সড়ক দুর্ঘটনা ৪২৭টি প্রাণ ঝরল ৪৮৪

গত জানুয়ারি মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২৭টি। নিহত ৪৮৪ জন এবং আহত ৬৭৩ জন। এরমধ্যে ১৫৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৬৮ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত মাসে ৪টি নৌদুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত, ৪ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৩টি জাতীয় মহাসড়কে, ১০৭টি আঞ্চলিক সড়কে, ৯৭টি গ্রামীণ সড়কে, ৫৯টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ১১টি সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাসমূহের ৮৮টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪৪টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪৭টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৯টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার- অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-লেগুনা-মিশুক) ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-বোরাক-টমটম ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, রিকশা-রিকশাভ্যান, বাইসাইকেল ২ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং অন্যান্য (পুলিশের পিকআপ, কোস্টগার্ডের ট্রাক, হ্যান্ড ট্রলি, হ্যালোবাইক, মিকচার মেশিন, মাটি কাটার ভেকু মেশিন) ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১২টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২৮ জন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ৩২টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৭ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত। সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায়। ২টি দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত।

প্রতিবেদনে মোটরসাইকেলচালক ও পথচারী নিহতের হার চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং ট্রাফিক আইনের প্রয়োগহীনতা এর প্রধান কারণ। দেশের কলুষিত রাজনীতিতে মোটরসাইকেল সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এসব কিশোর-যুবক মোটরসাইকেলচালক চরম বেপরোয়া এবং এরাই বেশি দুর্ঘটনাক্রান্ত হচ্ছে। মোটরসাইকেল ক্রয় এবং চালনার ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ ও নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করতে না পারলে পরিস্থিাতি আরও ভয়াবহ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া রেল ক্রসিংয়ে ৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দেশে ৮২ শতাংশ রেল ক্রসিং অরক্ষিত, ফলে মাঝে-মধ্যেই ট্রেনের সঙ্গে সড়ক পরিবহনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব রেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির নিহত বা আহতের মধ্য দিয়ে অসংখ্য পরিবার পথে বসছে, হারিয়ে যাচ্ছে সামাজিক অর্থনীতির মূল স্রোতে থেকে। ফলে দেশে বাড়ছে আর্থ-সামাজিক সংকট। অথচ সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। শুধু বৈঠক, কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো উদ্যোগ। পরিস্থিতি বিবেচনায় গোটা পরিবহন খাত ঢেলে সাজানো জরুরি। জাতীয় স্বার্থেই সরকারকে এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

জানুয়ারি মাসে

সড়ক দুর্ঘটনা ৪২৭টি প্রাণ ঝরল ৪৮৪

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

গত জানুয়ারি মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২৭টি। নিহত ৪৮৪ জন এবং আহত ৬৭৩ জন। এরমধ্যে ১৫৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৬৮ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত মাসে ৪টি নৌদুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত, ৪ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ হয়েছে। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৩টি জাতীয় মহাসড়কে, ১০৭টি আঞ্চলিক সড়কে, ৯৭টি গ্রামীণ সড়কে, ৫৯টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ১১টি সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাসমূহের ৮৮টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৯টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪৪টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪৭টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৯টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার- অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-লেগুনা-মিশুক) ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ, নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-বোরাক-টমটম ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, রিকশা-রিকশাভ্যান, বাইসাইকেল ২ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং অন্যান্য (পুলিশের পিকআপ, কোস্টগার্ডের ট্রাক, হ্যান্ড ট্রলি, হ্যালোবাইক, মিকচার মেশিন, মাটি কাটার ভেকু মেশিন) ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১২টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২৮ জন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ৩২টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৭ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত। সবচেয়ে কম ঝালকাঠি জেলায়। ২টি দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত।

প্রতিবেদনে মোটরসাইকেলচালক ও পথচারী নিহতের হার চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং ট্রাফিক আইনের প্রয়োগহীনতা এর প্রধান কারণ। দেশের কলুষিত রাজনীতিতে মোটরসাইকেল সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এসব কিশোর-যুবক মোটরসাইকেলচালক চরম বেপরোয়া এবং এরাই বেশি দুর্ঘটনাক্রান্ত হচ্ছে। মোটরসাইকেল ক্রয় এবং চালনার ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ ও নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করতে না পারলে পরিস্থিাতি আরও ভয়াবহ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া রেল ক্রসিংয়ে ৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দেশে ৮২ শতাংশ রেল ক্রসিং অরক্ষিত, ফলে মাঝে-মধ্যেই ট্রেনের সঙ্গে সড়ক পরিবহনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব রেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির নিহত বা আহতের মধ্য দিয়ে অসংখ্য পরিবার পথে বসছে, হারিয়ে যাচ্ছে সামাজিক অর্থনীতির মূল স্রোতে থেকে। ফলে দেশে বাড়ছে আর্থ-সামাজিক সংকট। অথচ সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। শুধু বৈঠক, কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো উদ্যোগ। পরিস্থিতি বিবেচনায় গোটা পরিবহন খাত ঢেলে সাজানো জরুরি। জাতীয় স্বার্থেই সরকারকে এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।