ওষুধ প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে মানহীন ওষুধ অনুমোদন পাচ্ছে

জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে মানহীন ওষুধ অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ওষুধ প্রশাসনের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছেন। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সেবা প্রার্থীরা কোন কোন ক্ষেত্রে যথাযথ কাগজপত্র দাখিল না করে দ্রুত সেবা পেতে চায়। এ সুযোগে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা খরচের বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে। যা নির্ধারিত ফি-এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুর্নীতির অন্যতম উৎস হচ্ছে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে ওষুধের গুণগত মানের সনদ গ্রহণ প্রক্রিয়া। এ ল্যাবে সারাদেশে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য সনদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। ওষুধের মান সঠিক রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করাই ড্যাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির মূল কাজ। মান পরীক্ষা করার পর মানের সনদপত্র দেয়া হয়। কোন কোম্পানি কি ওষুধ তৈরি করেছে। কোনটার মান কতটা স্ট্রান্ডার্ড। আর উৎপাদিত ওষুধ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী হচ্ছে কিনা এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যেমন ঘাটতি রয়েছে। তেমনি অনিয়ম দুর্নীতি, হয়রানির অন্যতম উৎসও এগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানি আছে যাদের পণ্য পরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ হয় না, কিন্তু সেগুলোকেও মানসম্মত বলে সনদ দেয়া হয়। এর ফলে পাইকারি ও খুচরা ওষুধ মার্কেটে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। নিম্নমানের ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওষুধ উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত ওষুধ তৈরি করছে কিনা তা সরজমিনে পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান বিধি-বিধান অনুসরণ করে পরিদর্শন করা হয় না। প্রতিষ্ঠানগুলো পদ্ধতিগতভাবে পরিদর্শন না করে অনৈতিকভাবে সুবিধা গ্রহণ করে পরিদর্র্শনের প্রতিবেদন দেন বলে অভিযোগ আছে। যার কারণে ওষুধ মার্কেটে নিম্নমানের নকল-ভেজাল ওষুধের সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে না।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ওষুধ প্রস্তুতের পর বাজারে বিক্রি করতে হলে আগেই সেই ওষুধের নমুনা ওষুধ প্রশাসনে জমা দিয়ে নতুন ব্যাচ হিসেবে অনুমোদন নিতে হয়। প্রতি বছর এক একটি ওষুধ কোম্পানি এক থেকে তিন/চারটি ব্যাচ ওষুধ বিক্রির জন্য বাজারে ছেড়ে থাকে। নিয়ম হচ্ছে আগেই ওষুধের ব্যাচ অনুমোদন নিয়ে তারপর বাজারে ছাড়া হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো আগে ওষুধ বিক্রি শুরু করে তারপর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ফাইল পাঠিয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ব্যাচের ওষুধের অনুমোদন দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশে আড়াই লাখ ওষুধ ফার্মেসি রয়েছে। প্রতি বছর এ সব ফার্মেসি পরিদর্শন করার কথা থাকলেও বাস্তবে ৫০ ভাগ ফার্মেসি থাকে পরিদর্শনের বাইরে। যারা দায়িত্বে আছেন তারা পরিদর্শন কার্যক্রম ঠিকমত না করে মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে প্রায় অভিযোগ রয়েছে। এ সুযোগে অসাধু ফার্মেসি মালিকরা আমদানি নিষিদ্ধ চোরাই পথে আসা ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও নকল ভেজাল ও নিম্নমানের (মানহীন) ওষুধের জোগান বন্ধ করা যাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে কতিপয় ব্যবসায়ী নেতা ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে অনৈতিক সিন্ডিকেট এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, নকল ভেজাল ও মানহীন ওষুধ উৎপাদনের মূলে রয়েছে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া ওষুধের কাঁচামাল। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিই কেবল বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। এসব কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির সুযোগ নেই। কিন্তু অনেক ওষুধ কোম্পানি চাহিদার তুলনায় অধিক পরিমাণে কাঁচামাল আমাদানি করে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী এ সব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

দুদকের সুপারিশ

১. ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেও বিকল্প পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কোন অবস্থায় মান পরীক্ষা না করে ওষুধ বাজারে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। এ জাতীয় ওষুধ কোম্পানি বা মালিকদের চিহ্নিত করে কারখানা বন্ধসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

২. সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ওষুধ কারখানা নিয়মিত পরিদর্শন করবেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিএমএইচ-এর প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কোন অবস্থায়ই ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ব্যতিত নতুন ব্যাচের ওষুধ বাজারে বিপণন করা যাবে না।

৩. ফার্মেসিসমূহ মনিটরিংয়ের জন্য ওষুধ প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমম্বয়ে একটি বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেন।

৪. খোলা বাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি হয়, তা নিষিদ্ধ করতে হবে অথবা কাঁচামালের মান যাচাই করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে সীমিতভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কাস্টমস বিভাগকেও সচেতন থাকতে হবে।

৫. চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশান ছাড়া কোন ফার্মেসি এন্টিবায়োটিক ঘুমের ওষুধ অনুমোদনবিহীন কোন ওষুধ বিক্রয় করতে পারবে না। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

এ সম্পর্কে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, দেশের মানুষের চাহিদার শতকরা ৯৮ ভাগ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হচ্ছে। মানুষ এসব ওষুধ খেয়ে সুস্থ হচ্ছে। দেশের ওষুধ ভালো ও দামও পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে অনেক কম। এছাড়াও বিশ্বের ১৫০টি দেশে বাংলাদেশে ওষুধ রপ্তানি করা হয়। মান ভালো বলে রপ্তানি হচ্ছে। তবে কিছু কিছু খারাপ লোক নকল ওষুধ বানায়। তাদের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে।

এ সম্পর্কে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয় তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি নন। প্রতিবেদন তারা হাতে পায়নি। পেলে বক্তব্য দেয়া যাবে।

মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৬ মাঘ ১৪২৭, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ওষুধ প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে মানহীন ওষুধ অনুমোদন পাচ্ছে

জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে

বাকী বিল্লাহ

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে মানহীন ওষুধ অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ওষুধ প্রশাসনের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছেন। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সেবা প্রার্থীরা কোন কোন ক্ষেত্রে যথাযথ কাগজপত্র দাখিল না করে দ্রুত সেবা পেতে চায়। এ সুযোগে অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা খরচের বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে। যা নির্ধারিত ফি-এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুর্নীতির অন্যতম উৎস হচ্ছে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে ওষুধের গুণগত মানের সনদ গ্রহণ প্রক্রিয়া। এ ল্যাবে সারাদেশে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য সনদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। ওষুধের মান সঠিক রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করাই ড্যাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির মূল কাজ। মান পরীক্ষা করার পর মানের সনদপত্র দেয়া হয়। কোন কোম্পানি কি ওষুধ তৈরি করেছে। কোনটার মান কতটা স্ট্রান্ডার্ড। আর উৎপাদিত ওষুধ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী হচ্ছে কিনা এ বিষয়গুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যেমন ঘাটতি রয়েছে। তেমনি অনিয়ম দুর্নীতি, হয়রানির অন্যতম উৎসও এগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানি আছে যাদের পণ্য পরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ হয় না, কিন্তু সেগুলোকেও মানসম্মত বলে সনদ দেয়া হয়। এর ফলে পাইকারি ও খুচরা ওষুধ মার্কেটে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। নিম্নমানের ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওষুধ উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত ওষুধ তৈরি করছে কিনা তা সরজমিনে পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান বিধি-বিধান অনুসরণ করে পরিদর্শন করা হয় না। প্রতিষ্ঠানগুলো পদ্ধতিগতভাবে পরিদর্শন না করে অনৈতিকভাবে সুবিধা গ্রহণ করে পরিদর্র্শনের প্রতিবেদন দেন বলে অভিযোগ আছে। যার কারণে ওষুধ মার্কেটে নিম্নমানের নকল-ভেজাল ওষুধের সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে না।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ওষুধ প্রস্তুতের পর বাজারে বিক্রি করতে হলে আগেই সেই ওষুধের নমুনা ওষুধ প্রশাসনে জমা দিয়ে নতুন ব্যাচ হিসেবে অনুমোদন নিতে হয়। প্রতি বছর এক একটি ওষুধ কোম্পানি এক থেকে তিন/চারটি ব্যাচ ওষুধ বিক্রির জন্য বাজারে ছেড়ে থাকে। নিয়ম হচ্ছে আগেই ওষুধের ব্যাচ অনুমোদন নিয়ে তারপর বাজারে ছাড়া হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো আগে ওষুধ বিক্রি শুরু করে তারপর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ফাইল পাঠিয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ব্যাচের ওষুধের অনুমোদন দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশে আড়াই লাখ ওষুধ ফার্মেসি রয়েছে। প্রতি বছর এ সব ফার্মেসি পরিদর্শন করার কথা থাকলেও বাস্তবে ৫০ ভাগ ফার্মেসি থাকে পরিদর্শনের বাইরে। যারা দায়িত্বে আছেন তারা পরিদর্শন কার্যক্রম ঠিকমত না করে মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে প্রায় অভিযোগ রয়েছে। এ সুযোগে অসাধু ফার্মেসি মালিকরা আমদানি নিষিদ্ধ চোরাই পথে আসা ওষুধ, নিম্নমানের ওষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও নকল ভেজাল ও নিম্নমানের (মানহীন) ওষুধের জোগান বন্ধ করা যাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে কতিপয় ব্যবসায়ী নেতা ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে অনৈতিক সিন্ডিকেট এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, নকল ভেজাল ও মানহীন ওষুধ উৎপাদনের মূলে রয়েছে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া ওষুধের কাঁচামাল। ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিই কেবল বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। এসব কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির সুযোগ নেই। কিন্তু অনেক ওষুধ কোম্পানি চাহিদার তুলনায় অধিক পরিমাণে কাঁচামাল আমাদানি করে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী এ সব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

দুদকের সুপারিশ

১. ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবরেটরির সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেও বিকল্প পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কোন অবস্থায় মান পরীক্ষা না করে ওষুধ বাজারে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। এ জাতীয় ওষুধ কোম্পানি বা মালিকদের চিহ্নিত করে কারখানা বন্ধসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

২. সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ওষুধ কারখানা নিয়মিত পরিদর্শন করবেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিএমএইচ-এর প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কোন অবস্থায়ই ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন ব্যতিত নতুন ব্যাচের ওষুধ বাজারে বিপণন করা যাবে না।

৩. ফার্মেসিসমূহ মনিটরিংয়ের জন্য ওষুধ প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমম্বয়ে একটি বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করার সুপারিশ করেন।

৪. খোলা বাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি হয়, তা নিষিদ্ধ করতে হবে অথবা কাঁচামালের মান যাচাই করে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে সীমিতভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কাস্টমস বিভাগকেও সচেতন থাকতে হবে।

৫. চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশান ছাড়া কোন ফার্মেসি এন্টিবায়োটিক ঘুমের ওষুধ অনুমোদনবিহীন কোন ওষুধ বিক্রয় করতে পারবে না। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

এ সম্পর্কে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, দেশের মানুষের চাহিদার শতকরা ৯৮ ভাগ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হচ্ছে। মানুষ এসব ওষুধ খেয়ে সুস্থ হচ্ছে। দেশের ওষুধ ভালো ও দামও পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে অনেক কম। এছাড়াও বিশ্বের ১৫০টি দেশে বাংলাদেশে ওষুধ রপ্তানি করা হয়। মান ভালো বলে রপ্তানি হচ্ছে। তবে কিছু কিছু খারাপ লোক নকল ওষুধ বানায়। তাদের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে।

এ সম্পর্কে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয় তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি নন। প্রতিবেদন তারা হাতে পায়নি। পেলে বক্তব্য দেয়া যাবে।