গোমা সেতুতে কংক্রিটের বদলে স্টিলের গার্ডার স্থাপন করে সংকট সমাধানের চেষ্টা

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা রাঙ্গামাটি নদীর ওপর নির্মাণাধীন গোমা সেতু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সুষ্ঠু সমাধানের ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেতুটির উচ্চতা বৃদ্ধি করার জন্য গার্ডার স্থাপনে কংক্রিটের বদলে স্টিলের পাত ব্যবহারের পরমর্শ দিয়েছে কারিগরি প্রতিনিধি দল। এতে নৌ ও সড়কপথ সচল থাকবে বলে মনে করছেন তারা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কারিগরি প্রতিনিধি দল নির্মাণাধীন সেতু পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ সিদ্ধান্তে সম্মতি দিলে সেতুটি নির্মাণে জটিলতার অবসান হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন নিয়েই শুরু করা সেতুটির ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি তোলায় প্রায় এক বছর যাবত সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

জানা যায়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ এবং সওজের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল গত ২ জানুয়ারি নির্মাণাধীন গোমা সেতু পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে ফিরে তারা সওজের বরিশালের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ে সভায় মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে, সেতুতে এক পিলারের সঙ্গে আরেকটি পিলারের সংযোগ স্থাপনে স্টিলের গার্ডার ব্যবহৃত হলে সেতুর পিলারের উচ্চতা দেড় মিটার বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চতা হবে জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে ৯ দশমিক ৩০ মিটার। যা সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের জন্য যথেষ্ট মনে করেন বিশেষজ্ঞ দল। সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল।

জানান, বর্তমান নকশা অনুযায়ী নির্মাণাধীন সেতুতে কংক্রিটের গার্ডার স্থাপনের কথা ছিল। সেটার উচ্চতা হতো ৭ দশমিক ৮৬ মিটার। প্রতিটি গার্ডারের দৈর্ঘ্য হবে ৪৯ মিটার। কারিগরি প্রতিনিধি দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে সওজ স্টিলের পাত ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছে। কারিগরি প্রতিনিধি দলের নতুন এই প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, গোমা সেতু নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে তার সংস্থা পুরো বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তার প্রতিষ্ঠান সেটাই মেনে নেবে।

উল্লেখ্য, বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটির নদীর গোমা পয়েন্টে ৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যায়ে ২৮ দশমিক ২৮৩ দশমিক দীর্ঘ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ৬৫ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। তাদের অভিযোগ, সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে ৭ দশমিক ৬২ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মিত হলে ওই নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। নৌপথটি সচল রাখার জন্য ১২ দশমিক ০৫ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মানের দাবি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। তারা এ নৌপথটি দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে সওজ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিআইডব্লিউটিএর চূড়ান্ত অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর সেতুর নকশা অনুমোদন করে দরপত্রের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তখন তারা নৌপথটি ‘গ’ শ্রেণীর উল্লেখ করেছিল। চার বছর পর বিআইডব্লিউটিএ নৌপথটি ‘খ’ শ্রেণী হিসাবে উল্লেখ করে উচ্চতা বৃদ্ধির দাবি তোলায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সওজকে। এরইমধ্যে সেতুর সবগুলো পিলার স্থাপনসহ ৬৫ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে যোগাযোগ মন্ত্রাণালয় প্রায় এক বছর আগে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে বিভিন্ন উপায় খুুঁজতে শুরু করে।

শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৩ মাঘ ১৪২৭, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

গোমা সেতুতে কংক্রিটের বদলে স্টিলের গার্ডার স্থাপন করে সংকট সমাধানের চেষ্টা

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

image

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা রাঙ্গামাটি নদীর ওপর নির্মাণাধীন গোমা সেতু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সুষ্ঠু সমাধানের ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেতুটির উচ্চতা বৃদ্ধি করার জন্য গার্ডার স্থাপনে কংক্রিটের বদলে স্টিলের পাত ব্যবহারের পরমর্শ দিয়েছে কারিগরি প্রতিনিধি দল। এতে নৌ ও সড়কপথ সচল থাকবে বলে মনে করছেন তারা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কারিগরি প্রতিনিধি দল নির্মাণাধীন সেতু পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ সিদ্ধান্তে সম্মতি দিলে সেতুটি নির্মাণে জটিলতার অবসান হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন নিয়েই শুরু করা সেতুটির ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি তোলায় প্রায় এক বছর যাবত সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

জানা যায়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ এবং সওজের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল গত ২ জানুয়ারি নির্মাণাধীন গোমা সেতু পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে ফিরে তারা সওজের বরিশালের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ে সভায় মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে, সেতুতে এক পিলারের সঙ্গে আরেকটি পিলারের সংযোগ স্থাপনে স্টিলের গার্ডার ব্যবহৃত হলে সেতুর পিলারের উচ্চতা দেড় মিটার বৃদ্ধি পেয়ে উচ্চতা হবে জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে ৯ দশমিক ৩০ মিটার। যা সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের জন্য যথেষ্ট মনে করেন বিশেষজ্ঞ দল। সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল।

জানান, বর্তমান নকশা অনুযায়ী নির্মাণাধীন সেতুতে কংক্রিটের গার্ডার স্থাপনের কথা ছিল। সেটার উচ্চতা হতো ৭ দশমিক ৮৬ মিটার। প্রতিটি গার্ডারের দৈর্ঘ্য হবে ৪৯ মিটার। কারিগরি প্রতিনিধি দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে সওজ স্টিলের পাত ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছে। কারিগরি প্রতিনিধি দলের নতুন এই প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, গোমা সেতু নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে তার সংস্থা পুরো বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তার প্রতিষ্ঠান সেটাই মেনে নেবে।

উল্লেখ্য, বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটির নদীর গোমা পয়েন্টে ৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যায়ে ২৮ দশমিক ২৮৩ দশমিক দীর্ঘ সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ৬৫ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। তাদের অভিযোগ, সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে ৭ দশমিক ৬২ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মিত হলে ওই নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। নৌপথটি সচল রাখার জন্য ১২ দশমিক ০৫ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মানের দাবি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। তারা এ নৌপথটি দ্বিতীয় শ্রেণীর নৌপথ বলে দাবি করেছে। অন্যদিকে সওজ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিআইডব্লিউটিএর চূড়ান্ত অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর সেতুর নকশা অনুমোদন করে দরপত্রের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তখন তারা নৌপথটি ‘গ’ শ্রেণীর উল্লেখ করেছিল। চার বছর পর বিআইডব্লিউটিএ নৌপথটি ‘খ’ শ্রেণী হিসাবে উল্লেখ করে উচ্চতা বৃদ্ধির দাবি তোলায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সওজকে। এরইমধ্যে সেতুর সবগুলো পিলার স্থাপনসহ ৬৫ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে যোগাযোগ মন্ত্রাণালয় প্রায় এক বছর আগে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে বিভিন্ন উপায় খুুঁজতে শুরু করে।