গণটিকাদান শুরু

কেন্দ্রে নিবন্ধন আরও পরে

সংক্রমণ রুখে দিতে দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথমদিনেই করোনার টিকাদানে মোটামুটি ভালই সাড়া মিলেছে। রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাঠ প্রশাসনের কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনলাইনে নিবন্ধনের পর ‘কনফার্মেশন এসএমএস’ পেয়েও গতকাল যারা টিকা নিতে পারেননি তারা যেকোন দিন এসএমএস দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। টিকা নিয়ে অনেকেই পর্যবেক্ষণে থাকেননি।

নিবন্ধনকারী ব্যক্তিদের টিকাদান শেষ হওয়ার পরই ‘অন স্পট’ অর্থাৎ কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকাদানের পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যদিও গতকাল বিভিন্ন কেন্দ্রে সীমিত সংখ্যক বিশিষ্ট নাগরিককে কেন্দ্রে নিবন্ধন করিয়ে টিকা দেয়া হয়। গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার লাখ মানুষ টিকার নিবন্ধন করেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গতকাল জানানো হয়, গণটিকাদান শুরুর প্রথমদিনেই সারাদেশের মোট ৩১ হাজার ১৬০ জন করোনার টিকা নিয়েছেন, যাদের পুরুষ ২৩ হাজার ৮৫৭ জন এবং মহিলা সাত হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে রাজধানীর অর্ধশত কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৭১ জন। রাজধানীর টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৭৭২ জন এবং মহিলা এক হাজার ২৯৯ জন। সবচেয়ে বেশি ৫৬০ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে।

আগের দিন দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকা নিতে মোট তিন লাখ ২৮ হাজার ১৩ জন অনলাইনে নিবন্ধন করেন। এর আলোকেই দেশব্যাপী তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘যারা নিবন্ধন করে টিকা নেয়ার এসএমএস পেয়েছিলেন, কিন্তু টিকা নিতে পারেননি, নানা কারণেই এটি হতে পারে, তারা পরবর্তী যেকোন দিন নিবন্ধন কার্ড দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময়ও এই কার্ড দেখাতে হবে।’

প্রথম দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে ১০১৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৫০টি কেন্দ্র। পর্যায়ক্রমে টিকাদান কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। প্রতিটি কেন্দ্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দেয়া হবে।

টিকা নিয়ে পর্যবেক্ষণে থাকেননি অনেকেই

টিকা দেয়ার পর সবাইকেই অপেক্ষমান কক্ষে ন্যূনতম ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানেননি। টিকা নিয়ে অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। এরপরও টিক কেন্দ্রেগুলোতে আগ্রহীদের ভিড় ছিল। আগাম নিবন্ধন করে অনেকেই কেন্দ্রে না গেলেও সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েই টিকা নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

মুগদা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকাগ্রহীতাদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য নির্ধারিত তিনটি অপেক্ষমান জায়গায় ২০/২৫ জন বসে আছেন, যাদের প্রায় সবাই সাধারণ মানুষ। আর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র ত্যাগ করছেন।

২০০ জন এসএমএস পেলেও সচিবালয়ে

টিকা নিলেন ১৬৭ জন

সরকারি প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের অভ্যন্তরে ‘ক্লিনিক ভবনে’ টিকা নেয়ার জন্য আগের ২০০ জনকে ‘কনফার্মেশন এসএমএস’ পাঠানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে গতকাল টিকা নিয়েছেন ১৬৭ জন।

এই ক্লিনিকে টিকা নিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুটি বুথের মাধ্যমে সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা প্রদান করা হয়।

সচিবালয় ক্লিনিকের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম দিনে ২০০ জনের প্রত্যাশা করেছিলাম। এর মধ্যে টিকা নিয়েছেন মোট ১৬৭ জন। সচিবালয় ক্লিনিকে মোট ১২ দিন চলবে এ কার্যক্রম।’

সোমবার থেকে ৩০০ জনকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সচিবালয় ক্লিনিকে মোট ১২ দিন টিকা কর্মসূচি চলবে।’

মুগদায় ৪৭১ জনকে টিকার এসএমএস দেয়া হলেও নিলেন ৩১৪ জন

আগামী নিবন্ধন অনুযায়ী, ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেয়ার জন্য শনিবার মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হয়েছিল ৪৭১ জনকে, যাদের দু’শজনই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। মুগদায় গতকাল টিকা নিয়েছেন ৩১৪ জন। এসএমএস পেয়েও ১৬০ জন টিকা নিতে কেন্দ্রে যায়নি। সরাসরি কেন্দ্রে নিবন্ধন করেও ৫/৭ জন টিকা নিয়েছেন বলে মুগদা হাসপাতালের টিকাদান কর্মীরা জানিয়েছেন।

মুগদা হাসপাতালের ‘ইপিআই’ (টিকাদান কর্মসূচি) কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) এখানে টিকা নেয়ার জন্য ৪৭১ জনের নাম নিবন্ধন করা ছিল; তবে আমাদের প্রস্তুতি ছিল ৫০০ জনকে টিকা দেয়ার। প্রথমদিন নিবন্ধ ছাড়া কাউকে টিকা দেয়া হয়নি। ৫/৭ ভিআইপি এসেছিলেন, তাদের তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা দেয়া হয়েছে।’

ঢামেকে স্পট নিবন্ধনে টিকা পেলেন ৫ জন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে ২৭০ জন অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা নিয়েছে। এদের মধ্যে ১০২ জন মহিলা আর ১৬৮ জন পুরুষ। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে নিবন্ধন ছাড়াই টিকা দেয়া হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী। আরও ৪-৫ জনকে স্পট নিবন্ধন করে টিকা দেয়া হয় বলে সংবাদের ঢামেক প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সকাল ১০টায় মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি গণটিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় মন্ত্রী বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। এর পরপরই বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের আগেই সকাল সাড়ে ৮টা বা ৯টায় অনেক হাসপাতালেই টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। আজ থেকে প্রতিদিন সকালে সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দেশব্যাপী টিকাদান চলবে।

নিবন্ধনকারীদের দেয়ার পর ‘অন স্পট’ নিবন্ধনে টিকা

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এ অনুষ্ঠানে জানান, করোনার টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারলে টিকাদান কেন্দ্রেও সেই ব্যবস্থা থাকবে।

গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী একই কথা বলেছেন। মন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারাই (গ্রামের মানুষ) দেশের ৭০ শতাংশ। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা এ ব্যাপারে সহায়তা করবেন। ডিসির নেতৃত্বে সিভিল সার্জন, পুলিশের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করবেন যেন এসব মানুষ নিবন্ধন করতে পারেন। নিবন্ধন করবেন এবং টিকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেবেন। এ ধরনের ব্যবস্থা আমরা করেছি এবং নির্দেশনাও দেয়া হয়ে গেছে।’

টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধন কবে থেকে শুরু হবে- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি, এদের টিকা দেয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনস্পট রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে সুপরিকল্পিত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

যদি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা দেয়া হয় তাহলে যিনি টিকা নেবেন তার জন্যও সমস্যা হবে- জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘এছাড়া আমরা যখন টিকা দেব, সেক্ষেত্রে কত ডোজ টিকা লাগবে, কারা আসবে, লজিস্টিকস সাপ্লাই- এসব একটা বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা। তারপরও যারা অনেক দূর থেকে এসেছেন, আরেকদিন আসা কঠিন হবে, তাদের জন্য হয়তো আমরা স্পটে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে পারি। যারা টিকা নিতে আসবেন তারা যেন ফেরত না যান, সেজন্য আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তাদের দিতেই হবে।’

নিবন্ধন করলে টিকা এবং টিকা নেয়ার স্থান নির্ধারিত থাকে- উল্লেখ করে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এটা টিকা গ্রহীতার জন্যও সুবিধা। এছাড়া টিকা দেয়া এবং পরবর্তী ফলোআপ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও সুবিধা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওই দিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনের পরই টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (িি.িংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ) উন্মুক্ত করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে টিকা নেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। টিকা গ্রহণের আগেই সবাইকে মোবাইল ফোনে এসএমএস’র (ক্ষুদে বার্তা) মাধ্যমে টিকা কেন্দ্রের নাম ও সময়সূচি জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এ টিকা দেয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষকে টিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা ‘কোভিশিল্ড’। সবাইকে এই টিকার দুটি ডোজ দেয়া হবে। এই টিকার তিন কোটি ডোজ পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের। চুক্তির আওতায় প্রথম চালান হিসেবে ৫০ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ডোজ ঢাকার মানুষকে দেয়া হচ্ছে।

জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে করোনার টিকা দেয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ টিকায় প্রাধান্য পাচ্ছেন।

সোমবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৫ মাঘ ১৪২৭, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

গণটিকাদান শুরু

কেন্দ্রে নিবন্ধন আরও পরে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

সংক্রমণ রুখে দিতে দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথমদিনেই করোনার টিকাদানে মোটামুটি ভালই সাড়া মিলেছে। রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মাঠ প্রশাসনের কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনলাইনে নিবন্ধনের পর ‘কনফার্মেশন এসএমএস’ পেয়েও গতকাল যারা টিকা নিতে পারেননি তারা যেকোন দিন এসএমএস দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। টিকা নিয়ে অনেকেই পর্যবেক্ষণে থাকেননি।

নিবন্ধনকারী ব্যক্তিদের টিকাদান শেষ হওয়ার পরই ‘অন স্পট’ অর্থাৎ কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকাদানের পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যদিও গতকাল বিভিন্ন কেন্দ্রে সীমিত সংখ্যক বিশিষ্ট নাগরিককে কেন্দ্রে নিবন্ধন করিয়ে টিকা দেয়া হয়। গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রায় পৌনে চার লাখ মানুষ টিকার নিবন্ধন করেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গতকাল জানানো হয়, গণটিকাদান শুরুর প্রথমদিনেই সারাদেশের মোট ৩১ হাজার ১৬০ জন করোনার টিকা নিয়েছেন, যাদের পুরুষ ২৩ হাজার ৮৫৭ জন এবং মহিলা সাত হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে রাজধানীর অর্ধশত কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৭১ জন। রাজধানীর টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৭৭২ জন এবং মহিলা এক হাজার ২৯৯ জন। সবচেয়ে বেশি ৫৬০ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে।

আগের দিন দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকা নিতে মোট তিন লাখ ২৮ হাজার ১৩ জন অনলাইনে নিবন্ধন করেন। এর আলোকেই দেশব্যাপী তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘যারা নিবন্ধন করে টিকা নেয়ার এসএমএস পেয়েছিলেন, কিন্তু টিকা নিতে পারেননি, নানা কারণেই এটি হতে পারে, তারা পরবর্তী যেকোন দিন নিবন্ধন কার্ড দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার সময়ও এই কার্ড দেখাতে হবে।’

প্রথম দিনে রাজধানীসহ সারাদেশে ১০১৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৫০টি কেন্দ্র। পর্যায়ক্রমে টিকাদান কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। প্রতিটি কেন্দ্রে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দেয়া হবে।

টিকা নিয়ে পর্যবেক্ষণে থাকেননি অনেকেই

টিকা দেয়ার পর সবাইকেই অপেক্ষমান কক্ষে ন্যূনতম ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানেননি। টিকা নিয়ে অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। এরপরও টিক কেন্দ্রেগুলোতে আগ্রহীদের ভিড় ছিল। আগাম নিবন্ধন করে অনেকেই কেন্দ্রে না গেলেও সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েই টিকা নিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

মুগদা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকাগ্রহীতাদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য নির্ধারিত তিনটি অপেক্ষমান জায়গায় ২০/২৫ জন বসে আছেন, যাদের প্রায় সবাই সাধারণ মানুষ। আর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র ত্যাগ করছেন।

২০০ জন এসএমএস পেলেও সচিবালয়ে

টিকা নিলেন ১৬৭ জন

সরকারি প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের অভ্যন্তরে ‘ক্লিনিক ভবনে’ টিকা নেয়ার জন্য আগের ২০০ জনকে ‘কনফার্মেশন এসএমএস’ পাঠানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে গতকাল টিকা নিয়েছেন ১৬৭ জন।

এই ক্লিনিকে টিকা নিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত দুটি বুথের মাধ্যমে সচিবালয় ক্লিনিকে টিকা প্রদান করা হয়।

সচিবালয় ক্লিনিকের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম দিনে ২০০ জনের প্রত্যাশা করেছিলাম। এর মধ্যে টিকা নিয়েছেন মোট ১৬৭ জন। সচিবালয় ক্লিনিকে মোট ১২ দিন চলবে এ কার্যক্রম।’

সোমবার থেকে ৩০০ জনকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সচিবালয় ক্লিনিকে মোট ১২ দিন টিকা কর্মসূচি চলবে।’

মুগদায় ৪৭১ জনকে টিকার এসএমএস দেয়া হলেও নিলেন ৩১৪ জন

আগামী নিবন্ধন অনুযায়ী, ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেয়ার জন্য শনিবার মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হয়েছিল ৪৭১ জনকে, যাদের দু’শজনই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। মুগদায় গতকাল টিকা নিয়েছেন ৩১৪ জন। এসএমএস পেয়েও ১৬০ জন টিকা নিতে কেন্দ্রে যায়নি। সরাসরি কেন্দ্রে নিবন্ধন করেও ৫/৭ জন টিকা নিয়েছেন বলে মুগদা হাসপাতালের টিকাদান কর্মীরা জানিয়েছেন।

মুগদা হাসপাতালের ‘ইপিআই’ (টিকাদান কর্মসূচি) কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) এখানে টিকা নেয়ার জন্য ৪৭১ জনের নাম নিবন্ধন করা ছিল; তবে আমাদের প্রস্তুতি ছিল ৫০০ জনকে টিকা দেয়ার। প্রথমদিন নিবন্ধ ছাড়া কাউকে টিকা দেয়া হয়নি। ৫/৭ ভিআইপি এসেছিলেন, তাদের তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা দেয়া হয়েছে।’

ঢামেকে স্পট নিবন্ধনে টিকা পেলেন ৫ জন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে ২৭০ জন অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা নিয়েছে। এদের মধ্যে ১০২ জন মহিলা আর ১৬৮ জন পুরুষ। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে নিবন্ধন ছাড়াই টিকা দেয়া হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী। আরও ৪-৫ জনকে স্পট নিবন্ধন করে টিকা দেয়া হয় বলে সংবাদের ঢামেক প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সকাল ১০টায় মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে ভার্চুয়ালি গণটিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় মন্ত্রী বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। এর পরপরই বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের আগেই সকাল সাড়ে ৮টা বা ৯টায় অনেক হাসপাতালেই টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। আজ থেকে প্রতিদিন সকালে সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দেশব্যাপী টিকাদান চলবে।

নিবন্ধনকারীদের দেয়ার পর ‘অন স্পট’ নিবন্ধনে টিকা

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এ অনুষ্ঠানে জানান, করোনার টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারলে টিকাদান কেন্দ্রেও সেই ব্যবস্থা থাকবে।

গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী একই কথা বলেছেন। মন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারাই (গ্রামের মানুষ) দেশের ৭০ শতাংশ। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা এ ব্যাপারে সহায়তা করবেন। ডিসির নেতৃত্বে সিভিল সার্জন, পুলিশের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করবেন যেন এসব মানুষ নিবন্ধন করতে পারেন। নিবন্ধন করবেন এবং টিকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেবেন। এ ধরনের ব্যবস্থা আমরা করেছি এবং নির্দেশনাও দেয়া হয়ে গেছে।’

টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধন কবে থেকে শুরু হবে- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তা এখনও ঠিক করা হয়নি। এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি, এদের টিকা দেয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনস্পট রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে সুপরিকল্পিত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

যদি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা দেয়া হয় তাহলে যিনি টিকা নেবেন তার জন্যও সমস্যা হবে- জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘এছাড়া আমরা যখন টিকা দেব, সেক্ষেত্রে কত ডোজ টিকা লাগবে, কারা আসবে, লজিস্টিকস সাপ্লাই- এসব একটা বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা। তারপরও যারা অনেক দূর থেকে এসেছেন, আরেকদিন আসা কঠিন হবে, তাদের জন্য হয়তো আমরা স্পটে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে পারি। যারা টিকা নিতে আসবেন তারা যেন ফেরত না যান, সেজন্য আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তাদের দিতেই হবে।’

নিবন্ধন করলে টিকা এবং টিকা নেয়ার স্থান নির্ধারিত থাকে- উল্লেখ করে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এটা টিকা গ্রহীতার জন্যও সুবিধা। এছাড়া টিকা দেয়া এবং পরবর্তী ফলোআপ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও সুবিধা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওই দিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনের পরই টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (িি.িংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ) উন্মুক্ত করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে টিকা নেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। টিকা গ্রহণের আগেই সবাইকে মোবাইল ফোনে এসএমএস’র (ক্ষুদে বার্তা) মাধ্যমে টিকা কেন্দ্রের নাম ও সময়সূচি জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এ টিকা দেয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষকে টিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকা ‘কোভিশিল্ড’। সবাইকে এই টিকার দুটি ডোজ দেয়া হবে। এই টিকার তিন কোটি ডোজ পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের। চুক্তির আওতায় প্রথম চালান হিসেবে ৫০ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ডোজ ঢাকার মানুষকে দেয়া হচ্ছে।

জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে করোনার টিকা দেয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ টিকায় প্রাধান্য পাচ্ছেন।