিম কাজ করবে। প্রতিটি বুথে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। রোববার সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর জন্য ইতোমধ্যে সব জেলায় টিকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এখন তার বদলে সরকার ফেব্রুয়ারিতে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে টিকা বিতরণ সম্পর্কিত একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর পরিকল্পনায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি, যদি কোন কারণে সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে না পারি, তাহলে টোটাল ব্যবস্থাপনা ভেস্তে যাবে। সেজন্য আমরা হাতে থাকা টিকা অর্ধেক করে পুরোপুরি কমপ্লিট ডোজ দেয়ার ব্যবস্থা করছি।’

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দিতে হবে। ইতোমধ্যে চুক্তির আওতায় কেনা ৫০ লাখ ডোজ এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এখন সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা আছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আগামী জুনের মধ্যে বাকি আড়াই কোটি ডোজ টিকা দেশে পাঠাবে সেরাম ইনস্টিটিউট। ভারতের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে আনা ৫০ লাখ ডোজের একটি অংশের টিকার মেয়াদ আগামী ১৬ এপ্রিল শেষ হবে। এসব টিকা দীর্ঘসময় অব্যবহৃত রাখা যাবে না। এ কারণে দ্বিতীয় ডোজের মেয়াদ আপাতত এগিয়ে একমাস করা হয়েছে, পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজের সময় পিছিয়ে নেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ

করোনার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন কার্যক্রমে আপ্যায়ন খাতে খরচের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই বরাদ্দ চেয়েছিল।

অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, চলতি বাজেটের ব্যয় বরাদ্দ থেকে মোট ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা এ খাতে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাস্মদ আবু ইউসুফ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা তহবিল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুকূলে আপ্যায়ন ব্যয় কোডে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

আপ্যায়ন বরাদ্দের অঙ্ক নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকাদান কার্যক্রমে জড়িত স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের জন্য ওই অর্থ ব্যয় করা হবে। সারাদেশে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও কয়েক হাজার ভলান্টিয়ার কাজ করবেন। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবেন। তাদের তো খাওয়াতে হবে। এজন্য এই আপ্যায়ন ভাতা। আমরা প্রথমদিকে চাহিদা দিয়েছিলাম। সে সময় অর্থ বিভাগের হয়ত বুঝতে ভুল হয়েছিল। উনারা মনে করেছিলেন হয়ত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের জন্য ওই অর্থ। কিন্তু এটা ব্যয় হবে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য।’

শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৩ মাঘ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টিকা পৌঁছে গেছে ৬৪ জেলায়

কাল থেকে কর্মসূচি শুরু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

সারাদেশে কাল থেকে শুরু হচ্ছে করোনার টিকা দেয়ার কর্মসূচি। ইতিমধ্যে টিকা দেয়ার প্রশিক্ষণসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় পৌঁছে গেছে করোনার টিকা। টিকা প্রদান কাজে কয়েক হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এবং সেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে ৪৩টি হাসপাতালে ৩৫৪টি সেন্টারে টিকা দেয়া হবে। সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেছেন, সারাদেশে সব মিলয়ে ৬ হাজার ৬৯০টি টিম কাজ করবে। প্রতিটি বুথে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। রোববার সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর জন্য ইতোমধ্যে সব জেলায় টিকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এখন তার বদলে সরকার ফেব্রুয়ারিতে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে টিকা বিতরণ সম্পর্কিত একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর পরিকল্পনায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি, যদি কোন কারণে সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে না পারি, তাহলে টোটাল ব্যবস্থাপনা ভেস্তে যাবে। সেজন্য আমরা হাতে থাকা টিকা অর্ধেক করে পুরোপুরি কমপ্লিট ডোজ দেয়ার ব্যবস্থা করছি।’

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দিতে হবে। ইতোমধ্যে চুক্তির আওতায় কেনা ৫০ লাখ ডোজ এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এখন সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা আছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আগামী জুনের মধ্যে বাকি আড়াই কোটি ডোজ টিকা দেশে পাঠাবে সেরাম ইনস্টিটিউট। ভারতের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে আনা ৫০ লাখ ডোজের একটি অংশের টিকার মেয়াদ আগামী ১৬ এপ্রিল শেষ হবে। এসব টিকা দীর্ঘসময় অব্যবহৃত রাখা যাবে না। এ কারণে দ্বিতীয় ডোজের মেয়াদ আপাতত এগিয়ে একমাস করা হয়েছে, পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজের সময় পিছিয়ে নেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ

করোনার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন কার্যক্রমে আপ্যায়ন খাতে খরচের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই বরাদ্দ চেয়েছিল।

অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, চলতি বাজেটের ব্যয় বরাদ্দ থেকে মোট ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা এ খাতে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাস্মদ আবু ইউসুফ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা তহবিল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুকূলে আপ্যায়ন ব্যয় কোডে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

আপ্যায়ন বরাদ্দের অঙ্ক নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকাদান কার্যক্রমে জড়িত স্বেচ্ছাসেবকদের আপ্যায়নের জন্য ওই অর্থ ব্যয় করা হবে। সারাদেশে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও কয়েক হাজার ভলান্টিয়ার কাজ করবেন। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবেন। তাদের তো খাওয়াতে হবে। এজন্য এই আপ্যায়ন ভাতা। আমরা প্রথমদিকে চাহিদা দিয়েছিলাম। সে সময় অর্থ বিভাগের হয়ত বুঝতে ভুল হয়েছিল। উনারা মনে করেছিলেন হয়ত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের জন্য ওই অর্থ। কিন্তু এটা ব্যয় হবে স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য।’