ভারতে সাংবাদিক কেন আক্রান্ত

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক মাস পর নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, আমরা যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র টিকবে না। তার ছ’বছর পর অনেকেই বলছেন, ভারতের গণতন্ত্র আজ সংকুচিত গণমাধ্যমের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণের কারণে। গত বছর রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের সূচকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে ১৮০ দেশের মধ্যে আরও দু’ধাপ নিচে নেমে ভারতের অবস্থান হয় ১৪২তম। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়ে ভারত মাঝে মাঝে যে গর্ব করে তার সঙ্গে মেলে না।

সাংবাদিকদের ওপর সর্বশেষ খড়গ নেমে এলো ভারতের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন কৃষক নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ আটজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা এবং রাষ্ট্রের সংহতির জন্য হুমকি তৈরির অভিযোগে মামলা করেছে। এই আটজন সাংবাদিক দিল্লির ওই কৃষক আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন। কীভাবে ওই কৃষক নিহত হলেন তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। পুলিশ বলেছে, ট্রাক উল্টে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। তার পরিবারের দাবি, তাকে গুলি করা হয়েছে। নিহত কৃষকের পরিবারের সদস্যদের এই কথা প্রচার করাই হয়ে গেছে ওই সাংবাদিকদের দোষ। এর মধ্যে কয়েকজন সেই সংবাদ সংগ্রহ বা প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আর বাকিরা তা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সংবাদ শেয়ার করেছিলেন। এর মধ্যে ছয়জনই বিজেপি-শাসিত রাজ্যের বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। এদের সঙ্গে একজন কংগ্রেস নেতাও আছেন। পুলিশের মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিক, দি ওয়্যার এর প্রধান সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরোদারাজন প্রশ্ন তোলেন, কোন নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য যদি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বা পুলিশের ভাষ্যের সঙ্গে না মিলে, কি তা প্রচার করা অপরাধ? স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন মানবাধিকর সংগঠন ও তাদের সহকর্মী সাংবাদিকরা পুলিশের এহেন মামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ। দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, “কৃষক আন্দোলনের জবাব ভারতের সরকার যেটা করেছে সেটা হলো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে কুৎসা ছড়ানো, সরকারের সমালোচকদের হয়রানি করা এবং যারা ওই ঘটনার সংবাদ প্রচার করেছে তাদের শাস্তি দেয়া।” এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের এসব মামলা সংবাদমাধ্যমকে দমন, হয়রানি, চোখ রাঙানো ও রুদ্ধ করার জন্য।

বিক্ষোভ চলাকালে ওই কৃষকের মৃত্যু নিয়ে সংবাদ পরিবেশন ও টুইটারে তা শেয়ার করার জন্য ভারতের ক্যারাভান ম্যাগাজিনের সম্পাদক পদে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ তিন কর্মীর বিরুদ্ধে দশটা দেশদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ম্যাগাজিনটা অনেকবারই মোদি সরকারের গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। এই ম্যাগাজিনের একজন প্রতিবেদককে আন্দোলনস্থল থেকে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। দুইদিন আটক রাখার পর তার জামিন হয়। সরকারের আইনি নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাগাজিনটির ?টুইটার অ্যাকাউন্টটিও বন্ধ রাখা হয় কয়েক ঘণ্টার জন্য।

গত বছর ক্যারাভানেরই আরও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়। একজন হামলার শিকার হন দিল্লির দাঙ্গার খবর সংগ্রহের সময়। আরেকজন এক কিশোরীর ধর্ষণের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে। ক্যারাভানের নির্বাহী সম্পাদক বিনোদ যোশী বিবিসিকে বলেন, আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন সরকারের সমালোচনা করলেই দেশবিরোধী তকমা সেটে দেয়া হচ্ছে। এটা খুব ভয়ানক একটা পদ্ধতি। সাংবাদিকদের কাজই তো ক্ষমতাবানদের প্রশ্ন করা। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি অবশ্য সাংবাদিক দমনের এই অভিযোগ অস্বীকার করছে। তাদের মতে এটা সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারেরই অংশ। কেন্দ্র বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট বৈজয়ন্ত পান্ডা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে ঘোষিত অবস্থানের রাজনীতি-সম্পৃক্ত সাংবাদিকরা সারাক্ষণ সংবাদপত্রে, টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালে সরকারবিরোধী যা ইচ্ছে তাই বলে চলেছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ কিছুসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে সহিংসতা উস্কে দেয়ার মতো ভুয়া খবর প্রচারের অভিযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, একই সময়ে এই সাংবাদিকরাই যেসব রাজ্যে বিজেপি সরকারে নেই, সেখানকার সরকারি দলের ব্যাপারে ভীষণ সহমর্মী। তিনি এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার নির্লজ্জ ব্যবহারের অভিযোগ তুলছেন।

আর্টিকেল ১৪-এর তথ্য অনুযায়ী, এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ৪০৫ ধারায় এবং এসব মামলার সবগুলোই হয়েছে মোদি আমলে। ফ্রিডম হাউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সাংবাদিকরা মোটা দাগে বিভক্ত। মূলধারা গণমাধ্যমের একটি বিরাট অংশ সরকারের সমর্থক। তারা সরকারের সমালোচনা করে না। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্রের দেশ ভারতে এখন এটাও জানা যাচ্ছে যে, সংবাদ মাধ্যমে সরকারকে সমালোচনার দায় নেই।

অনেকে মনে করেন ভারত সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ফ্রি স্পিচ কালেক্টিভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২০০ সাংবাদিক সে দেশে শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। ৬৭ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের গণধর্ষণের ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া সেই সাংবাদিকও আছেন, যাকে গত পাঁচ মাস ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে।

সরকার সমালোচক নারী সাংবাদিকরা আছেন আরও বিপদে। অনলাইন ট্রলিং তো আছেই, তার ওপর আছে হুমকি। দিল্লিভিত্তিক নারী সাংবাদিক নেহা দীক্ষিত জানিয়েছেন, তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই সপ্তাহে আরেক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রোহিনি সিংকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকিদাতা এক আইন পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ডিন তরুণাভ খৈতান বলেন, ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা কখনই যথেষ্ট ছিল না।

(বিবিসির শৌতিক বসুর প্রতিবেদন থেকে)

আরও খবর
বাংলাদেশ ও ভারত মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ়তর হবে প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর
বিএনপি সমাবেশের নামে সহিংসতা করলে দমন করা হবে কাদের
এবারের কলকাতার বইমেলা উৎসর্গ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে
ঋত্বিক ঘটকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
টেরাকোটার ভাষায় বাংলাদেশ
বগুড়ায় পিঠা উৎসব
ফের বাড়ছে দাম চাল-পিয়াজে
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা খুবই দুর্বল ন্যাপ
গ্রামকে শহরে রূপান্তর করা হচ্ছে কৃষিমন্ত্রী
ইউল্যাব শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যা বান্ধবী নেহা রিমান্ডে
বিএসএমএমইউ চিকিৎসক গ্রেপ্তার
বেরোবি সিন্ডিকেট সভা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
আল্লাহর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ ৪ নির্বাহী গ্রেপ্তার

শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৩ মাঘ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ভারতে সাংবাদিক কেন আক্রান্ত

সংবাদ ডেস্ক |

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক মাস পর নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, আমরা যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র টিকবে না। তার ছ’বছর পর অনেকেই বলছেন, ভারতের গণতন্ত্র আজ সংকুচিত গণমাধ্যমের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণের কারণে। গত বছর রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের সূচকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে ১৮০ দেশের মধ্যে আরও দু’ধাপ নিচে নেমে ভারতের অবস্থান হয় ১৪২তম। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়ে ভারত মাঝে মাঝে যে গর্ব করে তার সঙ্গে মেলে না।

সাংবাদিকদের ওপর সর্বশেষ খড়গ নেমে এলো ভারতের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন কৃষক নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ আটজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা এবং রাষ্ট্রের সংহতির জন্য হুমকি তৈরির অভিযোগে মামলা করেছে। এই আটজন সাংবাদিক দিল্লির ওই কৃষক আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন। কীভাবে ওই কৃষক নিহত হলেন তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। পুলিশ বলেছে, ট্রাক উল্টে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তিনি। তার পরিবারের দাবি, তাকে গুলি করা হয়েছে। নিহত কৃষকের পরিবারের সদস্যদের এই কথা প্রচার করাই হয়ে গেছে ওই সাংবাদিকদের দোষ। এর মধ্যে কয়েকজন সেই সংবাদ সংগ্রহ বা প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আর বাকিরা তা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সংবাদ শেয়ার করেছিলেন। এর মধ্যে ছয়জনই বিজেপি-শাসিত রাজ্যের বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। এদের সঙ্গে একজন কংগ্রেস নেতাও আছেন। পুলিশের মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিক, দি ওয়্যার এর প্রধান সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরোদারাজন প্রশ্ন তোলেন, কোন নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য যদি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বা পুলিশের ভাষ্যের সঙ্গে না মিলে, কি তা প্রচার করা অপরাধ? স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন মানবাধিকর সংগঠন ও তাদের সহকর্মী সাংবাদিকরা পুলিশের এহেন মামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ। দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, “কৃষক আন্দোলনের জবাব ভারতের সরকার যেটা করেছে সেটা হলো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে কুৎসা ছড়ানো, সরকারের সমালোচকদের হয়রানি করা এবং যারা ওই ঘটনার সংবাদ প্রচার করেছে তাদের শাস্তি দেয়া।” এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের এসব মামলা সংবাদমাধ্যমকে দমন, হয়রানি, চোখ রাঙানো ও রুদ্ধ করার জন্য।

বিক্ষোভ চলাকালে ওই কৃষকের মৃত্যু নিয়ে সংবাদ পরিবেশন ও টুইটারে তা শেয়ার করার জন্য ভারতের ক্যারাভান ম্যাগাজিনের সম্পাদক পদে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ তিন কর্মীর বিরুদ্ধে দশটা দেশদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ম্যাগাজিনটা অনেকবারই মোদি সরকারের গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। এই ম্যাগাজিনের একজন প্রতিবেদককে আন্দোলনস্থল থেকে সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। দুইদিন আটক রাখার পর তার জামিন হয়। সরকারের আইনি নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাগাজিনটির ?টুইটার অ্যাকাউন্টটিও বন্ধ রাখা হয় কয়েক ঘণ্টার জন্য।

গত বছর ক্যারাভানেরই আরও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়। একজন হামলার শিকার হন দিল্লির দাঙ্গার খবর সংগ্রহের সময়। আরেকজন এক কিশোরীর ধর্ষণের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে। ক্যারাভানের নির্বাহী সম্পাদক বিনোদ যোশী বিবিসিকে বলেন, আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন সরকারের সমালোচনা করলেই দেশবিরোধী তকমা সেটে দেয়া হচ্ছে। এটা খুব ভয়ানক একটা পদ্ধতি। সাংবাদিকদের কাজই তো ক্ষমতাবানদের প্রশ্ন করা। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি অবশ্য সাংবাদিক দমনের এই অভিযোগ অস্বীকার করছে। তাদের মতে এটা সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারেরই অংশ। কেন্দ্র বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট বৈজয়ন্ত পান্ডা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে ঘোষিত অবস্থানের রাজনীতি-সম্পৃক্ত সাংবাদিকরা সারাক্ষণ সংবাদপত্রে, টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালে সরকারবিরোধী যা ইচ্ছে তাই বলে চলেছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ কিছুসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে সহিংসতা উস্কে দেয়ার মতো ভুয়া খবর প্রচারের অভিযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, একই সময়ে এই সাংবাদিকরাই যেসব রাজ্যে বিজেপি সরকারে নেই, সেখানকার সরকারি দলের ব্যাপারে ভীষণ সহমর্মী। তিনি এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার নির্লজ্জ ব্যবহারের অভিযোগ তুলছেন।

আর্টিকেল ১৪-এর তথ্য অনুযায়ী, এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ৪০৫ ধারায় এবং এসব মামলার সবগুলোই হয়েছে মোদি আমলে। ফ্রিডম হাউজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সাংবাদিকরা মোটা দাগে বিভক্ত। মূলধারা গণমাধ্যমের একটি বিরাট অংশ সরকারের সমর্থক। তারা সরকারের সমালোচনা করে না। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্রের দেশ ভারতে এখন এটাও জানা যাচ্ছে যে, সংবাদ মাধ্যমে সরকারকে সমালোচনার দায় নেই।

অনেকে মনে করেন ভারত সাংবাদিকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ফ্রি স্পিচ কালেক্টিভের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২০০ সাংবাদিক সে দেশে শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। ৬৭ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের গণধর্ষণের ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া সেই সাংবাদিকও আছেন, যাকে গত পাঁচ মাস ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে।

সরকার সমালোচক নারী সাংবাদিকরা আছেন আরও বিপদে। অনলাইন ট্রলিং তো আছেই, তার ওপর আছে হুমকি। দিল্লিভিত্তিক নারী সাংবাদিক নেহা দীক্ষিত জানিয়েছেন, তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে, তাকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই সপ্তাহে আরেক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রোহিনি সিংকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকিদাতা এক আইন পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ডিন তরুণাভ খৈতান বলেন, ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা কখনই যথেষ্ট ছিল না।

(বিবিসির শৌতিক বসুর প্রতিবেদন থেকে)