নিয়ামতপুরে সেতু আছে রাস্তা নেই!

নওগাঁর নিয়ামতপুরে পাড়ইল ইউনিয়নের বনগাঁ চান্দইল খালের ওপর সেতু আছে কিন্তু দুপাশে কোন সড়ক নেই। সড়কবিহীন সেতু এলাকাবাসীর কোন কাজেই আসছে না।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিরুদ্ধে অনর্থক সরকারি টাকা অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের বনগাঁ চান্দইল গ্রামের দক্ষিণ পাশে সিংড়া জামাইপাড়া খালে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্য ব্রিজ নির্মাণ হয়। সেতুটির মূল অংশের কাজ শেষ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন পরিকল্পনা ছিল না দুই পাশের সংযোগ গাইড অংশের কাজ শেষ করার।

ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দা নিজ অর্থায়নে বনগাঁ চন্দইল হতে সিংড়া যাওয়ার গ্রাম্য সড়ক হতে ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৪শ’ ফিট দৈর্ঘ্য ৮ ফিট প্রস্থ সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জায়গা ক্রয় করে, এবং তাতে সরকারি অর্থায়নে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।

নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণাধীন সেতু-কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কাজ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ ৪৬ টাকা ব্যয়ে উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের সিংড়া জামাইপাড়া খালের ওপর ৩২ ফিট দীর্ঘ একটি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়। এই সেতু নির্মাণের দায়িত্বে ছিল মেসার্স তোহতোবা এন্টারপ্রাইজ।

প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করলেও দুপাশে কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় তা কোন কাজে আসছে না। এতে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ব্রিজের দিয়ে বনগাঁ চন্দইল, সিংড়া অপর অংশে নাচোল উপজেলার ভালুকুড়ি, পিরপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে প্রতিনিয়ত। বর্ষার সময় এখানকার মানুষের একমাত্র উপায় বাঁশের তৈরি সাঁকো। বছরের পর বছর এই গ্রামের মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এই একটি সেতুর জন্য। এদিকে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তবেই গ্রামসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন অথচ এই সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী হলে বনগাঁ চান্দইল, সিংড়া অপর অংশে ভালুকুড়ি, পিরপুর গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সহজ হতো।

নাচোল উপজেলার ভালুকুড়ি পিরপুর গ্রামের মানুষ জানান, আমাদের গ্রামের কিছু ছেলে মেয়ে বনগাঁ চান্দইল এনজিও স্কুলে যায়। এছাড়া সিংড়া গ্রামের মানুষ মারা গেলে শুধুমাত্র লাশ শ্বশানে নেয়ার জন্য এই খাল পার হতে হয়। সিংড়া গ্রামের লোকেরা অনেক কষ্টে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করে এই স্থানে একটি ব্রিজের অনুমোদন নিয়ে এসেছে। কিন্তু ব্রিজটির মূল অংশের কাজ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ গাইডলাইনের কাজ এখনও পর্যন্ত না হওয়ায় আমরা এই ব্রিজটি ব্যবহার করতে পারছি না। এতে আমাদের যে চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে।

পাড়ইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মইনুল ইসলাম বলেন, ব্রিজের কোন রাস্তা ছিল না। আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজ অর্থ ব্যয় করে ব্রিজের এক অংশে রাস্তা নির্মাণ করে দিচ্ছেন।

পাড়ইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দা বলেন, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে ওই জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ চলছে। নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে ওই স্থানে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। খালে ওই পাড়ে সিংড়া গ্রামের শ্বশান রয়েছে। শ্বশানে যাওয়ার জন্য ব্রিজটির খুব প্রয়োজন ছিল। জনগণের স্বার্থে নতুন রাস্তা নির্মাণে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

নিয়ামতপুরে সেতু আছে রাস্তা নেই!

প্রতিনিধি, নিয়ামতপুর (নওগাঁ)

image

নওগাঁর নিয়ামতপুরে পাড়ইল ইউনিয়নের বনগাঁ চান্দইল খালের ওপর সেতু আছে কিন্তু দুপাশে কোন সড়ক নেই। সড়কবিহীন সেতু এলাকাবাসীর কোন কাজেই আসছে না।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিরুদ্ধে অনর্থক সরকারি টাকা অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের বনগাঁ চান্দইল গ্রামের দক্ষিণ পাশে সিংড়া জামাইপাড়া খালে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্য ব্রিজ নির্মাণ হয়। সেতুটির মূল অংশের কাজ শেষ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন পরিকল্পনা ছিল না দুই পাশের সংযোগ গাইড অংশের কাজ শেষ করার।

ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দা নিজ অর্থায়নে বনগাঁ চন্দইল হতে সিংড়া যাওয়ার গ্রাম্য সড়ক হতে ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৪শ’ ফিট দৈর্ঘ্য ৮ ফিট প্রস্থ সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জায়গা ক্রয় করে, এবং তাতে সরকারি অর্থায়নে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।

নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণাধীন সেতু-কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কাজ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ ৪৬ টাকা ব্যয়ে উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের সিংড়া জামাইপাড়া খালের ওপর ৩২ ফিট দীর্ঘ একটি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়। এই সেতু নির্মাণের দায়িত্বে ছিল মেসার্স তোহতোবা এন্টারপ্রাইজ।

প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করলেও দুপাশে কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় তা কোন কাজে আসছে না। এতে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ব্রিজের দিয়ে বনগাঁ চন্দইল, সিংড়া অপর অংশে নাচোল উপজেলার ভালুকুড়ি, পিরপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে প্রতিনিয়ত। বর্ষার সময় এখানকার মানুষের একমাত্র উপায় বাঁশের তৈরি সাঁকো। বছরের পর বছর এই গ্রামের মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এই একটি সেতুর জন্য। এদিকে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তবেই গ্রামসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন অথচ এই সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী হলে বনগাঁ চান্দইল, সিংড়া অপর অংশে ভালুকুড়ি, পিরপুর গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সহজ হতো।

নাচোল উপজেলার ভালুকুড়ি পিরপুর গ্রামের মানুষ জানান, আমাদের গ্রামের কিছু ছেলে মেয়ে বনগাঁ চান্দইল এনজিও স্কুলে যায়। এছাড়া সিংড়া গ্রামের মানুষ মারা গেলে শুধুমাত্র লাশ শ্বশানে নেয়ার জন্য এই খাল পার হতে হয়। সিংড়া গ্রামের লোকেরা অনেক কষ্টে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করে এই স্থানে একটি ব্রিজের অনুমোদন নিয়ে এসেছে। কিন্তু ব্রিজটির মূল অংশের কাজ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ গাইডলাইনের কাজ এখনও পর্যন্ত না হওয়ায় আমরা এই ব্রিজটি ব্যবহার করতে পারছি না। এতে আমাদের যে চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে।

পাড়ইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মইনুল ইসলাম বলেন, ব্রিজের কোন রাস্তা ছিল না। আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজ অর্থ ব্যয় করে ব্রিজের এক অংশে রাস্তা নির্মাণ করে দিচ্ছেন।

পাড়ইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দা বলেন, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে ওই জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ চলছে। নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে ওই স্থানে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। খালে ওই পাড়ে সিংড়া গ্রামের শ্বশান রয়েছে। শ্বশানে যাওয়ার জন্য ব্রিজটির খুব প্রয়োজন ছিল। জনগণের স্বার্থে নতুন রাস্তা নির্মাণে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।