সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবন, দ্বিতীয় পোশাক শিল্প

গত বছর করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল তৈরি পোশাক কারখানা। এতে রপ্তানিতেও অনেক কমে যায়। তবে বন্ধ থাকার কারণেই রপ্তানি কমেনি। এই সময় একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে পোশাক কারখানায়। সম্প্রতি সরকারি সংস্থা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাসিক ভবন। এরপরই অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পোশাক কারখানা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর সারাদেশে ২১ হাজার ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৪৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ১৫০টি অগ্নিদুর্ঘটনায় ৬৮ কোটি ১১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বাসাবাড়ি বা আবাসিক ভবনে। আগুনে আর্থিক ক্ষতির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প। এ খাতে ১৭৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার। অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলার যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই অধিকাংশ কারখানার। এমন পরিস্থিতিতে অল্প জায়গার মধ্যে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক উৎপাদনকাজে অংশ নেন। ব্যবহার করেন বিভিন্ন ধরনের ভারি যন্ত্রাংশ ও রাসায়নিক। এসব রাসায়নিকের সংস্পর্শে আগুন দ্রুত পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

শুধু রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পেই নয়, করোনার বছরজুড়ে আগুনে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় পোশাক শিল্পও। পরিসংখ্যানে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, এ শিল্পে গত বছর ৯৬টি অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৩ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পোশাক শিল্প ব্যতীত অন্য কাল-কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে ৩৮৩টি। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার। এছাড়া পাট গুদাম ও পাটকলে বছরজুড়ে ৮০টি অগ্নিকাণ্ডে ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও করোনার বছরজুড়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলোয়। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে ৮৬টি অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার।

২০১৯ সালে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু বলে ধারণা করা হয়। এরপর এটি অন্য সব দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, লকডাউন জারিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও করোনা ঠেকাতে পারেনি বহু দেশ। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় লকডাউন।

লকডাউনের কারণে স্থবিরতা নেমে আসে জনজীবনে। দেশের নিম্নআয়ের মানুষের জীবন হয়ে উঠতে থাকে দুর্বিসহ। এরই মধ্যে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই শুরু করে। উপায়ন্ত না দেখে অনেকেই রাজধানী ঢাকা ছেড়ে নানা অনিশ্চিয়তায় পাড়ি জমাতে থাকে গ্রামে। পরিস্থিতি মানিয়ে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন ভুক্তভোগীরা।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবন, দ্বিতীয় পোশাক শিল্প

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

গত বছর করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল তৈরি পোশাক কারখানা। এতে রপ্তানিতেও অনেক কমে যায়। তবে বন্ধ থাকার কারণেই রপ্তানি কমেনি। এই সময় একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে পোশাক কারখানায়। সম্প্রতি সরকারি সংস্থা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাসিক ভবন। এরপরই অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পোশাক কারখানা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর সারাদেশে ২১ হাজার ৭৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৪৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ১৫০টি অগ্নিদুর্ঘটনায় ৬৮ কোটি ১১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বাসাবাড়ি বা আবাসিক ভবনে। আগুনে আর্থিক ক্ষতির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প। এ খাতে ১৭৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার। অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলার যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই অধিকাংশ কারখানার। এমন পরিস্থিতিতে অল্প জায়গার মধ্যে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক উৎপাদনকাজে অংশ নেন। ব্যবহার করেন বিভিন্ন ধরনের ভারি যন্ত্রাংশ ও রাসায়নিক। এসব রাসায়নিকের সংস্পর্শে আগুন দ্রুত পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

শুধু রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পেই নয়, করোনার বছরজুড়ে আগুনে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় পোশাক শিল্পও। পরিসংখ্যানে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, এ শিল্পে গত বছর ৯৬টি অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৩ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পোশাক শিল্প ব্যতীত অন্য কাল-কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে ৩৮৩টি। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার। এছাড়া পাট গুদাম ও পাটকলে বছরজুড়ে ৮০টি অগ্নিকাণ্ডে ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও করোনার বছরজুড়ে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলোয়। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে ৮৬টি অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার।

২০১৯ সালে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু বলে ধারণা করা হয়। এরপর এটি অন্য সব দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, লকডাউন জারিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও করোনা ঠেকাতে পারেনি বহু দেশ। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তীতে ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় লকডাউন।

লকডাউনের কারণে স্থবিরতা নেমে আসে জনজীবনে। দেশের নিম্নআয়ের মানুষের জীবন হয়ে উঠতে থাকে দুর্বিসহ। এরই মধ্যে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই শুরু করে। উপায়ন্ত না দেখে অনেকেই রাজধানী ঢাকা ছেড়ে নানা অনিশ্চিয়তায় পাড়ি জমাতে থাকে গ্রামে। পরিস্থিতি মানিয়ে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন ভুক্তভোগীরা।