ইন্টার্ন চিকিৎসক নির্যাতন : কেউ গ্রেপ্তার হয়নি এক মাসেও

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক এএসএম আলী ইমাম শীতলকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়েরের ১ মাস পাড় হয়ে গেলেও কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি। বর্বচোরিত ইন্টার্ন চিকিৎসক মারধর করার ঘটনাটি রহস্যজনক কারণে চাপা দিয়ে রেখেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মামলা দায়েরে পর পুলিশ সংশ্লিষ্ট হলে তল্লাশি চালিয়ে আসামি গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এদিকে মারধরের শিকার ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক হলে ফিরতে পারছে না প্রাণহানির ভয়ে।

ইন্টার্নশিপে মেডিসিন বিভাগে প্র্যাকটিস করতে চাওয়া নিয়ে তক-বিতর্কের জেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফজলে রাব্বী হলের ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি সভাপতি সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নির্মম নির্যতানের শিকার হন ওই হলের ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির নেতা ইন্টার্ন চিকিৎসক এএসএম আলী ইমাম শীতল। গত ১৪ জানুয়ারি তাকে বেধড়ক পিটিয়ে কোমড় থেকে পা পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক হল থেকে বিতাড়িত হয়ে নিজ বাড়ি চলে যান। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন চকবাজার থানায়। মামলায় আসামি করা হয় ডা. শাহরিয়ার খান, ডা. জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ, ফয়সাল ইরতিজা, ডা. শেখ সোহেল, ডা. ইশমাম আহমেদ, ডা. সৈয়দ হাসান ইভেন, ডা. ইব্রাহিম হাওলাদার, ডা. তানভীর আহমেদ আকাশসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জন চিকিৎসককে। ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ ইমরুল ফাত্তাহ রুমিকে। ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তার বার বার সময় নিচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত তদন্ত কমিটি আরও ১০ দিনের সময় নিয়েছেন।

জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার সংবাদকে জানান, চিকিৎসায় প্র্যাকটিস সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক শিতলকে মারধর করা হয়েছে। বেধড়ক মারপিটে সে গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ মামলা নিয়েছে। মামলার পর পুলিশ সংশ্লিষ্ট হলে তল্লাশি চালানোর জন্য মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল আসামি গ্রেপ্তার করা এবং হলে অবৈধ অস্ত্র থাকলে তা উদ্ধার করা। কিন্তু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ হলে তল্লাশি বা আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে কোন অনুমতি দেয়নি। পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে।

ওসি জানান, মারধরের শিকার ইন্টার্ন চিকিৎসক শিতলও এক সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিল। সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কমিটিতে ছিল। ইন্টার্র্নশিপে ডা. শিতল মেডিসিন বিভাগে প্র্যাকটিস করার জন্য চেয়েছিল। এ নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতাদের অনুসারীরা ডা. শিতলকে বেধড়ক মারপিট করে। ডা. শিতল বেশ গুরুতর আহত হয়েছিল।

ওসি জানান, আসামি গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান শ্রীঘ্রই পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার নেপথ্যের কাহিনী বের করেছে। আসামি গ্রেপ্তার হলে মূল রহস্য বের হয়ে যাবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আর কোন বিরোধ ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সংবাদকে বলেন, কলেজ হোস্টেলে ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গত ১৭ জানুয়ারি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান নাক কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি। তার নেতৃত্বে ২ সদেস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত কমিটি সময় চেয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর ডা. শিতলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে আমি হলে ফিরতে বলেছি। এও বলেছি, তুমি হলে উঠো এবং তোমার ইন্টার্র্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাও। তোমার নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখব। কিন্তু সে বলে, সে তার নিজ ব্যবস্থায় বাইরে মেসে থেকে ইন্টার্ন প্র্যাকটিস করব।

নির্যাতনের শিকার ডা. এএসএম আলী ইমাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি মেডিসিন বিভাগের মাধ্যমে ইন্টার্ন শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহরিয়ার খান তাকে মেডিসিন না দিয়ে সার্জারিতে দেন। কেন তাকে মেডিসিন বিভাগে কাজ করতে দেয়া হলো না জানতে চাওয়ায় ডা. শাহরিয়ারের নেতৃত্বে দলবেঁধে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তিনি ঢামেকের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটির নেতারা এবং তিনি ভিন্ন গ্রুপ করায় তার ওপর এভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। জীবন বাঁচাতে তিনি এখন গ্রামের বাড়িতে আছেন। তার ওপর হামলাকারীরা হুমকি দিয়েছে তাকে ঢামেকে ঢুকতে দেবে না, ইন্টার্নও করতে দেবে না।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ঢামেক ফজলে রাব্বি হলে

ইন্টার্ন চিকিৎসক নির্যাতন : কেউ গ্রেপ্তার হয়নি এক মাসেও

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক এএসএম আলী ইমাম শীতলকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়েরের ১ মাস পাড় হয়ে গেলেও কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি। বর্বচোরিত ইন্টার্ন চিকিৎসক মারধর করার ঘটনাটি রহস্যজনক কারণে চাপা দিয়ে রেখেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মামলা দায়েরে পর পুলিশ সংশ্লিষ্ট হলে তল্লাশি চালিয়ে আসামি গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এদিকে মারধরের শিকার ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক হলে ফিরতে পারছে না প্রাণহানির ভয়ে।

ইন্টার্নশিপে মেডিসিন বিভাগে প্র্যাকটিস করতে চাওয়া নিয়ে তক-বিতর্কের জেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফজলে রাব্বী হলের ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি সভাপতি সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নির্মম নির্যতানের শিকার হন ওই হলের ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির নেতা ইন্টার্ন চিকিৎসক এএসএম আলী ইমাম শীতল। গত ১৪ জানুয়ারি তাকে বেধড়ক পিটিয়ে কোমড় থেকে পা পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে ওই ইন্টার্ন চিকিৎসক হল থেকে বিতাড়িত হয়ে নিজ বাড়ি চলে যান। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন চকবাজার থানায়। মামলায় আসামি করা হয় ডা. শাহরিয়ার খান, ডা. জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ, ফয়সাল ইরতিজা, ডা. শেখ সোহেল, ডা. ইশমাম আহমেদ, ডা. সৈয়দ হাসান ইভেন, ডা. ইব্রাহিম হাওলাদার, ডা. তানভীর আহমেদ আকাশসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জন চিকিৎসককে। ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ ইমরুল ফাত্তাহ রুমিকে। ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তার বার বার সময় নিচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত তদন্ত কমিটি আরও ১০ দিনের সময় নিয়েছেন।

জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার সংবাদকে জানান, চিকিৎসায় প্র্যাকটিস সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক শিতলকে মারধর করা হয়েছে। বেধড়ক মারপিটে সে গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ মামলা নিয়েছে। মামলার পর পুলিশ সংশ্লিষ্ট হলে তল্লাশি চালানোর জন্য মেডিকেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল আসামি গ্রেপ্তার করা এবং হলে অবৈধ অস্ত্র থাকলে তা উদ্ধার করা। কিন্তু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ হলে তল্লাশি বা আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে কোন অনুমতি দেয়নি। পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে।

ওসি জানান, মারধরের শিকার ইন্টার্ন চিকিৎসক শিতলও এক সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিল। সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কমিটিতে ছিল। ইন্টার্র্নশিপে ডা. শিতল মেডিসিন বিভাগে প্র্যাকটিস করার জন্য চেয়েছিল। এ নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতাদের অনুসারীরা ডা. শিতলকে বেধড়ক মারপিট করে। ডা. শিতল বেশ গুরুতর আহত হয়েছিল।

ওসি জানান, আসামি গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান শ্রীঘ্রই পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার নেপথ্যের কাহিনী বের করেছে। আসামি গ্রেপ্তার হলে মূল রহস্য বের হয়ে যাবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আর কোন বিরোধ ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক সংবাদকে বলেন, কলেজ হোস্টেলে ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গত ১৭ জানুয়ারি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান নাক কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি। তার নেতৃত্বে ২ সদেস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত কমিটি সময় চেয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর ডা. শিতলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে আমি হলে ফিরতে বলেছি। এও বলেছি, তুমি হলে উঠো এবং তোমার ইন্টার্র্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাও। তোমার নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখব। কিন্তু সে বলে, সে তার নিজ ব্যবস্থায় বাইরে মেসে থেকে ইন্টার্ন প্র্যাকটিস করব।

নির্যাতনের শিকার ডা. এএসএম আলী ইমাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি মেডিসিন বিভাগের মাধ্যমে ইন্টার্ন শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহরিয়ার খান তাকে মেডিসিন না দিয়ে সার্জারিতে দেন। কেন তাকে মেডিসিন বিভাগে কাজ করতে দেয়া হলো না জানতে চাওয়ায় ডা. শাহরিয়ারের নেতৃত্বে দলবেঁধে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তিনি ঢামেকের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটির নেতারা এবং তিনি ভিন্ন গ্রুপ করায় তার ওপর এভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। জীবন বাঁচাতে তিনি এখন গ্রামের বাড়িতে আছেন। তার ওপর হামলাকারীরা হুমকি দিয়েছে তাকে ঢামেকে ঢুকতে দেবে না, ইন্টার্নও করতে দেবে না।