চল্লিশোর্ধ্ব যে কেউ টিকা নিতে পারবেন, তারপরও মাস্ক পরতে হবে প্রধানমন্ত্রী

এখন থেকে ৪০ বছরের উর্ধ্বে যেকোন শ্রেণীর লোকই করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। গতকাল থেকেই সরকারের নতুন এই সিন্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এতদিন ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক, সম্মুখসারিতে থাকা ১৮টি পেশাভিত্তিক শ্রেণী বা বিশেষ শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের (www.surokkha.gov.bd) মাধ্যমে টিকার নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। এছাড়া সম্মুখসারিতে থাকা নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদেরও পর্যায়ক্রমে টিকা কর্মসূচির আওতায় নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

টিকার জন্য নিবন্ধনের বয়সসীমা শিথিলের জন্য গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয় থেকে অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা শুরু হয়েছে, এটাকে আরেকটু রিল্যাক্স করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ৪০ বছর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করা যাবে। গতকাল ৫৫ বছরের কম হলে কিন্তু টিকা দেয়া হচ্ছিল না। সেজন্য আজকে বলে দেয়া হয়েছে ৪০ বছর পর্যন্ত হলে টিকা দেয়া যাবে। এটা আজকে থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে।’

সচিব আরও বলেন, ‘তরুণ যারা আছেন আস্তে আস্তে তাদের ওপেন করে দিতে হবে। যারা ফ্রন্টলাইন ফাইটার আছেন প্রয়োজন হলে তাদের ফ্যামিলিকেও আস্তে আস্তে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিয়ে হবে।’

টিকা নেয়ার পরও সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

টিকা নেয়ার পরও সবাই যেন অবশ্যই মাস্ক পরেন, প্রধানমন্ত্রী সেই অনুরোধ করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মাস্ক না পরলে কিন্তু কোন কাজ হবে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এটা সুপারিশ করেছে। তাই কোন অবস্থাতেই আমাদের মাস্কের সঙ্গে যাতে কম্প্রোমাইজ করা না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপরই সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে সেখানে ১৯টি শ্রেণীতে নিবন্ধন করার সুযোগ রাখা হয়। এরমধ্যে একটি শ্রেণী ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য। বাকিগুলো সম্মুখসারিতে থাকা বিভিন্ন পেশাভিত্তিক শ্রেণী অথবা বিশেষ শ্রেণীর জন্য।

১৯টি শ্রেণীতে আছেন সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সব বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রত্যক্ষভাবে সস্পৃক্ত সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখসারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মী ও সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী।

১৮ শ্রেণীর অন্যান্য নাগরিকের মধ্যে রয়েছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীর প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও নৌ-বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সস্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংককর্মী ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড়।

এনআইডি নিয়ে টিকাকেন্দ্রে গেলেই নিবন্ধন

গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এবং শহরের লোকজন বিজনেস সেন্টারে গিয়ে টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি, নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি আরেকটু সহজ করা যায় কীভাবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এক ধাপবিশিষ্ট করা যায় কীভাবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে সে যদি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যান, ওখানে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে চেক করা হবে, তিনি কেন রেজিস্ট্রেশন করেননি।’

৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের টিকা কার্যক্রম

৭ ফেব্রুযারি থেকে দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচি আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এই টিকার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ। ১০০ জনের মধ্যে যদি ৭০ জন ইমিউন হয়ে যায় তাহলে রোগটি হ্যান্ডেল বা এটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক কম্ফোর্টেবল একটা জোনে আমরা চলে যাব।’

ভ্যাকসিন নিয়ে কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘কোন অসুবিধা নেই, আমিতো কাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করেছি। আমার ওয়াইফও নিয়েছেন।’

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

চল্লিশোর্ধ্ব যে কেউ টিকা নিতে পারবেন, তারপরও মাস্ক পরতে হবে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

এখন থেকে ৪০ বছরের উর্ধ্বে যেকোন শ্রেণীর লোকই করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। গতকাল থেকেই সরকারের নতুন এই সিন্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এতদিন ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক, সম্মুখসারিতে থাকা ১৮টি পেশাভিত্তিক শ্রেণী বা বিশেষ শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের (www.surokkha.gov.bd) মাধ্যমে টিকার নিবন্ধনের সুযোগ ছিল। এছাড়া সম্মুখসারিতে থাকা নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদেরও পর্যায়ক্রমে টিকা কর্মসূচির আওতায় নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

টিকার জন্য নিবন্ধনের বয়সসীমা শিথিলের জন্য গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয় থেকে অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘টিকা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা শুরু হয়েছে, এটাকে আরেকটু রিল্যাক্স করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ৪০ বছর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করা যাবে। গতকাল ৫৫ বছরের কম হলে কিন্তু টিকা দেয়া হচ্ছিল না। সেজন্য আজকে বলে দেয়া হয়েছে ৪০ বছর পর্যন্ত হলে টিকা দেয়া যাবে। এটা আজকে থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে।’

সচিব আরও বলেন, ‘তরুণ যারা আছেন আস্তে আস্তে তাদের ওপেন করে দিতে হবে। যারা ফ্রন্টলাইন ফাইটার আছেন প্রয়োজন হলে তাদের ফ্যামিলিকেও আস্তে আস্তে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিয়ে হবে।’

টিকা নেয়ার পরও সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

টিকা নেয়ার পরও সবাই যেন অবশ্যই মাস্ক পরেন, প্রধানমন্ত্রী সেই অনুরোধ করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মাস্ক না পরলে কিন্তু কোন কাজ হবে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও এটা সুপারিশ করেছে। তাই কোন অবস্থাতেই আমাদের মাস্কের সঙ্গে যাতে কম্প্রোমাইজ করা না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপরই সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে সেখানে ১৯টি শ্রেণীতে নিবন্ধন করার সুযোগ রাখা হয়। এরমধ্যে একটি শ্রেণী ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য। বাকিগুলো সম্মুখসারিতে থাকা বিভিন্ন পেশাভিত্তিক শ্রেণী অথবা বিশেষ শ্রেণীর জন্য।

১৯টি শ্রেণীতে আছেন সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সব বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রত্যক্ষভাবে সস্পৃক্ত সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখসারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মী ও সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী।

১৮ শ্রেণীর অন্যান্য নাগরিকের মধ্যে রয়েছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীর প্রতিনিধি, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও নৌ-বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সস্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংককর্মী ও প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড়।

এনআইডি নিয়ে টিকাকেন্দ্রে গেলেই নিবন্ধন

গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এবং শহরের লোকজন বিজনেস সেন্টারে গিয়ে টিকার রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে আইসিটি বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি, নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি আরেকটু সহজ করা যায় কীভাবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এক ধাপবিশিষ্ট করা যায় কীভাবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হলে সে যদি জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যান, ওখানে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিতে পারবেন, সেই ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে চেক করা হবে, তিনি কেন রেজিস্ট্রেশন করেননি।’

৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের টিকা কার্যক্রম

৭ ফেব্রুযারি থেকে দেশব্যাপী গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচি আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এই টিকার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ। ১০০ জনের মধ্যে যদি ৭০ জন ইমিউন হয়ে যায় তাহলে রোগটি হ্যান্ডেল বা এটি ছড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক কম্ফোর্টেবল একটা জোনে আমরা চলে যাব।’

ভ্যাকসিন নিয়ে কেমন লাগছে- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘কোন অসুবিধা নেই, আমিতো কাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করেছি। আমার ওয়াইফও নিয়েছেন।’