রেলওয়ে খাতে অব্যবস্থাপনা দূর করুন

সিলেটে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে দেশে যতগুলো বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার সবই ঢাকা-সিলেট রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ট্রেনটি যাত্রীবাহী হলে অনেক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।

সিলেটে রেল বিপর্যয়ের চিত্রটি উদ্বেগজনক। তবে এটা যে শুধু সিলেটেই হচ্ছে তা নয়। এখন গোটা দেশেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রেলপথ। বিশ্বে গণপরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রেল যোগাযোগ, যেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন? দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশে যোগাযোগের এ খাতটি এখনও নিরাপদ এবং গণবান্ধব পরিবহন হয়ে উঠতে পারেনি?

গত এক দশকে সরকার রেলের উন্নয়নে ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। দুই দফা যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছে। এরপরও গত অর্থবছরে রেলে লোকসান হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এর প্রধান কারণ, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। অব্যবস্থাপনা দূর করে রেলকে গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই কার্যকর হয়নি। বরং এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে। এক শ্রেণীর কর্তাব্যক্তির পকেট ভারি হয়েছে।

রেলের উন্নয়নের যে পরিকল্পনা সেখানেই ঘাটতি আছে। রেলে নতুন বগি, ইঞ্জিন দরকার। নতুন বিনিয়োগ, অবকাঠামোও দরকার। কিন্তু সবার আগে দরকার দক্ষ জনবল। রেলে এখন জনবলেরই ঘাটতি আছে। রেলে যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে, তার বেশিরভাগই পরিচালনা কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতির কারণে হচ্ছে। চালকের ভুল কিংবা সিগন্যাল সিস্টেমের ত্রুটির কথাও উঠে আসছে। অর্থাৎ এ খাতে দক্ষ জনশক্তি দরকার। কিন্তু সেখানে বিনিয়োগ নেই। সিলেটসহ অনেক স্থানেই ট্রেন লাইনের সংস্কার দরকার। ব্রিটিশ আমলের জীর্ণদশায় চলে যাওয়া রেলপথ নতুন করে না করায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

রেল নিয়ে বড় বড় পরিকল্পনা করলেই হবে না। জরুরি হলো, পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন এবং রেলের টেকসই উন্নয়ন। ব্রিটিশ আমলের চলাচলের অযোগ্য ট্রেনগুলো পরিবর্তন করে আধুনিক ও উন্নতমানের ট্রেন আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। রেলের দায়িত্বে যারা নিয়োজিত, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পরিকল্পনার আড়ালে যেন লুটপাটই মুখ্য না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

রেলওয়ে খাতে অব্যবস্থাপনা দূর করুন

সিলেটে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। সংবাদের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে দেশে যতগুলো বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার সবই ঢাকা-সিলেট রেলপথের আখাউড়া-সিলেট অংশে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেঞ্চুগঞ্জে একটি তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ট্রেনটি যাত্রীবাহী হলে অনেক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।

সিলেটে রেল বিপর্যয়ের চিত্রটি উদ্বেগজনক। তবে এটা যে শুধু সিলেটেই হচ্ছে তা নয়। এখন গোটা দেশেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রেলপথ। বিশ্বে গণপরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রেল যোগাযোগ, যেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন? দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশে যোগাযোগের এ খাতটি এখনও নিরাপদ এবং গণবান্ধব পরিবহন হয়ে উঠতে পারেনি?

গত এক দশকে সরকার রেলের উন্নয়নে ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। দুই দফা যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছে। এরপরও গত অর্থবছরে রেলে লোকসান হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এর প্রধান কারণ, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। অব্যবস্থাপনা দূর করে রেলকে গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই কার্যকর হয়নি। বরং এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হয়েছে। এক শ্রেণীর কর্তাব্যক্তির পকেট ভারি হয়েছে।

রেলের উন্নয়নের যে পরিকল্পনা সেখানেই ঘাটতি আছে। রেলে নতুন বগি, ইঞ্জিন দরকার। নতুন বিনিয়োগ, অবকাঠামোও দরকার। কিন্তু সবার আগে দরকার দক্ষ জনবল। রেলে এখন জনবলেরই ঘাটতি আছে। রেলে যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে, তার বেশিরভাগই পরিচালনা কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতির কারণে হচ্ছে। চালকের ভুল কিংবা সিগন্যাল সিস্টেমের ত্রুটির কথাও উঠে আসছে। অর্থাৎ এ খাতে দক্ষ জনশক্তি দরকার। কিন্তু সেখানে বিনিয়োগ নেই। সিলেটসহ অনেক স্থানেই ট্রেন লাইনের সংস্কার দরকার। ব্রিটিশ আমলের জীর্ণদশায় চলে যাওয়া রেলপথ নতুন করে না করায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

রেল নিয়ে বড় বড় পরিকল্পনা করলেই হবে না। জরুরি হলো, পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন এবং রেলের টেকসই উন্নয়ন। ব্রিটিশ আমলের চলাচলের অযোগ্য ট্রেনগুলো পরিবর্তন করে আধুনিক ও উন্নতমানের ট্রেন আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। রেলের দায়িত্বে যারা নিয়োজিত, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পরিকল্পনার আড়ালে যেন লুটপাটই মুখ্য না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।