১১ দিনে ৪১৪ জন আটক

রাজধানীর হাতিরঝিলে প্রতিদিন নানা পেশার মানুষ একটু বিনোদন ও ঘোরাফেরা করতে যান। অনেকেই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ছুটির দিনে বেড়াতে যান। সপ্তাহে ছুটির দিনে হাতিরঝিল পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে হাতিরঝিলে মাদকসেবী, ইভটিজার ও উত্ত্যক্তকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এমন নানা অভিযোগ পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ ও তদারকিতে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত ৪শ’র বেশি উঠতি কিশোরসহ নানা বয়সের যুবকদের আটক করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে।

অপরাধ গবেষকদের মতে, হাতিরঝিলে অপরাধ প্রবণতা চিহ্নিত করে নজরদারি ও তল্লাশি বাড়ানো দরকার। বিনা কারণে হাতিরঝিলে হোন্ডা নিয়ে ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে পুলিশ হাতিঝিলে বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে ৪১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

এরমধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অ্যাক্টে ৯০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। অন্যদের আটকের পর অভিভাবকদের জিম্মায় মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, হাতিরঝিলে নারীদের উত্ত্যক্ত, ইভটিজিং ও উদ্দেশ্যমূলক ঘোরাফেরা ও মাদক সেবন করে রাস্তায় হোন্ডা নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, রাস্তায় মেয়েদের দেখে প্রকাশ্যে কৌতুক ও উচ্চৈঃস্বরে গানবাজনা করা, রাস্তার মাঝখানে মোটরসাইকেল রেখে অন্যের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর মতো অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে ডিএমপি অ্যাক্টে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

অপরাধ নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেক কিশোর পড়াশুনা বিমুখ হয়ে পড়েছে। খেলায়, টিভি দেখায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকেই বাবা-মায়ের আদেশ অমান্য করছে। তারা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নানা ধরনেরে চিত্র দেখে তা বাস্তবে চর্চা করতে গিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। তারা মাদক সেবন, মারপিট পর্যন্ত করছে। এমনকি কিশোররা গ্যাং গ্রুপ সৃষ্টি করছে। তাদের এ ধরনের উত্থান অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।

পুলিশের এক অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনাকালীন অনলাইন ভার্চুয়াল ক্লাশ করতে গিয়ে অনেক কিশোর অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কেউ কেউ পণ্য সাইড ভিজিড করছে। এভাবে তারা বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হাতিরঝিলে এর প্রভাব পড়ছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, হাতিরঝিলে অপরাধ প্রবণতায় কারা জড়িত, তারা কোন কোন এলাকার বাসিন্দা তা চিহ্নিত করা দরকার। সেখানে পুলিশ সার্ভিলেন্স টিম ও তল্লাশি কার্যক্রম নিয়মিত থাকলে অপরাধ কমবে। বিনা প্রয়োজনে হোন্ডা ঢুকতে দেয়া ঠিক হবে না। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। অপরাধ ঠেকাতে হাতিরঝিলে মোড়ে মোড়ে করণীয় ও বর্জনীয় সাইনবোর্ড টানিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। দরকার হলে টিভি চ্যানেলে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপরও না মানলে কঠোরভাবে আইনি ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

অপরাধবিষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, উশৃঙ্খল কিশোরদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় সাজার ব্যবস্থা করলে উপদ্রব কমবে। এছাড়া হাতিরঝিলজুড়ে পুলিশি টহল আরও বাড়ানো দরকার বলে এ আইনজীবী মনে করেন।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

অপারেশন হাতিরঝিল

১১ দিনে ৪১৪ জন আটক

বাকী বিল্লাহ

রাজধানীর হাতিরঝিলে প্রতিদিন নানা পেশার মানুষ একটু বিনোদন ও ঘোরাফেরা করতে যান। অনেকেই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ছুটির দিনে বেড়াতে যান। সপ্তাহে ছুটির দিনে হাতিরঝিল পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে হাতিরঝিলে মাদকসেবী, ইভটিজার ও উত্ত্যক্তকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এমন নানা অভিযোগ পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ ও তদারকিতে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত ৪শ’র বেশি উঠতি কিশোরসহ নানা বয়সের যুবকদের আটক করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে।

অপরাধ গবেষকদের মতে, হাতিরঝিলে অপরাধ প্রবণতা চিহ্নিত করে নজরদারি ও তল্লাশি বাড়ানো দরকার। বিনা কারণে হাতিরঝিলে হোন্ডা নিয়ে ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে পুলিশ হাতিঝিলে বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে ৪১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

এরমধ্যে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অ্যাক্টে ৯০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। অন্যদের আটকের পর অভিভাবকদের জিম্মায় মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, হাতিরঝিলে নারীদের উত্ত্যক্ত, ইভটিজিং ও উদ্দেশ্যমূলক ঘোরাফেরা ও মাদক সেবন করে রাস্তায় হোন্ডা নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, রাস্তায় মেয়েদের দেখে প্রকাশ্যে কৌতুক ও উচ্চৈঃস্বরে গানবাজনা করা, রাস্তার মাঝখানে মোটরসাইকেল রেখে অন্যের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর মতো অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে ডিএমপি অ্যাক্টে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

অপরাধ নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেক কিশোর পড়াশুনা বিমুখ হয়ে পড়েছে। খেলায়, টিভি দেখায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। তারা নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকেই বাবা-মায়ের আদেশ অমান্য করছে। তারা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নানা ধরনেরে চিত্র দেখে তা বাস্তবে চর্চা করতে গিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। তারা মাদক সেবন, মারপিট পর্যন্ত করছে। এমনকি কিশোররা গ্যাং গ্রুপ সৃষ্টি করছে। তাদের এ ধরনের উত্থান অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।

পুলিশের এক অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনাকালীন অনলাইন ভার্চুয়াল ক্লাশ করতে গিয়ে অনেক কিশোর অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কেউ কেউ পণ্য সাইড ভিজিড করছে। এভাবে তারা বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হাতিরঝিলে এর প্রভাব পড়ছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, হাতিরঝিলে অপরাধ প্রবণতায় কারা জড়িত, তারা কোন কোন এলাকার বাসিন্দা তা চিহ্নিত করা দরকার। সেখানে পুলিশ সার্ভিলেন্স টিম ও তল্লাশি কার্যক্রম নিয়মিত থাকলে অপরাধ কমবে। বিনা প্রয়োজনে হোন্ডা ঢুকতে দেয়া ঠিক হবে না। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। অপরাধ ঠেকাতে হাতিরঝিলে মোড়ে মোড়ে করণীয় ও বর্জনীয় সাইনবোর্ড টানিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। দরকার হলে টিভি চ্যানেলে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এরপরও না মানলে কঠোরভাবে আইনি ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

অপরাধবিষয়ক বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, উশৃঙ্খল কিশোরদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় সাজার ব্যবস্থা করলে উপদ্রব কমবে। এছাড়া হাতিরঝিলজুড়ে পুলিশি টহল আরও বাড়ানো দরকার বলে এ আইনজীবী মনে করেন।