শেষ দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম টেস্ট

শেষ দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম টেস্ট

চট্টগ্রাম টেস্টের গতিপ্রকৃতি ম্যাচের চতুর্থ দিন গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। ক্রিকেটীয় গৌরবময় অনিশ্চয়তা এবং প্রাকৃতিক দৈব দুর্বিপাক বাদ দিলে নিশ্চিত জয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের চলতি দুই টেস্টের সিরিজ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। ফলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ম্যাচটার শেষদিন নিজেদের করে নেয়া গেলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম পয়েন্ট জমা হবে বাংলাদেশ দলের পাশে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা টাইগাররা ম্যাচের প্রথম দিনে ঘরের মাঠে নিজেদের চিরচেনা ফর্মে না থাকলেও দ্বিতীয় দিনে মেহেদি মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে যেন কোন এক মন্ত্রবলে জেগে ওঠে। ৪৩০ রানে অলআউট হওয়া টাইগারদের প্রথম ইনিংসের জবাব দিতে নামা ক্যারিবিয়ান দল ২৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পথে চারটি উইকেট শিকারের কাজটাও করেন মিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল পায় আরও একটা শতরানের ইনিংস। ম্যাচের চতুর্থ দিনে শনিবার ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বেশ কয়েকটা রেকর্ডে নিজের নামটা লেখান ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে টাইগারদের অধিনায়ক মোমিনুল হক (বিস্তারিত খেলার পাতায়)। অধিনায়কের সেঞ্চুরির পাশাপাশি লিটন দাসের ৬৯ রানের ইনিংসের সুবাদে ৮ উইকেটে ২২২ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ফলে টেস্ট জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৯৫ রানের। ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ান দলের ওপর আবারো স্পিন বিষের ছোবল বসান মেহেদি মিরাজ, শিকার করেন ৩ উইকেট। চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময়ে ক্যারিবিয়ান দলের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১১০ রান। শুক্রবার তোলা ৩১ রান নিয়ে মোমিনুল ও ১০ রান নিয়ে মুশফিক শনিবার ব্যাটিংয়ে নামেন। মুশফিকুর রহিম আরও ৮ রান যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের শিকারে পরিনত হন।

এরপর লিটন দাসকে নিয়ে দলের স্কোর ও লিড বাড়িয়েছেন মোমিনুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে ৬১তম ওভারের চতুর্থ বলে ৪১তম টেস্টে ১০তম সেঞ্চুরি পূরন করেন টাইগার দলপতি।

১৭৩তম বলে তিন অঙ্কে পা দিয়ে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আদি ফরম্যাটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক বনে যান মোমিনুল। পেছনে ফেলেন ৯ সেঞ্চুরি করা সতীর্থ তামিম ইকবাল। ১০টি সেঞ্চুরির সবগুলোই দেশের মাটিতে করেছেন মোমিনুল। এর মধ্যে ৭টিই করেছেন এই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম।

মোমিনুলের সেঞ্চুরির পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লিটন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ১১২ বলে ৬৯ রানে আউট হন তিনি। পঞ্চম উইকেটে মোমিনুল-লিটন ২১১ বলে ১৩৩ রান যোগ করেন।

লিটনের বিদায়ের পরই মোমিনুলের ১১৫ রানের নান্দনিক ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শ্যানন গাব্রিয়েলের শিকার হবার আগে ১৮২ বল খেলে ১০টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।

এরপর মেহেদি হাসান মিরাজ (৭) ও তাইজুল ইসলাম (৩) এক অঙ্কে কোটায় আউট হন। তাইজুলের আউটের পরই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ১ রানে অপরাজিত থাকেন নাইম হাসান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই স্পিনার কর্নওয়াল-ওয়ারিকান ৩টি করে ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২টি উইকেটের পতন ঘটান।

ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল ক্যারিবিয়ানদের। ১৬ ওভার বিপদ ছাড়াই পার করেন দেন দুই ওপেনার অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল।

তবে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাম্পবেলকে ২৩ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিরাজ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে ২০ রান যোগ আরও ২ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলেন মিরাজ। ব্র্যাথওয়েট ২০ ও শ্যান মোসলে ১২ রান আউট হন।

এনক্রুমার বোনার ১৫ ও কাইল মায়ারস ৩৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন। বাংলাদেশের মিরাজ ১৬ ওভারে ৫২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

শেষ দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম টেস্ট

শেষ দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম টেস্ট

বিশেষ প্রতিনিধি

image

চট্টগ্রামের মাঠে নিজের সপ্তম সেঞ্চুরি করার পর অধিনায়ক মোমিনুল -সংবাদ

চট্টগ্রাম টেস্টের গতিপ্রকৃতি ম্যাচের চতুর্থ দিন গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। ক্রিকেটীয় গৌরবময় অনিশ্চয়তা এবং প্রাকৃতিক দৈব দুর্বিপাক বাদ দিলে নিশ্চিত জয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের চলতি দুই টেস্টের সিরিজ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। ফলে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ম্যাচটার শেষদিন নিজেদের করে নেয়া গেলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম পয়েন্ট জমা হবে বাংলাদেশ দলের পাশে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা টাইগাররা ম্যাচের প্রথম দিনে ঘরের মাঠে নিজেদের চিরচেনা ফর্মে না থাকলেও দ্বিতীয় দিনে মেহেদি মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে যেন কোন এক মন্ত্রবলে জেগে ওঠে। ৪৩০ রানে অলআউট হওয়া টাইগারদের প্রথম ইনিংসের জবাব দিতে নামা ক্যারিবিয়ান দল ২৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পথে চারটি উইকেট শিকারের কাজটাও করেন মিরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল পায় আরও একটা শতরানের ইনিংস। ম্যাচের চতুর্থ দিনে শনিবার ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বেশ কয়েকটা রেকর্ডে নিজের নামটা লেখান ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে টাইগারদের অধিনায়ক মোমিনুল হক (বিস্তারিত খেলার পাতায়)। অধিনায়কের সেঞ্চুরির পাশাপাশি লিটন দাসের ৬৯ রানের ইনিংসের সুবাদে ৮ উইকেটে ২২২ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ফলে টেস্ট জয়ের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৯৫ রানের। ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ান দলের ওপর আবারো স্পিন বিষের ছোবল বসান মেহেদি মিরাজ, শিকার করেন ৩ উইকেট। চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময়ে ক্যারিবিয়ান দলের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১১০ রান। শুক্রবার তোলা ৩১ রান নিয়ে মোমিনুল ও ১০ রান নিয়ে মুশফিক শনিবার ব্যাটিংয়ে নামেন। মুশফিকুর রহিম আরও ৮ রান যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের শিকারে পরিনত হন।

এরপর লিটন দাসকে নিয়ে দলের স্কোর ও লিড বাড়িয়েছেন মোমিনুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে ৬১তম ওভারের চতুর্থ বলে ৪১তম টেস্টে ১০তম সেঞ্চুরি পূরন করেন টাইগার দলপতি।

১৭৩তম বলে তিন অঙ্কে পা দিয়ে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আদি ফরম্যাটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক বনে যান মোমিনুল। পেছনে ফেলেন ৯ সেঞ্চুরি করা সতীর্থ তামিম ইকবাল। ১০টি সেঞ্চুরির সবগুলোই দেশের মাটিতে করেছেন মোমিনুল। এর মধ্যে ৭টিই করেছেন এই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম।

মোমিনুলের সেঞ্চুরির পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লিটন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ১১২ বলে ৬৯ রানে আউট হন তিনি। পঞ্চম উইকেটে মোমিনুল-লিটন ২১১ বলে ১৩৩ রান যোগ করেন।

লিটনের বিদায়ের পরই মোমিনুলের ১১৫ রানের নান্দনিক ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শ্যানন গাব্রিয়েলের শিকার হবার আগে ১৮২ বল খেলে ১০টি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।

এরপর মেহেদি হাসান মিরাজ (৭) ও তাইজুল ইসলাম (৩) এক অঙ্কে কোটায় আউট হন। তাইজুলের আউটের পরই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ১ রানে অপরাজিত থাকেন নাইম হাসান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই স্পিনার কর্নওয়াল-ওয়ারিকান ৩টি করে ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২টি উইকেটের পতন ঘটান।

ইনিংস ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল ক্যারিবিয়ানদের। ১৬ ওভার বিপদ ছাড়াই পার করেন দেন দুই ওপেনার অধিনায়ক ক্রেগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল।

তবে ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাম্পবেলকে ২৩ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিরাজ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে ২০ রান যোগ আরও ২ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলেন মিরাজ। ব্র্যাথওয়েট ২০ ও শ্যান মোসলে ১২ রান আউট হন।

এনক্রুমার বোনার ১৫ ও কাইল মায়ারস ৩৭ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন। বাংলাদেশের মিরাজ ১৬ ওভারে ৫২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।