ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার

ঢাকায় ব্যাংক কর্মকর্তার বাসায় কাজ করা এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে ময়মনসিংহ পুলিশ সেই ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শনিবার ময়মনসিংহে মা-বাবার কাছে শিশুটিকে ফেরত দিতে এলে শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে তার মা-বাবা পুলিশে অভিযোগ করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

নির্যাতনের শিকার ১২ বছর বয়সী মেয়ে শিশুটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া দাগ ও জখমের চিহ্ন নিয়ে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় ওই দম্পতিকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন শিশুটির বাবা।

মেয়েটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, চার বছর আগে প্রতিবেশী জালালের মাধ্যমে ঢাকায় একটি পরিবারের কাছে মেয়েটিকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠানো হয়। ওই শিশুকে প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা ছিল। প্রথম বছর যোগাযোগ থাকলেও তিন বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেননি। মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কিংবা দেখা করতে চাইলে দুর্ব্যবহার করা হতো। কৌশলে মিথ্যা কথা বলে মেয়েটিকে আড়াল করার চেষ্টা করা হতো। বারবার চেষ্টা করেও কোনভাবেই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।

শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে ওই দম্পতি মেয়েটির বাবাকে ফোন করে মেয়েকে নেয়ার জন্য ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে আসতে বলেন। কথামতো শনিবার দুপুরের মধ্যেই ব্রিজ মোড়ে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন মেয়েটির বাবা। অতঃপর সেই দম্পতি মেয়েটিকে তার বাবার কাছে ফেরত দেন। এ সময় বাবা খেয়াল করেন, তার মেয়ের দুটি হাতেই আগুনে পোড়া দাগ।

পেটে, পিঠে ও পায়ে ক্ষত ও জখমের চিহ্ন। পরে মেয়েটি তার ওপর চালানো নির্যাতনের বিষয়টি খুলে বলে। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে সন্ধ্যায় দ্রুত ওই দম্পতি সেখান থেকে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মেয়েটির বাবার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ওই দম্পতিকে আটক করে পুলিশে দেন। আর মেয়েটিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী শারমিন রহমানকে আসামি করে মামলা করেন মেয়েটির বাবা।

গ্রেপ্তার দু’জন হলেন মিজানুর রহমান (৫০) ও তার স্ত্রী শারমিন রহমান (৪০)। মিজানুর রহমান ঢাকায় অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হিসেবে কর্মরত।

ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়েটির বাবা কৃষক, বেশ কয়েক বছর আগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লে বাঁ পায়ের গোড়ালি থেকে অবশ হয়ে যায়। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েন তিনি। তারা জেলার নান্দাইল উপজেলার একটি গ্রামে বাসিন্দা।

কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, আসামি মিজানুর ব্যাংক কর্মকর্তা। তারা স্বামী-স্ত্রী ইন্দিরা রোডের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। সেই বাসায় মেয়েটির ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়েছে। মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশে পোড়া দাগ ও ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। অভিযোগ পেয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর শারমিন রহমান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পুলিশি হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, নির্যাতনের শিকার মেয়েটি ও তার পরিবারকে পুলিশ আইনি সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর নামে মামলা হয়েছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

আরও খবর
মায়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান : তুরস্কের রাষ্ট্রদূত
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে নরওয়েকে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
শান্তিরক্ষা মিশনে ১৯০০ নারী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী
শেয়ারবাজারে বড় পতন
বিএনপির অপকর্ম বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হবে না কাদের
গণফোরাম থেকে কিবরিয়ার পদত্যাগ
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে চেয়ারম্যানের নির্যাতন
আল জাজিরার তথ্যচিত্র মন্দ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত এডিটরস গিল্ড
ফিরোজের অবৈধ সম্পদের চার্জশিট দিচ্ছে দুদক
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অবরোধ-বিক্ষোভ
এক সপ্তাহেও গ্রেপ্তার হয়নি এজাহারভুক্ত চার আসামি
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সোমবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৫ মাঘ ১৪২৭, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪২

শিশু-গৃহকর্মী নির্যাতন

ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার

জেলা বার্তা পরিবেশক, ময়মনসিংহ

ঢাকায় ব্যাংক কর্মকর্তার বাসায় কাজ করা এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে ময়মনসিংহ পুলিশ সেই ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শনিবার ময়মনসিংহে মা-বাবার কাছে শিশুটিকে ফেরত দিতে এলে শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে তার মা-বাবা পুলিশে অভিযোগ করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

নির্যাতনের শিকার ১২ বছর বয়সী মেয়ে শিশুটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া দাগ ও জখমের চিহ্ন নিয়ে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় ওই দম্পতিকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন শিশুটির বাবা।

মেয়েটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, চার বছর আগে প্রতিবেশী জালালের মাধ্যমে ঢাকায় একটি পরিবারের কাছে মেয়েটিকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠানো হয়। ওই শিশুকে প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা ছিল। প্রথম বছর যোগাযোগ থাকলেও তিন বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারেননি। মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কিংবা দেখা করতে চাইলে দুর্ব্যবহার করা হতো। কৌশলে মিথ্যা কথা বলে মেয়েটিকে আড়াল করার চেষ্টা করা হতো। বারবার চেষ্টা করেও কোনভাবেই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।

শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে ওই দম্পতি মেয়েটির বাবাকে ফোন করে মেয়েকে নেয়ার জন্য ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ে আসতে বলেন। কথামতো শনিবার দুপুরের মধ্যেই ব্রিজ মোড়ে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন মেয়েটির বাবা। অতঃপর সেই দম্পতি মেয়েটিকে তার বাবার কাছে ফেরত দেন। এ সময় বাবা খেয়াল করেন, তার মেয়ের দুটি হাতেই আগুনে পোড়া দাগ।

পেটে, পিঠে ও পায়ে ক্ষত ও জখমের চিহ্ন। পরে মেয়েটি তার ওপর চালানো নির্যাতনের বিষয়টি খুলে বলে। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে সন্ধ্যায় দ্রুত ওই দম্পতি সেখান থেকে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মেয়েটির বাবার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ওই দম্পতিকে আটক করে পুলিশে দেন। আর মেয়েটিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী শারমিন রহমানকে আসামি করে মামলা করেন মেয়েটির বাবা।

গ্রেপ্তার দু’জন হলেন মিজানুর রহমান (৫০) ও তার স্ত্রী শারমিন রহমান (৪০)। মিজানুর রহমান ঢাকায় অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হিসেবে কর্মরত।

ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়েটির বাবা কৃষক, বেশ কয়েক বছর আগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লে বাঁ পায়ের গোড়ালি থেকে অবশ হয়ে যায়। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েন তিনি। তারা জেলার নান্দাইল উপজেলার একটি গ্রামে বাসিন্দা।

কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, আসামি মিজানুর ব্যাংক কর্মকর্তা। তারা স্বামী-স্ত্রী ইন্দিরা রোডের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। সেই বাসায় মেয়েটির ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন করা হয়েছে। মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশে পোড়া দাগ ও ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। অভিযোগ পেয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর শারমিন রহমান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পুলিশি হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, নির্যাতনের শিকার মেয়েটি ও তার পরিবারকে পুলিশ আইনি সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর নামে মামলা হয়েছে। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।