বেরোবি সিন্ডিকেট সভা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

এবার সিন্ডিকেট সভা করে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রশাসনিক ভবন ক্যাম্পাসে যেকোন সভা সমাবেশ মৌনমিছিলসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে রোববার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাটি ক্যাম্পাসে না করে ঢাকায় গত ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের কথা বলা হলেও গতকাল বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই অফিস আদেশে প্রশাসনিক ভবন, ভিসির বাংলো, অ্যাকাডেমিক ভবন এবং শ্রেণীকক্ষের সামনে মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন, স্লোগান, বক্তব্য প্রদান ও মৌনমিছিলসহ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তালা লাগিয়ে প্রতিবাদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি এই নোটিশের নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষকদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’। গতকাল বিকেলে সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মতিউর রহমান ও সদস্য সচিব খায়রুল কবীর সুমন কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতির মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। সংগঠনটির নেতারা মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী ও সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ তার একাডেমিক-প্রশাসনিক-আর্থিক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং অবৈধ পদোন্নতি-পদায়ন-নিয়োগ আড়াল করতে এবং চলমান আন্দোলন দমাতে এমন ফরমান জারি করেছে। অবিলম্বে সংবিধানবিরোধী ওই ‘নিষেধাজ্ঞা’ তুলে নেয়া না হলে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর কথা জানান সংগঠনটির নেতারা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম জানান ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে, সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা করে এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন অসংখ্য নিয়ম বহির্ভূত কর্মকা- করে যাচ্ছে।

এসব নিয়ম বহির্ভূত অনৈতিক কর্মকা-ের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতিবাদ করাটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় এ ধরনের নোটিশই বলে দেয়, এই প্রশাসন তার অপকর্মগুলো বিনা প্রতিবাদে ও নির্বিচারে চালিয়ে যেতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে না থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যত রকম সমস্যার সৃষ্টি করেছেন সেগুলো চেপে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে শিক্ষার্থীরা এর যথাযথ জবাব দিবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তাফা কামাল ও উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা দু’জনের কেউই ফোন রিসিভ করেননি।

শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৩ মাঘ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বেরোবি সিন্ডিকেট সভা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

এবার সিন্ডিকেট সভা করে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রশাসনিক ভবন ক্যাম্পাসে যেকোন সভা সমাবেশ মৌনমিছিলসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে রোববার পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাটি ক্যাম্পাসে না করে ঢাকায় গত ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠানের কথা বলা হলেও গতকাল বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই অফিস আদেশে প্রশাসনিক ভবন, ভিসির বাংলো, অ্যাকাডেমিক ভবন এবং শ্রেণীকক্ষের সামনে মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ প্রদর্শন, স্লোগান, বক্তব্য প্রদান ও মৌনমিছিলসহ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তালা লাগিয়ে প্রতিবাদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি এই নোটিশের নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষকদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’। গতকাল বিকেলে সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মতিউর রহমান ও সদস্য সচিব খায়রুল কবীর সুমন কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতির মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। সংগঠনটির নেতারা মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী ও সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ তার একাডেমিক-প্রশাসনিক-আর্থিক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং অবৈধ পদোন্নতি-পদায়ন-নিয়োগ আড়াল করতে এবং চলমান আন্দোলন দমাতে এমন ফরমান জারি করেছে। অবিলম্বে সংবিধানবিরোধী ওই ‘নিষেধাজ্ঞা’ তুলে নেয়া না হলে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর কথা জানান সংগঠনটির নেতারা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম জানান ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে, সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা করে এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন অসংখ্য নিয়ম বহির্ভূত কর্মকা- করে যাচ্ছে।

এসব নিয়ম বহির্ভূত অনৈতিক কর্মকা-ের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতিবাদ করাটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় এ ধরনের নোটিশই বলে দেয়, এই প্রশাসন তার অপকর্মগুলো বিনা প্রতিবাদে ও নির্বিচারে চালিয়ে যেতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে না থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যত রকম সমস্যার সৃষ্টি করেছেন সেগুলো চেপে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে শিক্ষার্থীরা এর যথাযথ জবাব দিবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তাফা কামাল ও উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা দু’জনের কেউই ফোন রিসিভ করেননি।