আজ-কর্মসূচি শুরু

দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার টিকা দেয়ার প্রস্তুতি

রাজধানীর ৫০টিসহ সারাদেশে ১০০৫টি হাসপাতালে দেয়া হবে টিকা

দেশব্যাপী করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আজ। প্রথম দিনই তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় টিকা কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এরপর থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেয়া হবে।

প্রথম দিন রাজধানীর ৫০টিসহ একযোগে দেশের এক হাজার ৫টি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। টিকা নিতে গতকাল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত তিন লাখ ২৮ হাজার ১৩ জন নিবন্ধন করেছেন বলে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। আগাম নিবন্ধ ছাড়াও সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েও টিকা নেয়া যাবে।

অনলাইনে নিবন্ধন করে আজ যারা টিকা নিচ্ছেন, গতকাল বিকেল ও সন্ধ্যার মধ্যে তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা কেন্দ্রের নাম ও সময় জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংবাদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান।

আজ যারা টিকা নেবেন একমাস পর তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। আগে সরকারের পরিকল্পনা ছিল প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ অর্থাৎ দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে।

দ্বিতীয় ডোজের সময় এগিয়ে আনায় কোন সমস্যা কিংবা কার্যকারিতা কম হতে পারে কী-না জানতে চাইলে সরকারের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘এই টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিলেই হয়। সময় এগিয়ে আনায় কোন সমস্যা হবে না।’

দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার টিকা দেয়ার প্রস্তুতি

ঢাকার ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি টিম কাজ করবে উল্লেখ করে অধ্যাপক খুরশীদ আলম জানান, সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে দুই হাজার ১৯৬টি টিম কাজ করবে। মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে মোট দুই হাজার ৪০০টি টিম কাজ করবে। ধারাবাহিকভাবে ভ্যাকসিন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাত হাজার ৩৪৪টি। তবে আপাতত দুই হাজার ৪০০ জনকে দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।

প্রত্যেক দলে দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী ও দু’জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। প্রতিটি দল দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে। এ হিসেবে প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকাদানের প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রথম দফায় সারাদেশে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানান, প্রথম দফায় ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। সরকারের কাছে এখন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ৭০ লাখ ডোজ টিকা আছে।

কেন্দ্রেই নিবন্ধন করে টিকা

নেয়ার সুযোগ

টিকার জন্য নিবন্ধন করা না থাকলেও কেন্দ্র থেকে কাউকে ফেরত পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেনি তাদের জন্য কেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে টিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সঙ্গে আনতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা গ্রহীতার সব তথ্য রেখে দেয়া হবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা পরে তা ডেটাবেইজে তুলে দেবেন। আর যারা অনলাইনে নিবন্ধন করেনি বা করতে পারেনি, কিন্তু পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তরা এনআইডি কার্ড দেখিয়েই টিকা নিতে পারবেন।

যারা নিবন্ধন করতে না পেরে সরাসরি কেন্দ্রে যাবে তাদের ফেরত দেয়া যাবে না- জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেক্ষেত্রে তাদের নিবন্ধন করিয়ে টিকা দেয়া হবে। যদি নিবন্ধন করতে দেরি হয়, তাহলে টিকা দেয়া হবে পরে ডেটা এন্ট্রি করা হবে। আমরা কাউকে ফেরত দেব না। অনেকের কাছে স্মার্টফোন নেই, অনেকে নিবন্ধন করতে পারবেন না। এ কারণে চেয়ারম্যান থেকে শুরু মেয়র-এমপিরা থাকবেন। মানুষকে কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন, টিকা দেবেন এবং নিবন্ধন করাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওই দিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনের পরই টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) উন্মুক্ত করা হয়। তবে টিকার নিবন্ধনে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ গতকালও চালু হয়নি। এছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে টিকা নেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে।

উদ্বোধনের দু’দিন টিকা গ্রহীতাদের সবাই সুস্থ আছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম করোনার টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রথমদিন কুর্মিটোলায় ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরদিন কুর্মিটোলাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রাথমিকভাবে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৯৬ জন চিকিৎসক, ৩২ জন নার্স এবং অন্যান্য পেশার ২০৮ জন। মোট টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ৪৩১ জন পুরুষ ও ১১০ জন নারী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত যাদের টিকা দেয়া হয়েছে তারা সবাই সুস্থ আছেন। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই তারা এসে টিকা নেবেন।’

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পরিদর্শন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আজ যেসব কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেখা হয়েছে, সব কেন্দ্রগুলোতে প্রস্তুতি ভালো আছে। আমরা আশা করছি, কোনরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আমরা টিকাদানের কাজ শুরু করতে পারব।’

কিছু কিছু ছোট কেন্দ্রে বিশেষত মাতৃসদন, শিশু কেন্দ্রগুলোতে প্রস্তুতির কিছুটা ঘাটতি আছে জানিয়ে গতকাল বিকেলে তিনি আরও বলেন, ‘এটা সকাল বেলার কথা। আশাকরি সন্ধ্যার মধ্যে আমরা এই ঘাটতি সম্পন্ন করতে পারব। আমরা এখানে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করব এবং সব কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারপর যেখানে যে সমস্যা আছে আমরা এখান থেকে সমাধান করার চেষ্টা করব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, টিকা দেয়ার প্রস্তুতি ‘এ’ মানের। ১০০ এর মধ্যে ৭৫ নম্বর পেলে এ মানের হয়।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কে কোথায় টিকা নিচ্ছেন

কার্যক্রমের প্রথম দিনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য টিকা নেবেন। আজ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্রে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে জনসাধারণকে এই ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খুরশীদ আলম।

তিনি জানান, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা নেবেন। টিকা নেয়ার আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এসে সারাদেশের কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কথা বলবেন। তারপর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে গিয়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে।

এছাড়া প্রধান বিচারপতি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেবেন। অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস (নিন্স) ও হাসপাতালে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্রে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে টিকা নিবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন।

ভ্যাকসিন বিষয়ক প্রস্তুতি তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখার পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টররাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম দফায় অগ্রাধিকার যাদের

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এ টিকা দেয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষকে টিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছে সরকার। প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গত ২৫ জানুয়ারি দেশে পৌঁছেছে। তারা প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে। ভারত সরকার উপহার হিসেবে গত ২১ জানুয়ারি আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এসব টিকা দিয়ে শুরু হয়েছে কর্মসূচি। এছাড়া জুনের মধ্যে ‘কোভ্যাক্স’ থেকে সোয়া এক কোটি ডোজ টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল পর্যন্ত দেশে পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় দেশে আট হাজার ১৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

আজ-কর্মসূচি শুরু

দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার টিকা দেয়ার প্রস্তুতি

রাজধানীর ৫০টিসহ সারাদেশে ১০০৫টি হাসপাতালে দেয়া হবে টিকা

image

দেশব্যাপী করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে আজ। প্রথম দিনই তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় টিকা কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এরপর থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেয়া হবে।

প্রথম দিন রাজধানীর ৫০টিসহ একযোগে দেশের এক হাজার ৫টি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। টিকা নিতে গতকাল দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত তিন লাখ ২৮ হাজার ১৩ জন নিবন্ধন করেছেন বলে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। আগাম নিবন্ধ ছাড়াও সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েও টিকা নেয়া যাবে।

অনলাইনে নিবন্ধন করে আজ যারা টিকা নিচ্ছেন, গতকাল বিকেল ও সন্ধ্যার মধ্যে তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা কেন্দ্রের নাম ও সময় জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংবাদকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান।

আজ যারা টিকা নেবেন একমাস পর তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। আগে সরকারের পরিকল্পনা ছিল প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ অর্থাৎ দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে।

দ্বিতীয় ডোজের সময় এগিয়ে আনায় কোন সমস্যা কিংবা কার্যকারিতা কম হতে পারে কী-না জানতে চাইলে সরকারের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘এই টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিলেই হয়। সময় এগিয়ে আনায় কোন সমস্যা হবে না।’

দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার টিকা দেয়ার প্রস্তুতি

ঢাকার ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি টিম কাজ করবে উল্লেখ করে অধ্যাপক খুরশীদ আলম জানান, সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে দুই হাজার ১৯৬টি টিম কাজ করবে। মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে মোট দুই হাজার ৪০০টি টিম কাজ করবে। ধারাবাহিকভাবে ভ্যাকসিন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাত হাজার ৩৪৪টি। তবে আপাতত দুই হাজার ৪০০ জনকে দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।

প্রত্যেক দলে দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী ও দু’জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। প্রতিটি দল দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে। এ হিসেবে প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকাদানের প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রথম দফায় সারাদেশে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানান, প্রথম দফায় ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। সরকারের কাছে এখন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ৭০ লাখ ডোজ টিকা আছে।

কেন্দ্রেই নিবন্ধন করে টিকা

নেয়ার সুযোগ

টিকার জন্য নিবন্ধন করা না থাকলেও কেন্দ্র থেকে কাউকে ফেরত পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেনি তাদের জন্য কেন্দ্রেই নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে টিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সঙ্গে আনতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা গ্রহীতার সব তথ্য রেখে দেয়া হবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা পরে তা ডেটাবেইজে তুলে দেবেন। আর যারা অনলাইনে নিবন্ধন করেনি বা করতে পারেনি, কিন্তু পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তরা এনআইডি কার্ড দেখিয়েই টিকা নিতে পারবেন।

যারা নিবন্ধন করতে না পেরে সরাসরি কেন্দ্রে যাবে তাদের ফেরত দেয়া যাবে না- জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেক্ষেত্রে তাদের নিবন্ধন করিয়ে টিকা দেয়া হবে। যদি নিবন্ধন করতে দেরি হয়, তাহলে টিকা দেয়া হবে পরে ডেটা এন্ট্রি করা হবে। আমরা কাউকে ফেরত দেব না। অনেকের কাছে স্মার্টফোন নেই, অনেকে নিবন্ধন করতে পারবেন না। এ কারণে চেয়ারম্যান থেকে শুরু মেয়র-এমপিরা থাকবেন। মানুষকে কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন, টিকা দেবেন এবং নিবন্ধন করাবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওই দিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনের পরই টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) উন্মুক্ত করা হয়। তবে টিকার নিবন্ধনে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ গতকালও চালু হয়নি। এছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে টিকা নেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে।

উদ্বোধনের দু’দিন টিকা গ্রহীতাদের সবাই সুস্থ আছেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম করোনার টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রথমদিন কুর্মিটোলায় ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরদিন কুর্মিটোলাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রাথমিকভাবে ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৯৬ জন চিকিৎসক, ৩২ জন নার্স এবং অন্যান্য পেশার ২০৮ জন। মোট টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে ৪৩১ জন পুরুষ ও ১১০ জন নারী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত যাদের টিকা দেয়া হয়েছে তারা সবাই সুস্থ আছেন। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই তারা এসে টিকা নেবেন।’

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পরিদর্শন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘আজ যেসব কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেখা হয়েছে, সব কেন্দ্রগুলোতে প্রস্তুতি ভালো আছে। আমরা আশা করছি, কোনরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আমরা টিকাদানের কাজ শুরু করতে পারব।’

কিছু কিছু ছোট কেন্দ্রে বিশেষত মাতৃসদন, শিশু কেন্দ্রগুলোতে প্রস্তুতির কিছুটা ঘাটতি আছে জানিয়ে গতকাল বিকেলে তিনি আরও বলেন, ‘এটা সকাল বেলার কথা। আশাকরি সন্ধ্যার মধ্যে আমরা এই ঘাটতি সম্পন্ন করতে পারব। আমরা এখানে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করব এবং সব কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারপর যেখানে যে সমস্যা আছে আমরা এখান থেকে সমাধান করার চেষ্টা করব।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, টিকা দেয়ার প্রস্তুতি ‘এ’ মানের। ১০০ এর মধ্যে ৭৫ নম্বর পেলে এ মানের হয়।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কে কোথায় টিকা নিচ্ছেন

কার্যক্রমের প্রথম দিনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য টিকা নেবেন। আজ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্রে রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে জনসাধারণকে এই ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খুরশীদ আলম।

তিনি জানান, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা নেবেন। টিকা নেয়ার আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এসে সারাদেশের কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কথা বলবেন। তারপর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে গিয়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে।

এছাড়া প্রধান বিচারপতি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেবেন। অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস (নিন্স) ও হাসপাতালে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্রে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটে টিকা নিবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন।

ভ্যাকসিন বিষয়ক প্রস্তুতি তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখার পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টররাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম দফায় অগ্রাধিকার যাদের

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এ টিকা দেয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষকে টিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করেছে সরকার। প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গত ২৫ জানুয়ারি দেশে পৌঁছেছে। তারা প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করবে। ভারত সরকার উপহার হিসেবে গত ২১ জানুয়ারি আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এসব টিকা দিয়ে শুরু হয়েছে কর্মসূচি। এছাড়া জুনের মধ্যে ‘কোভ্যাক্স’ থেকে সোয়া এক কোটি ডোজ টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল পর্যন্ত দেশে পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় দেশে আট হাজার ১৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে।